রাজু মন্ডল । বয়স্ ৮। তাদের সংসারে বাবা মা আর দুই বোন। কৃষি নির্ভর পরিবার । বাবা মা সারা দিন কাজ করে জমি চাষ করে কোনো রকমে সংসার চলে। গফুর মন্ডল তার বাবা। গফুর মণ্ডলের একটাই ইচ্ছা ছেলে মানুষ করে অনেক বড় চাকুরী ধরাবে। তখন তাদের আর কষ্ট করতে হবে না। রাজু ও তার বাবা মাকে সাহায্য করে। রাজু সন্ধ্যা হলেই বাড়ির ছোট্ট পুকুরে গিয়ে নারকেল গাছের গুড়ি দিয়ে বানানো ঘাটের উপর দাড়িয়ে যত্নে হাত মুখ ধুয়ে প্রতিদিন পড়তে বসে। ক্লাস ৫ এ পড়ে সে। সকালে বাড়ির পাশের নিম গাছের ডাল দিয়ে দাঁত মাজে, বই গুছিয়ে রাখে,, কখনো কারো সাথে তর্ক করে না।
একদিন তাদের বাড়িতে গফুর মন্ডল ধান কাটার সুবাদে তার কিছু প্রতিবেশীদের দাওয়াত করলো পেটে ভাতে বেগার দেওয়া। ১০ শতাংশ জমির ধান কেটে দিবে আর রাতে একসাথে বাহারি স্বাদের মাছ, ভাত ডাল খাবে। দুপুর বেলা একজন রাজু কে বললো ওই ছোকরা যা ত বিড়িটা ধরিয়ে নিয়ে আয়। রাজু রান্না ঘরে উনুন থেকে মাকে বললো ধরায়ে দাও। মা উনুনের আগুন থেকে ধরিয়ে দিল। এক দৌড়ে তামাক তৃষ্ণার্ত ব্যাক্তিকে দেওয়ার আগেই নিভে গেলো। আবার গিয়ে উনুনের আগুন ধরিয়ে ওই কাকা কে দিল। কাকা হাসি ঠাট্টা করতে করতে বললো এত সময় লাগে তোর এই একটু কাজ করতে আর মনের সুখে বিড়ি টানতে লাগলো।
রাজুদের বাড়ি থেকে বাজার একটু দূরে পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়া সাধারণত যাওয়া হয় না। মাঝে মাঝে বিড়ির খুব চাহিদা তৈরি হয় তাই রাজু বাবা কে বলে বাজার থেকে ৫০০ শলাকার এক বান্ডিল বিড়ি আনলো। আর কিছু ম্যাচ বাকসো। অভাবের সংসারে পড়াশুনার মাঝে বিড়ির ব্যাবসা। সবাই বাহবা দিল যে রাজুর কাছে বিড়ি পাওয়া যায়। একদিন রাজু উনুনের আগুন থেকে বিড়ি ধরানোর ঝামেলায় গোপনে একটা টান দিল বিড়িতে যাতে কেউ না দেখে। এতে আগুনটা স্থায়ী ভাবে ধরলো আর নিভে যাবার ভয় নেই। সেই দিন ই রাজু বুঝেছিল কাজটা ঠিক হয়নি। ৮ বছরের ছেলে র বিড়িতে টান? যদিও স্বাদ বলে কিছু পায়নি বিড়িতে কাশি ছাড়া। রাজু দের বাড়িতে একটা কাঁচা ল্যাট্রিন ছিল। সে একদিন লক্ষ করল কেউ বিড়ি খেয়ে ল্যাট্রিনের পাশে ফেলে রেখেছে তখন রাজুর মাথায় একটা বুদ্ধি সে মনে মনে ল্যাট্রিনে বসে বিডিতে টান দেবার সংকল্প করল কারণ এটাই নিরাপদ স্থান এভাবে তার কিছু দিন কাটলো সে বুঝল এটা ভালো কোনো অভ্যাস নয়।
রাজুর বাবা বাড়ীতে একটা প্রাইভেট মাস্টার রাখলো তার পড়াশুনার জন্য আর সৌভাগ্য ক্রমে মাস্টার তাকে কড়া শাসনে রাখলো। একদিন মাস্টার তার কচি হাতের তালুতে বেত দিয়ে একটা বাড়ি দিল সেদিন বুঝল পড়া না পারার বেদনা কত। রাজু এমনিতে ভালো ছাত্র তার উপর এই বেত্রঘা ত রাজুকে পড়া শুনায় আরও মনোযোগী করলো। ভালো পরিবেশে মানুষ ভালো কিছু শিখে আর মন্দ পরিবেশে মন্দ। অতি কষ্টের মধ্যে রাজু পড়াশুনা করে মাধ্যমিক পাস করলো। তারপর কলেজ পাস করলো। দারিদ্রতার মধ্যে রাজু বিশ্ব বিদ্যালয় পড়াশুনা করবে বলে সাহায্য প্রার্থনা করছিল। একদিন তার এক পাতানো মাসীর বাড়ীতে গেলো লজিং থাকবে বলে আর বিশ্ব বিদ্যালয় ভর্তির কোচিং করবে। রাজুর ইচ্ছা ছিল সে ডাক্তার হবে । পাতানো মাসীর একটা কন্যা ছিল রাজুর সম বয়সী মাসী তাদের মুখের উপর না বলে দিল। রাজুর সেদিন দরিদ্র হবার অপমান টা অনুধাবন করেছিল। তার আশা ভেঙে গেলো। কিন্তু সংকল্প টিকিয়ে রাখলো। এত কষ্ট শ্রম বা মার চেষ্টা কি বৃথা হলে যাবে? তাই নিজের চেষ্টাতে পড়াশুনা শুরু করলো আর বাচ্চাদের পড়াত। বিশ্ব বিদ্যালয় ভর্তি হয়ে সে ভালো রেজাল্ট করলো প্রথম শ্রেণীতে পাস করলো। কিন্তু রাজুর বাবা মায়ের আর্থিক কষ্ট দুর হলোনা। তাই পাস করেই একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিল।ঘটনা চক্রে সে ভাল চাকুরী পেল এবং উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ গেল। দেশের মায়া ত্যাগ করে সে দেখলো এক নতুন পরিবেশ। তাকে নিয়ম করে চলতে হয়। সব কিছুতেই সুশৃঙ্খল একটা ব্যবস্থা দেখলো সে। সময়ের সঠিক ব্যাবহার নিয়মানুবর্টিতা ভালো আচার ব্যাবহার সবই দেখলো শিখল ও মানলো। রাজু নিজেকে অনেক পরিবর্তন করে ফেললো। তার দেশের প্রতি দেশের মানুষের প্রতি মায়া হলো। রাজু দেশকে কিছু প্রতিদান দিতে চায়। নিজে যেমন সুশৃঙ্খল ব্যাবস্থায় তৈরি করেছে দেশের মানুষকেও সে তেমনি পরিবর্তন করতে চায়। যথারীতি উচ্চ শিক্ষা শেষে দেশে ফিরে আসলো। রাজু আবার অব্যবস্থাপনা দেখল রাজু সুশৃঙ্খল ব্যাবস্থার অভাব অনুভব করলো। সময়ের পরিক্রমায় তার সমস্ত শিক্ষা তার মনের গভীরেই থাকলো। একদিন সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা সে নিজেই তৈরি করবে এই আশায়।
More Stories
Causes of Permian Mass extinction
Japan Scholarship Brochure and the total Guide
How Lost and found center police found the lost -phone