Colorgeo.com

Disaster and Earth Science

মোবাইলের রেডিয়েশন আপনার জন্য কতটা ক্ষতিকর ?

Spread the love

মোবাইলের রেডিয়েশন আপনার জন্য কতটা ক্ষতিকর ?

রেডিয়েশন শব্দটি শুনলে প্রথমেই মাথায় আসে যেটা, সেটা হলো হলুদ এপ্রোন কিংবা  জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরের ১৯৪৫ সালের ৬ই ও ৯ই আগষ্ট পারমাণবিক বোমা বিস্ফারণ এর ফলে সৃষ্ট উচ্চ তেজস্ক্রিয় রেডিয়েশন। তার সঙ্গে ইদানীং জোরপূর্বক যুক্ত হয়েছে হাতের স্মার্ট ফোনেটিও।

অনেকেই দিনের বড় একটা সময় মোবাইল ফোনে কাটান কিন্তু খুব কম মানুষই ভাবেন বা জানেন এই রেডিয়েশন তার শরীর বা স্বাস্থ্যের উপর কতটা প্রভাব ফেলতে পারে? এটা একবার ভেবে দেখুন আপনার ফোনটি কি রেডিয়েশন ছড়াচ্ছে? আর তা আপনার জন্য কতটা ক্ষতিকর?

মোবাইলের রেডিয়েশন


আমরা হয়ত নিজের অজান্তেই সারদিন কোনো না কোনো রেডিয়েশন এর সংস্পর্শে থাকি। ট্রানজিস্টর রেডিও বা এফএম বেতারের তরঙ্গ, মাইক্রোওয়েভ ওভেন,টিভির রিমোর্ট বা বাতির বিকিরণ এমনকি সূর্যের আলোতেও রেডিয়েশন থাকে আর এগুলোই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের রেডিয়েশন এর তেজস্ক্রিয়তার উদাহরণ। এছাড়া যখন আপনি মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপে মুভি বা গান বা অন্য কোনো কিছু ডাউনলোড করছেন তখনো কাজ করছে রেডিয়েশন।

তবে রেডিয়েশনে আপনার কতটুকু ক্ষতি হবে তা নির্ভর করছে রেডিয়েশনের মাত্রা এবং তার ধরণের উপর। শক্তির মাত্রার উপর ভিত্তি করে রেডিয়েশন ২ প্রকার এর হয়ে থাকে আয়নিত এবং অ-আয়নিত রেডিয়েশন। অ-আয়নিত রেডিয়েশন খুব কম মাত্রার শক্তি উৎপাদন করে। তাই এ ধরণের রেডিয়েশন আপাতদৃষ্টি তে কোনো ক্ষতি করে না। অ-আয়নিত রেডিয়েশন এর সব চেয়ে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো তড়িৎচুম্বক রেডিয়েশন।মোবাইল,ল্যাপটপ, টিভির রিমোর্ট এসব কিছুই তড়িৎচুম্বক রেডিয়েশন এর উৎস।

অন্যদিকে আয়নিত রেডিয়েশন অনেক বেশি মাত্রার শক্তি নিয়ে প্রবাহিত হয়। আর বিপুল পরিমাণ শক্তির কারণেই উৎস থেকে ইলেকট্রন বের হয়ে পরমাণু আয়নিত হয়ে পড়ে। এ রেডিয়েশন দেহের কোষ এবং ডিএন এর বংশ বৃদ্ধিতে মারাত্মক ক্ষতিকারক হিসেবে কাজ করে এবং এই আয়নিত রেডিয়েশনই ক্যান্সার এর কোষ তৈরী ও এর ঝুঁকির জন্য দায়ী। আয়নিত রেডিয়েশন এর সব চেয়ে বড় উৎস হলো নিউক্লিয়ার বর্জ্য। এভাবেই পারমাণবিক বোমার বিস্ফারণেও প্রচুর শক্তি উৎপন্ন হয় যা পরমাণু কে আয়নিত করে দেয়।

তাছাড়া কিছু ক্ষেত্রে এক্স-রে এবং সূর্যের আলোর অতি বেগুনী রশ্মিও ওজোন স্তর ভেদ করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢোকার সময় বিভিন্ন তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে আয়নিত হয়ে যেতে পারে। এ কারণেই এক্স-রে করার সময় ল্যাবে কর্মরত লোকেরা নিরাপদ লেড শিট পরিধান করেন। এবার জানা যাক কতটুকু রেডিয়েশনে মানব দেহের ক্ষতি হতে পারে।


