Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

কেন বাড়ছে ধর্ষন

Spread the love

কেন বাড়ছে ধর্ষন?

আমরা যখন জন্মাই তখন সবাই হয়তো ভিন্ন যৌনাঙ্গ নিয়ে জন্মাই তবে আমাদের মন একই থাকে, শিশুসুলভ! মনে থাকে না কোনো জটিলতা,থাকে না কোনো খারাপ চিন্তা, থাকে না কোনো খারাপ ইচ্ছা। পৃথিবীতে আমাদের আগমন ঘটে পবিত্র ভাবে।পরিবেশ পরিস্থিতি শিক্ষা, পরিবার থেকে শিক্ষা এবং এর পর আসে নিজে থেকে গড়ে তোলা নিজের কিছু শিক্ষা। তাহলে এই ধর্ষকদের ধর্ষণ করার শিক্ষা এবং তাতে ইন্ধন কারা দিচ্ছে? সমাজ আমরাই নয় তো?

কয়জন মা আছেন যারা নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ক্ষুদ্র হলেও যে লাঞ্চনার ঘটনা ঘটে তা নিয়ে আপনার ছেলে এবং মেয়ে উভয়কেই জানান? যাতে তারা সচেতন হয়। এর সংখ্যা বোধহয় তেমন বেশি না।ধর্ষণের ইন্ধনের পেছনে কিছু পরিস্থিতি এবং চিন্তাধারার দায়িত্ব আছে বলে আমি মনে করি! এগুলোর পরিবর্তন হলে হয়তো ভবিষ্যতের শিশু থেকে ধর্ষকের জন্ম হবে না! হলেও হয়তো তার পরিবার এত বেশি হবে না।

কেন বাড়ছে ধর্ষন
কেন বাড়ছে ধর্ষন?

ধর্ষণ বাড়ার কারণ গুলো হলো-

§ পর্ন গ্রাফি:

এটি এমন একটি নিষিদ্ধ জিনিস যেটা এখন পাওয়া যায় প্রায় যুবক, বৃদ্ধ, শিশু অনেকের ফোনেই! যার অধিকাংশই অভিনয় বাস্তবতার সাথে মিল নেই এবং বাস্তবে পরিনত করার চেষ্টা বিপদজনক সেগুলোই অনেক কম বয়সে চলে যাচ্ছে তাদের হাতে! যৌন শিক্ষা তারা নিচ্ছে এসব মানহীন অতিরঞ্জিত পর্ন ফিল্মে! এটা উদ্ভুদ্ধ করছে মানুষকে নোংরা লালসা ,উদ্ভট কল্পনা বাস্তবায়ন করায়।অনেকে জানছেই না যে এগুলো অবাস্তব , অসম্ভব, অস্বাভাবিক ।

§ পুরুষশাসিত সমাজ:

পুরুষশাসিত সমাজ নারীকে তার মনভাব প্রকাশের অধিকার দেয় না।পরিবার থেকে সমাজ থেকে একটা ছেলে একটা মেয়ে কে সবসময় লাঞ্চিত হতে দেখে সেখান থেকে তার মেয়ে জাতিকে ছোট করে দেখার মানসিকতা তৈরী হয়।ছোট বেলায় একটা ছেলে যেমন কোনো কিছু আবদার করলেই পেয়ে যায় একটা মেয়ে তা পায় না। 

§ পরিবারের থেকে দূরত্ব:

আমরা অধিকাংশ মানুষই তাদের জীবনের প্রথম যৌন শিক্ষা পাই চটি, পর্নগ্রাফি , সমবয়সী বন্ধু বা বান্ধবীর কাছ থেকে। এখানে কোনো টাই সুস্থ যৌন শিক্ষা দেয় না। এখানে থাকে অস্বাভাবিক কিছু কল্পনার জগত,থাকে অস্বাভাবিকতা স্বাভাবিক ভাবে প্রকাশ করা। যাতে ছোট থেকেই বেড়ে উঠি আমরা অস্বাভাবিক যৌন জ্ঞান নিয়ে। যেটা এই ভুল এবং অন্যায় কাজে উৎসাহ যোগায়। যেই শিক্ষা কিনা আমাদের পরিবার থেকে সুস্ঠ ভাবে পাওয়া উচিত সেটাই যখন বিকৃত ভাবে শিক্ষা পাই তখন কিছুটা দোষ তো সমাজের উপরেও বর্তায় নাকি?

§ ধর্মীয় দৃষ্টিকোনের ভুল ব্যাখ্যা:

বিভিন্ন সুবিধাবাদি সুপ্ত ধর্ষক আছেন তারাই ধর্মীয় দৃষ্টি কোনো ভুল ব্যাখ্যা দেন। কিছু মানুষ ইসলামের বর্ননা দিয়ে বলেন আজ কাল নারীরা পর্দা করে না বোরখা পরে নাই তাই এত ধর্ষন এত হত্যা। ধর্ম গ্রন্থে যে পর্দার কথা বলা হয়েছে সেটা ছেলে মেয়ে উভয়ের জন্য, চোখের পর্দা বা নজরের পর্দা। আর যদি পর্দার জন্যই এমন হবে তাহলে ৫-৯ মাসের বাচ্চারা কি করে পর্দা করবে বলতে পারেন? আর ছেলে শিশুরা?  তাহলে বাঙ্গালী নারী রা যখন ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি পড়তো তখনকার মানুষ কি এভাবে প্রতিদিন ধর্ষিত হতো?

§ সচেতনতার অভাব:

শিশুদের বিভিন্ন সময় খাবারের , খেলনার প্রলভন দেখিয়ে ফুসলিয়্ নিয়ে গিয়ে তাদের সাথে এ জাতীয় নোংরা ব্যবহার তারা করে। তাই সকল অভিভাবক এবং আমাদের সবার উচিত শিশুদের কে বুঝিয়ে দেওয়া কোন স্পর্শ খারাপ এবং কোনটা ভাল।তাদের শরীরের অঙ্গ সম্পর্কে তাদের সচেতন করা উচিত । এর এই দায়িত্ব পরিবারের বড়দের।

§ ভিক্টিমের নিরবতা :

শুধু মাত্র মান সন্মানের চিন্তা করে আমরা মানুষেরা চুপ করে থাকি , ধর্ষিতাকে মনে করি বোঝা। তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে মনে করি তারই পাপ।সমাজ থেকে তাকে করি অসম্মানিত । কিন্তু কখনো এটা ভাবি না এখানে দোষী একমাত্র ধর্ষকই ধর্ষিতা নয়। তাই সমাজের চোখে ছোট হলেও সেটা হবে ধর্ষক ধর্ষিতা নয়! পরিবারের বোঝা সমাজের বোঝা ও এই ধর্ষক, ধর্ষিতা নয়। কারন সে কোনো অন্যায় করেনি।তাই অন্যের পাপে আমরা কেন নির্দোষীকে শাস্তি দিব?

§ শাস্তি সল্পতা:

অনেক ধর্ষনের শাস্তিতেই শোনা যায় যে তারা ধর্ষিতাকে ধর্ষকের সাথে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে, ধর্ষকের পরিবার কিছু আর্থিক সহযোগীতা করছে ধর্ষিতার পরিবারকে, তার পরিমানও খুবই অল্প! আবার ধর্ষক ও ধর্ষতা দুজনকেই দেওয়া হয় সমান শাস্তি! যার কারনে ধর্ষকরাও আর ভয় পায় এ জাতীয় নোংরা কামনাকে বাস্তবায়ন করতে।

আইনের শাস্তি পেতে পেতে পেতেও ১০ বছর! নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়ায় ধর্ষক সমাজের মানুষেরই মাঝে! যে পাপের পাপীর ঠাঁই নরকেও নাই তাকেই আমরা সমাজের মানুষেরা নানা গুনে আগলাই!আমাদের সমাজের এই বিষয় গুলোকে আমাদের সংস্কার করতে হবে। তবেই সম্ভব হবে নবাগত শিশুদের একটি সুন্দর সমাজ দেওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা।