Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

Spread the love

তুরস্কের কৃষ্ণ সাগর বন্যা ২০২১

মুসলিম পরাশক্তি সমৃদ্ধ দেশ তুরস্ক । ভৌগোলিক কাঠামোগত দিক থেকে তুরস্ক দেখতে মোটামুটি চতুর্ভুজাকৃতির । দেশটির ইতিহাসে অসভ্যতার মতোই, এর ভৌগলিক কাঠামো অন্যান্য দেশের চেয়ে আলাদা । দেশটির  দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে এশিয়ার  আনাতেলিয়া উপদ্বীপ এবং দক্ষিণ-পূর্বাংশে ইউরোপের বলকান উপদ্বীপ ।  ফলে তুরস্ক ভৌগোলিকগত দিক থেকে একই সঙ্গে এশিয়া এবং ইউরোপের  অন্তর্ভুক্ত । যা সচরাচর অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায় না । ভৌগলিক এই বিচিত্রতা তুরস্ককে  সকল দেশের চেয়ে আলাদা করেছে । তুরস্কের ইউরোপে অংশটি তেরাকিয়া  নামে পরিচিত  ।  যেখানে তুরস্কের মোট আয়তনের ৩% হলেও জনসংখ্যার ১০% লোক বাস করে ।  এখানেই আছে তুরস্কে এবং ইউরোপের সবচেয়ে জনবহুল শহর ইস্তাম্বুল । ইতিহাস এবং ঐতিহ্যগত দিক থেকেও তুরস্কের একটি বিশেষ মর্যাদা আছে। তুরস্কের হাজারো ইতিহাসের সাক্ষী এই ইস্তাম্বুল শহর । এই শহরের জনসংখ্যা প্রায়  ১ কোটি ১৩ লক্ষ  । তুরস্কের অন্যতম বড় সাগরের নাম হচ্ছে কৃষ্ণ সাগর। আজ আমরা ২০২১  সালে এই কৃষ্ণসাগরে ঘটে যাওয়া, তুরস্কের ইতিহাসে অন্যতম সবচেয়ে বড় বন্যা সম্পর্কে জানব ।

 

সাধারণত যখন কোন স্থলভাগ পানি দ্বারা  ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয় তখন তাকে বন্যা বান  বলে । আবহাওয়া বিজ্ঞান বর্ণকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করেছেন ।
১।  মৌসুমী বন্যা :  মৌসুমী বন্যা সাধারণত মৌসুমভিত্তিক হয়ে থাকে ।  এ ধরনের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকে। 

২। আকস্মিক বন্যা : এ ধরনের ঘটনা সাধারণত কোন সময়ের উপর নির্ভর করে হয়না । আবহাওয়াবিদদের মতে, কোন ধরনের সতর্কবার্তা ছাড়াই ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সংঘটিত বন্যাকে আকস্মিক বন্যা বলা হয় । এ ধরনের বন্যা সাধারণত খুব কম পরিলক্ষিত হয়। 

৩। ঋতুভিত্তিক বন্যা : বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এ ধরনের বন্যা সাধারণত বর্ষাকালে দেখা যায়। অন্যান্য বন্যার চেয়ে   হচ্ছে এ ধরনের ঋতুভিত্তিক বন্যা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে । ঋতুভিত্তিক বন্যা  অনেক সময় দীর্ঘস্থায়ী ও হয়ে থাকে। 

বন্যার ইতিহাস অনেক প্রাচীন ।  পৃথিবীবাসী প্রাচীনকাল থেকেই বন্যার সঙ্গে পরিচিত ছিল । ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায় যে, হলুদ নদীতে খ্রিস্টপূর্ব ( ২২৯৭ ) এবং নীলনদে প্রায় তিন হাজার বছর আগে বন্যা সংঘটিত  হওয়ার ইতিহাস পাওয়া যায় । 

কৃষ্ণ সাগর বন্যা ২০২১

সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া বন্যাগুলোর মধ্যে তুরস্কের কৃষ্ণসাগরীয় প্রদেশগুলোর বন্যা  উল্লেখযোগ্য । সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হওয়া বন্যার মধ্যে এটিকে  সবচেয়ে বড় বন্যা হিসেবে বিবেচিত করা হয় । ১৩  ই আগস্ট ২০২১ ।বুধবার  । তুরস্কে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে, তুরস্কের কৃষ্ণসাগরীয় প্রদেশগুলোতে পানির পরিমাণ হো হো করে বাড়তে থাকে । সবাই কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই চারিদিকে পানি থইথই করতে থাকে। সবার হতবম্ভ হয়ে চেয়ে থাকা ছাড়া যেন আর কোন কিছুই করার থাকেনা। পানির পরিমাণ এতটাই বেশি ছিলো যে, চোখের সামনে ক্ষেতের ফসল ডুবে যাচ্ছিল ,পশুপাখি ভেসে যাচ্ছিল ,সবাই শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছিল, এর বাইরে কারো কোন কিছু করার সামর্থ ছিলনা । এক মুহুর্তে ভারী বৃষ্টিপাত কৃষ্ণসাগরের প্রদেশগুলোকে যেন তছনছ করে দিয়েছিল । এই বন্যার কারণে তুরস্কের উত্তরাঞ্চলে একজন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে এবং ১৩ জন আহত হয়েছিল ,এছাড়া একজন বয়স্ক নারী নিখোঁজ ছিল ।   পরবর্তীতে যার  কোনো খবর পাওয়া যায়নি । উপরোক্ত সবগুলো তথ্য  তুর্কি সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। বেসরকারি তথ্যমতে,এই সংখ্যা দ্বিগুণ বা তিনগুণ পর্যন্ত হতে পারে। তুরস্কের বিভিন্ন জায়গায় বন্যার কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং অনেকের প্রাণ যায় ।  তারমধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য তুরস্কের কান্তামনু প্রদেশের কাতালজাইতিন জেলার বন্যার ফলে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয় । তাছাড়া বার্টিন প্রদেশের উলুস জেলার আরিফ কুনাল নামের ৮৫ বছর বয়সী এক নারী নিখোঁজ হয়েছিল । পরবর্তীতে যার কোনো খবর পাওয়া যায়নি । ধারণা করা হয় তিনি সম্ভবত বন্যার পানির সঙ্গে কৃষ্ণ সাগরে ভেসে গিয়েছে । তুর্কি সরকার অনেক চেষ্টা করেও এই মহিলাকে উদ্ধার করতে পারেননি। তুরস্কের স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী ইসমাইল কাটাকলি জানিয়েছিলেন যে , তুরস্কের আনটালিয়া  প্রদেশের কুমলুচা জেলায় আরো একজন নিখোঁজ হয়েছিল । এই ভয়ঙ্কর বন্যার কারণে তুরস্কের অনেক ঘরবাড়ি এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ।পরবর্তীতে যার প্রভাব পুরস্কার অর্থনীতিতে ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। তুরস্কের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন  বন্যা আক্রান্ত এলাকাসমূহের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল এবং এবং আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল । এই বন্যায় নিহতের সংখ্যা সঠিকভাবে বলা না গেলেও তবে অনুমান করা হয় যে প্রায় ৫৭ জনের মতো এই বন্যায় নিহত হয়েছে এবং নিখোঁজের সংখ্যা আনুমানিক ৩৭ জন ।  যাদের অনেককেই এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি  । সর্বপরি বন্যার হাত থেকে বাঁচতে আমাদের  প্রয়োজন সঠিক নগরায়ন এবং পরিকল্পিত পানি  নিষ্কাশন  ব্যবস্থা।