Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

বিহারের Bihar মধুবানি চিত্রকলা

Spread the love

বিহারের Bihar মধুবানি চিত্রকলা

মধুবানি হলো বিহার রাজ্যের একটি জেলা,আর মিথিলা এরই একটি অঞ্চল এখান থেকেই উদ্ভব এই মধুবানি চিত্রকলার।এটা ২৫০০ বছরের পুরোনো একটা লোকশিল্প। মধুবানি চিত্রকলা মূলত এসেছে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ রামায়ণ থেকে।প্রাচীন কালে এই মিথিলার রাজা ছিলেন জনক,আর সীতা ছিলেন তার কন্যা।

তিনি সীতার বিবাহ উপলক্ষে নকশা করার জন্য তাঁর চিত্রশিল্পীদের মধুবানি নকশা করার জন্য বলেছিলেন।মধুবানি মূলত মেয়েদের একটা চিত্রকর্ম। গ্রামের মহিলাদের কিংবা মেয়েদের এই চিত্রকর্ম করতে দেখা যেত। তখন সীতার বিবাহ উপলক্ষে সবাই উঠান,ঘর-বাড়ি এর দেওয়ালে, গাছে এই নকশায় ভরে ফেলেছিল।সেই থেকে এর উৎপত্তি।

মূল আকর্ষণ হচ্ছে জ্যামিতিক নকশা আর অনেক গুলো রঙ এর ব্যবহার। আর এর প্রধান লক্ষ্যই ছিল প্রাচীন লোকগাঁথা প্রাঞ্জল করে ফূটিয়ে তোলার প্রয়াস। এভাবে বিহারে চর্চা হতে হতে তা নেপালেও ছড়িয়ে পড়ে। জাপানে একটি জাদুঘর ও গড়ে উঠেছে এই শিল্পকে কেন্দ্র করে। এই মধুবানি চিত্রকলার বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য চোখে পরিলক্ষিত হয় যা,একে অন্যান্য চিত্রকলা থেকে পৃথক করে।

বিহারের Bihar মধুবানি চিত্রকলা বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে

Bihar
বিহারের Bihar মধুবানি চিত্রকলা


প্রতিটা ছবিতেই ডাবল রেখা টেনে বর্ডার বা মার্জিন টানা হয়ে থাকে। এগুলো চালের গুঁড়া থেকে সাদা রঙ দিয়ে করা হয়ে থাকে আবার কালো রঙ দিয়েও করা হয়,ধানের ভুসো অথবা চারকোল (কয়লা) থেকে বানানো হত সেই কালো রঙ।তাছাড়া রঙ মূলত চিত্রশিল্পীরা নিজেরাই তৈরী করে নিত নিজেদের পছন্দসই প্রাপ্তির জন্য।

এই ছবির জন্য কাঠের তৈরী ব্রাশ,কলম,ম্যাচস্টিক,টুইগ ব্যবহৃত হত।কখনো তারা হাতের আঙ্গুল ও ব্যবহার করত।প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহার করা হত যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস হতে উদ্ভূত । যেমন লাল রঙ বানানো হত রক্তচন্দন থেকে,হলুদ,বিভিন্ন ফুল,ধানের গুঁড়া, গাছের পাতা,পরাগ,রঞ্জক,গাছপালা, তুঁতে,নীল ইত্যাদি কাজে লাগানো হত চিত্তাকর্ষক রঙ তৈরীতে।

জ্যামিতিক আকৃতিতে করা ছবিগুলো অনেক জটিল গাণিতিক নিদর্শনের অবতারণা করে।

এই মৈথিলী চিত্রকলার মাধ্যমেই পৌরাণিক কাহিনী,ইতিহাস,ঐতিহ্য,সংস্কৃতি, প্রথা, গল্পগাঁথা, রূপকথা, গ্রামীণ লোকগাঁথা ইত্যাদি বিহার রাজ্যকে ভক্তি, ভালোবাসা,সাহসিকতা আর স্নেহ মমতার চাদরে মুড়ে রেখেছে।রাধা-কৃষ্ণের প্রেম লীলা তাদের হোলি,রাম-সীতার বিয়ে,রাম-সীতার মালা বদল,  রাম-সীতার বনবাস যাত্রা,সীতার পাতাল প্রবেশ,কুরুক্ষেত্রের  যুদ্ধ,লক্ষ্মী,সরস্বতী,শিব, দশভুজা দুর্গাপুজার কাহিনী সবই জীবন্ত হয়ে উঠেছে শিল্পীর নিখুত তুলির ছোঁয়ায়।

