খরা Drought কত প্রকার ভয়াবহ খরা বৃত্তান্ত
পরিবেশ বিজ্ঞানে খরার সংজ্ঞা এভাবে দেয়া হয়েছে, ‘ একটি নির্দিষ্ট এলাকায়, নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়াকে খরা ( Drought) বলে ।
Land belongs to the future এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতিবছর ১৭ ই জুন বিশ্ব খরা দিবস পালন করা হয় । ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ঘোষণার পর থেকে পৃথিবীর প্রতিটি দেশে ১৯৯৫ সাল থেকে জাতীয় খরা দিবস পালিত হয়ে আসছে । খরার তীব্রতার উপর ভিত্তি করে থাকে সাধারণত দুইটি ভাগে ভাগ করা হয় :
১. চরম খরা ( Absolute Drought ) :
কোন অঞ্চলে টানা ১৫ দিন ০.২ মিলিমিটার বা এর থেকে কম বৃষ্টিপাত হলে তাকে চরম খরা বলে ।
২. আংশিক খরা ( Partial Drought ) :
কোন অঞ্চলে টানা ২৯ দিন দৈনিক ০.২ মিলিমিটার বা এর থেকে কম বৃষ্টিপাত হলে তাকে আংশিক খরা বলে ।
অন্যদিকে খরাকে সাধারণত চারটি ভাগে ভাগ করা যায় :
১. আবহিক খরা (Meteorological Drought ) :
India meteorological এর মতে কোন একটি নির্দিষ্ট এলাকায়, একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে ,সেই অঞ্চলের দীর্ঘকালীন গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ থেকে যদি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৭৫% কমে যায় তাহলে সেই অঞ্চলকে আবহিক খরার আওতাভুক্ত মনে করা হয়।
২. জলজ খরা ( Hydrological Drought ):
যদি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহিত স্রোতের তুলনায় স্রোত কমে যায়। ফলশ্রুতিতে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে জল সরবরাহ করা কমে যাওয়াকে জলজ খরা বলে
৩.কৃষিজ খরা (Agricultural Drought ) :
মাটিতে পানির স্বাভাবিক আদ্রতার পরিমাণ কমে যাওয়াকে কৃষিজ খরা বলে ।
৪. আর্থ- সামাজিক খরা( Socio – Economic Drought ) :
পানির কারণে আর্থসামাজিক ক্রিয়া-কলাপ সম্পাদনে বাধার সৃষ্টি হলে তাকে আর্থ-সামাজিক খরা বলে ।
খরা অনেক কারণে সৃষ্টি হতে পারে তবে পরিবেশবিদরা খরা সৃষ্টির প্রধান পাঁচটা কারণ চিহ্নিত করেছেন।
ক. খরা সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ হলো পৃথিবীর আবহাওয়া চক্রের পরিবর্তন। আরেকটু সহজভাবে বললে ,পৃথিবীর ২০ ডিগ্রি থেকে ৩০ ডিগ্রিঅক্ষাংশের মধ্যবর্তী উপক্রান্তীয় অঞ্চলের শুষ্ক বায়ুর অধঃপতনের কারণে খরার সৃষ্টি হয় ।
খ. সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে দূরত্ব যত বাড়তে থাকে খরা সৃষ্টির প্রবণতাও তত বাড়তে থাকে।
গ. যে সকল অঞ্চলে বরাবর শীতল স্রোত বাহিত হয় । সে- সকল অঞ্চলে খরা হওয়ার সম্ভাবনা ও বেশি থাকে ।
ঘ. যে সব অঞ্চল পর্বতের বিপরীত পার্শ্বে অবস্থিত সেই সব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হওয়ার কারণেও খরার সৃষ্টি হতে পারে।
ঙ.অধিকহারে গাছ কাটার কারণে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে ও খরা হতে পারে ।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো স্থায়ী করা দেখা দেয়নি। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গকে খরা প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমাদের দেশে ১৯৪৯ সালে থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত একযোগে কোন খরা দেখা দেয়নি । তবে বিশেষ করে বরেন্দ্রভূমি অঞ্চল তথা দিনাজপুর, রংপুর, পাবনা, নাটোর, রাজশাহী ,বগুড়া ,জয়পুরহাট ,নওগাঁ জেলায় ঘন ঘন খরার প্রাদুর্ভাব পরিলক্ষিত হয় ।
১৯৫১,১৯৫৭,১৯৫৮,১৯৬১,১৯৬৬,১৯৭২ এবং১৯৭৭ সালে বাংলাদেশের ৬১.৬৩,৪৬.৫৪,৩৭.৪৭,২২.৩৯,১৮.৪২,৪২.৪৮ এবং ৪২.০৪ শতাংশ অঞ্চল খরা আক্রান্ত ছিল । তবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ খরাটি সংঘটিত হয়েছিল ১৯৭৩ সালে । এই খরার প্রভাব এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে সংঘটিত স্থানীয় দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ী করা হয় ।
এই দুর্ভিক্ষে প্রায় কয়েক লাখ লোক তাদের প্রাণ হারান ।
আধুনিক বিজ্ঞানের যুগেও প্রাকৃতিক দুর্যোগকে প্রতিরোধ করার মতো কোন প্রযুক্তি এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ করতে না পারলেও আমরা সচেতনতার তার মাধ্যমে এর ক্ষয়ক্ষতি বা পরবর্তী প্রভাব অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারি। এজন্য প্রয়োজন আমাদের পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
পরিবেশের প্রতি বিরূপ প্রভাব ফেলে এমন কাজ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখা। পরিবেশ সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করা । খরা থেকে বাঁচতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের বেশি করে গাছ লাগাতে হবে । একমাত্র গাছেই পারে খরার মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের বাঁচাতে ।
More Stories
Russell Viper নিধন কেন সমাধান নয়?
চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ালে কি করা উচিত
সাপ্তাহিক চাকরির খবর ২০২৪