Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

ডায়মন্ড এর সন্ধানে

Spread the love

ডায়মন্ড এর সন্ধানে

অনেকের ধারণা মতে,বহুমূল্য ডায়মন্ড বা হীরা যা কিনা মাটির অভ্যন্তরে থাকা কয়লা থেকেই পাওয়া যায়।কিন্তু এ ধারণা (আংশিকভাবে বললেও বলা ভুল হবে) সম্পূর্ণ সঠিক নাহলেও কিঞ্চিৎ সঠিক।কারণ, কয়লা বলে যেটাকে আমরা জানি সেটা হলো কার্বনের একটা রূপ মাত্র।কোক বা কয়লা মূলত পৃথিবীর কয়েকশ হাজার বছরের পুরোনো উদ্ভিদের জীবাশ্ম।

ডায়মন্ড কি?

কিন্তু ডায়মন্ড গবেষণা করে যা জানা যায়, তা হলো এটি একটি অষ্টতলকীয় কার্বনের স্ফটিক।আর এই স্ফটিক তৈরীর প্রক্রিয়া মাটির অভ্যন্তরে ভূত্বকের (Crust) নিম্নস্তরে (Mentle)  সম্পন্ন হয়,আর এই প্রক্রিয়াকে ভূগঠন (Geotectonic) বা ভূ-আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়া (Endogenous process) বলে।

উদাহরণ স্বরূপ ভূআলোড়ন,ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, ভূত্বকের সমতা ও সমন্বয়, পাতসঞ্চালন প্রভৃতি। উল্লেখ্য এই  Tectonic শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ (Tecton) থেকে যার অর্থ দাঁড়ায় ভূসংগঠন অর্থাৎ পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ গঠন।কিন্তু বিজ্ঞানীদের মতে,আমাদের পৃথিবী টা একটা পেয়াজের মত,যা কোষাবরণে আবৃত।

পৃথিবীর এই আবরণ কে  ৩টি অংশে ভাগ করা হয়েছে:

  • ভূত্বক (Crust) যা পৃথিবীর বাইরের আবরণ সিলিকেট দ্বারা গঠিত একটা  কঠিন তল।গভীরতা ৩০-৪০ কি.মি.



ভূত্বকের আবার ২টি অংশ

  • সিয়াল (SiAl) গভীরতা কনরাড বিযুক্তি রেখার উপরের অংশ(৩০কি.মি. এর উপরে)
  • সিমা (Sima) গভীরতা সিয়ালের পর থেকে বা কনরাড বিযুক্তি রেখার নিচের অংশ(৩০ – ৪০কি.মি.)

 

ডায়মন্ড
ডায়মন্ড সংগ্রহ করছে একজন


সিয়াল ও সিমা মিলেই ভূত্বক, কিন্তু সিয়াল মহাদেশীয় ভূত্বক  আর সিমা মহাসাগরীয় ভূত্বক । দুইটাই মেন্টলের উপর ভাসমান কিন্তু পানি সাধারণত মহাদেশীয় স্তর থেকে মহাসাগরীয় স্তরের দিকে এসে একটা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধান এর পর মিলে যায়,এই ব্যাবধানটাই “কনরাড বিযুক্তি”(Conrud Discontinuity)। এরপর মেন্টলের শুরু তারপর কোর।

পৃথিবীর বেশিরভাগ শিলা এই মেন্টল স্তরে তৈরী হয়, উচ্চ চাপ ও তাপের কারণে।যেমনঃ গ্রাফাইট(কার্বনের ষষ্টতলকীয় স্ফটিক রূপ), ম্যাগনেটাইট(আয়রন অক্সাইড এর ষষ্টতলকীয় স্ফটিক)  এবং ফ্লুয়েস্পার (ফ্লোরিনের স্ফটিক) ।

বিজ্ঞানের ভাষায়, গ্রাফাইট কার্বনের রূপ আবার ডায়মন্ড হচ্ছে গ্রাফাইট এর আরেক রূপ যা অষ্টতলকীয়।

