Colorgeo.com

Disaster and Earth Science

আপনার সুপ্ত কর্ম স্পৃহা কি?

Spread the love

জাপানের মানুষ বিশ্বাস করে প্রতিটা মানুষের একটা সুপ্ত কর্ম স্পৃহা রয়েছে ।

ফ্রান্সের একজন দার্শনিক প্রথম এই শব্দটি ব্যবহার করেন। তিনি এর অর্থ করেন “বেঁচে থাকার কারণ”। কিছু মানুষ ইতিমধ্যেই তাদের জীবনের সুপ্ত কর্ম স্পৃহা খুঁজে পেয়েছে কিন্তু অন্যেরা এখনো তাদের জীবনের সুপ্ত কর্ম স্পৃহা কে খুঁজে পায়নি । আমার কিম্বা আপনার প্রত্যেকেরই সুপ্ত কর্ম স্পৃহাকে খুঁজে পাওয়া উচিত।
অর্থাৎ কেন আমি এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকব? শুধুই কি খাই দাই ঘুমাই মৈথুন এটাই কর্ম? অবশ্যই নয়। কেন আমি পৃথিবীতে বাঁচবো? কোন জিনিস বা কি আমাকে পৃথিবীতে বাঁচতে অনুপ্রেরণা দেবে? প্রতিটি মানুষের এই সুপ্ত ইচ্ছাটা রয়েছে। কেউ তাড়াতাড়ি খুঁজে পেয়েছে আবার কেউ এখনো খুঁজে পায়নি। যারা ইতিমধ্যেই খুঁজে পেয়েছে তারা সফল হওয়ার জন্য এক ধাপ এগিয়েছে। জাপানের ওকিনাওয়াতে বসবাসরত শত বর্ষী মানুষদের বেশিরভাগই বলে যে তাদের একটি সুপ্ত কর্ম স্পৃহা রয়েছে এবং তারা খুঁজে পেয়েছে। সেটা হল অনুপ্রেরণা যা তাদেরকে প্রতিদিন ভোর বেলায় বিছানা ছেড়ে উঠিয়ে দেয়।

