Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

নারী

Spread the love

নারী

দীপা রায়
————–
“ন” থেকে নারী আবার “ন” তে না। বলা হয়ে থাকে ‘না’ এর চেয়ে নারীর শক্তি বেশি। এটা আমার কাছে একটা হাস্যকর এর মতো৷ যদি ‘না’ এর থেকে নারী এর শক্তি বেশি হতো তাহলে তারা এই ‘না’ শব্দটার প্রভাব তাদের জীবনে মেনে নিতো না। একটা মেয়ে শিশুকে কিন্তু প্রথম ‘না’ শব্দের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় তাদের মা নিজেই।

বলা হয়ে থাকে তুমি মেয়ে তোমার এটা করা যাবে না, ওখান এ যাওয়া যাবে না ইত্যাদি। সেখানে মায়ের দোষ নেই, কারন সেই মা টাও কিন্তু ছোট বেলা থেকে এসব শুনে আসছে আর নিজেদের জীবনেও এর প্রতিফলন ঘটাচ্ছে।

নেপোলিয়ান বলেছিলেন, “তোমরা আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি দিব”। আচ্ছা উনি কোন শিক্ষার কথা বলেছিলেন? পাঠ্যপুস্তক মুখস্থ করে দুই-চারটা নামের শুরুতে ডিগ্রি, না সুশিক্ষা? সবাই নেপালিয়ান এর উক্তিটাকে বিকৃত করেছে।

বর্তমান সমাজে মেয়েদের কে বড় বড় ডিগ্রি এর জন্য পড়াশোনা করানো হয়। সুশিক্ষার জন্য নয়।

একটা মেয়ে শিশু পরিবার এ জন্মানোর পরপরই তার মাথায় একটা শব্দ ভালো করে গেথে দেওয়া হয় তুমি মেয়ে, তুমি চাইলেও সব কিছু করতে পারবে না। মেয়ে শিশুটা যখন ছোট থাকে তখন বাবা-মায়েরা একা কোথাও বের হতে দেয় না।

বলে তুমি ছোট বাইরে গেলে কেউ আঘাত করতে পারে, যখন বড় হয় মেয়েটা তখনও তাকে বাইরে যেতে দেওয়া হয় না তাদের ইচ্ছেমতো, তাদের বলা হয়ে থাকে এতোবড় মেয়ে বাইরে এভাবে চলাফেরা করলে মানুষ খারাপ কথা শোনাবে। আর যখন বিয়ে হয় তখনতো মেয়েদের অঘোষিত শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা হয়। কারন বিয়ের পর কোথাও যেতে গেলে পতিদেবতার আদেশ নিতে হয়, আবার সেই পতিদেবতা নামক প্রানীটা আদেশ দিলেও তার বাবা-মা যেকোনো একজন ভেটো দিবেই। আর বলবে ভাল বাড়ির বউরা এভাবে চলাফেরা করে না।

তাহলে মেয়েরা তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা কবে পাবে? আর এসব এর জন্য কি তারা নিজেরা দায়ী নয় কী? বিভিন্ন খববের কাগজ, টেলিভিশন সব জায়গায় দেখা যায় নারীর অধিকার নিয়ে আন্দোলন করছে, সরকরের কাছে নারীর অধিকার দাবী করছে।

এসব করে সরকারের কাছে থেকে শুধু নারীর অধিকার আদায় করা হচ্ছে কাগজে কলমে। আদোও কি নারীরা নিজেদের অধিকার আদায়ে এতোটা উৎসাহী? তাদের আশেপাশেই তো কতোভাবে এমনকি তাদের পরিবারই তো তাদের অধিকার খর্ব করে তারা কি সেগুলো কখনো আদায় করতে চেয়েছে? না তাদের সাথে প্রতিনিয়ত হওয়া অন্যায় এর প্রতিবাদ করছে?

