সুন্দরবন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ
সুন্দরবন হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম। পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত।
সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার (৬২%) রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ (৩৮%) রয়েছে ভারতের মধ্যে।
উদ্ভিজ্জ সুন্দরবনের গাছপালার অধিকাংশই ম্যানগ্রোভ ধরনের এবং এখানে রয়েছে বৃক্ষ, লতাগুল্ম, ঘাস, পরগাছা এবং আরোহী উদ্ভিদসহ নানা ধরনের উদ্ভিজ্জ। অধিকাংশই চিরসবুজ হওয়ার কারণে এদের সবার শারীরবৃত্তিক ও গঠনগত অভিযোজন কমবেশি একই রকম। অধিকাংশ বৃক্ষের আছে ঊর্ধ্বমুখী শ্বাসমূল যার সাহায্যে এরা শ্বসনের জন্য বাতাস থেকে সরাসরি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে।
এ বনের প্রধান বৃক্ষ প্রজাতি সুন্দরী এবং গেওয়া। ১৯০৩ সালে ডি. প্রেইন সুন্দরবনের গাছপালার উপর লিখিত তাঁর গ্রন্থে ২৪৫ গণের অধীনে ৩৩৪টি উদ্ভিদ প্রজাতি লিপিবদ্ধ করেছেন; এর মধ্যে ১৭টি ফার্নজাতীয় ৮৭টি একবীজপত্রী এবং অবশিষ্ট ২৩০টি দ্বিবীজপত্রী। প্রজাতিগুলির মধ্যে ৩৫টি শিমগোত্রীয়, ২৯টি তৃণজাতীয়, ১৯টি হোগলাজাতীয় এবং ১৮টি সিজজাতীয় উদ্ভিদ অন্তর্ভুক্ত। আজ পর্যন্ত জানা প্রায় ৫০টি প্রকৃত ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে কেবল সুন্দরবনেই আছে ৩৫টি প্রজাতি। অধিকাংশ ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ চিরসবুজ, খাটো, গুল্মজাতীয় অথবা লম্বা বৃক্ষজাতীয়। এদের অনেকেই বনের তলদেশ খালি না রেখে সাধারণত দলবদ্ধভাবে জন্মায়।
ভূতত্ত্ব উৎপত্তির দিক থেকে সুন্দরবনের ভূভাগ সাম্প্রতিককালের এবং হিমালয় পর্বতের ভূমিক্ষয়জনিত জমা পলি থেকে এর সৃষ্টি। ভূগঠন প্রক্রিয়াটি সাগরের জোয়ারের কারণে ত্বরান্বিত হয়েছে। এর নিম্নস্তর প্রধানত কোয়াটারনারি যুগের তলানিতে গঠিত, যার সংমিশ্রণ ঘটেছে বালি, পলি, সামুদ্রিক লবণ এবং কাদামাটির সঙ্গে। ভূতত্ত্ববিদগণ এখানকার ভূগঠনবিন্যাসে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সামান্য ঢালের সন্ধান পেয়েছেন এবং সেসঙ্গে টারসিয়ারি সময়ে সংঘটিত বাংলার অববাহিকার ঝুকানো অবস্থা শনাক্ত করেছেন।
দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীতে সংঘটিত নব্য-ভূগঠনিক আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বেঙ্গল বেসিন পূর্বমুখে ঝুঁকে পড়ে। সন্ধানমূলক কূপ খনন গবেষণা থেকে প্রতীয়মান হয় যে সুন্দরবনের পশ্চিম এলাকা অপেক্ষাকৃত সুস্থিত হলেও দক্ষিণ-পূর্ব কোণার অংশ একটি সক্রিয় পলিজ এলাকা এবং ক্রমে তা নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে।
এছাড়াও সুন্দরবন আমাদের ননান ভাবে সাহায্য করে থাকে।
যদি এই সুন্দরবন না থাকতো, তাহলে বাংলাদেশ অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে যেত। কেননা এই সুন্দর বন প্রতি বছর অনেক বড় বড় ঝড়,ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদির মতো পাকৃতিক সূযোগের সাথে মোকাবেলা করে আমাদের অস্তিত্ব ঠিকিয়ে রেকেছে।আর এর ফলে প্রত্যেক বছর এই সুন্দরবনের প্রায় ৪০% ক্ষতি হয়। শুধু তাই নয় এই সুন্দর বন আমাদের জন্য আশ্বীরবাদ স্বরুপ এই এলাকার গৃহহীন অনেক মানুষ এই বন থেকে জীবিকা নির্ভর করে। পাশাপাশি এই বন থেকে কাঠ সংগ্রহ করেও অনেকে জীবিকা নিভর্র করে।সুন্দর বন যেই ভাবে আমাদেরকে পাকৃতিক সূযোগ থেকে রক্ষা করে এটা অতুলনীয় যা অন্য কোন কিছু দিয়ে এই দূযোগ মোকাবিলা করা খুব কষ্ট সাধ্য বিষয়। সর্বপরি আমরা যদিও আমাদের এই বনকে সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব একান্তই আমাদের। এর পাশাপাশি আমরা আমাদের স্থানীয় প্রশাসনকে অবগত করতে পারি যাতে এই বনের অস্তিত্ব ঠিক থাকে।
গাছপালা কেউ যেন অপ্রয়োজনে না কাটে। এ ছাড়াও এই বনে অনেক প্রাণি আছে যা এখন সারা বিশ্বেও বিরল। কোথাও দেখা যায় না বললেই চলে।
এছাড়াও আমাদের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার এই বনেই বসবাস করে।
তাই আমাদের এই অরিন্দম সুন্দর যা বৃহওর পৃথিবীর তিনটির মধ্যে একটি আমাদের এই সুন্দরবন। যা আমাদের জাতিসত্বার পরিচয় বহন করে এছাড়া নানানভাবে আমাদের পাকৃতিক সূযোগ থেকে রক্ষা করে তাই এটিকে আমরা আমাদের সবটা দিয়ে রক্ষা করার দায়িত্ব একান্তই আমাদের।
More Stories
ভূমিকম্প প্রতিরোধে করণীয়
প্লেগ রোগের উৎপত্তি কোথায়: ইতিহাসের ভয়াবহ ব্লাক ডেথ প্লেগ মহামারী
Raman Kumar Biswas এর নতুন বই প্রাগৈতিহাসিক দুর্যোগ ও গণবিলুপ্তির উপাখ্যান বইমেলা ২০২৩ এ প্রকাশিত