Disaster and Earth Science
আলেকজান্ডার পর্কস নামক ভদ্রলোক ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম প্লাস্টিক আবিষ্কার করেন। প্লাস্টিক তৈরির অন্যতম প্রধান উপাদান হচ্ছে পলিমার (রাসায়নিক উপায়ে তৈরি প্লাস্টিক একদিকে যেমন নমনীয়,দীর্ঘস্থায়ী এবং সস্তা হয়ে থাকে)। প্লাস্টিক আবিষ্কার মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে আরো সহজ এবং প্রাণবন্ত করে তোলে। মানুষ তাদের ব্যবহার্য সব ধরনের কাজে প্লাস্টিকের ব্যবহার শুরু করে। ফলে প্লাস্টিকের ব্যবহার পুরো পৃথিবীতে অনেকটা বিদ্যুৎ গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। প্লাস্টিকের ব্যবহার এতো বাড়তে থাকে যে শেষ পর্যন্ত পরিবেশকে ক্ষতিকরে এই প্লাস্টিক দূষণ।
প্লাস্টিকের Plastic Pollution এই অবাধ ব্যবহার পুরো পৃথিবীর কাছে এখন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে । প্লাস্টিক যে কতটা ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে তা নিচের প্লাস্টিকের আয়ুষ্কাল লক্ষ করলেই ভালো ভাবে বোঝা যাবে ।
প্লাস্টিক প্রাকৃতিককতভাবে মাটির সঙ্গে মিশে যেতে সময় লাগে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ বছর। আমরা মুদি দোকান থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র বহনের জন্য যে ধরনের প্লাস্টিক ব্যবহার করি বা ব্যাগ ব্যবহার করি সেগুলো মাটির সঙ্গে মিশে যেতে সময় লাগে ২০ বছরের মতো । বিভিন্ন ধরনের কোমল পানীয়,চা,কফি এবং চিপস জাতীয় বিভিন্ন খাদ্যে ব্যবহৃত প্লাস্টিক অনায়াসেই ৫০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে।
পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের প্লাস্টিকের ব্যবহার তুলনামূলক হারে অনেক বেশি এক পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর মাথাপিছু প্রায় পাঁচ কেজি প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়। যা বাংলাদেশের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি স্বরূপ । ২০৩০ সালে এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে মাথাপিছু ৩৪ কেজিতে যেটা অনেকটা উদ্বেগের বিষয় । এতো গেল পরিসংখ্যানগত প্লাস্টিকের Plastic Pollution ভয়াবহতা আজ আমরা পরিবেশের উপর প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব।
শস্য উৎপাদনের জন্য মাটির প্রয়োজন। এই মাটি যদি দূষিত হয়, তাহলে পরিবেশের উপর নেমে আসবে এক ভয়াবহ বিপর্যয় মানবজাতির জন্য হুমকি স্বরূপ। আমরা জানি মাটিতে বিভিন্ন ধরনের অনুজীব বসবাস করে যেগুলো মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি সহ ফসল উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে ।কিন্তু প্লাস্টিক দূষণের কারণে এসব অনুজীবের মৃত্যু ঘটে এবং মাটির উর্বরতা নষ্ট হয় এবং ফসল উৎপাদনের ক্ষমতা হ্রাস করে।
পানির অপর নাম জীবন ।এই জীবনই যদি দূষিত হয় তাহলে বেঁচে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে যাবে। ২০১২ সালের এক গবেষণা থেকে জানা গেছে যে ,পৃথিবীর সব সমুদ্রে ১৬৫ মিলিয়নে টনেরও বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য আছে। প্রতিবছর এই পরিমাণ বেড়েই চলছে। এভাবে পানি দূষিত হতে থাকলে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের সম্মুখীন হবে। একসময় পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিবে ,ফলশ্রুতিতে পরিবেশের ভারসাম্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ।২০২০ সালের একটি ঘটনা, স্টিল সমুদ্রসৈকতে একটি বিশাল আকৃতির তিমিকে মরে থাকতে দেখা যায় ।
পরবর্তীতে তিমিটির মৃত্যুর কারণ হিসেবে তার পাকস্থলীতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া প্লাস্টিককে দায়ী করা হয়েছিল।তাছাড়া ২০১৯ সালে একটি সিলকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় সমুদ্রের তীরবর্তী অঞ্চলে। সেই সিলটির পাকস্থলীতে ৩৫ কেজি ওজনের একটি প্লাস্টিক আটকে গিয়েছিল। যার ফলে সিলটি মারা গিয়েছিল ।প্লাস্টিক যে কতটা ভয়াবহ উপরের দুইটি ঘটনা তা বোঝার জন্য যথেষ্ট। পৃথিবীবাসীর এখনই সময় প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহার করা, নাহলে এই সুন্দর পৃথিবী একসময় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হবে ।
