Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

মেয়েদের বিয়ে ও সমাজের মাথা ব্যথা

Spread the love

মেয়েদের বিয়ে ও সমাজের মাথা ব্যথা

মেয়েদের বিয়ে
মেয়েদের বিয়ে

আমার বয়স এখন ২০ বছর। ভার্সিটিতে পড়ি ২য় বর্ষ।বিয়ে নিয়ে ভাবনা ছোট বেলা থেকেই সবার থাকে! লাল বা হলুদ রাঙ্গা শাড়ি পড়ে কপালে কুমকুম হাতে নেইলপলিশ ঠোঁটে লিপস্টিক আর হাতে পায়ে আলতা মেখে মায়ের বিয়ের ঘোমটা মাথায় দিয়ে বউ সেজে বসে থাকার খেলা টা যে আমরা শুরু করি বড্ড ছোট বয়সেই! এটা প্রায় অনেকেরই প্রিয় খেলা! আমার নিজের ও ছিল। তখন মাকে সারা দিন বউ সাজবো বউ সাজবো বলে জ্বালাতন করতাম।আর এরপর যখন ৪র্থ বা ৫ম শ্রেণীর পড়তাম তখন কেউ বিয়ের কথা বললেই লজ্জা পেতাম! 

খুব রেগে যেতাম যখন নানী দাদী রা বলতেন,’মাইয়া তো বড় হইয়া গ্যাছে! অহনও বিয়া দ্যাও না ক্যা?” আর হাসতেন! অথবা নানা দাদারা বলতেন, “ এ মাইয়্যা! ডাঙ্গোর হইয়া গ্যাছো দি!! বিয়া করবি নি মোরে হায়?তোর দাদী/নানী তো বুড়া হইয়া গ্যাছে!”তখন বিয়েটা কে কি যে ভাবতাম নিজেও জানি না ! আর বলতাম জীবনে বিয়েই করবো না । এরপর যখন ৮ম/৯ম শ্রেণীতে পড়তাম তখন ভাবতাম এই তো ইন্টার (এইচ. এস. সি.) পরীক্ষা টা দিলেই হয়তো বিয়ে দিয়ে দিবে আমায়!এস.এস.সি পাস করলাম! কলেজে ভর্তি হলাম।ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার এ যখন পড়ি তখন এক প্রাণের শখা ও হয়েছিল! তাকে নিয়ে জগত গড়েছিলাম। ভাবতাম বিয়েটা কিছু পরে হলেই ভাল।সে স্টাব্লিসড হওয়ার সময় পাবে আর আমার পড়াও একটু আগাবে !

আসলে কাঁচা বয়সের স্বপ্নগুলোও বড্ড কাঁচা হয়। এডমিশন দেই তো তারপর অনার্স থার্ডইয়ারের মধ্যে না হয় বিয়ে করে ফেলবো।এরপর এডমিশন দিলাম। আশপাশ টা বদলাতে শুরু করলো! প্রাণের মানুষটির আচরনও অদ্ভুত মনে হতে লাগলো।হয়তো আমার মানসিকতা পরিবর্তন আসায় এই হাল।একদিন কিছু চরম সত্যের সম্মুখীন হয়ে তাকে আর প্রাণের মানুষের জায়গায় বসাতে পারলাম না! সময় বদলায় আর তার সাথে সাথে বদলায় মানুষ।আমিও বদলে গেলাম খাপ খাওয়াতে শুরু করলাম নিজেকে আসেপাশের সব কিছুর সাথে।আসলে কাউকে ভালবাসা মানে তাকে তার সফলতার পথ দেখিয়ে দেওয়া , ভালবাসা মানে নিজের করে নেওয়া তার সাফল্যকে , ভালবাসা মানে তাকে তার গন্তব্য দেখিয়ে দেওয়া যখন সে শুধু তোমাতেই ভর করে!

ভালবাসা মানে তোমার কষ্ট গুলোকে চেপে রেখে তাকে বলা আমি ভাল আছি তুমি পড়ো, FOCUS ON YOUR CAREER ,আমার নিজের চিন্তায় ডুবে না থেকে তাকে নিয়ে ভাবা তাকে ভাবতে শিখানো সে কি করতে পারে কিভাবে সে ছুঁতে পারে তার সাফল্যকে, তাকে ডানা মেলে উড়তে সাহায্য করার মানে ভালবাসা,আর তার এই উড়ে বেড়ানো দেখে তৃপ্তির হাসির নাম ভালবাসা।ভার্সিটিতে আমার চারপাশে অনেক মানুষ ,অনেক ঘটনা, অনেক সুযোগ সুবিধাও আছে,আছে সময়কাটানোর মত অনেক ব্যবস্থা!ক্লাস করা,সার্ভে করা,ক্যাফেটেরিয়াতে আড্ডা,টারজানের চা খাওয়ার আড্ডা,বটে খাওয়া দাওয়া ,আর সুযোগ হলেই সুইজারল্যান্ড,মনপুরা,গেরুয়া,বিশমাইল,সুইমিংপুলসহ পুরো ক্যাম্পাসে ব্যাটেলিয়ান হয়ে চৈ চৈ করে বেড়ানো!

আর সন্ধ্যা হলেই মুক্তমঞ্চের নানাবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করা! সময় আর কোথায়! তার উপর টিউশন তো আছেই! যদিও কোনো সময় বাকি থাকার রাস্তা একটু ছিল সেটাও ব্লকড! বিয়ে নিয়ে ভাব্বার আর সময় কোথায়!৩য় বর্ষে উঠবো কিছুদিন পর।তাই এখন যেন বিয়ে নিয়ে বাবা মা এর চিন্তাভাবনাই বেশি।আর আমার এখন আর বিয়ে নিয়ে ভাবতে ভাল লাগে না!ভাবি জীবনটা অনেক ছোট সময় খুব অল্প।এই স্বল্প দিনের অল্প সময়ে যদি গ্রাজুয়েশন এর আগেই এই শুভকর্ম সাধন করে ফেলি তবে আমার মত উড়নচন্ডির হয়তো আর গ্রাজুয়েট হওয়া হবে না।কারন আমার কাছে বিয়ে মানে এখন অনেক বড় দায়িত্ব।একটা পরিবারের দায়িত্ব নিজের মাথায় নেওয়া। যার জন্য মানসিক প্রস্তুতি খুবই জরুরী।

যেটা আমার কাছে এই বয়সটা খুবই কম সময় মনে হয়।তারপর দরকার সময়,পরিবারকে সময় দিতে গেলে আমার মাঝে মাঝে মনে হয় নিজের সাথে অন্যায় হয়ে যাবে।যা আমি বাবা মাকে বুঝাতে চাই।আর চেষ্টা করে যাচ্ছি এখনও বোঝানোর জন্য! অব্যাহত থাকবে বিয়ের আগ অবধি…. কারণ জীবনের খানিকটা মানে যে বিয়ের মাঝে লুকিয়ে..

লেখাটা আমার দুই বছর আগের লেখা, এখন আমি ৪র্থ বর্ষের ছাত্রী। বিয়ে নিয়ে ধারনার ঠিক পরিবর্তন হয়েছে কিনা সেটা বিচারের দায়িত্ব পাঠকদের দিতে চাই। আমি এখনও বিয়ে করি নি। বাবা মা আমাকে সুযোগ দিয়েছেন গ্রাজুয়েশন শেষে চাকরির পর বিয়ে করার! তবে হা সব শেষে বিয়ের চিন্তা তো থেকেই যায়! বাবা মা প্রায়ই জিজ্ঞাস করেন আচ্ছা তোর তো অনেক বয়স হলো এরপর বিয়ে করার মত ছেলে পাবি? যদিও এর উত্তর আমার নিজের জানা নেই! তবে হা কিছু রেডিমেট উত্তর আছে! এই যেমন, “ আম্মু এসব বলো না তো! সময় হলে জানতে পারবে!” “ আম্মু , আব্বু , পড়াশুনা করে ভাল জব করলে ভাল ছেলের অভাব হবে না, তোমরা দেইখো!” এমন আরও অনেক শান্তনা মূলক বাক্য আমার কাছে রেডি থাকে।

যাই হোক এসব শুনে বাবা মা আসার আলো পান কিনা জানি না তবে হা নিজেকে খুব ভাল ধাপ্পা বাজ মনে হয়! আর মনে মনে নিজেকে বাহবা দি! Well done! You did it! এখন বিয়ে মানে শুধু নিজের ক্যারিয়ার ভাল হলে হবে তা না! জামাইয়ের সব কিছুও বরাবর হওয়া চাই! এত কিছু ঠিক ঠিক রেখে জামাই যে কেমন হবে সেটা নিয়েও চিন্তা! এত নানাবিধ চিন্তা মাথায় নিয়ে ২ বছর পর আবার লিখতে বসলাম। এখন আর আগের মত টিউশন করি না, ছোট খাটো একটা শাড়ির ব্যবসা খুলেছি । যা নিয়ে অনেক চিন্তা ভাবনা।

হঠাৎ করেই মনে হলো কিছু লিখি নিজের আবেগ নিজের কথা তাই লিখিও। তবে বিয়ে নিয়ে চিন্তা যেন আর শেষ হয় না। মা বাবার থেকে খুব কম চিন্তা আমারও নেই! আগে দেশের প্রেক্ষাপট বুঝতাম না এখন বুঝি।এখানে একটি বিয়ে মানে সারা জীবনের বন্ধন আর সেটা যদি না টিকাতে পারো তবে তার ৯০ শতাংশ দোষ যায় মেয়েদের উপর। তুমি কেন আরও সহনশীল হলে না? কেন তুমি তার নতুন গার্লফ্রেন্ড , পরকীয়া , নতুন বিয়ে মেনে নিলে না। হা আমি জানি যে মেয়ে দের সাথে সে এগুলো করছে তারাও সমান ভাবে দায়ী! তবুও!

তুমি যদি সেচ্ছায় তাকে ছেড়ে দাও তবে দোষ তোমারই হবে! অনেকেই বলে, বিয়ে জীবনে কয়বার হয়? তবে এ সব কিছুই শুধু একটা মেয়ের জন্যই প্রযোজ্য। সমাজ এই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও মেয়েদেরকে সমান চোখে দেখার ক্ষমতা আমাদের হয় নি। অনেকেই বলেন মেয়েদের সমান তাহলে তোমরা কেন পরিবার চালাও না? যে সমাজ শিক্ষা থেকে মেয়েদের দূরে রাখতে চায় আগে বিয়ে দিয়ে দিতে চায় সব সময় একটা মেয়ে কে সে মেয়ে বলে ছোট করে সেই সমাজ ঠিক কোন মুখে এই আবদার করে ঠিক বুঝে উঠি না।

যদি আমরা সত্যিই চাই সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা তবে সবার আগে আমাদের বদলাতে হবে! বদলাতে হবে আমাদের চিন্তার।তাই,বিয়ে হোক সুন্দর , বিয়ে হোক আনন্দের , বিয়ে হোক ভালবাসার, বিয়ে হোক সন্মানের , বিয়ে হোক মানসিক চাহিদার! তবেই না হবে পরিবর্তনের সূচনা!