Colorgeo.com

Disaster and Earth Science

জাপানে সকালের ব্যস্ততা Life Cost in Japan

Spread the love

সকালের ব্যস্ততা Life Cost in Japan

life cost in japanআজকের সকালটা অনেক ভালোভাবেই শুরু হয়েছে। বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। ওরা ঘুম থেকে সাতটায় সময় উঠেছে। শিল্প এবং রিয়ানা দুজনে উঠেই স্কুলের প্রস্তুতি নিয়েছে। ওদেরকে আমি ব্রাশ করতে দেখিনি যদিও। আমি তখন ঘুমাচ্ছিলাম তবে তন্দ্রাচ্ছন্ন। আমি শুয়ে শুয়েই ওদেরকে বলছিলাম যে কি কি করতে হবে, যেমন স্কুলের ব্যাগ গোছানো জামা কাপড় রেডি করে রাখা। সকালের খাবার নিজেরা তৈরি করে নিয়ে খেয়ে নিতে বললাম কারণ ভাত রান্না করা ছিল সাথে ফুরিকাকে দিয়ে শিল্প খেয়ে নিল এবং ও তার প্রস্তুতি নিতে থাকলো ওর নিজের মতো করে।

আজকে শিল্পর স্কুলে সুইমিং তাই সুইমিং এর জন্য ড্রেস রেডি করতে হবে ও আমাকে বলল একটি ব্যাগ দিতে আমি ওকে খুঁজে দিলাম। শিল্প নিজের মতোই সমস্ত কাজ করে ফেলল। ইতিমধ্যেই রিয়ানা উঠে পড়ল, যদিও কয়েকবার ডাকার পরে। আমি ডাকলাম এই বলে যে সাতটা বেজে গিয়েছে উঠে পড়ো।ও উঠল ও চুল বাঁধলো। ছেলেদের থেকে মেয়েদের প্রস্তুতি একটু আলাদা। 

 

ওদের জামা কাপড় এর জন্য আলাদা বক্স রয়েছে। সেখান থেকে ওরা জামা কাপড় চুজ করল কোনটা পরবে আজকে। রাধিকা তার পছন্দের জামা পরলো কালো প্যান্ট সাদা ড্রেস। ওর আজকে স্কুলে সুইমিং নেই গতকাল সুইমিং ছিল তাই আমাকে বলল যে গতকালের সুইমিং এর ড্রেস ওয়াশ করতে দিতে হবে আমি বললাম ওকে আমি ওয়াশ করে দিব কোন চিন্তা করোনা। আমি ততক্ষণ শুয়েই আছি, শুয়ে শুয়েই আমি তাদের সমস্ত কাজে সহযোগিতা করছি! ইতিমধ্যেই তাদের মামনি উঠে পড়েছে। আমাদের ছোট মেয়ে রিঙ্কা। ওর ডে কেয়ার যেতে হবে। ও একটু ধীরগতিতে সব কিছু করতে চায় যদিও। ও এখনো অনেক ছোট ৫ বছর বয়স। আমি বললাম যে মোজা খুঁজে নিতে ও তখন একটি বক্স থেকে পরিষ্কার মোজা খুঁজে নিল। এরপর ওর মামনির জন্যও একটি পরিষ্কার মোজা খুঁজে নিল। মামণিকে দেয়ার জন্য কারণ ও মামণিকে একটু বেশি কেয়ার করে ও প্রায়ই বলে আমি পাপাকে দাদাকে দিদিকে অনেক ভালোবাসি।

রাধিকা ইতোমধ্যেই খাবার খেয়ে নিল এবং আটটা বেজে এক মিনিট অতিক্রান্ত হয়েছে। শিল্প স্কুলের পথে রওনা করেছে। শিল্প সাধারণত আগেই চলে যায় স্কুলে। ওরা স্কুলে একা একাই যায়। স্কুলের দূরত্ব বাসা থেকে খুব বেশি দূরে নয়। হেঁটে গেলে ডাউন টাউন এর দিকে 15 মিনিট লাগে। জাপানের নিয়ম হলো যথাসময়ে স্কুলে যেতে হবে। স্কুলে গিয়ে ওদের কিছু কাজ রয়েছে। আমরা বাংলাদেশে যেমন বলি প্যারেড করা, তেমনি কিছু আনুষঙ্গিক কাজ থাকে স্কুলের ক্লাস শুরু হওয়ার আগে। তাই ওরা একটু আগেই যায় ওদের মামনি ও ওদের সাথে রেডি হচ্ছে যাওয়ার জন্য রিঙ্কাকে সাথে নিয়ে ডে কেয়ারে নামিয়ে দিয়ে তারপর সে তার জাপানের ভাষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাবে ক্লাস করতে। এটা তাদের প্রতিদিনের রুটিন। আমি এখানে এসেছি কিছুদিনের জন্য ওদের দেখার জন্য বাসাতেই থাকি বেশিরভাগ সময় আর বাসার কিছু কাজ রয়েছে যেমন ঘর গোছানো রান্না করা স্কুল থেকে ফিরলে ওদের স্নান করানো সাথে পড়াশোনা অথবা খেলাধুলা।

