Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

Spread the love

মহাবিশ্বের (Universe ) সৃষ্টির শুরু বিগ ব্যাং থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া কে মোট ৫ টি অধ্যায়ে সাজানো হয়েছে। আর সব গুলোই বিগ হিস্টরি প্রোজেক্ট এর অনুকরণে সম্পূর্ণ বাংলাতে। এই ৫ টি অধ্যায় পড়লে আপনি জানতে পারবেন বর্তমান পৃথিবী ও মহা বিশ্ব কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায়।



অধ্যায়-১ঃ মহাবিশ্ব (The Universe)

এ অধ্যায়ে আমরা কি কি শিখব?

বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত কিছু কোথা থেকে এসেছে? মানুষ ও প্রাণীকুল সহ আমরা কোথায় যাচ্ছি? বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের ভবিষ্যৎ কি? এমনি হাজার প্রশ্ন ও উত্তর পাওয়ার জন্য Big History Project. এর মাধ্যমে উত্তর পাওয়া যায় যে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড শুরু (Universe) হয়েছিল বিগ ব্যাং এর মহা বিস্ফোরণ এর মাধ্যমে, আরও আলোচনা হবে গ্রহ ও তারকাদের সৃষ্টি তত্ত্ব নিয়ে, পৃথিবীতে কিভাবে প্রাণ সৃষ্টি হল আধুনিক সভ্যতা ও মানুষ সুদূর ভবিষ্যতে কোথায় যাবে?

Big History Project সম্বন্ধে জানতে এই ভিডিওটি দেখুন (ইংরেজিতে)

শুরুতে কি হয়েছিল?

এটা মনে করা হয় যে সৃষ্টির শুরুতে সমস্ত কিছু একেবারেই সাধারণ ও সরল ছিল। সময়ের সাথে সাথে সমস্ত প্রক্রিয়া জটিল থেকে জটিলতর হতে শুরু করে। ঠিক যেমন তাপগতিবিদ্যার তত্ত্ব অনুসারে বলা যায় যে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের (The Universe) এন্ট্রপি প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অধিক বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টি হচ্ছে। বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের এই শুরুর সরলতা থেকে বর্তমান জটিলতা বোঝার জন্য Big History Project কে মোট ৮টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আর এগুলোকে বলা হচ্ছে এক একটি থ্রেসল্ড (Thresould) যা কিনা নতুন কিছু সৃষ্টির এক একটি পর্যায় হিসাবে ভাবা যায়। Big History Project একটি উদ্যোগ যা থেকে আপনি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের (The Universe) শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত ইতিহাস জানতে পারবেন। এর জন্য আপনি যে কোন থ্রেসন্ড থেকে শুরু করতে পারেন। আমরা প্রতিটি থ্রেসন্ড কে একটি অধ্যায় হিসাবে ভাগ করতে পারি। আর এভাবে আপনি বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত ইতিহাস তা হৃদয়ঙ্গম করতে পারবেন।

তাহলে শুরু করা যাক!!!!

গরম ও নয় ঠাণ্ডাও নয়

আমাদের বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড (Universe) মূলত একটি সরল জায়গা। বিশাল মহাশূন্য আসলে শূন্যতা দিয়ে পূর্ণ। যদিও এটা তৈরি হতে কয়েক বিলিয়ন সময় লেগেছে এবং প্রতিনিয়ত জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। যে কোন কিছু সৃষ্টির জন্য একটা নির্দিষ্ট আদর্শ অবস্থার প্রয়োজন হয় আর সেটাকে বলা হয় Goldilocks Conditions. ঠিক যখনই ঐ অবস্থায় পৌঁছে যায় তখনি নতুন কিছু সৃষ্টি হয়।

Goldilocks Conditions

সৃষ্টির গল্প

কোথা থেকে সমস্ত কিছু এসেছে?

বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি সমাজেই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির একটি নিজেস্ব কল্প কাহিনী আছে এটা হতে পারে খুব ছোট অথবা অনেক বেশি কাহিনী নির্ভর কিন্তু সমস্ত কল্প কাহিনী গুলোই মূলত আমাদের পৃথিবীর সৃষ্টি কে ব্যাখ্যা করে। Big History Project এর মাধ্যমেও আমরা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড (Universe) সৃষ্টির রহস্য জানব কিন্তু এটার ভিত্তি হল বিজ্ঞানের ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত যা আবিষ্কৃত হয়েছে তার আলোকে।

বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের শুরু ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে ভিন্ন ভিন্ন কল্প কাহিনীতে

Universe

চীনা কল্প কাহিনীঃ

পাঙ্গু ও বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের ডিম;

চীনা মিথ অনুসারে, শুরুতে বিশৃঙ্খলায় পূর্ণ একটি বিশাল ডিম যেখান থেকে অতিকায় মুণ্ডু হীন দেহধারী গড পাঙ্গু আবির্ভূত হন এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। ধীরে ধীরে সে বড় হতে থাকে এবং ৪৮০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত উচ্চতায় নিজেকে বৃহৎ আকার করেন। তার মাথার অংশ আকাশকে ভূমি থেকে পৃথক করে এবং তার পা ভূমিতে থাকে । যখন সে মারা যায় তার চোখ চন্দ্র ও সূর্যে পরিণত হয়, তার নিশ্বাস হয় বায়ু, তার কণ্ঠ হয় বজ্রপাত, তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ হয় পাহাড় ও পর্বত এবং তার রক্ত পরিণত হয় প্রবাহমান জল ধারা।

Universe

গ্রিক কল্প কাহিনীঃ

টাইটান ও অলিম্পাসের গড;

গ্রিক মিথ অনুসারে, বিশৃঙ্খলায় পূর্ণ অবস্থা থেকে গাইয়া ও উরেনাস এর আবির্ভাব হয় যারা টাইটান দের জন্ম দিয়েছিল। ক্রনাস ও রিয়া নামে দুজন টাইটানের অনেক সন্তান সন্ততি ছিল। অধিক সন্তানদের ভয়ে ভিত হয়ে ক্রনাস তাদের হত্যা করতে উদ্যত হল। জিউস নামে এক সন্তান পিতার বিরুদ্দে লড়াই করে এবং জয়ী হয়। অলিম্পাস পর্বতের শাসন কর্তা হওয়ার মাধ্যমে সে সমস্ত গডের নিয়ন্তা হয়ে যায়। প্রমিথিউস মাটি দিয়ে মানুষ সৃষ্টি করে এবং এথেনা তাতে প্রাণ সঞ্চার করে।

Universe

দক্ষিন আমেরিকার কল্প কাহিনীঃ

বৃহৎ কচ্ছপের পিঠে পৃথিবী;

দক্ষিণ আমেরিকার মানুষ বিশ্বাস করতো, সমস্ত বিশ্ব একটা বৃহৎ জলাশয়ের পূর্ণ ছিল। একটি রূপবতী নারী আকাশ থেকে জলাশয়ে পরে যায় এবং দুটো সাদা হংস তাকে উদ্ধার করে । সমস্ত বিশ্বের শাসক ছিল বৃহৎ কচ্ছপ সে অন্য প্রাণী দের জলের তলদেশ থেকে মাটি আনতে বলে। কিন্তু শুধু মাত্র একটি বয়স্ক ব্যাং তার মুখ ভর্তি মাটি নিয়ে কচ্ছপের পিঠে রাখে। সেই মাটি থেকে বৃহৎ দ্বীপ সৃষ্টি হয় এবং সেই সুন্দরী নারীকে বসবাসের জন্য জায়গা করে দেয়া হয় যে কি আকাশ থেকে বিতাড়িত হয়েছিল।

Universe

জুডো ও খ্রিস্টান মতে কল্প কাহিনীঃ

৬ দিনে সৃষ্টি ৭ দিনে বিশ্রাম ;

