Disaster and Earth Science
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ সমূহের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় একটি পরিচিত নাম । সমুদ্রে সৃষ্ট বৃষ্টি, বজ্র বৃষ্টি ও প্রচণ্ড বাতাস এর ফলে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় । এই ধরনের ঝড়ে সাধারণত বাতাস অনেক দূরে ঘুরতে ঘুরতে সামনের দিকে ছুটে চলে বলে, এর নাম ঘূর্ণিঝড় রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয় ,উপকূলীয় অঞ্চলের লোকজন। বিশেষ করে পটুয়াখালী ,বরিশাল, এবং ভোলা তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য । ঘূর্ণিঝড়ের ফলে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয় ।জলোচ্ছ্বাস দানবীয় আকার ধারণ করে তীরে আছরে পরে ,ধ্বংসযজ্ঞ চালায় । আজ আমরা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে জানব।
এই তালিকার প্রথমে আছে ১৯৭০ সালের ১২ ই নভেম্বর সংঘটিত হওয়া ঘূর্ণিঝড় ।এই ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গতি নিয়ে চট্টগ্রামে আঘাত হেনেছিল। যার গতি ছিল ঘন্টায় ২৪০কিলোমিটার।এই ঘূর্ণিঝড় ১০ থেকে ৩০ ফুট জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টির কারণ হয়েছিল ।ঘূর্ণিঝড়ে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের হিসাব মতে ,এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছিল। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের দিক দিয়ে প্রথম স্থানে অবস্থান করছে। গবাদিপশু সহ অসংখ্য ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশ এর আগে এত বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়নি ।১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়কে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
এই ঘূর্ণিঝড়কে ইতিহাসে উড়িরচরের ঘূর্ণিঝড় হিসেবে ডাকা হয়। এই ঘূর্ণিঝড় ১৯৭০ সালে সংঘটিত হওয়া ঘূর্ণিঝড়ের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম শক্তিশালী ছিল ।এবং এর গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ২৫৪ কিলোমিটার। তাই এই ঘূর্ণিঝড়টি বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি ।তবুও এই ঘূর্ণিঝড়ে কৃষকদের ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় ।অসংখ্য মাঠের পর মাঠ পানির নিচে তলিয়ে যায়।যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলে ।তবে সৌভাগ্যজনকভাবে এই ঘূর্ণিঝড়ে কোন প্রাণনাশের খবর পাওয়া যায়নি।
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে আঘাত হানে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বড় ঘূর্ণিঝড়টি । ঘূর্ণিঝডটির সময়ের ব্যাপ্তি ছিল ১৯৯১ সালের ২৯- ৩০ এপ্রিল । এই ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব এতটাই ভয়াবহ ছিল যে ,ইতিহাসে এই ঘূর্ণিঝড়কে ‘শতাব্দীর প্রচন্ডতম ঘূর্ণিঝড়’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয় । এই ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের বেগ সর্বোচ্চ ছিল ২২৫ কিলোমিটার । এর প্রভাবে উপকূলীয় অঞ্চলে ১২ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে সৃষ্টি হয়েছিল ।বাংলাদেশ সরকারি হিসাব মতে এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ ।তবে বেসরকারি সংগঠনগুলোর মতে এই সংখ্যা আরও বেশি এবং মাছধরা ট্রলার সহ অনেকে সাগরে নিখোঁজ হয়েছিল ।এই দানবীয় ঘূর্ণিঝড়টি ১ কোটি মানুষকে সর্বশান্ত করে দিয়েছিল ।অসংখ্য মৎস্য চাষীরা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল।যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় হিসেবে বিবেচিত করা হয়।
২০০৭ সালের ১৫ ই নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাস একটি স্মরণীয় । কেননা এই দিনে স্বাধীনতা-পরবর্তী অন্যতম ঘূর্ণিঝড় সিডর বাংলাদেশে আঘাত হেনেছিল । ঘূর্ণিঝড় সিডর তাণ্ডব চালায় বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা খুলনা এবং বরিশালে । ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে দানবীয় রূপ ধারণ করে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় ।সেই সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ২২৩ কিলোমিটার । সিডরে প্রাণনাশের ঘটনা কম ঘটলেও ঘরবাড়ি এবং অবকাঠামোগত বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল । সরকারি মতে ঘূর্ণিঝড় সিডরে প্রাণ হারায় প্রায় ৬ হাজার মানুষ ।তবে আন্তর্জাতিক সংস্থা রেড ক্রিসেন্টের মতে এই সংখ্যা ১০ হাজার ।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের নাম আইলা ।একবিংশ শতাব্দীতে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ঘূর্ণিঝড়ের নাম আইলা। ঘূর্ণিঝড় আইলা ২০০৯ সালের ২৫ শে মে খুলনা উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে ।আঘাতের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৯০ কিলোমিটার । ঘূর্ণিঝড় আইলা অন্যান্য ঘূর্ণিঝড় চেয়ে তুলনামূলক দুর্বল ছিল, তাই বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে এই ঘূর্ণিঝড় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল মৎস্য চাষীদের জন্য ।