গরিবের স্ট্যাটাসঃ অলীক ধারণা ও গল্প (মুহাম্মদ ইউনুসের বই থেকে)
বহু বছর ধরে গরিব মানুষ সম্বন্ধে মানুষের বিভিন্ন রকম ধারণার কথা শুনে আসছি। যারা কখনো গরিবদের জন্য কাজ করেনি তাদের মুখে গরিবদের সম্বন্ধে বহু অলীক ধারণা ও গল্প রয়েছে।
তারা গরিবদের সম্বন্ধে দৃঢ়ভাবে বলে যে-
-কোন উপার্জনক্ষম গরিব মানুষকে কাজের সুযোগ দেয়ার আগে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিতে হবে শুধুমাত্র ঋণদানে কাজ হয় না, এর সঙ্গে যোগ করতে হবে কর্ম প্রশিক্ষণ, যাতায়াতের সুব্যবস্থা, বাজার চাহিদা, প্রযুক্তি, শিক্ষা, ইত্যাদি।
-গরিব মানুষ কিছু সঞ্চয় করতে পারে না।
-যা হাতে পায় তাই খরচ করে ফেলে কারণ তাদের নানান চাহিদা মেটাবার জরুরী প্রয়োজন রয়েছে।
-বহু দিনের দারিদ্র্য আশা আকাঙ্ক্ষা নষ্ট করে দেয়। বহুদিনের খাঁচায় বন্দি পাখির মতো তাদের অবস্থা, খাঁচার দরজা খুলে দিলেও উড়ে যেতে ভয় পায়।
-হতদরিদ্র মহিলাদের কোন কর্মদক্ষতা নেই। তাদের সম্বন্ধে নতুন কোন প্রকল্পের কথা ভাবা অর্থহীন।
-গরীব এত বেশি ক্ষুধার্ত যে মরিয়া হয়ে গিয়ে যুক্তিসম্মত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা।
-ধর্ম ও কুসংস্কার এদের উপর বিশেষত মহিলাদের উপর এমন প্রভাব বিস্তার করে যে তা থেকে তাদের মুক্ত হওয়া অসম্ভব।
-গ্রাম্য রাজনীতি এত শক্তিশালী ও সুদৃঢ় যে কোন ঋণদান প্রকল্প চালু করা অকল্পনীয়।
-গরিব মানুষদের ঋণদান প্রগতি বিরোধী। এর ফলে গরিব মানুষের বিপ্লব করার ইচ্ছা বিনষ্ট হয়ে যায়। তাদের অবস্থা অপরিবর্তিত রেখে দেওয়ার জন্য ঋণ দেয়া হয় এর সঙ্গে ঘুষ দেয়ার কোন ফারাক নেই।
-ধনীদের বিরুদ্ধে গরিবদের সংগঠিত করার জন্য ঋণদান এক সুচাতুর পদ্ধতি। এই উপায়ে সামাজিক নিয়ম শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়।
-গরিব মহিলারা ঋণের টাকা বা উপার্জন নিজেদের অধিকারে রাখতে পারবে না। স্বামীরা যেন কেন প্রকারে ওই টাকা আত্মসাৎ করে অত্যাচার এবং প্রয়োজনে খুন করতেও দ্বিধা বোধ করে না।
-গরিব মানুষ নিজেদের কথা না ভেবে উপর ওয়ালার হুকুম তামিল করতে বেশি আনন্দ উপভোগ করে।
-ঋণ নিরাপত্তা হরণ করে। অভাবী মানুষের দুর্বল কাঁধে ঋণ শুধু বোঝা বৃদ্ধি করে কারণ তারা ঋণ শোধ করতে পারেনা। বাধ্যতামূলক ঋণ শোধের আপ্রাণ চেষ্টায় তারা আরো গরিব হয়ে যায়।
-গরিব মানুষকে ভিন্ন পেশা গ্রহণে উৎসাহী করলে বেতনভোগী শ্রমিকের অভাব ঘটবে। বেতনের হার স্বাভাবিক বৃদ্ধি পাবে, এর ফলে বেড়ে যাবে জিনিস তৈরির খরচ। মুদ্রাস্ফিতি ঘটবে যা কৃষিজাত সামগ্রী উৎপাদন ব্যাহত করবে।
-মহিলাদের ঋণ পাবার সুযোগ দিলে গার্হস্থ জীবনে তাদের ভমিকা ও স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক অবাঞ্ছিতভাবে প্রভাবিত হবে।
-ঋণ হয়তো সাময়িকভাবে সাহায্য করতে পারে কিন্তু ভবিষ্যতে তার আর বিস্তৃত হয় না সমাজের সমতা নির্ভর পুনর্গঠন এভাবে সফল করে তোলা সম্ভব নয়।
More Stories
অলৌকিক ঘটনা: গাছ থেকে রক্ত বের হচ্ছে বিশ্লেষণ চন্দন প্রতাপ মাগুরা
চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ালে কি করা উচিত
সাপ্তাহিক চাকরির খবর ২০২৪