বাল্যবিবাহ
২০১৯ সালে লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই সবচেয়ে যে খবরটি আমাদের বেশি নজর কেড়েছে তা হলো লকডাউন চলাকালীন বাল্যবিবাহ (Chaild Marrage)। যারা একটু সচেতন আর নূন্যতম শিক্ষিত আছেন তাদের অনেকেই হয়ত অবাক হওয়ার চরম শিখরে পৌঁছে গেছেন এই খবর শুনে যে এই দুঃসময়ে বিয়ে! তাও আবার বাল্যবিবাহ।
যেখানে কিনা এক শ্রেণীর মানুষ আম্ফান এর তাণ্ডব এ সর্বস্ব হারিয়ে দিশেহারা আবার এক শ্রেণীর মানুষ এর করোনা নিয়ে জীবন মরণ লড়াই।ঠিক এই সময়ে কিভাবে সম্ভব বিয়ে।কতটা নিচ হলে মানুষ এমন কাজটি করতে পারে।
আবার এক শ্রেণীর মানুষের কাছে তো মেয়েদের নিজস্ব কোনো বাড়িই থাকতে নেই। শ্বশুর বাড়িই নাকি তার নিজের বাড়ি।আরো কিছু মানুষ আছে যাদের কাছে কন্যা সন্তান একটা অভিশাপ স্বরূপ। কন্যা সন্তান একটা পরিবারের বোঝা। কন্যা সন্তান মানেই ঋতুবতি হওয়ার অপেক্ষা আর তারপরই বিয়ে।
ভাবটা এমন যেন মেয়ে হলে জন্মালে তাদের কোনো ইচ্ছা অনিচ্ছা থাকতে নেই।জন্মই হয়েছে যেন বিয়ে করার জন্য শুধুমাত্র, আর স্বামীর পরিবারে সন্তান লালন-পালন আর তাদের সেবা করার জন্য। এসব নির্দয় কিছু মানুষের পক্ষেই সম্ভব বাল্যবিবাহ দেওয়া। বাংলাদেশ সংবিধান অনুসারে মেয়েদের বয়স ১৮ হলেই সে বিবাহযোগ্য। আর ১৮ এর নিচের বয়সের মেয়েদের বিয়ে দেওয়াই হলো বাল্যবিবাহ। বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী বাল্যবিবাহ দণ্ডনীয় অপরাধ।
বিয়ে
ভয়ানক সতীদাহ প্রথা
কেন বাল্যবিবাহ (Child Marrage) দেওয়া হয়ে থাকে তার কিছু কারণ নিচে দেখানো যায়।
১ পরিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতা,আর মেয়ে সন্তান কে বোঝা ভাবা।
২ মেয়েদের বেশিদূর পড়াশোনা না করিয়ে, পড়াশোনা বন্ধ করে দেওয়া।
৩ যদি একটা পরিবারে অধিক সন্তান থাকে সেক্ষত্রে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দায় মুক্ত হওয়া আর ছেলেদের উচু চোখে দেখা।কেননা,সেসব বাবা মায়ের ধারণা ছেলে সন্তান মানুষ করলে লেখাপড়া করে চাকরি করে খাওয়াবে,কিন্তু মেয়েকে তো বিয়ে দিতেই হবে একদিন না একদিন।
বাল্যবিবাহের ফলে যেসকল সমস্যা গুলো সমাজে দেখা যায়,তার মধ্যে অন্যতম একটি সমস্যা হলো এই বয়সের মেয়েরা সন্তান ধারণের উপযোগী হয়ে ওঠে না।বাল্যবিবাহের ফলে সন্তান ধারণের পর এসকল মায়েদের মানসিক অবস্থা থাকে খুবই অসস্তিকর।একজন মা তার সন্তান কে মেরেও পর্যন্ত ফেলতে পারে।আর মা তার নিজের সন্তানকে মেরে ফেলেছে অথবা কেটে কয়েক টুকরো করে ফেলেছে বা পুকুরে অথবা ড্রেনে ফেলে দিয়েছে এমন ঘটনা কিন্তু অস্বাভাবিক কিছু নয়।
