Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

জিও কাকু

Spread the love

জিও কাকু

তনয় সরকার

—————-
ইমনের স্কুলে আজ থেকে গরমের ছুটি শুরু হয়ে গেছে। ইমন ও তার বন্ধুরা বাড়ি ফেরার পথে প্ল্যান করতে লাগল কোথায় যাওয়া যায়। ইমন তাই তার বন্ধুদের বলল যাতে বিকালে সবাই বৈঠকে দেখা করে।
বিকাল ৪.০০ টা। ইমন ও তার বন্ধু শফিক আর রানা বৈঠকে হাজির। সবার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ।

সবাই সবার মন মতে জায়গার নাম বলছে। কিন্তু কোনো জায়গাই যেনো জমছে না। হঠাৎ ইমন বলে উঠল, “জিওকাকু”। সবাই অবাক হয়ে বলল জিওকাকু কে?


ইমন বলল, আমার দূর সম্পর্কের ছোটো কাকু। যিনি অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে জিওসায়েন্স এ পিএইচডি করছেন। আমি মজা করে জিওকাকু ডাকি।
শফিক বলল, তা তো বুঝলাম কিন্তু এখন কাকার বাসায় গিয়ে কি করবি?


ইমন বলল,
-আরে শফিক তুই তো জানিস না কাকার বাসায় যে কি মূল্যবান জিনিস আছে!
-কি আছে?
-কাকার বাসায় আছে রকস মিউজিয়াম।
-রকস মিউজিয়াম! সেটা কি?
-আরে রকস মিউজিয়াম হল শিলা জাদুঘর।
যেখানে নানা রকম পাথর ও মূল্যবান খনিজ পদার্থ সংরক্ষিত থাকে। বাংলাদেশে শুধু পঞ্চগড় এই মিউজিয়াম দেখতে পাবি। আর পাবি আমার কাকার বাসায়। কাকা ব্যক্তিগত ভাবে তা সংরক্ষণ করেন। কাকা এখন বাংলাদেশে আছে তাই মিস না করতে চাইলে চল।


সবাই আনন্দের সাথে রাজি হল।
ইমন বলল, তোরা আজকের মধ্যে তৈরি হয়ে নে। আমরা আগামিকাল সকালেই রওনা হব। আমি কাকাকে জানিয়ে দিচ্ছি যে আমরা আসছি।

ইমনের কাকার নাম জাহের চৌধুরী। দেখতে শ্যামলা, মোটামুটি গড়নের। উনি প্রায়ই মাথায় একটা সাহেবী টুপি ও চোখে গোল ফ্রেমের চশমা পরে থাকেন। আর ঘরে বেশির ভাগ সময়ই আতসী কাচ নিয়ে নানা রকম পাথর পর্যবেক্ষণ করেন।
আজ সকাল থেকেই জাহের সাহেব একটু ব্যস্ত।
হাতে আতসী কাচ নিয়ে বসে পড়েছেন। হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠল। জাহের সাহেব না উঠেই বলে উঠলেন, ইমন ভিতরে আয় দরজা খোলা।
ইমন খুব বেশি অবাক হল না কারণ ইমন তার কাকার খুরধার বুদ্ধি সম্বন্ধে আগে থেকেই অবগত। তাও ইমন বলল,

-কিভাবে বুঝলে কাকা এখন আমি এসেছি?
-তোর কলিং বেল দেয়ার ধরন দেখে। একসাথে দুইবার দিবি,থামবি। তারপর আবার তিনবার দিবি। এটা এক ধরনের প্যাটার্ন। আর তুই গতকাল বললিও যে আজ আসবি তাই বুঝতে অসুবিধে হল না।
ইমন ও তার কাকা দুজনেই মুচকি হাসল।
ইমন বলল,
-দেখো কাকা আমার সাথে আমার দুই বন্ধুও এসেছে। আমরা এই ছুটিতে অন্য কোথাও
যায় নি। শুধু তোমার মিউজিয়াম দেখতে চলে এসেছি।
জাহের সাহেব বললেন,
-ঠিকই করেছিস রে। আমি কয়েকদিনের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া চলে যাব।
তোদের সাথে দেখাও হয়ে গেল। আর মিউজিয়াম এ তোদের একটা বিশেষ জিনিসও দেখাব।
ইমন বলল চলো কাকা তারাতাড়ি মিউজিয়াম এ চলো।