খ্রিস্টান ধর্ম মতে, গড স্বর্গ, পৃথিবী, আকাশ, জল, মাটি, গাছ পালা, ও প্রাণী সৃষ্টি করেছেন। ৬ দিনে গড মানুষ সৃষ্টি করলেন বাকি সমস্ত সৃষ্টির উপর কর্তৃত্ব করতে। সব কিছু মানুষের জন্য। তার ৭ দিনে গড বিরাম নেন।

Universe

পপুল ভু কল্প কাহিনীঃ

পপুল ভু ;

বর্তমান মেক্সিকো অঞ্চলের মানুষ এই কল্প কাহিনী তে বিশ্বাসী ছিল। জল ও আকাশের স্রস্টা পৃথিবী ও প্রাণী সৃষ্টি করলেন। প্রাণী রা স্রস্টাকে সঠিক ও যথাযথ সম্মান না করায় তাদের বধকরা হল।তারপর স্রস্টা কাঠ থেকে কীট পতঙ্গ সৃষ্টি করলেন কিন্তু তারা চিন্তাহীন, বোধহীন ও আবেগ হীন, তাই তাদেরকে হত্যা করা হল। তারপর সৃষ্টি করা হল মানুষ কে শস্য থেকে এবং পরিপূর্ণ চিন্তাশীল ও সঠিক সম্মান প্রদর্শক।

Universe

আধুনিক বিজ্ঞানের ভিত্তিতে সৃষ্টি তত্ত্ব

আধুনিক বিজ্ঞান ;

হঠাৎ, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের (Universe) সমস্ত শক্তি ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে একদা বিস্ফোরণ হল। সেই শক্তি থেকে সৃষ্টি হল সমস্ত পদার্থ , ভর ও নক্ষত্র। এই বিস্ফোরণ সৃষ্টি করলো গ্যালাক্সি ও পৃথিবী। তারপর জল সৃষ্টি হল সেখান থেকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হল এক কোষী প্রাণী। তারপর বহুকোষী প্রাণী তারপর গাছপালা তারপর জীব জন্তু। এরপর আরও জটিল প্রক্রিয়ায় ১০০০০০ বছর পূর্বে মানুষের বিবর্তন হল তাদের পূর্ব সূরি বানর বা শিপাঞ্জি থেকে।।

বিগ ব্যাং

মুহূর্তেই সমস্ত কিছু সৃষ্টি হল বিগ ব্যাং ভিডিও (ইংরেজিতে)

কল্পনা করুন কোন কিছু যা কিনা অপল্পনীয় ভাবে অতি ক্ষুদ্র অতি ঘনত্বের ও অতি মাত্রায় উত্তপ্ত। তারপর হঠাৎ, বিস্ফোরণ !!! তারথেকে সমস্ত মহাশূন্য, সময় ও সমস্ত অণু পরমাণুর সৃষ্টি। এখন পর্যন্ত যা জানা যায় যে, এক সেকেন্ডের কয়েক লক্ষ ভাগের ও কম সময়ে সমস্ত মহা বিশ্ব অত্যধিক গতিতে বিস্ফোরিত!! সেই ক্রম বর্ধমান প্রসারণ প্রক্রিয়ায় পারমানবিক কণা গুলো ও কিছু মৌলিক বল সৃষ্টি হয়েছে। তারপর নাটকীয় ভাবে ঠাণ্ডা হয়ে ১ বিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস এ পৌছায় এবং ভর ও শক্তি দৃশ্যমান হয়। তারপরে, ১৬৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় প্রথম হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম অণু গঠিত হয়। এরপরে একটা মজাজাগতিক অন্ধকার যুগের সৃষ্টি হয় পরবর্তী ২০০ মিলিয়ন বছর। এভাবে ক্রম বর্ধমান প্রসারণ প্রক্রিয়া আরও জটিল অণু গঠন করে ও মৌলিক উপাদান তৈরি করে যা কিনা সমস্ত ব্রহ্মাণ্ড ব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে কণা গুলো একে ওপরের থেকে আলাদা হয়ে একটি ঘনত্বের ধোয়া তৈরি করে। তবে এই ধোঁয়া সর্বত্র সমান ভাবে সম ঘনত্বের নয়। এভাবে দূরত্বের অসমন্নয়তার কারণে নিজের মধ্যে মধ্যা আকর্ষণ বল পুঞ্জিভূত করে । আর ঠিক এভাবেই কোন একটি অতি ক্ষুদ্র কণা থেকে জটিল সব কিছু সৃষ্টি হয়।

