Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

একজন প্রেমকুমারের অপ্রেমের কাহিনী

Spread the love

Short stories: একজন প্রেমকুমারের অপ্রেমের কাহিনী

সারাজীবনে আর কিছু করতে না পারি, ক্যাম্পাস জীবনে অন্তত একজন রমনীকে ম্যানেজ করতে পারবো এই আশা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম ম্যানেজমেন্ট বিভাগে। 
কিন্তু নিয়তির একি পরিহাস- অনেক কাঠখর পুড়িয়ে সায়েন্স-কমার্স তো দূরের কথা ইতিহাসের কোনো পাতিসুন্দরীকেও বাগে আনতে পারিনি।
 
শহীদুল্লাহ্ হলের আম বাগানে পৌঁছাতে একদিন সাত মিনিট দেরি হবার কারনে বাংলা বিভাগের এক ললনা বলেছিলো- ভালোই আছো তোমার ডেবিট-ক্রেডিট নিয়ে, তাই নিয়ে থাকো। তোমায় দিয়ে প্রেম চর্চা হবে না।
Love is nothing it is misunderstanding between two stupids বাক্যটি আমায় শুনিয়েছিলো ইংরেজি বিভাগের ফেয়ার লেডি। 
বেশকিছুদিন এক রেঁস্তোরার ক্যাশ বাক্সে ব্যালেন্স ট্রান্সফারের পর মোক্ষম সময়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের দরাজ কন্ঠের মেয়েটি আচানক ওয়াক আউট করে বসলো। 
হায়-রে আমার প্রেম আর হায়-রে আমার মানিব্যাগ। 
 
সমাজকর্মের মেয়েটি প্রেমের প্রস্তাবে মুখের উপর জবাব দিয়েছিলো- “প্রেম হচ্ছে সকল সামাজিক অপকর্মের বীজ” অথচ সেই মেয়েই পরে এক ছেলের সাথে দারুণ প্রেমের ফর্দ খুলেছিলো। 
পদার্থের হৃষ্টপুষ্ট মেয়েটি জানিয়েছিল- ‘নিউটনের তৃতীয় সুত্র বুঝলে আর আমায় চাইতে না বেটা অপদার্থ।’
 
-আমার আর সেই সুত্র বোঝা হয়নি। 
সুনীলের মত নীল পদ্ম নয় টকটকে লাল গোলাপ বোটানির মাথা খারাপ করা মেয়েটিকে দিতেই বলেছিল- ‘এটা আমার প্রতি ১০৭ তম প্রেমাঞ্জলী।️ তোমার নামটা যেন কি? নোটবুকে টুকে রাখতাম।’ 
 
প্রেমকুমারের
একটা প্রেমের গল্প Short stories
সাড়ে পাঁচফিটের লাইব্রেরি সায়েন্সের মেয়েটিকে কত্তোবার “মাদার ইন ম্যানভিল” গল্প থেকে শেখা সেই লাইনটি বলেছি, তবু আমার দিকে মুখ নিচু করে তাকায়নি।
আমি ঘাড় উঁচু করে তার দিকে তাকাতেই বলেছিলো- তুমি তো সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর উপরের তাকই নাগালে পাওনা আমার দিকে হাত বাড়াও কোন সাহসে।
তবুও সাহস সঞ্চয় করে ভূগোলের পাগল করা মেয়েটিকে প্রেমের কথা বলতেই উত্তর দিয়েছিলো- “পাদুকা দিয়ে মুখের ফিজিওগ্রাফি বদলে দেবো”
মনে মনে ভেবেছিলাম তাই দাও তখন যদি আমায় মনে ধরে! 
 
এতো ব্যর্থতার পরেও মন কিছুতেই হাল ছাড়তে চায় না। ছাড়বেই বা কি করে ছেলেবেলায় পড়া কামিনী রায়ের সেই কবিতা  আমাকে নাছোড়বান্দা হতে শিখিয়েছিল।- ‘একবার না পারিলে দেখ শতবার’। বিভাগ তো মোটে গোটা পঞ্চাশেক সে হিসেবে প্রতি বিভাগে দু বার করে ট্রাই করার সুযোগ তো রয়েছেই। অতপর আবার অভিযান। 

কলা-মানবিকে যখন প্রেমের চাকা ঘুরলো না তখন ভাবলাম এবার একটু রসায়নের চেষ্টা করে দেখি যদি রসের দেখা পাই। কিন্তু- দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের এক ল্যাব থেকে বেরিয়ে রসায়নের বেরসিক মেয়েটি কটকট চোখে তাকিয়ে বলেছিলো ‘এক কেজি পটাশিয়াম সায়ানাইড খাইয়ে এ্যপ্রোন টা গায়ে জরিয়ে দেবো’, একথা তখন শুনে পুলক অনুভব করলেও পরে বুঝেছিলাম ওটা ছিলো কাফনের কাপড়।
 
চারুকলার বয়কাট মেয়েটির সাথে ভালোই সখ্যতা গড়ে উঠেছিল, কিন্তু তার মুখে যে প্রস্তাব পেলাম তাতে আমার কান গরম হয়ে উঠেছিল। আমায় নাকি তার- ন্যু… স্টাডির মদেল হিসেবে দরকার।  
মৎস্যকন্যার সাথে পরিচয় ঘটে বাসস্টপে, একদিন বলে কি- ‘ যতই টোপ দাও তোমার বড়শিতে আমি গাঁথছিনা।’
 
গণিত বিভাগের মেয়েটি আমার প্রস্তাব বিবেচনায় রেখে শর্ত দিয়েছলো- হলে থাকা চলবে না’, চুটিয়ে প্রেম করতে হলে নাকি আমায় থাকতে হবে মাস্টার আব্দুর রহিম ছাত্রাবাসে।- কিন্তু, টাকার অভাবে যেতে পারিনি। 
আবার গোড়া থেকে শুরু করবো ভাবলাম, তখনই দর্শনের আধাপাগলি মেয়েটি বলেছিলো- তুই তো জানিস না পৃথিবীতে সবই অর্থহীন।
আর সেই অর্থহীন পৃথিবীতে অর্থনীতির মেয়েটি শুনিয়েছিলো- ‘তোমায় দিয়ে চাহিদা আর যোগানের সমতা সম্ভব নয় অতএব,’। 
 
আরও গল্প পড়ুন Short stories 
গোপাল ভাঁড়ের গল্পঃ Short stories