জন্মের পর একটা ছেলে সন্তানকে এই বলে উৎসাহ দেওয়া হয় যে, তুমি ভালো করে পড়াশোনা কর, তোমাকে সংসার এর দায়িত্ব পালন করতে হবে। কিন্তু একটা মেয়েকে এটা বলা হয়, ভালো করে পড়াশোনা কর, একটা ভালো জামাই পাবে। বর্তমান সমাজের সব জায়গায় বলা হয়ে থাকে ছেলে মেয়ের সমান অধিকার।

এটার প্রতিফলনটা কোথায়? একটা মেয়ে সন্তানকে এটা কেনো বলা হয় না, ভাল করে পড়াশোনা করে স্বামীর উপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজে যেনো সংসার এর হাল ধরতে পার। আর মেয়েরাও বাবা-মায়ের এই কথাটাকে বেদবাক্য মনে করে। তারা এটা বুঝে না যে, কেউ কাউকে সেচ্ছায় কোন অধিকার দেয় না, সেটাকে অর্জন করে নিতে হয়।


হুমায়ূন আহামেদ বলেছেন, “অসংখ্য কষ্ট, যন্ত্রণা পেয়েও মেয়েরা মায়ারটানে একটা ভালবাসা, একটা সম্পর্ক, একটা সংসার টিকিয়ে রাখতে চায়।” এটা ঠিক যে মেয়েরা সংসারে যতো বেশি সমর্পিত হবে সেই সংসার এ ততবেশি সুখ ও শান্তি বিরাজ করবে। তাই বলে নিজের সাথে হওয়া অন্যায় গুলোও মেনে নিবে আর পরর্বতীতে নিজের মেয়েকেও একই মন্ত্রের বীজ বুনবে।

আমাদের সমাজে যারা কম কথা বলে, যারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না, তাদেরকে অনেক ভদ্র আর ভাল মানুষ এর উপাধি দেওয়া হয়। নারীরা যদি একদিন তাদের সাথে হওয়া অন্যায় এর প্রতিবাদ করে আর নিজেদের অধিকার আদায়ে নিজেরা সোচ্চার হয়, তাহলে আমাদের এই মূর্খ সমাজ এ তাদের সাহসিকতার নামে গুনগান গাবে।

কিন্তু মেয়েরা তা কখনো করবে না। বর্তমানে খবর এর কাগজে চোখ বুলালে পাওয়া যায় কোন না কোন জায়গায় ধর্ষণ, যৌতুকের জন্য মারপিট থেকে হত্যা করার মতো জঘন্য কাজ। মেয়েরা নিজেরা চাইলেই এসব রোধ করতে পারে। ওই যে বললাম আমাদের সমাজ ব্যবস্হা নেপোলিয়ান এর উক্তির উল্টো প্রয়োগ করছে। মেয়েদের স্বশিক্ষার অভাব।

তারা যদি পড়াশোনার বাইরে নিজেদের আর্ত্মরক্ষার জন্য বিভিন্ন কলাকৌশল আয়ত্ত করতো, তাহলে তারা নিজের রক্ষা নিজেরই করতে পারতো। ধর্ষণের বিচার এর জন্য আদালত এর দরজায় আসা লাগত না, তাদের সাথে এরকম হওয়ার আগেই ওই নরপিশাচদের নিজেরাই শাস্তি দিতে পারত। প্রতিনিয়ত মেয়েরা যৌন হয়রানির স্বীকার হয়।

তারা চাইলেই তৎক্ষণাৎ যে লোকটা এসব করার চেষ্টা চালাচ্ছে তাদের সবার সামনে নিয়ে আসতে পারে। তার জন্য দরকার শুধু একটু প্রতিবাদী মানসিকতা আর আত্মমর্যাদাপূণ্য একজন নারীর। কিন্তু নারাীরা এসব করতে পারে না। কারন একটাই জন্মের পরপরই তাদের মা তাদের ‘না’ শব্দটা ভাল করে মস্তিষ্কের মধ্যে প্রবেশ করায়। তারা অনেক কিছু করতে চাইলেও তাদের মস্তিস্ক তাদের তা করতে বাধা প্রদান করে।

সমাজ নারীদের অনেক উচু আসনে বসিয়েছে, অনেক সম্মান দিয়েছে তার সাক্ষী ইতিহাস। আর সেইসব সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য মাকড়শার জালের মতো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা সমস্যাগুলোকে কাটিয়ে উঠতে হবে। তাহলেই নেপোলিয়ান এর উক্তির যর্থার্থ সার্থকতা থাকবে।

দীপা রায়
২০১৮-২০১৯ সেশন,
ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস বিভাগ,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

নারী

নারী
শেখ মুজিবুর রহমান ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শন করে কি বলেছিলেন