Colorgeo.com

Disaster and Earth Science

Spread the love

পরকীয়া

দিবাকরের বিবাহিত জীবন ভালোই চলছিল । প্রেমের বিয়ে । স্কুল জীবন থেকে প্রেম করে শেষ পর্যন্ত বিয়েতে গড়িয়েছে। মাঝে মাঝেই স্ত্রীর স্কুল জীবনের নীল সাদা ইউনিফর্ম পরিহিত ছবিটা দেখে আর অতীতের লুকিয়ে প্রেমের দিন গুলোকে ভাবে। ওর বাসায় এটাই ওর দেয়ালে টাঙ্গানো সেরা ছবি। তারা বিবাহিত জীবনের 10 বছরে পদার্পণ করল, কোনরকম উদযাপন ছাড়া।

দিবাকরের স্ত্রী প্রিয়ংবদা। তাদের তিনটি সন্তান। যদিও বর্তমানে দুইয়ের অধিক সন্তান সমাজে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখা হয়। তিনটি সন্তান নিয়ে বাইরে বের হলে, অধিক জনসংখ্যার পরিবার বলে মানুষের কথা শুনতে হয়। প্রিয়ংবদা অধিক সন্তানে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। তিনটি সন্তানই পেট কেটে বের করে আনা। দিবাকরের এব্যাপারে কোন মন্তব্য নেই। ভালো কি মন্দ! অনেক চড়াই-উতরাই করে পার হয়ে যাচ্ছে সংসার জীবন।

প্রিয়ংবদা ভালোবাসার পাত্রী। রূপে সুশ্রী, সুঠাম দেহ, ফিগার ভালো। রাস্তায় বের হলে অন্য পুরুষ চোখ ফেরাতে পারে না। স্ত্রী রূপে দিবাকর ও পাগল। স্ত্রীর প্রতি অন্য পুরুষের দৃষ্টি উপভোগ করে সে যদি সে দৃষ্টি কামনায় পর্যবসিত না হয়। অন্য পুরুষেরা প্রিয়ংবদার রূপেও মুগ্ধ হোক এটাও চায়, তবে স্ত্রীকে অতি আদরে কাছে রাখতে চায় দিবাকর।

সুন্দর শাড়ি পরে দুজন ঘুরতে বের হবে, আর প্রিয়তমার ছবি তুলবে এটা দিবাকরের পুরনো অভ্যাস। রূপবতী স্ত্রীকে নিয়ে তার গর্ব হয়। রূপের সর্বপ্রথম আকর্ষণীয় স্থান হল স্ত্রীর সুন্নত ও ভরাট বক্ষ যুগল। মুখ, নাক, চোখ চুলের সৌন্দর্যে সে পাগল। বহুবার স্ত্রীর ছবি নিজ হাতে এঁকেছে মনের মাধুরী মিশিয়ে। তার স্ত্রী তাকে ভালোবাসে কিনা সে এখনো জানেনা।

সেদিন অভিমানের এক পর্যায়ে স্ত্রীর পা ছুঁয়ে দিবাকর বলল, আর কোন অমর্যাদা তোমার করবো না এবার ক্ষমা করো! সমস্ত দোষ মুক্ত হবার আশায় পরিপূর্ণ ভালোবাসা পাবে বলে সে নিজেকে সমর্পণ করল। বিনিময়ে, স্ত্রী বলল, তোমার বেতনের টাকা থেকে লোন করে আমার নামে শহরের জমিতে এক টুকরো জমি কিনে দাও। দিবাকর রাজি হলো।

হঠাৎ একদিন দিবাকরের স্মার্টফোনের হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ আসলো। একটি বিয়ের নিমন্ত্রণ। দিবাকর স্ত্রীকে জানালো  যে সে যাবে কিনা? পরিশেষে রাজি করিয়ে দুজন বিয়ের বৌভাত অনুষ্ঠানে যাবার প্রস্তুতি নিল।

পরকীয়াআজ প্রিয়ংবদা অপরূপ সাজে সেজেছে। এমনটা আগে কখনো দেখেনি  দিবাকর। বউয়ের অপরূপ রূপ দেখে তার খুব খুশি খুশি লাগছে। পার্লার থেকে ফেসিয়াল করেছে প্রিয়ংবদা। ম্যাচিং করে শাড়ি পরেছে। দুটি কান, হাতের আটটি সরু আংগুল ও গলায় স্বর্ণের চেইন পরেছে প্রিয়ংবদা। বহুবার শাড়িও পরিবর্তন করে দিয়েছে দিবাকর।

