Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

Spread the love

কভিড-১৯ এর সাথে যুদ্ধরত এক নারীর গল্প

আলমতি বিশ্বাস, সহকারী শিক্ষক, মাগুরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মাগুরা।


০৫ অক্টোবর রাত থেকে আমার জ্বর । থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপলাম । জ্বর ১০০ । ছোটবোনকে ফোন দিলাম । বোন নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালে কর্মরত । বোন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে বলল , ‘ যদি জ্বর ১০০ বা ১০০ এর উপরে হয় তাহলে নাপা বা প্যারাসিটামল খা ।’ কিন্তু পাঁচদিন হয়ে গেল । জ্বর যায় না । সঙ্গে প্রচণ্ড রকমের কাশি । কাশি উঠলে মনে হয় পেটের নাড়ি ছিঁড়ে যাবে । সঙ্গে মৃদু শ্বাস কষ্ট । জ্বরের মাত্রা বেড়ে যায় । ১০০ থেকে ১০২ পর্যন্ত উঠে । ডাক্তারের পরামর্শে  ঔষধের মাত্রা বেড়ে গেল । ১৪ অক্টোবর মাগুরা সিভিল সার্জন অফিসের স্বাস্থ্যকর্মী আমার বাড়িতে

এসে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে আমার নমুনা সংগ্রহ করেন । ১৬ অক্টোবর ২০২০ মাগুরা সিভিল সার্জন অফিস থেকে ফোন করে জানালেন , আমি করোনা পজেটিভ । শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমার চার পাশের পরিবেশ বদলে গেল । সাথে সাথে মুখে মাস্ক ব্যবহার করলাম । আমার হার্টবিট বেড়ে গেল । আমার ছোট কন্যারত্নটি কাঁদতে কাঁদতে আমাকে জড়িয়ে ধরতে চাইল । আমি স্ট্যাচু বলে ওকে থামিয়ে দিলাম । কিছুক্ষণ পরে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা এসে বাড়ি লকডাউন করে লক্ষণরেখা টেনে দিলেন । আমার ছোট মেয়েটি আবার হাউ মাউ করে কেঁদে কেঁদে বলল , ‘ বাবা , 

আমরা বাড়ি থেকে বের হতে পারব না । ‘ আমি নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম , ‘ কেঁদো না , আমার মিষ্টি মা । তুমি না আমার লক্ষ্মী মা । তুমি দেখ , খুব তাড়াতড়ি আমি করোনাসুরকে বধ করে তোমাকে আদর করতে পারব ।’  কবি তো বলে গেছেন , ‘ জন্মিলে মরিতে হবে , অমর কে , কোথা কবে ? ‘ এ দেহ আজ আছে কাল নেই । মাটির দেহ মাটি হবে । জলের দেহ জল হবে । তাপের দেহ তাপে মিশে যাবে । বাতাসের দেহ বাতাসে মিশে যাবে । শূন্যের দেহ শূন্যে মিলে যাবে । কিন্তু আমার অন্তরাত্মাকে কেউ বধ করতে পারবে না । তাই যতক্ষণ আমার শ্বাস আছে ততক্ষণ আমি লড়াই চালিয়ে যাব । 

আমার বিছানা , খাবারের থালা , জলের জগ – গ্লাস , আমার বাথরুম সহ সবকিছু আলাদা । আমি এক বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো স্তব্ধ হয়ে থাকলাম । প্রতিবেশী নদীর মা এসে বলল , ‘ দিদি চিন্তা করেন না ।ঠাকুর ঠাকুর করেন । আমরা ও করি । আপনার যা কিছু দরকার হয় ; আমারে ফোন করবেন ; আমি এসে করে দেব । ও করোনা যার হয় তার হয় । ও বলে আমি ভয় করি না ।’ আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম । ঢাকা সোহরাওয়ারদী মেডিকেলে আমার বোন কর্মরত । বোন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে কী কী ঔষধ খেতে হবে ফোন করে জানাল । বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেলে  আমার 

দাদা কর্মরত । দাদা ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে রাতেই ঔষধ পাঠিয়ে দিলেন । আমি সেই মত ঔষধ সেবন করছি । আজ আমার করোনা শনাক্তের ১২ তম দিন । আমার প্রতিবেশী দাদারা বাজার থেকে যা যা দরকার এনে দিচ্ছেন । আমার দাদা ও বোন বাড়ি থেকে খাবার রান্না করে দিয়ে যায়। আমার স্বামী অত্যন্ত আন্তরিক ও নিষ্ঠার সঙ্গে করোনা শনাক্তের প্রথম দিন থেকে আজ পর্যন্ত সকালবেলা লবণজল গরম করা , মধু চা করা , সকালে খাবারের পরে পাঁচ মিশালি জল গরম করা ( আদা , এলাজ , লবঙ্গ , গোলমরিচ , তেজপাতা ) , ভাপ নেওয়ার জন্য ।


করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন: কী, কীভাবে, কখন?

করোনা ভাইরাস কতো দিন সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে?


লেখক,
আলমতি বিশ্বাস, সহকারী শিক্ষক, মাগুরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মাগুরা।