অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে,মানুষ কাঁচা মাংস খায় (Eskimo) এক্সিমোদের উত্থান সাইবেরিয়ায়। চিনা-জাপানিদের মতোই জাতিতে তারা মঙ্গোলয়েড। কাজেই এদের সঙ্গে ‘আমেরিইন্ডিয়ানদের’ জ্ঞাতিসম্পর্ক নেই। এক্সিমোরা উত্তর আমেরিকায় আসতে শুরু করেছিল প্রায় দুই হাজার বছর আগে। লম্বায় ওরা পাঁচ ফুট থেকে পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চির বেশি হয় না। শরীরের গঠন শক্তিশালী। তারা কৌশলী, বুদ্ধিমান ও হাসিখুশি। তার মানে ‘আমেরিইন্ডিয়ানদের’ মতো গম্ভীর নয়। অর্ধসিদ্ধ মাংস খায় সভ্য সমাজেই এমন অনেক মানুষ আছে। কিন্তু একেবারে কাঁচা মাংস খায় এমন মানুষও কী আছে? অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, মানুষ কাঁচা মাংস খায়। একেবারে কাঁচা। এবং রক্তসহ। কোনো ধোয়ারও প্রয়োজন মনে করে না। এমনই একটি গোষ্ঠীর নাম এক্সিমো। একটি নৃগোষ্ঠী। উপজাতি কিংবা আদিবাসী। উত্তর মেরু মানে সুমেরুতে বসবাস তাদের। আরো স্পষ্ট করে বললে উত্তর আমেরিকা ও পূর্ব সাইবেরিয়া অঞ্চল তাদের আবাসস্থল। এই সাইবেরিয়া থেকেই প্রতিবছর শীতের সময় লাখ লাখ পাখি বাংলাদেশে আসে। আর্কটিক সাগরের দ্বীপপুঞ্জ এবং গ্রিনল্যান্ডেও তারা বাস করে।
এক্সিমো শব্দের অর্থ কাঁচা মাংস ভক্ষণকারী। রেড ইন্ডিয়ানরা এই নাম দিয়েছে। আজকাল এস্কিমোরা ইনুইট নামে পরিচিতি। এটা তাদের নিজেদের দেয়া নাম। ইনুইট শব্দের বাংলা অর্থ মানুষ। এক্সিমো বা ইনুইট এমন এক শীতার্ত পরিবেশে থাকে যেখানে শীতকালে তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। শীতকালে ইগলু তৈরি করে এর ভেতরে বাস করে তারা। ইগলু দেখতে অনেকটা গম্বুজের মতো। শীতকালে এক্সিমোদের বসত এলাকায় সারাদিন-সারারাত ঝড়ো বাতাস বয়। তখন দিনের পর দিন ইগলুর বাইরে বের হতে পারে না তারা। গ্রীষ্মকালে মাটি বা পাথরের ঘর বানাতে তারা দক্ষ। কোথাও গেলে কুকুরে-টানা স্লেজ ব্যবহার করে। তিমি মাছের চোয়াল, রেইনডিয়ারের খুলি, শিলমাছের হাড় আর কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় এই স্লেজ। লেজের বিভিন্ন অংশ বাঁধা হয় চামড়ার বেল্ট দিয়ে। স্থলপথে চলার জন্য এই স্লেজ ব্যবহার হয়। সাধারনত একটা স্লেজ পাঁচটা কুকুর টেনে নিয়ে যায়। কুকুরগুলোও অনেক কষ্ট সইতে পারে। কোথাও না থেমে একটানা স্লেজ টানতে পারে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। অনেক দিন না খেয়েও থাকতে পারে কুকুরগুলো। দারুন প্রভূভক্ত আর বুদ্ধিমান। বিশ্রামের সময় কুকুরগুলো আলাদা করে রাখে এক্সিমোরা। বেশি খাওয়ায় না। বেশি খাওয়ালে নাকি অলস হয়ে পড়বে। স্লেজ টানবে না! জলপথে এক্সিমোরা ব্যবহার করে চামড়ার তৈরি ছোট ছোট নৌকা। এই চামড়া ‘কোয়াক’ নামে পরিচিত। শিলমাছ শিকার শুরু হয় বসন্তের প্রথম দিকে। তখন বিশাল বিশাল বরফের চাঁইয়ের ওপর শিলমাছ দল বেঁধে থাকে। শিলদের তখন প্রজনন মাস। শিকারীরা নিঃশব্দে শিলদের কাছে যায়। শিকারীদের পায়ে থাকে মরু ভাল্লুকের চামড়ার তৈরি বুটজুতা। শিকারের জন্য হাতে থাকে তীক্ষ্ম হারপুন। হারপুন দেখতে অনেকটা বর্শার মতো। শিলমাছ শিকার সহজ হলেও