রিংকা সন্ধ্যার দিকে বাইরে যেতে চায় সাধারণত কোন কোন দিন আমি ওদেরকে বাইরে নিয়ে যাই বিশেষ করে সেভেন ইলেভেন নামে একটি দোকান রয়েছে সেই দোকানে ওরা কিছু চকলেট কিনতে চায়। বর্তমানে ওরা বাসায় ফিরে মোবাইল ডিভাইস এবং আইপ্যাডে গেম খেলতে পছন্দ করে। জাপানে ওদের খেলার সাথী খুব কম তাই বেশিরভাগ সময় ওরা বাসায় কাটায় ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের সাথে। শিল্প গেম খেলে মোবাইলে এবং ল্যাপটপে রিয়ানা এবং রিংকা ওরাও গেম খেলে মোবাইল ডিভাইসে প্রত্যেকের একটি করে মোবাইল ডিভাইস রয়েছে আইপ্যাড এবং কম্পিউটার রয়েছে। বাসায় ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়া ওরা খুব দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়ে তাই বাসায় সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটের ব্যবস্থা রয়েছে। ওদের ভালো রাখার জন্য ইন্টারনেটের সুবিধা ওদের দিতেই হয় আর ওরা ইউটিউবে ভিডিও দেখে গেম খেলে এভাবেই সময় কাটে ওদের।

 

আজ বাসায় কোন বাজার নেই। তাই সাদা ভাত আর ফুরিকাকে দিয়েই ওরা খেলো যদিও ডাল রান্না করা ছিল। আমি চায়না থেকে নিয়ে আসা আমাদের এক বন্ধুর দেয়া ৫০ প্যাকেট নুডুলস এনেছিলাম সেখান থেকে ঝটপট 10 মিনিটের মধ্যেই রান্না করে দেই। ওরা স্কুলে গিয়ে দুপুরের খাবার খায়। জাপানের প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা থাকে এবং ছোট মেয়ে রিঙ্কা ডে কেয়ারেও খাবারের ব্যবস্থা থাকে।

 

ওদের স্কুল শুরু হয় আটটা থেকে রিঙ্কার ডে কেয়ার শুরু হয় ৯ টা থেকে। শিল্প এবং রিয়ানা সাধারণত সাড়ে তিনটার সময় বাসায় ফিরে আসে। স্কুলের শিক্ষিকাদের নির্দেশ ওরা সরাসরি বাসায় চলে যাবে এবং ওরা সরাসরি বাসায় চলে আসে বাসায় ।স্কুলের পাশের রাস্তায় রাস্তার উপর সবুজ রং দিয়ে রাস্তা নির্দেশ করা যেন স্কুল ছুটির পর ছাত্র ছাত্রীরা এই সবুজ রং করা রাস্তার উপর দিয়ে যেতে পারে। আসলে এটা করা হয়েছ ওদের নিরাপত্তার জন্য । স্কুল পরবর্তী অনেক ছেলে মেয়ে এক সাথে বাসায় যায় তখন ট্রাফিক দুর্ঘটনা যাতে না হয় তাই এই ব্যবস্থা। কোন কোন দিন রিয়ানা ওর ইস্কুলের বান্ধবীর সাথে খেলা করতে ওর বান্ধবীর বাসায় যায়। শিল্প সরাসরি বাসায় এসে কম্পিউটারে গেম খেলতে শুরু করে।

