Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় Cyclone সিডরের গল্প

Spread the love

ঘূর্ণিঝড় বা Cyclone সিডর।

যাকে ইংরেজিতে বলা হয়, Super cyclonic storm sidr শ্রীলঙ্কান  ভাষা  সিংহলি থেকে সিডর শব্দটি এসেছে যার অর্থ চোখ l সিডর  মূলত ২০০৭ সালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট একটি ঘূর্ণিঝড়ের নাম । এই ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের আকৃতি প্রকার মত হওয়ার কারণে এর নাম সিডর দেওয়া হয়েছিল । এটি ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে চতুর্থ নামকৃত ঘূর্ণিঝড় । এই ঘূর্ণিঝড়ের আরেকটি নাম হচ্ছে, Tropical cyclone 06B .যা ইতিহাসে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে অন্যতম l সাফির-সিম্পসন স্কেল অনুযায়ী  একে ৫ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছিল ।

Cyclone সিডর কত তম Cyclone?

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৬০ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট ৩৫ টি বড় ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোন Cyclone সংঘটিত হয়েছিল ।  তার মধ্যে মারাত্মক পাঁচটি ঘূর্ণিঝড়রের মধ্যে সিডর অন্যতম।

Cyclone বাঘূর্ণিঝড় সিডর এ বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতি

ঘূর্ণিঝড় সিডর বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে ১৫ ই নভেম্বর ২০০৭ সালে আঘাত হেনেছিল । আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে  ঘূর্ণিঝড় সিডরের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৬০ কিলোমিটার। এই ভয়ঙ্কর সিডরের তাণ্ডবে বাংলাদেশের উপকূলে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়েছিল । ১৩ নভেম্বর থেকেই  সারা দেশের আকাশে মেঘ ঘনীভূত হতে থাকে ।  সেই সময়  আবহাওয়া অধিদপ্তর সারাদেশে  ৫  নম্বর বিপদ  সংকেত প্রজ্ঞাপন করেন । এক সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার বা তার বেশি হতে পারে এই সম্ভাবনার কারণে সারাদেশে ১৪ নভেম্বর রাতে ৮ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয় ।ফলশ্রুতিতে রাতের মধ্যেই ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র গুলো মানুষের ভরে যায় । পরের দিন ( ১৫ ই নভেম্বর ) সিডর ধেয়ে আসতে থাকে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে ।

সন্ধ্যাবেলার সঙ্গে সঙ্গে সিডরের ও গতি বাড়তে থাকে । সিডর বাংলাদেশের প্রথম আঘাত হানে সুন্দরবনের দুবলার চরে রাত ৯  টার দিকে । এরপর সিডর ধ্বংসযজ্ঞ চালায় খুলনা ,বরিশাল ,বাগেরহাট,পিরোজপুর, পটুয়াখালী ,ভোলা ,সাতক্ষীরা, লক্ষ্মীপুর ঝালকাঠিসহ দেশের অন্তত ৩১ টি জেলায় । সিডরের তাণ্ডবে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় ।  বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় ।  ফলে সারা দেশে এক বিপর্যয় নেমে আসে । সিডরের তাণ্ডবের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাগেরহাটের   আর  বরগুনা ।

সরকারি মতে, বাগেরহাটে নিহতের সংখ্যা ছিল ৯০৮ জন এবং আহত হন অন্তত ১১ হাজার ৪২৮ জন ।  বরগুনা জেলায় নিহত সংখ্যা ছিল ১৩৪৫ জন এবং নিখোঁজ ছিলেন প্রায় ১৫৬ জন । বাগেরহাটের শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ ,মংলা উপজেলা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ।  এ সময় তীব্র সুপেয় পানির  সংকট দেখা যায় এবং বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ চারিদিকে মারাত্মক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে । সিডর আক্রান্ত এলাকার পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে মানুষদের গণকবর দেয়া হয় । দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য অনেক লাশের পরিচয় পর্যন্ত পাওয়া যায়নি ।

এমনকি পর্যাপ্ত কাপড়ের অভাবে ও মরদেহ পলিথিনে মুড়ে দাফন করা হয়েছিল সেই সময় । সিডর তাণ্ডবের একমাস পরেও ধানক্ষেত, বেরিবাধ বিভিন্ন জঙ্গল, নদীর চর থেকে লাশ এবং লাশের অংশবিশেষ এবং কঙ্কাল উদ্ধার করা হয় । যা ছিল বিভীষিকাময় । সরকারি পরিসংখ্যান মতে এই সিডরে মোট নিখোঁজের সংখ্যা ছিল ১০০১ জন । অনেকেই সিডর আঘাত হানার অনেকদিন পর বাড়িতে ফিরে আসেন।

Cyclone সিডর ২০০৭

Cyclone সিডরে  নিখোঁজ হওয়ার প্রায় সাড়ে ৯ বছর পর বাড়িতে ফিরে আসেন আলী সোহেল নামের  (২৮)এক যুবক কিন্তু তখন তার কোন বাকশক্তি ছিল না । বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার তেঁতুলবেড়িয়া গ্রামের ছেলে হানিফ সিডর হানার প্রায় ১০  বছর পর বাড়িতে ফিরে আসেন । তখন তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন  । এই সিডরের তাণ্ডব ছিল বর্ণনাতীত ভাষায় লিখে প্রকাশ করা কোনভাবেই সম্ভব না।  এই  সিডরের তাণ্ডব যে কতটা ভয়াবহ ছিল সেটা পশ্চিমা মিডিয়া গুলোর দিকে তাকালেই ভালোভাবে বোঝা যায় ।

পশ্চিমা মিডিয়া গুলো এই  সিডরকে – ‘  এ  সিভিয়ার  সাইক্লোনিক  স্টর্ম  উইথ কোর অব  হারিকেন উইন্ডস’ হিসাবে আখ্যায়িত করেছিল । তবে একদিক দিয়ে আমাদের ভাগ্য ভালো যে, সমুদ্রের উপকূলের পানি বেশি প্লাবিত হয়নি । যদি হতো তাহলে মৃত্যুর সংখ্যা আরো কয়েকগুণ পর্যন্ত হতে পারত।

সিডর বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অভিশাপের নাম । সিডর বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের উপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তবুও একটু  সচেতনতা প্রাণহানির সংখ্যা কমাতে  পারে । আমাদের সকলেরই উচিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সর্বদা প্রস্তুত থাকা।