মহাশূন্য থেকে রহস্যজনক শব্দ

Universe

কয়েক দশক ধরে বিস্তর গবেষণার পর কয়েকজন বিজ্ঞানী প্রস্তাব করেন যে, মহাবিশ্ব প্রসারণশীল। বিগ ব্যাং থিওরি আবিষ্কারের পর এর পক্ষে সঠিক প্রমাণ উপস্থাপন করা বেশ প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। ১৯২০ সালে জর্জ লিমিত্রি প্রথম বিগ ব্যাং থিওরি প্রস্থাব করেন। সেই সময় এমনকি বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী আইন স্টাইন ও এটা বিশ্বাস করতে পারেনি।

১৯২৯ সালে যখন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডুইন হাবল গ্যালাক্সি গুলোর একে ওপরের থেকে গতিশীল ভাবে দুরে সরে যাওয়ার গতি বিধি পর্যবেক্ষণ করেন, তখন ও কিছু বিজ্ঞানী এটাকে অবিশ্বাস করেন।

১৯৬৪ সালে, আমেরিকার নিউ জার্সির দুজন বিজ্ঞানী, আরনো পেঞ্জিয়াস ও রবার্ট উইলসন অতি সংবেদনশীল রাডার এন্টেনা স্থাপন করেন যাতে মহা শূন্য থেকে কিছু শব্দ শুনতে পান। এবং আশ্চর্য হয়ে যান যে যেখানেই তারা রাডার স্থাপন করেন সেখানেই একই খুব নিম্ন কম্পাংকের একটি হিস শব্দ শুনতে পান। এ শব্দটি এমন যে সুদূর মহাবিশ্বে নক্ষত্র ও গ্যালাক্সি গুলো একে অপর থেকে দুরে চলে যাচ্ছে। পরবর্তীতে, তাদের সহকর্মী প্রস্তাব করেন যে, এই হিস শব্দটি মহাবিশ্বের প্রসারণের সাথে সম্পর্কিত, গাণিতিক সমীকরণ থেকে দেখা যায় যে, মহা বিশ্বের শুরুতে যে বিপুল শক্তিতে বিস্ফোরণ তা এই অতি নিম্ন কম্পাংকের ও হিস শব্দের অনুরূপ হবে। এভাবে বিগ ব্যাং থিওরির গাণিতিক প্রমাণ করা হয়েছিল বিংশ শতাব্দীতেই।

ক্ষুদ্র ও বৃহৎ স্কেল সম্বন্ধে জানুন ভিডিও (ইংরেজিতে)

খালি চোখে বৃহৎ গ্যালাক্সি দেখা অথবা অতি ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক প্রোটন কে অথবা স্পেস টাইম সম্বন্ধে ধারনা করা একটি খুবগুরুত্ব পূর্ণ আমাদের বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করার জন্য।