চন্দ্র ও সূর্যর মত স্বর্গীয় দেবতাগুলী হত এই চিত্রকলার কেন্দ্রস্থল। ছবি আঁকার কাজ শেষে যদিও বা ফাঁকা জায়গা থাকত সেখানে তারা ফুলেল নকশা-পদ্ম,মাছ,পাখি,ময়ূর,তোতা, নদী, বাঁশ ঝাড় ইত্যাদি দিয়ে ভরে দিত যা তাদের সরলতার পপরিচয় বহন করে।

বিহারের Bihar মধুবানি চিত্রকলার ব্যবহার



মধুবানি চিত্রকর্মগুলি মহিলারা তাদের বাড়ির দেওয়ালে, বিভিন্ন কাপড়ে, গাছে তুলে ধরতেন।এগুলা থেকে তাদের স্বপ্ন,আশা-আকাঙ্খা,মনের চিন্তা-চেতনা ফুটে ওঠত। তখন থেকেই এই শিল্পকর্ম বিহারের উৎসবের প্রাণকেন্দ্র হয়ে উঠতে শুরু করেছিল।বিবাহ সহ আরো অন্যান্য অনুষ্ঠানে এগুলো আঁকার রীতি ছিল।সেখান থেকেই এটি প্রবহবান ছিল।

কিন্তু এটির সবথেকে বড় আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৯৩৪ সালে, যখন বিহারে একটি বড় রকমের ভূমিকম্প হয়েছিল।তৎকালীন সময়ে মধুবানি জেলার ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক  শাসক ছিলেন উইলিয়াম জি আর্চার।তিনি ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি পরীক্ষা করার জন্য সেখানে গিয়ে এগুলা নিজের আয়ত্ত করে নেওয়ার চেষ্টা করেন।

বর্তমানে দেশের সুন্দর রেল স্টেশন গুলোর মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিহারের মধুবনী স্টেশন।এটি ৬৬ তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে বেস্ট ন্যারেশন বিভাগে সেরা শিরোপা জিতে নিয়েছে।প্রায় ১৪ হাজার বর্গফুটের এ স্টেশনটি মধুবানির সাজে সজ্জিত। বসার বেঞ্চ থেকে শুরু করে প্লাটফর্ম এর সিঁড়ি গুলো পর্য‍ন্ত এখন এই নকশার দখলে যার ৮০ শতাংশই মহিলাদের কারুকাজ। বিহারের ৩টি স্টেশনেরই দেওয়াল জুড়ে আছে এক মায়াবী গ্রামীণ জীবনের দৃশ্যপট।মধুবনী জেলার রাস্তাঘাটেও এই চিত্রকর্ম।

রামপট্টি থেকে রাজনগর পর্যন্ত এই ৫ কি.মি. রাস্তা, প্রায় ২০০ শিল্পীর তুলিতে সাত রঙ খেলে যা এখন “মধুবনী সরণী” নামে পরিচিত। পর্যটকদের সেখানে যাওয়ার পথে হাতছানি দিয়ে ডাকে অনেকে আবার গাড়ি থামিয়ে মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে দেখে এই চিত্রকলা।

শহরের জীবন আর রাজ্যের সংস্কৃতি কে ধরে রাখতে পাটনা শহরেও ৩০ টিরও বেশি এলাকা বেছে নেওয়া হয়েছে এই দেওয়াল অঙ্কনের উদ্দেশ্যে,যার কাজ করে যাচ্ছে ৫০০ জনেরও বেশি শিল্পী।

পেইন্টিং এর গন্ডি পেরিয়ে এটি এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে শাড়ি,চাদর,জামার কারুকাজে।আর এসবের পেছনে অবদান রয়েছে ভারতবর্ষের বিখ্যাত কিছু শিল্পীর -ভারতী দায়াল,সীতা দেবী, গঙ্গা দেবী,জগদম্বা দেবী, মহাসুন্দরী দেবী।এনাদের হাত ধরেই বর্তমান প্রজন্ম চিনেছে এই শিল্পকে।