Colorgeo.com

Disaster and Earth Science

অলৌকিক ঘটনা: গাছ থেকে রক্ত বের হচ্ছে বিশ্লেষণ চন্দন প্রতাপ মাগুরা

Spread the love

অলৌকিক ঘটনা: গাছ থেকে রক্ত বের হচ্ছে চন্দন প্রতাপ, আঠার খাদা, মাগুরা

চন্দন প্রতাপ গ্রামে একটি অলৌকিক ঘটনা ঘটে ২৩ তারিখ সোমবার ডিসেম্বর মাস ২০১৪ সাল। গাছের শরীর থেকে রক্ত বের হচ্ছে এবং কয়েকজন লোককে গাছ উপরে টেনে নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে তারা প্রাণে বেঁচে গিয়েছে এই অলৌকিক ঘটনার প্রেক্ষিতে অত্র এলাকায় পুরোদস্তুর পূজা অর্চনা মেলা বসেছে। মতুয়া সম্প্রদায় তো আরো একধাপ এগিয়ে। তারা সারাদিনব্যাপী ঢাক ঢোল বাজিয়ে নৃত্য করেছে। তিলকে তাল করা হয়েছে। সম্পূর্ণ একটি কাকতালীয় ঘটনা। অলৌকিক বিশ্বাসে বিশ্বাসী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ নেমেছে মাঠে । বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। মাঠের মধ্যে একটি শিমুল গাছ স্থানীয় ভাষায় যাকে বলে মাদার গাছ কাটা কে কেন্দ্র করে এই মহাযজ্ঞের আয়োজন। 

অলৌকিক ঘটনা

এটা অলৌকিক কোনো ঘটনা হতে পারে তবে এর কোন প্রত্যক্ষ সাক্ষী নেই। সবাই নাকি শুনেছে। কেউ বলছে আমি শুনেছি, কেউ বলেনি আমি দেখেছি। অনেকের মুখে এসব গল্প শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ বলছে রক্তের মত কিছু একটা দেখা গেছে আবার কিছু মানুষ আরো এক ধাপ এগিয়ে, তারা বলছে গাছ থেকে প্রচুর রক্ত বের হয়েছে। অনেকে নাকি ছবিও তুলেছে মোবাইলে।

গল্পেটা একেবারেই সাধারণভাবে শুরু হয়েছিল। একটি পরিবারের পুরাতন ভিটে মাটিতে অবস্থিত শিমুল গাছ। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় মাদার গাছ বা পাকড় গাছ কাটা কে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। গাছটি বিক্রি করা হয়েছিল। ওই গাছের আশেপাশেই কোথাও হয়তো অতীতে পূজা অর্চনা করা হতো বলে দাবি করা হয়, দোল পূজা। (কথাটার সত্যতা যাচাই করা দরকার আদেও দোল পূজা হতো কিনা)।

যাইহোক যেহেতু গাছ বিক্রি হয়ে গিয়েছে। গাছ কাটার জন্য কিছু লোক দরকার যাকে বলা হয় গাছি। স্থানীয় গাছিরা কেউ নাকি গাছ কাটতে আগ্রহী হয়নি। তাই বাইরে থেকে কয়েকজন ব্যক্তিকে আনা হয় গাছ কাটার জন্য। তারা অচেনা বলে গাছ কাটা শুরু করে এক পর্যায়ে জিন্না নামধারী একজন তাদের গাছ কাটতে নিষেধ করে জিন্নাকে বলা হলে জিন্না বলে যে আমি গাছ কাটতে নিষেধ করব কেন? গাছ কি আমার আমি নিষেধ করার কে ? তখন গাছীরা ধারণা করে নেয় যে হয়তো গাছ তাদেরকে নিষেধ করছে। তবুও তারা গাছ কাটা শুরু করে এবং একজন করে গাছ কাটতে যায় এবং দুর্বল হয়ে যায় এভাবে একে একে সবাই দুর্বল হয়ে যায় একপর্যায়ে চতুর্থ ব্যক্তিকে গাছ ইচ্ছা করেই টেনে ধরে এবং মাঠে কর্মরত অনেকেই তাদের চিৎকারে ছুটে আসে এবং বাঁচানোর চেষ্টা করে পর্যায়ে গাছ তাদের ছেড়ে দেয় মাটিতে পড়ে যায় এবং সবাই অসুস্থ হয়ে যায়।  যদিও আরও কয়েক রকম গল্প শোনা যাচ্ছে কিছুটা এদিক ওদিক করে, কিন্তু মুল গল্পটা একই রকম। সবাই শুনেছে।