সব থেকে সেরা দেখাবে যে শাড়িতে সেটাই নির্বাচিত করে দিলো দিবাকর। এখন তিনটি সন্তান নিয়ে তাদের বৌভাতে যাবার জন্য অটোরিকশা অপেক্ষা করছে বাইরে। স্ত্রী রূপে মুগ্ধ হয়ে দিবাকর কয়েকটি ছবিও তুলল। পুরনো অভ্যাস। সেলফি তুললো। রাস্তায় যেতে যেতে অটোরিক্সার বাতাসে প্রিয়ংবদার চুলগুলো এলোমেলো দোল খেতে দেখে সারাটি পথ দিবাকর মুগ্ধ হলো। স্ত্রী যেন রূপের মাধুরী ছড়ালো।

বৌভাত অনুষ্ঠান বাড়িতে পৌঁছাতে ঝুম বৃষ্টি শুরু হল। প্রিয়ংবদা বৃষ্টিতে ভিজে গেল। ভেজা শাড়ীতেই সে বৌভাত অনুষ্ঠান সম্পন্ন করল। বর ও বউ এর সাথে ছবি তুলল। ব্যস্ততায় বৃষ্টিতে ভেজা শাড়ির কথা  সে ভুলেই গেল। তার চুল বৃষ্টির জলে ভিজে সদ্য স্নান করে এসেছে এমন সতেজ ও লাবণ্যময় দেখালো। চোখেমুখে প্রশান্তি ও গোলাপি আভা।

সত্যি এক অপরূপ সৌন্দর্য। সুন্দরভাবে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে এখন যাবার পালা। প্রিয়ংবদার এক পুরনো বন্ধুর আগমন বার্তায় দিবাকর চিন্তিত হলো। প্রিয়ংবদা বলল সে (পুরনো বন্ধু) হয়তো নাও আসতে পারে। খুব বেশি ব্যস্ত লোকটি এই লোকটি! প্রিয়ংবদার পুরনো বন্ধু সেই লোকটি এটা দিবাকর জানে। অবশেষে তারা অটোরিকশাযোগে বৌভাত অনুষ্ঠান সম্পন্ন করে বাড়ি ফিরে এলো।

দিবাকরের মনটা অনেক ভালো কারণ সুন্দর একটা সময় কাটিয়েছে সুন্দরী বউয়ের সাথে। সবাই তাকে প্রশংসা করেছে। সুন্দরী বউ টা কে! সবাই জানতে চেয়েছে! এসবই দিবাকরের অহংকার! স্ত্রীর রূপের আভিজাত্য! সেও সমানভাবে গর্বিত।

হঠাৎ একদিন দিবাকরের সামনে প্রিয়ংবদার স্মার্টফোনে মেসেজ টোন বেজে ওঠে। চোখ বোলাতেই সেই পুরোনো বন্ধুর মেসেজ ও কথোপকথন দেখতে পেল দিবাকর। দিবাকর যেন আকাশ থেকে পড়লো। মেসেজ পড়ছে আর ভাবছে।

প্রিয়ংবদা লিখেছে ……তোমাকে দেখার জন্য বৌভাত অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম কিন্তু তোমার চাঁদ বদন দেখতে পেলাম না রাত 8 টা পর্যন্ত অপেক্ষা করে বাড়ি চলে আসলাম…….

এসবই লিখেছে তার পুরনো বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে। দিবাকরের মাথায় যেন বাজ পড়ল। কিছুতেই কোন কিছুতে মন বসছিল না। একি দেখছে সে স্ত্রীর মোবাইল ফোনে! স্ত্রীর এত রূপ! যৌবন! সৌন্দর্য! ম্যাচিং করা শাড়ি! তাহলে কি সবি অন্যের জন্য? সর্ব অঙ্গে স্বর্ণালঙ্কার অন্যকে খুশি করবার?

দিবাকর মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পড়ল।।

গল্প পরকীয়াঃ সমাপ্ত

১০ মে ২০২২