অনেকেই হয়ত ভাববেন কিভাবে স্বাভাবিক ভাবা যায়!আদৌ কি সম্ভব একজন মায়ের পক্ষে যে কিনা ১০ টা মাস সেই সন্তানকে তার গর্ভে লালন করেছে।আবার এটাও ভেবে ফেলেন মায়েরা সন্তানের জন্য শুধু নিজের সর্ব সুখ কেন জীবন দিতেও তো প্রস্তুত।
এসব কিছুই আমাদের ধারণা মাত্র কিন্তু এ ঘটনা অস্বাভাবিক এ কারোণেই তখন তারা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন রোগে ভুগে।এ রোগের রোগীদের রাতে ঠিকমতো ঘুম হয় না, অস্বস্তিতে ভুগে আর নিজের সন্তানকে তারা মানসিক বা শারীরিক খুঁত আছে বলে মনে করেন তাই মেরে ফেলাই উত্তম আর নিজেও আত্মহত্যা করে ফেলতে পারে যেকোনো সময়।
এ সময় উঁচু গলায় কথা বলা,মেজাজ চড়া থাকা অনেকের কাছেই হয়ত প্রসূতি মায়ের এ সময়ের মানসিক বিষয়গুলো অজানা। আর তাই তাদের মানসিক প্রস্তুতির জন্য দরকার প্রাপ্ত বয়স বাল্যবিবাহ রোধ নবজাতক বাঁচানো।
বাল্যবিবাহ রুখতে যা করা প্রয়োজন
জনসাধারণ কে বোঝানো বিবাহ মানেই একটি ছেলে মেয়ে একি ছাদের তলে থাকা স্ত্রী স্বামীর সেবা করা আর তার অধীনে থাকা আর সন্তান জন্মদান নয়।বিবাহ মানে একটি শুভ পরিণয় এর মাধ্যমে সমাজে সুষ্ঠু সুন্দর জীবনের পথে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকা,একে অপরকে বোঝা আর তা দুজনে মিলে সমঝোতা সৃষ্টি করা,তবেই সম্ভব একটি সুখী সমাজ তথা ভাল পরিবার গঠনের।
আর এসব বোঝার জন্য দরকার একটা উপযুক্ত বয়স অবশ্যই ১৮ এর বেশি কেননা ১৮ বছর বয়সের কিশোর কিশোরী রা যেকোনো করার ঝুঁকি নিয়ে থাকে ঝোঁকের বশে কোনো কিছু না ভেবেই আবার অনেকে সম্মতি জানায় তাদের বাবা মায়ের বাধ্যগত হয়ে।কিন্তু বাল্যবিবাহ কখনই এর সমাধান হতে পারে না, যা সমাজের উন্নতির অন্তরায় আর ১৮ এর কম বয়সে এসব বোঝার মত জ্ঞান তারা অর্জন করতে সক্ষম হয় না।
আর তাই সকলের স্লোগান হওয়া উচিৎ
বাল্যবিবাহ রুখতে হলে
আওয়াজ তোলো তালে তালে
সকলকেই সচেতন হতে হবে আর নিজের সাধ্যমত বাল্যবিবাহ রোধ করতে আইনের শরণাপন্ন হতে হবে।মনে রাখতে হবে একটি শিক্ষিত নারী একটি শিক্ষিত জাতি গড়ার কারিগর, তবে সেটা বাল্যবিবাহ দিয়ে নয়, সঠিক সময়ে উপযুক্ত সিধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে।
More Stories
স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের অবনতি হয় কেন?
ট্রান্সজেন্ডার (Transgender) ও হিজড়ার পার্থক্য কি
Gift Box হিসাবে প্লেট উপহার কি প্রাসঙ্গিক?