অলৌকিক ঘটনা

শোনা যায় যারা গাছ কাটতে গিয়েছিল, যে গাছ বিক্রি করেছে এবং যে গাছ ক্রয় করেছে, সবাই নাকি অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে যদিও তাদের আর খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছে না । ফরিদপুর মেডিকেল হসপিটালে ভর্তি রয়েছে সবাই ।

অলৌকিক ঘটনা যেভাবে চাউর হলঃ

খবর চাউর হয়ে গেলে ধীরে ধীরে মানুষের সমাগম বাড়তে থাকে এবং কিছু অতি উৎসাহী মানুষ গাছ থেকে রক্ত বের হয়েছে শুনে পূজা করা শুরু করে দেয়। ইতিমধ্যেই কিছু সাধু অল্পবসনা বেশধারী দাদুদের আগমন ঘটে যারা গাছটাকে লাল কাপড়ে ঘিরে সুন্দর একটি পরিবেশ তৈরি করে। পূজা শুরু হয়। সবাই ভক্তি ভরে প্রণাম করে এবং দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ আসতে শুরু করে। শোনা যায় ৩০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের আগমন ঘটেছিল। প্রতিদিনই লোকজন আসছে এবং দেখে যাচ্ছে গাছ থেকে রক্ত বের হওয়ার অলৌকিক কাহিনী। যদিও কেউ এখন পর্যন্ত রক্তের সন্ধান পায়নি এটা নিয়ে কেউ কোথাও বলছে না রক্ত দেখিয়ে কেউ বিশ্লেষণ করছে না সবাই বলছে শুনেছি রক্ত বের হয়েছে। যাদেরকে টেনে উপরে তুলে নিয়েছে তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায় না। তাদের আশেপাশে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

ল্যাংটা বাবার আশ্রম থেকে সাধু এসে বলতে শুরু করল গাছের সাথে আমাদের হিন্দু ধর্মের অনেক সখ্যতা রয়েছে। তাই রক্ত বের হলেও হতে পারে! এটা অসম্ভব কিছু নয়! তবে তিনি প্রকাশ্যে রক্ত বের হওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেন। স্বপক্ষে কোন যুক্তি না দেখিয়ে একটু পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা। বিষয়টা এমন যে সবাই এটা নিয়ে তিলকে তাল করুক তিনি সেটা চান। নিজে ঘোষণা দিতে চান না।

অর্থাৎ সমস্ত কিছুই চলছিল একটি শূন্যের উপরে বাস্তবতার থেকে অনেক উপরে অলীক কল্পনায়। যাকে সবাই অলৌকিক বলে দাবি করে ধুয়ো তুলেছে এবং হাজার হাজার মানুষ জড়ো হয়েছে এই অবাস্তব অকল্পনীয় অলৌকিক বানানো উদ্ভট কাহিনী কে আরো বেশি রোমাঞ্চিত করে মঞ্চস্থ করার ।

অলৌকিক ঘটনা

ইতিমধ্যেই মতুয়া সম্প্রদায় বিষয়টাকে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল। তারা সারাদিনব্যাপী দলে দলে বড় বড় ডাঙ্কা বাজিয়ে নৃত্য করতে থাকল এবং বিষয়টা একটা বড় পরিসরে উৎসবে পরিণত হলো। একদা নিস্তব্ধ গহীন মাঠের মধ্যে নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে থাকা শিমুল গাছ কেন্দ্র করে একটি উৎসবের পরিবেশ তৈরি হলো। কত শত মানুষ হাজার হাজার টাকা পয়সা প্রণামী হিসেবে গাছের গোড়ায় দিতে লাগলো কে জানে? এই প্রণামী হিসেবে পাওয়া এই টাকা-পয়সার মালিক কে? অনেকে সেখানে গড়া গড়ি খেতে খেতে কান্না কাটি ও করছে।

আমরা আরও শুনতে পেলাম যে সেখানে একটি মন্দির তৈরির জন্য ইট বালি সিমেন্ট ইতিমধ্যেই এসে গেছে ।