গ্রাফাইট বা অঙ্গার হচ্ছে স্তরীভূত, আঁশযুক্ত, দানাদার, মাটির পিন্ড আকারে থাকে যার ভেতর কোনো বিন্দুমাত্র ফাঁপা স্থান নেই।এই গ্রাফাইট, ম্যাগনেটাইট, ফ্লুয়েস্পার, কয়লা আকরিকগুলো এক সময় ভূগঠন প্রক্রিয়া বা অগ্ন্যুৎপাতের ফলে অতি উচ্চ চাপ ও তাপের কারণে সংস্পর্শে এসে বিগলিত হয় আর পৃথিবীর অভ্যন্তর হতে বাইরে ছিটকে বেরিয়ে পড়তে থাকে। মাটির নিচে (১৪০-১৯০কি.মি.) মেন্টল স্তরে এরা ৪৫-৯০কিলোবার চাপ এবং ৯০০-১৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় থাকে।

ভূ অভ্যন্তরে অধিক চাপ ও তাপ বৃদ্ধির ফলে,ভূত্বকে দুর্বল ছিদ্রপথ বা ফাটল দেখা দিলে, ভূগর্ভে তরল শিলার আধিক্য দেখা দিলে,পাতসঞ্চালনের ফলে ভূমিকম্প বা অগ্ন্যুৎপাত এর সৃষ্টি হয়।কোনো বিশেষ পাহাড় বা আগ্নেয়গিরি তে  এই অগ্ন্যুৎপাত হয় যেসব পাহাড় এর উঁচু চূড়া থাকে যার ভেতরে ফাঁপা সরু ছিদ্রপথ থাকে।এই অগ্ন্যুৎপাত এর ফলে বিগলিত আকরিকগুলো বাইরে চলে আসে আর বায়ুর সংস্পর্শে এসেই শীতল তাপমাত্রায় জমাট বাঁধতে শুরু করে যা কিম্বারলাইট তৈরী করে।এখান থেকেই রাফ ডায়মন্ড পাওয়া যায়,বলা যায় এই কিম্বারলাইট এর স্বচ্ছ ও রূপান্তরিত স্ফটিক রূপই হলো ডায়মন্ড।

এই ডায়মন্ড এর আপেক্ষিক গুরুত্ব ৩.৫ মোহর স্কেল অনুযায়ী  কাঠিন্য ১০

যেহেতু ভূমিকম্পের ফলে পৃথিবীর ভূ অভ্যন্তরে তরঙ্গ সৃষ্টি হয় আর এই তরঙ্গ সাধারণত মাধ্যমিক তরঙ্গ( Shear wave)এর চেয়ে ভিন্ন গতিবেগ এর হয়ে থাকে তাই ভূ মজ্জা বা কোরের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে না।  স্নেলের প্রতিসরণ এর সূত্রানুসারে, এই ভূকম্পন বিভিন্ন স্তরে বেঁকে না যাওয়ার কারণে বা গতিবেগের ভিন্নতার কারণে প্রতিসৃত হয়।এ কারণেই ডায়মন্ড এর আলোক বৈশিষ্ট্য এক প্রতিসারী।

প্রতিসরণাঙ্ক ২.৪১৮

বিচ্ছুরণ ০.০৪৪

ঘনত্ব ৩.৫৩ সি.সি.

এই রাফ ডায়মন্ড সাধারণত বর্ণহীন কিন্তু বিভিন্ন প্রক্রিয়াদি সম্পন্নের পর এটা ভিন্ন ভিন্ন রঙের স্বচ্ছ ব্যবহারযোগ্য ডায়মন্ড এ পরিণত হয়।তাপধারণ ক্ষমতার দিক থেকে পৃথিবীতে পাওয়া সর্বোচ্চ তাপ ধারণকৃত ধাতু।

 

ডায়মন্ড সাধারণ তাপমাত্রায় পোড়ানো যায় না তবে তাপমাত্রা ১০০০ ডিগ্রির উপরে হলে তা ছাই হয়ে যাবে।