তুমি যা কিছু করো না কেন কখনোই থেমো না

সুনির্দিষ্ট ভাবে যদি আমরা আমাদের জীবনের এই সুপ্ত কর্ম স্পৃহাকে ধরতে পারি তবে আমাদের কাজে আত্মতুষ্টি সুখ ও আমাদের জীবনকে অর্থবহ করে তোলে। একটা বিষয় আমরা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছি যে জাপানের মানুষ চাকুরী পরবর্তী অবসর জীবনে কতটা কর্মচাঞ্চল্য ও উদ্যমী থাকে আমি নিজেই কিছু অবসর গ্রহণকারী জাপানিজদের সাথে কথা বলেছি, বিশেষ করে একটি লেকের ধারে যেখানে উন্মুক্ত হাঁস গুলো খেলা করে। লেকের টলটলে জলে খেলা করা হাঁস গুলোকে খাবার দিতে দিতে অবসর গ্রহণকারী জাপানিজ দের সাথে কথা বলে বুঝতে পারি তারা কতটা উদ্যমী ও কর্ম চাঞ্চল্য। একজন বলল অবসর গ্রহণ করার পরে সে সাইকেল যোগে বহু দূরে যায়, অন্তত ৭ দিনের ক্যাম্পিং, যেখানে রাত্রে ঘুমাতে হবে উন্মুক্ত রাস্তার ধারে তাবু খাটিয়ে।
৬৫ বছর পরবর্তী বয়সেও যে এমন যুবকদের ন্যায় অভিযানে যাওয়া যায় জাপানিদেরকে না দেখলে তা বিশ্বাসই করতাম না। প্রকৃতপক্ষে কোন জাপানীজই অবসর পরবর্তী জীবনে নিজেদেরকে বৃদ্ধ মনে করে না। তারা ততদিনই কাজ করে যায় যৌবনের উদ্দীপনা নিয়ে যতদিন না তাদের শরীর একেবারে ভেঙে পড়ে। প্রকৃতপক্ষে এটাও বলা দরকার যে জাপানে চাকরি পরবর্তী অবসর বলে কোন শব্দ নেই। অবসরের পরে তারা তাদের সুপ্ত কর্ম স্পৃহা নিয়ে এগিয়ে যায়। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের একজন রিপোর্টার গ্যাং বুয়েটনার তিনি বলেন, জীবনের উদ্দেশ্য জাপানিজদের মধ্যে প্রবলভাবে সন্নিবিষ্ট এবং অবসর নেওয়ার ধারণাটাই সে দেশে নেই।
আমার প্রফেসর বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী জীবন শেষ করে এখন অবসরে রয়েছেন। যদিও আমি ছিলাম আমার প্রফেসরের সর্বশেষ পিএইচডি ছাত্র, এটা আমার অহংকার।
চাকুরী পরবর্তী আমার প্রফেসর এখনো আমাকে ভূতাত্বিক গবেষণায় পৃথিবীর ইতিহাস পুনরুদ্ধারে সুউচ্চ পাহাড়গুলোর ভ্রমণে যেতে বলে গবেষণা সেম্পল সংগ্রহের জন্য। অবসর পরবর্তী জীবনে সে যে এখনো গবেষণা করে যাচ্ছে, বাড়িতে বসে, এটা আমাকে অবাক করে দেয়। গবেষণার জন্য প্রচুর ফ্যান্ডিং দরকার। যেহেতু অবসর পরবর্তী জীবনে গবেষণা অর্থ সংগ্রহ করা একটু কঠিন কিন্তু ক্রাউড ফান্ডিং থেকে সে গবেষণার অর্থ পেয়ে থাকে যা জাপানিজদের দেয়া স্বেচ্ছাসেবী অনুদান। বিজ্ঞানের আবিষ্কারের নেশা আমার প্রফেসরের জীবনের সুপ্ত কর্ম স্পৃহা ।

স্বর্গীয় চিরযৌবনের দ্বীপঃ ওকিনাওয়া কি তাদের কর্ম স্পৃহা

কর্ম স্পৃহা

দীর্ঘায়ু নিয়ে গবেষণায় কিছু চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয় পাড়া-প্রতিবেশী থেকে শুরু করে নিকট আত্মীয়দের প্রতি মায়া মমতা ভালবাসা, সুনির্দিষ্ট জীবনের উদ্দেশ্য এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার প্রতিটি মানুষের জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রশান্ত মহাসাগরের ভিতরে নীলাভ অঞ্চল, ইংরেজিতে যাকে ব্লু জোন, সেখানে একটি দ্বীপ জাপানের ওকিনাওয়া অঞ্চলের মানুষ যারা শতবর্ষী ।
তাদেরকে নিয়ে একটি গবেষণায় কিছু আশ্চর্য রকম বিষয় উঠে আসেঃ
১। তারা শুধুই শত বর্ষ বেঁচে থাকে তা নয় তাদের মধ্যে জীবনঘাতি রোগ যেমন ক্যান্সার হৃদরোগ সহ অন্যান্য মরণ ঘাতি রোগ কম দেখা যায়।
২। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষের থেকেও ওকিনাওয়া অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে প্রচুর জীবনী শক্তি রয়েছে।
৩। তাদের রক্তে খুব কম পরিমাণে ফ্রী রেডিক্যাল নামক পদার্থ পাওয়া যায় যা কিনা চা পান করা এবং ভর পেটে না খাওয়ার ফল হতে পারে। উল্লেখ্য ফ্রি রেডিকেল আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর
৪। ওকিনাওয়া অঞ্চলের মেয়েদের যৌবন পরবর্তী মেনোপজ এর বৈশিষ্ট্য সাধারণ। তাছাড়া পুরুষ ও মহিলা উভয়ই যৌবন পরবর্তী জীবনেও যৌবনের উত্তেজনা অনুভব করে।