Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস Natural Gas of Bangladesh

Spread the love

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস Natural Gas of Bangladesh

বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিক গঠন বঙ্গীয় অববাহিকার( Bengal Basin ) অন্তর্গত । বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাংশে খননকার্য করার সময় প্রাচীন বিভিন্নতর বিভিন্ন শিলাস্তরের সন্ধান পাওয়া গেছে, যেমন মেসোজোয়িক ও প্যালিওজোয়িক স্তরসমষ্টি  প্রি – ক্যামব্রিয়ান  ভিত্তিস্তরের সন্ধান পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভূতাত্ত্বিক পরিবেশে, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ সমূহ হচ্ছে : Natural Gas প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা, চুনাপাথর, কঠিন শিলা ,নুড়িপাথর, কাঁচাবালি, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত চিনা মাটি, ইটের মাটি,  গণ্ডশিলা ( Boulder) এবং পিট।

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস ( Natural Gas) :

বিজ্ঞানের ভাষায় স্বাভাবিক চাপ ও তাপে  গ্যাস বা বাষ্পাকারে অবস্থিত হাইড্রোকার্বনকে প্রাকৃতিক গ্যাস বলে ।বাংলাদেশকে সবসময়ই প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ একটি দেশ হিসেবে বিবেচিত করা হয়েছে। প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের বৃহত্তর সিলেট, বৃহত্তর কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাওয়া গেছে।

সম্প্রতি বঙ্গোপসাগর উপকূলে ও প্রাকৃতিক গ্যাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

Use of Natural Gas বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার:

অর্থনীতিতেবাংলাদেশের  প্রাকৃতিক গ্যাসের ভূমিকা অপরিসীম। সাধারণত গৃহস্থলির রান্নাবান্নার কাজে, কলকারখানায় ( ধাতুমলবিদ্যা, মৃৎশিল্প, কাচ, রুটি বিস্কুট কারখানা, পাওয়ার স্টেশন, সিস্টিম বয়লার ইত্যাদি ) ও কৃষিতে (শুল্ক ও তপ্তকরণ এবং সিস্টিম বয়লারের জ্বালানি হিসেবে) ব্যাপকভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।

তাছাড়া রাসায়নিক বিভিন্ন শিল্পে ,প্লাস্টিক, রজন ,রবার ,কার্বনব্ল্যাক, নির্মল ( detergent), অ্যামোনিয়া ও নাইট্রিক এসিডের মতো বিভিন্ন রাসায়নিক প্রস্তুতিতে ও  প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয় l 

পরিসংখ্যান বলতেছে, ২০২১  সাল পর্যন্ত বাংলাদেশেে  ২৯টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে ( সর্বশেষ ২০২১ সালে সিলেটের জকিগঞ্জে)।  এই আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র গুলোর মধ্যে দুইটি বঙ্গোপসাগরের উপকূলে এবং অবশিষ্ট গ্যাস ক্ষেত্রগুলি বাংলাদেশের ভূভাগের পূর্বদিকে অবস্থিত। আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রসমূহে প্রায়  ২৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ  আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং এর উত্তোলনযোগ্য প্রায়  ১১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট।

২০১০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হয়েছে এবং অবশিষ্ট মজুদ আছে প্রায়১২.১ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এই প্রাকৃতিক গ্যাস ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১০০০থেকে ৩৫০০  মিটার গভীরতায় পাওয়া গেছে। এসব গ্যাসক্ষেত্রে কন্ডেনসেটের উপস্থিতি অল্প থাকায়  এদের শুকনো গ্যাস বা ( Dry Gas ) বলা হয় l 

ভূ-বিজ্ঞানের ভাষায়, যেসব গ্যাসক্ষেত্রে, গ্যাসের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কন্ডেনসেট পাওয়া যায় তাকে  ভেজা গ্যাসক্ষেত্র ( Wet Gas ) বলে । বাংলাদেশের ভেজা গ্যাসক্ষেত্র সমূহ হচ্ছে: বিয়ানীবাজার গ্যাসক্ষেত্র ( প্রতি মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসে ১৬ ব্যারেল কন্ডেনসেট) , চট্টগ্রামের জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্র, ( প্রতি মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসে ১৫ ব্যারেল কন্ডেনসেট) ,কৈলাশটিলা গ্যাসক্ষেত্র ( প্রতি মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসে ১৩ ব্যারেল কন্ডেনসেট ) উল্লেখযোগ্য ।

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস

পরিসংখ্যান বলতেছে বর্তমানে দেশের মোট বাণিজ্যিক জ্বালানোর ৭০ ভাগই প্রাকৃতিক গ্যাস দ্বারা মেটানো হচ্ছে । মজার বিষয় হচ্ছে ভবিষ্যতে এই চাহিদার    ৯০  ভাগ এই প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে পূরণ করতে হবে। এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা কোন পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। আমাদের দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে যার  ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় ৪০ শতাংশ।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম সহায়ক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। এর পরেই প্রাকৃতিক গ্যাস সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে সার উৎপাদনে।  যার মোট ব্যবহারের পরিমাণ প্রায় ২৮ শতাংশের কাছাকাছি। শিল্প, গৃহস্থালী, বাণিজ্যিক ও অন্যান্য খাতে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার করা হয় ২২ শতাংশ । দেশের সরকারি ও বেসরকারি  ২৯  টি গ্যাসক্ষেত্র থেকে বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের দৈনিক পরিমাণ  ৯০০ থেকে ৯৩০ মিলিয়ন ঘনফুট ।

প্রাকৃতিক গ্যাস সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত সবচেয়ে বড় উপহার। প্রাকৃতিক গ্যাসের সুষ্ঠু ব্যবহার একটি দেশের অর্থনীতিতে অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে । প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানিতে শীর্ষ দেশ রাশিয়া।রাশিয়ার বৈদেশিক আয়ের একটা বড় অংশ আসে প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি থেকে।

প্রাকৃতিক গ্যাসের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের চাহিদা পূরণ করে আমরাও বিদেশে প্রাকৃতিক প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা লাভ করার মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারি। তাই সবার উচিত প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের সচেতন হওয়া।