“বিহার ভূমিকম্প” (১৯৩৪) Earthquake in Bihar
ভারত।হাজারো মনীষীর পদচারণায় মুখরিত ভারত। সভ্যতা ও সংস্কৃতির অন্যতম তীর্থস্থান ভারত। মানব সভ্যতার ইতিহাস নিয়ে যা ভারতে পাওয়া যায় না। ভারতের ঘটেছিল বিহার ভূমিকম্প Earthquake in Bihar এ যাবত পর্যন্ত ভারতের ইতিহাসে অন্যতম সেরা প্রাকৃতিক বিপর্যয় হিসেবে পরিচিত। বিহার ভূমিকম্প ইতিহাসে ( Nepal-Bihar Earthquake ) হিসাবে পরিচিত ।
১৯৩৪ সালের ১৫ জনুয়ারি। আট-দশটা স্বাভাবিক দিনের মতোই স্বাভাবিক ছিল এই দিনটি ভারতীয়দের কাছে । কিন্তু হঠাৎ করে ২ টা ১৩ মিনিটে ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ভারতের বিহারের মোজাফফরপুর এবং নেপালের মুঙ্গার নিমিষেই যেন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হল।সবাই কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই বড় বড় ভবনগুলো যেন মাটির সঙ্গে মিশে যেতে লাগলো। সবার চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার রইল না। প্রকৃতি তার ভয়াবহ রুপ দেখিয়ে দিল। আবারো প্রমাণ হলো যে ,প্রকৃতির কাছে মানুষ বড্ড অসহায় ।
বিহারের এই ভূমিকম্পের Earthquake in Bihar উৎপত্তিস্থল ছিল পূর্ব নেপালের এভারেস্টের প্রায় ৯.৫ কিলোমিটার দক্ষিনে।এই ভূমিকম্পের প্রভাবে বোম্বাই এবং আসাম থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত ভূকম্পন অনুভূত হয়।এর তীব্রতা এতই বেশি ছিল যে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার বা ৪৫০ মাইল দূরে কলকাতায় অনেকগুলি ভবন ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল এবং কলকাতার সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল টাওয়ার ও ভেঙ্গে পড়েছিল।অনন্য সাধারণ ভূমিকম্পের থেকে, এই ভূমিকম্পের একটি বিশেষ দিক ছিল ভূমিকম্পের কেন্দ্রীয় ফটোগুলি জুড়ে বালু ও জলের ফাটল গুলি উপস্থিত ছিল । ফলশ্রুতিতে মোজাফফরপুরর শহরে বেশ কয়েকটি জায়গায় বালুর বিস্ফোরণ ঘটে।এতে মোজাফফরপুররের বেশিরভাগ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ।
নেপালের কাঠমান্ডু, ভক্তপুর এবং পাঠান মারাত্মকভাবে এই ভূমিকম্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় । শহরের সব কয়টি বড় বড় ভবন মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল।শুধু রক্ষা পেয়েছিল নেপালের অভিভাবক দেবতা পশুপতিনাথ মন্দির।
ভূমিকম্পের ফলে সীতামারি তে একটি বাড়িও দাঁড়িয়ে ছিল না ।ভাগলপুর জেলারও অনেক ভবন ধ্বসে পড়ে যায়। পাটনাকে দূর থেকে একটি ধ্বংস স্তুপ বা ধ্বংস নগরী মনে হয়েছিল।এমন কি মধুবাণীর নিকটবর্তী রাজনগরে সমস্ত কাঁচা ভবন ও ধসে পরেছিল। এই ভূমিকম্পের প্রভাব এতটাই মারাত্মক ছিল যে,ঝরিয়ার ভূগর্ভস্থ আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। নেপাল সরকার এই ভূমিকম্পের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে এবং কাঠমুন্ডুতে বিদ্যুৎ এবং টেলিফোন সংযোগ পুনরায় চালু করতে সাতদিন সময় নিয়েছিলেন ।সেই সময়ে নেপালি সেনাবাহিনী উদ্ধারকাজের তৎপরতা প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। ১৯৩৫ সালে নেপালের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ব্রম্মা শমসের বলেছিলেন, ‘যে এটি জীবিত স্মৃতিতে নেপালের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প , ত্রাণ এবং কর্মতৎপরতায় নেপালি সেনাবাহিনীর কাজ প্রশংসার দাবিদার।’
ভারত সরকারের হিসাব মতে এই ঘূর্ণিঝড়ে মৃতের সংখ্যা ছিল ১০,৭০০ থেকে ১২০০০ জন।
এই ভূমিকম্পের ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সহায়তার জন্য স্বয়ং মহাত্মা গান্ধী ও বিহার সফর করেছিলেন। বিহারের শ্রীঃবাবু এবং অনুগ্রহ নারায়ন সিনহার মতোও মহান নেতারা ও ত্রাণ কাজে নিয়োজিত ছিলেন ।ভারতের ইতিহাসে এই ভূমিকম্পকে এখন পর্যন্ত সর্বকালের শ্রেষ্ঠ প্রাকৃতিক বিপর্যয় হিসেবে ভারত সরকার চিহ্নিত করেছেন। ভূমিকম্পের ক্ষতির পরিমাণ কাটিয়ে উঠতে ভারত সরকার তৎকালীন সময়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ ও হাতে নিয়েছিলেন যেগুলো পরবর্তীতে বিহারের উন্নতিতে বেশ ভূমিকা রেখেছিল। বিহার ভূমিকম্প বা নেপাল-বিহার ভূমিকম্প ইতিহাসে ভারত এবং নেপাল এই দেশ এই দেশের মানুষের কাছে একটি কালো দিন হিসেবে পরিচিত।