প্রথম নক্ষত্রের সৃষ্টি

একটি আতশবাজি ফুটানোর পর সেটা আবার নিভে যায়। তারাদের জীবন চক্র তেমনি। একটি তারা বা নক্ষত্র সৃষ্টি হবার পর তার একটি নির্দিষ্ট জীবন কাল আছে। আকাশে নিহারিকা মণ্ডলে অগণিত তারা বা নক্ষত্র। বিগ ব্যাং এর পরে মহাকর্ষীয় বলের প্রভাবে ধূমায়িত আণবিক পদার্থ গুলো পুঞ্জি ভুত হয়ে প্রতিটি নক্ষত্র গঠন করে। এর পর ফিউশন প্রক্রিয়ায় অনবরত আলো বিকিরণ করে আনুমানিক কয়েক ট্রিলিয়ন বছর ধরে। এরপর একটি বিশাল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নক্ষত্রটি পতন ঘটে। কিছু কিছু নক্ষত্র এত বড় আর ঘনত্ব বেশি যে এগুলো জীবন কাল তুলনা মূলক কম। আবার কিছু কিছু নক্ষত্রের আয়ুষ্কাল বেশি হয় এবং ধির গতিতে মৃত্যু হয় যেমন আমাদের সূর্য। সুপারনোভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে  একটি নক্ষত্রের মৃত্যুর ধ্বংসাবশেষ থেকে নতুন মৌলিক উপাদান তৈরি হয় তার মানে পুনরায় নতুন মৌলিক উপাদান তৈরি হয় এবং নতুন নক্ষত্র তৈরি হয়। এভাবে নক্ষত্র গুলো জীবন চক্র অতিবাহিত করে।  

নতুন নক্ষত্র সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রথমে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাগুলো একে ওপরের দিকে আকর্ষিত হয়ে জমাট বাঁধে , ক্ষুদ্র গিট এর মত তৈরি হয়, তারপর অধিকতর বৃহৎ হতে হতে বিশাল নক্ষত্রের সৃষ্টি হয়। এভাবে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গুলো অধিক ঘনত্বে জমা হতে হতে তাপ উৎপন্ন করে ঘটনাক্রমে, এটা তাপীয় প্লাজমা তৈরি করে এবং চতুর্দিকে মুক্ত প্রোটন ভাসতে থাকে এবং এক বিশাল প্রটোস্টার তৈরি করে। মধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রটোস্টার টির কেন্দ্রে আরো বেশি সংকুচিত করে ফেলে। এভাবে নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়া শুরু হয় যেখানে অধিক তাপ ও উজ্জ্বলতা সম্পন্ন একটি নক্ষত্র তৈরি হয়ে যায়।

Universe

মধ্যাকর্ষণ শক্তি কি?

গাছ থেকে আপেল পড়ে যাওয়ার ঘটনার মাধ্যমে আইজাক নিউটনের মধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কারের ৩০০ বছর পরেও আমরা মধ্যাকর্ষণ শক্তি শক্তি সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অবগত নই।

মধ্যাকর্ষণ শক্তি সূত্র অনুসারে, যখন দুটি বস্তু এটা হতে পারে আপেল এবং পৃথিবী অথবা চন্দ্র এবং পৃথিবী অথবা মহাবিশ্বের (Universe) যে কোন দুটি অতি ক্ষুদ্র বস্তুর মধ্যে একে ওপরের প্রতি আকর্ষণ বল অনুভব করে। বস্তু দুটি যদি বড় এবং অধিক ঘনত্বের হয় তবে তাদের মধ্যে আকর্ষণ বল বেশি। বৃহৎ পৃথিবী আমাদের শরীরকে তার কেন্দ্রের দিকে সদা টেনে নিয়ে যাচ্ছে। পৃথিবীর ঘূর্ণন জনিত কারণে আমরা দুরে ছিটকে পড়ি না কারণ আমাদের প্রতি পৃথিবীর এই মধ্যাকর্ষণ শক্তি সাম্যবস্থা তৈরি করেছে। অন্য দিকে আমাদের শরীরটাও পৃথিবীর প্রতি খুব ক্ষুদ্র মধ্যাকর্ষণ শক্তি তে টেনে ধরেছে।

মধ্যাকর্ষণ শক্তি মহাবিশ্বের (Universe) একটি মৌলিক বল

নিউটনের গতির তিনটি সূত্র, পরে জোহান কেপলারের বিস্তৃতভাবে মহাকর্ষীয় গতি সূত্র এবং মধ্যাকর্ষণ শক্তি আবিষ্কার আমাদের এই মহাজাগতিক বিদ্যাকে আরও গতিশীল করেছে।