রিয়ানাকে আমি একটি রুটিন করে দিয়েছি সময়টাকে সঠিকভাবে ব্যবস্থা করার জন্য যেমন স্কুল থেকে এসেই ও বন্ধুদের বাসায় যেতে পারবে অথবা হোম ওয়ার্ক করতে পারবে, সময় চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে। পাঁচটা থেকে ছয়টার মধ্যে ওরা স্নান করে নিবে। আমি যেহেতু বাসায় রয়েছি স্নান করার ক্ষেত্রে ওদেরকে আমি বাথ ট্যাব পরিষ্কার করে কুসুম কুসুম গরম জল ভরে দেই এবং রিংকা এবং রিয়ানা একসাথে স্নান করতে যায়। এরপর স্নান করে শিল্প। 

ওদেরকে বলেছি যে বাসায় মামনি না থাকলে সাধারণত কোন ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ যেমন বিদ্যুৎ সংস্পর্শে আসা অথবা আগুন নিয়ে কোন ধরনের কাজ করা থেকে বিরত থাকতে কারণ যেকোনো ধরনের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য ওদেরকে এটাই করতে হয়। বাসায় যখন ওরা শুধু একাই থাকে। বর্তমানে যেহেতু আমি ওদের সাথে রয়েছি তাই সব কাজে আমি ওদেরকে সহযোগিতা করছি। 

 

স্কুলে ওদের দুপুরের খাবার দেয় খাবারের মেনু প্রতি সপ্তাহে পরিবর্তন হয় সাধারণত রাইস অথবা নুডুলস অথবা দুধ অথবা মাংসের স্লাইস বিভিন্ন ধরনের খাবার থাকে। জাপানের স্কুলের বাচ্চারা দুপুরের খাবার ব্যবস্থায় নিজেরাই নিজেদেরকে সহযোগিতা করে। শিল্প আমাকে বলেছে যে দুপুরের খাবারের সে তত্ত্বাবধানের কাজ করে স্কুলে অর্থাৎ খাবার পরিবেশন করা এবং পুরো প্রক্রিয়ার সাথে সে জড়িত থাকে স্কুলের শিক্ষিকা এবং শিক্ষকদের সাথে। এটা ভালো নেতৃত্ব গুণাবলী অর্জনের একটি ধাপ স্কুল থেকেই ওরা এগুলো শিখছে। রাধিকার পছন্দ ছবি আঁকা ও বাসায় এসে কখনো ছবি আঁকে অথবা অনেক রাত্রেও আমি ছবি আঁকতে দেখেছি ওকে।

 

আজকের সকালটা অনেক সুন্দর কোন ধরনের বিরক্তি পূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়নি সবাই যে যার মত সুন্দরভাবে কাজে চলে গিয়েছে কেউ স্কুলে কেউ পার্টটাইম জব এবং পড়াশোনা। ঘরটাকে আমি সুন্দরভাবে গুছিয়ে রেখেছি। আমি ওদেরকে বলেছি যে তোমরা সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবে। অপরিষ্কার জামাকাপড় একটি নির্দিষ্ট জায়গায় গুছিয়ে রাখবে স্কুল থেকে ফেরার পরে জুতা গুলো সাজিয়ে রাখবে মোজাগুলো একটি বক্সে রাখবে পরবর্তীতে ধোয়ার জন্য। আমি বলেছি প্রতিদিন আলাদা আলাদা পরিষ্কার মোজা পড়বে। বাইরের পরিবেশ আজকে খুব ভালো রৌদ্র উজ্জ্বল দিন, জুন মাসের শেষে ২০২৪ সাল। আজকের রিঙ্কার ডে কেয়ার এ সুইমিং রয়েছে তাই সে সুইমিং এর ব্যাগ নিয়ে গেল স্কুলে।

গরমের সময় সাধারণত হইকুয়েনে প্রতি সপ্তাহের দুইদিন সুইমিং থাকে। সুইমিং এর দিনে বাচ্চারা একটি বড় বাথট্যাবে স্নান করে এবং জল নিয়ে খেলা করে। এটা মূলত স্কুলের একটি প্রোগ্রাম এবং খেলার একটি অংশ যেহেতু গরম তাই জল এখানে সম্পৃক্ত। 

 