ইমন ও তার বন্ধুরা রীতিমতো অবাক হল মিউজিয়াম টা দেখে। কত সুন্দর ও বাহারি রংয়ের পাথর।
তারপর ইমন ছোটোকাকা কে বলল কাকা তোমার ঐ বিশেষ জিনিসটা কোথায়?
জাহের সাহেব তারপর একটা আংটি নিয়ে আসলেন। যেটা দেখে ইমনের তো চক্ষু চড়কগাছ। এত সুন্দর আর ঝকমকে পাথরে তৈরি আংটি ইমন জীবনে দেখে নি।
জাহের সাহেব বললেন,
-বলতো এটা কিসের তৈরি?
ইমন বলতে পারল না। শুধু এটা পড়ার জন্য তার মন ব্যকুল হয়ে উঠল।


-এটা ডায়মন্ড রিং বুঝলি। ডায়মন্ড বা হীরে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান ধাতু। তুই যে আংটিগুলো পড়ে আছিস এগুলোও ধাতুর তৈরি।
তোর টা সম্ভবত ট্যাল্ক (talc) ধাতুর তৈরি। তুই আংটি পড়তে ভালোবাসিস। তাই তোকে এটা দেখানো। এটা আমি আমাদের ইউনিভার্সিটির
মিউজিয়াম কালেকশন থেকে আবেদন চেয়ে নিয়ে এসেছি আবার জমা দিতে হবে।


এবার ইমন তার মনের অনেকক্ষণের ব্যকুলতা প্রকাশ করে বলল যেন কাকা একদিনের জন্য আংটিটি ইমনের কাছে রাখতে দেয়।
অবশেষে অনেক বুঝানোর পর কাকা রাজি হল।
ইমন ও তার বন্ধুরা খুব আনন্দের সাথে বাড়ি ফিরে এলো। ইমন তার বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় ফিরল।

রাত ১ঃ৩০,
ইমনের হাতে ডায়মন্ড রিং। ছোটোকাকা তাকে এটা পড়তে নিষেধ করেছে। কিন্তু ইমনের মনে তীব্র ইচ্ছে জাগছে একবার এটা আঙুলে পড়ার। আবার কাকার কথাও মনে হচ্ছে। এভাবে আংটি হাতে নিয়েই ইমন ঘুমিয়ে পড়ল। কিন্তু সকালে উঠেই ইমনের মাথায় হাত। সে অনেক খুঁজেও আংটি পেলো না।

তন্নতন্ন করে সে বাসার সব জায়গা দেখেছে। অস্থির হয়ে উঠল সে। কাঁদতে কাঁদতেই সে কাকার বাসায় গেলো এবং আংটি খুঁজে না
পাওয়ার কথা বলল। জাহের সাহেব ও প্রথম হকচকিয়ে গেল এবং ইমনের সাথে তার বাসায় যাবে এমন সময়ই ইমনের এক আঙুলের দিকে তার নজড় গেলো।

তারপর তিনি মুচকি হেসে ইমনকে তার দিকে টেনে নিয়ে জানালার পাশে সূর্যের আলোতে ইমনের হাত এগিয়ে দিলো। হাত এগিয়ে নিতেই একটা আলোর ঝলকানি ইমনের চোখে পড়ল। ইমন তার হাতে সেই আংটি টি দেখতে পেলো এবং বিস্মত হলো। কিছুতেই বুঝতে পারল না

কিভাবে তার হাতে আংটিটা আসল।
তখন জাহের সাহেব বুঝিয়ে বলল কি ঘটেছে।
তুই নিশ্চয়ই ঘুমানোর আগে আংটি নিয়ে বসেছিলি এবং পড়বি কি পড়বি না ভাবছিলি আর ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লি। তুই কি জানিস ঘুমালে আমাদের সচেতন মন চিন্তা করা বাদ দিলেও অবচেতন মন সজাগ থাকে এবং অনেক সময়ই
আমাদের অবচেতন মনের চিন্তাগুলোর প্রভাব আমাদের শরীরের উপরে। তুইও অবচেতন মনেই আংটি পড়েছিস। আর তোর হাতে আগে থেকেই এতো আংটি তাই খেয়াল করিস নি। তাই ভাবলি হারিয়ে গেছে বা চুরি হয়ে গেছে।

এসব শোনে ইমন গদগদ হয়ে বলে উঠলো, জিওকাকু, তুমি গ্রেট। আমি তো ভয়ই পেয়ে গেছিলাম।
তারপর ইমন ও তার জিওকাকু দুজনেই হেসে উঠলো এবং ঐ আংটির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। সূর্যের আলোতে কি সুন্দর ঝলকানিই না দিচ্ছে আংটিটা।

জিও কাকু
জিও কাকু

জিও কাকু

তনয় সরকার
২য় বর্ষ, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

Artwork; এক নারীর গল্প

Artwork; সহযোগিতা

Artwork; জীবনের শিকড়

শিল্প কর্ম আর্ট ওয়ার্ক সব গুলো একত্রে ক্যাটাগরি

বাংলায় পড়ুন সবগুলো একত্রে ক্যাটাগরি

বাংলা গল্প