প্লাস্টিক, প্রাণীদের মধ্যে সামুদ্রিক প্রাণীর উপর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। বিশ্বখ্যাত বই “Introduction to Marine Biology”বলা হয়েছে প্লাস্টিক সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য একক সর্বাধিক হুমকির মতো । অনেক প্রাণী খাদ্য হিসেবে ভুল করে প্লাস্টিক খাওয়ার ফলে অনেক প্রাণীর মৃত্যু হয় । তাই বলা যেতেই পারে প্রাণীকুলের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
(ক) সর্বপ্রথম আমাদের প্লাস্টিক এবং প্লাস্টিক দ্রব্যাদি জাতীয় পদার্থ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।(
খ) দ্বিতীয়তঃ আমাদের প্লাস্টিক Plastic Pollution ব্যবহার বন্ধে শক্তিশালী আইন কাঠামো প্রণয়ন করতে হবে ।
(গ) প্লাস্টিকের বিপরীতে আমরা পরিবেশবান্ধব পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার করতে পারি এবং আইন করে সব জায়গায় প্লাস্টিকের বিপরীতে আমরা পরিবেশবান্ধব পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার করতে পারি এবং আইন করে সব জায়গায় প্লাস্টিক এর পরিবর্তে পাটজাত দ্রব্য ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে ।
(ঘ) যত্রতত্র প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থ না ফেলে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলার নির্দেশনা জারি করতে হবে এবং এই আইন ভঙ্গকারীদের শাস্তি ব্যবস্থা করতে হবে।
(ঙ) প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থের উপর অধিক মাত্রায় শুল্ক আরোপ করে পাট জাতীয় দ্রব্যাদি ব্যবহার সহজ করতে হবে।
সর্বশেষ প্লাস্টিকের ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের সভা-সমাবেশ এবং সেমিনার মাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এভাবে আমরা একটি বসবাসযোগ্য পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক মুক্ত পৃথিবী গড়তে তুলতে পারি।
প্লাস্টিক দূষণ একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা, যার প্রভাব আমাদের সবার জীবনেই পড়ছে। এই সমস্যার সমাধানে সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। বিশেষ করে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের হাতে এই দায়িত্বটি তুলে দেওয়া উচিত। ছাত্রছাত্রীরা পরিবর্তনের শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে।
ছাত্রছাত্রীরা কীভাবে প্লাস্টিক দূষণ কমানোতে অবদান রাখতে পারে?
সচেতনতা বৃদ্ধি: নিজেদের মধ্যে এবং পরিবার, বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে প্লাস্টিক দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
প্লাস্টিক ব্যবহার কমানো: দৈনন্দিন জীবনে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর চেষ্টা করা। যেমন: একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যাগের পরিবর্তে কাপড়ের ব্যাগ ব্যবহার করা, পানির বোতল পুনর্ব্যবহার করা ইত্যাদি।
পুনর্ব্যবহার এবং পুনঃচক্রায়ণ: প্লাস্টিকের জিনিসপত্র পুনর্ব্যবহার করা এবং প্লাস্টিক বর্জ্যকে পৃথক করে ফেলা।
স্কুল এবং সম্প্রদায়ে উদ্যোগ গ্রহণ: স্কুল এবং সম্প্রদায়ে প্লাস্টিক মুক্ত পরিবেশ গড়ার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা। যেমন: স্কুল চত্বর থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা, প্লাস্টিক মুক্ত দিবস পালন করা ইত্যাদি।
সরকারি নীতিমালা সম্পর্কে সচেতন হওয়া: প্লাস্টিক দূষণ রোধে সরকার যেসব নীতিমালা গ্রহণ করেছে, সেগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং তা মেনে চলা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের মাধ্যমে প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করা।
কেন ছাত্রছাত্রীরা গুরুত্বপূর্ণ?
ভবিষ্যতের নাগরিক: ছাত্রছাত্রীরা ভবিষ্যতের নাগরিক। তাই ছোটবেলা থেকেই তাদের মধ্যে পরিবেশবান্ধব চিন্তাভাবনা গড়ে তোলা জরুরি।
বড়দের প্রেরণা: ছাত্রছাত্রীদের উদ্যোগ অন্যান্যদেরও অনুপ্রাণিত করতে পারে।
সামাজিক পরিবর্তনের শক্তি: ছাত্রছাত্রীরা সামাজিক পরিবর্তনের একটি শক্তিশালী মাধ্যম।
সুতরাং, ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের থেকে শুরু করে পরিবার, স্কুল এবং সম্প্রদায়কে প্লাস্টিক মুক্ত করার দিকে এগিয়ে যেতে পারে।