সকালের ব্যস্ততা Life Cost in Japan

রিঙ্কা বলে ওর সেন্সি, ইউনা সেন্সি খুব ভালোবাসে ওকে। যদিও মেয়েটি অল্পবয়স্ক এবং দেখতে অনেক সুন্দর। সাধারণত শিক্ষিকাগণ খুব বেশি কেয়ারিং থাকে ডে কেয়ারের শিশুদের প্রতি। ডে কেয়ারে জব করতে হলে শিশুদের মতোই ব্যবহার করতে হবে, শিশুদের সাথে নাচতে হবে, গাইতে হবে শারীরিক অঙ্গভঙ্গি দেখিয়ে ওদেরকে আনন্দ দিতে হবে। এটা একটি কঠিন কাজ যারা একটু মুড়ি তারা এই জব করতে পারেনা। ডে কেয়ার এর সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকা গণ শিশু বান্ধব, শিশুসুলভ আচরণ করে। তারা প্রতিটি বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন তাদের স্বাস্থ্য, শিশুদের বেড়ে ওঠা মানসিক আনন্দ উল্লাস সবকিছুতেই তারা সহযোগিতা করে। এজন্যই জাপানের ডে কেয়ার অনেক বেশি ভালো। ডে কেয়ারে প্রতি মাসে 4000 জাপানি ইয়েন ফি দিতে হয় যদিও সরকারিভাবে অথবা ব্যক্তি বিশেষে আরো কম বেশি রয়েছে যারা জাপানিজ তাদেরকে আরো অনেক বেশি টাকা দিতে হয়। 

স্কুলে শিল্পদের ঠিক একই ভাবে প্রতি মাসে ১০ হাজার জাপানি ইয়েন দিতে হয়। আমরা সাধারণত সরকারি ফি মওকুফ এর যোগ্যতা পেয়েছি তাই সরকার সাধারণত এই ফি দিয়ে থাকে যেমন দুপুরে খাবারের বিল অথবা স্কুলের কাগজ কলম ছবি আঁকা বিভিন্ন ধরনের খরচ এর অন্তর্ভুক্ত। বিভিন্ন সময়ে শিল্প রিয়ানা দের স্কুলে ভ্রমণ খরচ দিতে হয় ওরা সাধারণত দূরে কোথাও ঘুরতে যায় স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মকর্তা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে বাসে করে বিশেষ করে দূরবর্তী কোনো জায়গা যেমন টোকিও ডিজনিল্যান্ড অথবা অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা তখন বড় অংকের একটি ফ্রি দিতে হয় যেমন আগামী অক্টোবরে শিল্প একটি ট্যুরে যাবে সেই বাবদ ৪০ হাজার জাপানি ইয়েন দিতে হবে শুধুমাত্র দুই দিনের একটি ট্যুর। 

 

যদিও সরকারি সহযোগিতার রয়েছে তবুও ব্যক্তিগত ভাবেও এই টাকাটা পরিশোধ করতে হয়। 

 

জাপানে বসবাসের জন্য অনেক খরচ দিতে হয়। যেমন বাসা ভাড়া ৫০০০০ জাপানি ইয়েন প্রতি মাসে। খাবার খরচ ও  উটিলিটি বিল সহ আরও ১ লক্ষ জাপানি ইয়েন লাগে ৪ ৫ জনের একটি পরিবারে। জাপানের জীবন যাত্রার খরচ বেশি। 

 

জাপানের একটি প্রথা রয়েছে কেউ যদি আরো বেশি জ্ঞান অর্জন করতে চায় তাহলে তাকে বেশি বেশি ভ্রমণ করতে হবে হয়তো এই উদ্দেশ্যেই স্কুল থেকেও ভ্রমণের এই ব্যবস্থা। এভাবে নেতৃত্ব দেওয়ার গুণাবলী তৈরি হয়। ভ্রমণ শুধু ভ্রমণই নয়। ভ্রমণ করার সময় বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ করা থাকে ছাত্রছাত্রীদের এবং প্রতিটি গ্রুপের কাজ হল নির্দিষ্ট ভাবে দায়িত্ব পালন করা। কখনো কখনো ভ্রমণ শেষে রিপোর্ট লিখতে হয়, কি দেখেছে? কোনটা ভালো লেগেছে? 

 

সাড়ে আটটা বাজলে রিংকা তার মা মনির সাথে ডে কেয়ার এর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল আমি তাদেরকে বাই বাই টাটা দিয়ে বাসায় থাকলাম। বাসায় আমি এখন একা।