মরু ভালুক শিকার কিন্তু অত সহজ নয়। বসন্ত কালেই স্লেজ নিয়ে মরু ভালুকের শিকারে বের হয় এক্সিমোরা। দেখা পেলেই কুকুরদের ছেড়ে দেয়। প্রশিকক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরগুলো মরু ভালুককে ঘিরে ফেলে। এক্সিমোরা হরিণের হাড়ের তৈরি বর্শা ছুঁড়ে মারে মরু ভালুকের গায়ে। কখনও কখনও শিকারীরা ভয়ানক বিপদে পড়ে। মেরু ভালুকের আক্রমণে ক্ষতবিক্ষত হয়। শীতকালে এক্সিমোরা রেইনডিয়ার শিকার করে। সে সময়টায় দলে দলে রেইনডিয়ার দক্ষিণ থেকে উঠে আসে খাবারের খোঁজে। রেইনডয়ার একধরনের হরিণ। এক্সিমোরা তাড়া করে রেইনডিয়ারদের বরফের পাতলা স্তরের ওপর নিয়ে আসে। চাপে বরফের পাতলা স্তর ভেঙে গেলে রেইনডিয়ার পানিতে পড়ে যায়। তখন ছোট্ট নৌকায় থাকা এক্সিমোরা খুব কাছ থেকে এগুলো শিকার করে।
এক্সিমো পুরুষরাই শিকার করা পশু কাটে। মেয়েরা চামড়া ছিলে। তারপর মাংস, চর্বি ও তন্তুগুলো আলাদা করে নেয় মেয়েরাই। শুকিয়ে নেয়ার জন্য চামড়াটা টানটান করে রাখে। শুকিয়ে গেলে চামড়া আরো নমনীয় করার জন্য চিবায়, ভোঁতা কিছু দিয়ে ঘঁষে। না হলে মাইনাস ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও চামড়া কাঁচের মতো ফেটে যায়। ১৫ থেকে ১৬ বছরের মধ্যেই এক্সিমো মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়। এক্সিমো সমাজে যৌতুকপ্রথা নেই। তবে ওদের বিয়ের আগে অন্যরকম মজা হয়। কনেকে অপহরণ করার অভিনয় করা হয়। কনে বাংলা সিনেমার নায়িকার মত শরীর মোচড়ায়। অপহরণকারীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে। হবু বড় ধরতে এলে তাকে কামড়াতে যায়। বিয়ের পর এসব ছলাকলাই অন্যরকম হয়ে ওঠে। ঘরের রান্না মেয়েরাই করে। এছাড়া মেয়েরা চামড়া প্রসেস করে, কাপড় তৈরি করে, বাচ্চা পালে। তবে সমাজটা পুরুষতান্ত্রিক। পুরুষদের ইচ্ছার বাইরে কিছু করার সুযোগ তাদের নেই। পুরনো ঐতিহ্য ও পৌরাণিক কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে এক্সিমোদের ধর্ম বিশ্বাস গড়ে উঠেছে। ধর্মে এদেরকে বলা যায় সর্বপ্রাণবাদী। মানে সবারই আত্মার আছে এমন ধারনা এক্সিমো সমাজে দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত। মানুষ ছাড়াও পাথর ও বরফের আত্মা আছে। সেই আত্মা আকারে ছোট হলেও আকৃতি পাথরের মতই। আত্মা যখন শরীর ছেড়ে যায় তখন শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। আত্মা চিরদিনের মত শরীর ছেড়ে চলে গেলে শরীর মারা যায়। আত্মা তখন অশরীরি হয়ে এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়ায়। জীবিতদের ক্ষতি করে। মুক্তির উপায় কি? মুক্তির উপায় হলো নবজাকের নাম মৃত ব্যাক্তির নামে দেয়া। ভ্রাম্যমান আত্মাটি তখন আপন ঘর খুঁজে পায়। অন্যের আর ক্ষতি করে না। তবে গ্রীনল্যান্ডে বসবাসকারী কিছু এস্কিমো খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারী।
More Stories
গবেষণা কি উৎসাহ নাই দেশে
Correction of Gravity Measurements: Bouguer Correction-Latitude Correction-Terrain Corrections-Free-Air Correction
স্মার্টফোন ও কম্পিউটার আসক্তি আপনার ক্ষতি করছে না তো?