Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

পারমিয়ান মাস এক্সটিংশান Mass Extinction পর্ব-1

Spread the love

পারমিয়ান মাস এক্সটিংশান (Mass Extinction) দুর্যোগঃ পর্ব -১

পারমিয়ান মাস এক্সটিংশান mass extinction হল আজ থেকে ২৫১.৯৪ মিলিয়ন বছর আগে ঘটে যাওয়া পৃথিবীর ইতিহাসে একটা বড় দুর্যোগ। এ সময়ে সমস্ত পৃথিবীর ৯০% সমুদ্রের অমেরুদণ্ডী প্রাণী মারা যায় আর স্থলভাগের ৭০% মেরুদণ্ডী প্রাণী মারা যায়। পারমিয়ান সময়ের প্রথম দিকে উচ্চ হারে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে বর্তমান সাইবেরিয়ার তৎকালীন সাইবেরিয়ান আগ্নেয়গিরির উদ্গিরন(>3.0 × 106 km3 )এর একটা বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে।

তাছাড়া সমুদ্রের জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, সমুদ্র স্রোত এর ধীরগতি অথবা সমুদ্রের পানির অক্সিজেন এর ঘাটতি, পানি পিএইচ pH কমে গিয়ে অধিকতর অম্ল হওয়া, সমুদ্রের তলদেশের মিথেন গ্যাস এর উদ্গিরন ও অন্যান্য কারণে প্রাণীগুলো মারা যাওয়ার জন্য দায়ী হতে পারে। পৃথিবীর বৈশ্বিক উচ্চ তাপমাত্রা কমপক্ষে ৬০ হাজার বছর থেকে ১২০ হাজার বছর পর্যন্ত থাকার কারণে স্থলভাগের গাছপালা বা ইকো সিস্টেম ভেঙ্গে পড়ার কারণ হতে পারে।

মাস এক্সটিংশান
পারমিয়ান সময়ের চতুষ্পদ জন্তু শিল্পীর তুলিতে আঁকা Tapinocephalus

বর্তমান দক্ষিণ আফ্রিকার কারু বেসিন এ তৎকালীন সময়ের মাটির শুষ্কতার একটা প্রমাণ পাওয়া যায়। কারু-বেসিন-মডেল এর মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা যায় যে, গভীর নদী থেকে অপেক্ষাকৃত কম গভীরতার নদীতে রূপান্তর সাধারণত গুলজাতীয় গাছপালার ধ্বংস হওয়া কে বোঝায় যে এর সাথে উক্ত গুল্ম জাতীয় গাছপালার  উপর নির্ভরশীল মেরুদণ্ডী প্রাণী গুলোও অতি দ্রুত হারে পারমিয়ান সময়ে পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে  মারা যায়। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পারমিয়ান- ট্রিয়াসসিক সময়ের মেরুদণ্ডী ফসিল রেকর্ড এর মাধ্যমে মোট ৮টি জোন এ ভাগ করা হয়।

যেখানে মিডিল পারমিয়ান এর মাস এক্সস্টিংসান (mass extinction) এর সময়কার ফসিল Tapinocephalus পাওয়া গিয়েছে এবং এটা আরও অন্যান্য ইউরেনিয়ায়ম-লেড এর মাধ্যমে বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে। একটা আগ্নেয়গিরির উদ্গিরিত ছাই এর স্তর থেকে ইউরেনিইয়ায়ম-লেড অনুপাত পরিমাপ করে বয়স নির্ণয় করে জানা গিয়েছে যে, স্থলভাগের মাস এক্সক্টিংশান mass extinction) হয়েছিল সামুদ্রিক ম্যাস এক্সক্টিংশান হওয়ার কয়েক শত হাজার বছর আগে। গত ১০০ বছরের ও বেশি সময়  ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার কারু বেসিন এ মেরুদণ্ডী প্রাণীর  যে ফসিল রেকর্ড রয়েছে সেটা থেকে পারমিয়ান সময়ের বিলুপ্তি প্রাপ্ত মেরুদণ্ডী প্রাণী, তাদের বসবাসের জায়গা, ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে ভাল ধারনা পাওয়া যায়।

পারমিয়ান মাস এক্সটিংশান

সাইবেরিয়ান ট্র্যাপ উদ্গিরন সৃষ্ট বৈশ্বিক শুষ্কতার কারণে স্থলভাগে ঘটে যাওয়া গন বিলুপ্তির সাথে সম্পর্কিত। লেট চাংশিংজিয়ান (পারমিয়ান)সময়ের আগ্নেয়গিরির ছাই থেকে নির্ণীত বয়স ও Lystrosaurus মেরুদণ্ডী ফসিল এর স্তর থেকে নির্ণীত সময় এর হিসাবে সামুদ্রিক ম্যাস এক্সক্টিংশান (mass extinction) থেকে ৩৪০ হাজার বছর বেশি পুরনো। তাই আচরণগত ভাবে হোক বা ভৌতিক, ম্যাস এক্সক্টিংসানের (mass extinction) মেকানিজম যে ভাবেই হোক না কেন Lystrosaurus নামক চতুষ্পদ প্রাণীর ফসিল গুলো কিছুতেই পারমিয়ান ট্রিয়াসসিক সামুদ্রিক ম্যাস এক্সক্টিংসান এর সমসাময়িক নয়।

অন্য একটা গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে Glossopteris  নামক এক প্রজাতির গাছ ধ্বংস হওয়াকে স্থলভাগের গন বিলুপ্তির প্রমাণ হিসাবে উপস্থাপক করা হয় । এই স্থলভাগের গন বিলুপ্তির এর সাথে সামুদ্রিক ম্যস এক্সক্টিংসানের তুলনা করলে দেখা যায় যে সামুদ্রিক ম্যস এক্সক্টিংসানের ৩৭০ হাজার বছর আগে স্থলভাগের গন বিলুপ্তির শুরু হয়েছে, যা কিনা সাইবেরিয়ার আগ্নেয়গিরির উদ্গিরনের শুরুর সমসাময়িক। কিছু স্পোর-পোলেন ও ইনডেক্স ফসিল সাহায্যে সম্পর্ক স্থাপন করে দেখা যায় যে  দক্ষিণ আফ্রিকার কারু বেসিন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সমসাময়িক ঘটনার প্রমাণ আছে।

এভাবে দেখা যায় যে, দক্ষিণ আফ্রিকার কাড়ু বেসিন থেকে প্রাপ্ত চতুষ্পদী প্রাণীর ফসিল দিয়ে সামুদ্রিক ম্যাস এক্সটিংসান ও স্থলভাগের  ম্যাস এক্সটিংসান এর ঘটনা দুটিকে সমসাময়িক ঘটনা বলা হত সেটা আর থাকছে না। বরং সামুদ্রিক ম্যাস এক্সটিংসান (mass extinction) ও স্থলভাগের  ম্যাস এক্সটিংসান (mass extinction) দুটি সম্পূর্ণ পৃথক ঘটনা যাদের মধ্যে কমপক্ষে ৩০০ হাজার বছরের ব্যাবধান রয়েছে।