রেডিয়েশন এর মাত্রা সাধারণত পরিমাপ করা হয় সিভার্ট এককে। মাত্র ১ সিভার্ট রেডিয়েশনই আপনাকে অসুস্থ করে দেবার জন্য যথেষ্ট আর ৪ সিভার্ট রেডিয়েশন আপনার মৃত্যু নিশ্চিত ডেকে আনতে পারে।অন্যদিকে মোবাইল ফোনের রেডিয়েশন মাইক্রো-সিভার্ট পর্যায়ের। মোবাইলের কম মাত্রার রেডিয়েশনে দেহ কোষ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আমাদের দেহ সঙ্গে সঙ্গে সে ক্ষত পূরণ করে ফেলতে পারে। তবে অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ইউজ করলে কিংবা সারাদিন ব্যবহার করতে থাকলে ক্ষতির মাত্রা বিভিন্নভাবে আয়নিত হয়ে বেড়ে যাবে রেডিয়েশন আর তার ক্ষতির পরিমাণ ও বেশি হবে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা টিউমার ও সৃষ্টি করতে পারে এমনটাই ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।

এমতাবস্থায় সতর্কতা হিসেবে বিজ্ঞানীরা নির্দেশ দিয়েছেন মোবাইল ফোনের কাছাকাছি কম থাকতে আর কেবল অতি প্রয়োজনীয় দরকার ছাড়া ব্যবহার না করতে। তবে আমেরিকার ক্যান্সার সোসাইটির গবেষকরা তাদের ওয়েবসাইট এ জানিয়েছেন যে,মোবাইল ফোনের তেজস্ক্রিয়তা ব্রেন টিউমার বা মাথা বা গলার টিউমার এর ঝুঁকি বৃদ্ধি ও এর কারণ হয়ে উঠতে পারে। কারণ যেভাবে তরঙ্গ বা রেডিয়েশন কাজ করে সেভাবে শরীরের কোষের উষ্ণতাও বাড়তে থাকে যার ফলে টিউমার বা ক্যান্সার এর কোষ সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ তৈরী হবে।


যদিও বৈশ্বিক ভাবে ফোনের বিকিরণ এর নির্দিষ্ট কোনো মানদণ্ড নেই,তবে জার্মানিতে এজন্য মানদণ্ড হচ্ছে প্রতি কেজিতে ০.৬০ওয়াট। মোবাইল ফোনের কোম্পানি ভেদে এই মাত্রা কম বেশি হয়। তালিকায় থাকা সব ফোনেই এ বিকিরণ মাত্রা এর দ্বিগুণ। ফোনের বক্স বা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশনের ওয়েবসাইট এসকল তথ্য থাকলেও খুব কম গ্রাহকই আছেন যারা এগুলো পড়ে দেখেন। সে হিসেবে ওয়ান প্লাস এর ৫টিতেই মাত্রা ১.৬৮,হুয়াওয়ে আর নকিয়া ৬৩০ এ ৩টায় রয়েছে শীর্ষে।

আইফোন ৭ রয়েছে তালিকার ১০ নম্বরে,আইফোন ৮ রয়েছে ১২ নম্বরে, আইফোন ৭ প্লাস ১৫ নম্বরে সনি এক্সপেরিয়া জেডএক্সওয়ান কমপ্যাক্ট ১১ নম্বরে, জেড টি ই ৭ মিনি ১৩ নম্বরে আর ব্লাকবেরি ডিটিইকে৬০ ১৪ নম্বরে। এদিক থেকে সব থেকে কম বিকিরণ ছড়ায় সনি এক্সপেরিয়া এম৫ এরপর পর আছে স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট ৮,এস৬এজ,গুগল পিক্সেল এক্সএল,স্যামসাং এস৮,এস৭এজ।



কিভাবে এ ঝুঁকি কমানো যায় তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন।

কম বিকিরণ ছড়ায় এমন ফোন বেছে নেয়া,ফোন ব্যবহারের সময় কমানো, স্পিকার বা হ্যান্ডস ফ্রি মোড এ রেখে ব্যবহার করা,মোবাইল ফোনের টাওয়ারের কাছাকাছি থাকা।আর তাই অদূর ভবিষ্যৎ এ স্মার্ট ফোনের রেডিয়েশনে যেন আপনি অসুস্থ না হয়ে পড়েন সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন।