Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

সুপার সাইক্লোন আম্ফান ( Super Cyclone Amphan ) এর জানা অজানা

Spread the love

সাইক্লোন আম্ফান

পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকেই মানুষের চিরচেনা এক বন্ধুর নাম প্রাকৃতিক দুর্যোগ । এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেই ধ্বংস হয়েছে কতশত সভ্যতা এবং কতশত জনপদ ।প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পরে মাটি চাপা পরেছে হাজারো সভ্যতা। প্রতিটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ আপন বিধ্বংসী মহিমায় যে কোন সভ্যতাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিতে পারে ।

প্রাকৃতিক বিপর্যয় যে কতটা ধ্বংসাত্মক হতে পারে, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ ২০২০ সালের মে মাসের সংঘটিত হওয়া সুপার সাইক্লোন আম্ফান।যা ভারতের উড়িষ্যা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল।আজ আমরা সমগ্র প্রবন্ধতেই সুপার সাইক্লোন আম্ফানের ( Super Cyclone Amphan ) জানা- অজানা বিভিন্ন দিক বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব ।

চলুন প্রথমেই জেনে নেয়া যাক সুপার সাইক্লোন কি?

সুপার সাইক্লোন বলতে বোঝায়,বিভিন্ন সাগর বা মহাসাগরের সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ।সুপার সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড়কে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। কোথাও এদের ডাকা হয় টাইফুন নামে আবার কোথাও টর্নেডো আবার কোন কোন অঞ্চলে এদের হারিকেন নামে ডাকা হয়। তবে, আরব মহাসাগর এবং বঙ্গোপসাগর অর্থাৎ ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়সমূহকে সাইক্লোন (Cyclone) নামে ডাকা হয়।

কোন ঝড়ের বায়ুর গতিবেগ যদি ৬০ কিলোমিটার বা এর কম হয় তবে তাকে সাধারণ ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বিবেচিত করা হয় । অন্যদিকে বায়ুর গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যায় তখন তাকে সুপার সাইক্লোন নামে ডাকা হয় ।ইতিহাস বলতেছে, এখন পর্যন্ত সংঘটিত হওয়া সুপার সাইক্লোনের সর্বোচ্চ বাতাসের গতিবেগ ছিল ২৬০ কিলোমিটার ।

সাইক্লোন আম্ফান

সুপার সাইক্লোন আম্ফান শব্দের আভিধানিক অর্থ আকাশ ।ঘূর্ণিঝড় আম্ফান উত্তর-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি একটি নিম্নচাপ। যা পরবর্তীতে সুপার সাইক্লোনের রূপ নিয়েছিল ।আম্ফান তার পূর্ণ শক্তি নিয়ে ২০মে ভারতের উড়িষ্যায় আঘাত হানে । উড়িষ্যা এর আগে এত বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়নি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে হলেও সত্য ঘূর্ণিঝড় আম্ফান উড়িষ্যায় যে শক্তি নিয়ে আঘাত হেনেছিল তার দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে ২১ শে মে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে, সুপার সাইক্লোন আম্ফান তার প্রকৃত রূপ ধারণ করে। এই দুর্যোগের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলনা পশ্চিমবঙ্গবাসী।

ঘূর্ণিঝড় আম্ফান (Super Cyclone Amphan) সবচেয়ে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ চালায় পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাংশে।

এতে দক্ষিণাংশের পরিকাঠামো সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে পড়েছিল ।সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতা ।গত শতাব্দীতে কলকাতা এর আগে এত বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে ,সুপার সাইক্লোন আম্ফান ছিল গত ২৮৭ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী এবং বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় গুলোর মধ্যে একটি।

এর বিধ্বংসী রূপ এতটাই প্রবল ছিল যে, কলকাতার রাস্তায় বড় বড় গাছ উপরেছিল।ফলশ্রুতিতে, কলকাতার সাথে বিভিন্ন জেলা সমূহের যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল ।পুরো কলকাতা যেন, যোগাযোগ ব্যবস্থায় সড়কপথে পুরো পৃথিবী থেকে একটি বিচ্ছিন্ন শহরে পরিণত হয়েছিল।কলকাতার সড়কগুলোতে ভেঙ্গে পড়েছিল বিভিন্ন ইলেকট্রিকের পিলারসহ ট্রাফিক সিগন্যাল ।পশ্চিমবঙ্গের গ্রামসমূহে আম্ফানের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়েছিল।

সুন্দরবনের কাছাকাছি গ্রামসমূহে বিভিন্ন নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যায়। ফলে গ্রামের পর গ্রাম ভেসে যায় নদীর পানিতে ।চাষের জমিতে ঢুকে পড়েছিল সমুদ্রের নোন জল ফলে কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। সুপার সাইক্লোনের প্রভাবে বিভিন্ন কাঁচা ঘরবাড়ি এবং টিনের ছাউনি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে রাস্তায় নেমে আসে ।এই ঘূর্ণিঝড় এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, সঠিকভাবে এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা জানা যায়নি। আম্ফানের পরবর্তী শহর গুলো যেন একেকটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল ।

টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থা সবকিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল ।তা আবার পুনরায় সচল করতে ভারত সরকারকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। সর্বোপরি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কোন জাতির জন্য কোন সুখকর সংবাদ বয়ে আনে না। বরং প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসে স্বাভাবিক জীবন-যাপন কে ধ্বংস করতে এবং আমাদের ভুলত্রুটি গুলোকে স্বচক্ষে দেখিয়ে দিতে ।যাতে আমরা পরবর্তীতে আমাদের ভুলগুলো সংশোধন করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারি ।সুপার সাইক্লোন আম্ফান ছিল তারই একটি উৎকৃষ্ট প্রমাণ।