নক্ষত্রের জীবন চক্র

মৌলিক উপাদান ও ভরের সৃষ্টি প্রক্রিয়া

নতুন মৌলিক উপাদান সৃষ্টি

মহাবিশ্বের (Universe) জটিল থেকে জটিলতর অবস্থার পরিণতি

নক্ষত্র গুলো খুব খাদক। প্রচণ্ড গতিতে প্রজ্বলিত একটি নক্ষত্র মূলত নিউক্লিয়ার ফিউশন বিক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্ত হাইড্রোজেন গুলোকে নিঃশেষ করে ফেলে। এরপর নক্ষত্র গুলো নাটকীয় ভাবে পরিবর্তন হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় তাপীয় অংশ সংকুচিত হতে থাকে। এটা আরও বেশি তাপ ধারণ করে। এই প্রচণ্ড তাপ ও চাপ অন্য একটি নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া শুরু করে এবং নতুন নতুন ভারী মৌলিক উপাদান তৈরি করে। যেমন কার্বন, সিলিকন, অক্সিজেন, ও অন্যান্য উপাদান যতক্ষণ পর্যন্ত না এটা ভারী মৌল যেমন লোহা তৈরি শুরু করে। লোহা হল ভারী, স্থায়ী ও ফিউশন বিক্রিয়ায় অংশ নেয় না।

এরপর একটি দুর্যোগ মুহূর্ত চলে আসে যখন নক্ষত্রের কেন্দ্র থেকে কোন শক্তি র উৎস থাকে না এবং নক্ষত্র টি ভেঙ্গে যেতে থাকে। ভারী কেন্দ্রের মধ্যাকর্ষণ শক্তিতে নক্ষত্রের বাইরের স্তর গুলো কেন্দ্রে ভেঙ্গে পড়ে। এই বিপুল শক্তিতে নতুন উপাদান সৃষ্টি হয়। এই নতুন উপাদান গুলো কেন্দ্রের লোহা সমৃদ্ধ উপাদান গুলোকে স্থানান্তরিত করে মহাশূন্যে বিস্ফোরিত হয়। এভাবে একটি বিশাল বিস্ফোরণের মাধ্যমে নক্ষত্রটির মৃত্যু ঘটে- যা একটি সুপারনোভাতে পরিণত হয়- এবং মহাজাগতিক ভাবে নতুন উপাদানগুলোর সৃষ্টি হয়।

সামস্টিক শিক্ষা ব্যবস্থা

নতুন নক্ষত্র গুলো রাতারাতি উজ্জ্বল দীপ্ত হয়ে আলো দেয়না। বহু মৌলিক উপাদান গুলো ধীরে ধীরে কাছে এসে তারপর একটি পরিপূর্ণ নক্ষত্র গঠন করে। বিভিন্ন ভাবে আমাদের সামস্টিক শিক্ষা ব্যবস্থা তেমন ই। আমরা রাতারাতি সব কিছু শিখে যাই না। বর্তমান পৃথিবীতে জ্ঞানের প্রসারের জন্য দরকার সামস্টিক শিক্ষা। অর্থাৎ আমেরিকার জ্ঞান বিজ্ঞান বাংলাদেশ তথা অন্য দেশ ব্যবহার করবে তেমনি বাংলাদেশ ও আমেরিকা কে নতুন কিছু দিতে পারে এভাবে বিশ্ব দ্রুত এগিয়ে যায়।

জ্ঞান সৃষ্টি হবার পর, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বহমান থাকে। প্রথমত চীনা জ্যোতির্বিদ ১৮৫ BCE এবং মুসলিম জ্যোতির্বিদ ১০০৬ সালে কিছু সময়ের জন্য হঠা ৎ প্রজ্বলিত একটি নক্ষত্র দেখতে পান যেটা আবার দ্রুত নিভে যায়। ইতালি, চীন, ও কোরিয়া ১৬০৪ সালে আরও কয়েকটি ঘটনা দেখতে পান। তারপর সারা বছর ব্যাপী পর্যবেক্ষণ করে জোহান কেপলার একটি ধারাবাহিক বর্ণনা সমৃদ্ধ বই প্রকাশ করেন যা রসায়ন বিজ্ঞান উন্নতিতে ও ভূমিকা রেখেছে।

পর্যায় সারণি