প্রাচীন পৃথিবীতে মানুষ যখন জ্ঞান চর্চা শুরু করেছিল তখন থেকে আজ অবধি পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে। জ্ঞান বিজ্ঞান ও ধর্মের চর্চা যদিও সমান তালে চলছে তবুও বলা যায় বিজ্ঞান আজ অনেক এগিয়ে। কারণ ধর্ম দর্শন সেই অতীতের দর্শন । কিন্তু বিজ্ঞান সর্বদা সময়োপযোগী প্রয়োজন ও চাহিদার ভিত্তিতে ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক জ্ঞান। বিজ্ঞান যেখানে প্রশ্নাতীত ধর্ম সেখানে এসেছে উত্তর নিয়ে। ধর্ম তত্ত্ব অনুসারে পৃথিবীতে এমন কোন প্রশ্ন নাই যা ধর্ম তত্ত্ব ব্যাখ্যা করতে পারেন না অর্থাৎ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর ধর্ম তত্ত্ব মাধ্যমে দেয়া সম্ভব। অন্যদিকে বিজ্ঞান বাস্তব প্রমাণের ভিত্তি ছাড়া কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না। এখন বিজ্ঞানীদের কাছে এমন কিছু নতুন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যেমন; মানুষকে কি পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোনো গ্রহে বসবাসের ব্যবস্থা করা দরকার? মহা বিশ্বের শুরুতে বা তার পূর্বে কি ছিল?
বিজ্ঞানীরা খুঁজে বেড়ান বস্তুনিষ্ঠ উত্তর, দৃশ্যমান জগতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তাই কখনো কখনো বিজ্ঞানীরা ধর্মের ব্যাখ্যা কে এড়িয়ে চলেন।
প্রাগৈতহাসিক সময়ে জ্ঞান চর্চা ছিল না বললেই চলে। সময়ের পরিক্রমায় এসেছে বহু বিজ্ঞানী প্রকৃতির বিভিন্ন ঘটনাকে বিজ্ঞানের ভিত্তিতে উত্তর দেবার। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯১২ সালে বিজ্ঞানী আলফ্রেড ওয়েনার এলেন এক বিস্ময়কর তত্ত্ব নিয়ে। তিনি দেখলেন পৃথিবীর সমস্ত মহাদেশ গুলো একে অপরের সাথে সংযুক্ত করলে সুন্দর ভাবে মিলে যায়। এই বিষয়ে আরো বিস্তর গবেষণা শুরু করেন তার পরে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব ও উপাত্ত দেখা গিয়েছে যে মহাদেশ গুলো এক সময় এক জায়গা ছিল। সময়ের ব্যবধানে এগুলো একে অপর থেকে দূরে সরে গিয়েছে।
Table of Contents
Toggle Table of Contentএই তত্ত্বকে ভূতাত্ত্বিক ভাষায় বলে কন্টিনেন্টাল ড্রিফট।
বিষ্ময়কর এই তত্ত্ব আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানীদের মনে নানান প্রশ্ন দেখাদিল । যেমন কেন মহাদেশ গুলো একে ওপরের থেকে দূরে সরে যায়? এই প্রশ্নের উত্তর খোজার জন্য আরও একদল বিজ্ঞানী প্রমাণ করলেন পৃথিবীর কেন্দ্রে এক ধরনের শক্তির উৎস রয়েছে যাকে বলা হয় কনভেনশন কারেন্ট। এই কনভেনশন কারেন্ট কে আরও সহজ ভাষায় বোঝার জন্য এক গ্লাস পানি উত্তাপে ফুটানের সময় দেখা যায় যে, জলের মধ্যে একটা দৃশ্যমান স্রোত বয়ে যাচ্ছে গ্লাসের তলা থেকে উপরের দিকে এই স্রোত কে বলা হয় কনভেনশন কারেন্ট। এখন গ্লাসে বিদ্যমান জলের উপর পাতলা ও ছোট কয়েক টুকরা কাগজ ছেড়ে দিলে দেখা যাবে যে এটা চলমান রয়েছে। ধীরে ধীরে কাগজগুলো একে অপরের কাছে কখনো বা দূরে চলে যাচ্ছে। এই কাছে বা দূরে সরে যাওয়ার সময়কে যদি আমরা লক্ষ লক্ষ বছর এর ব্যবধানে বিবেচনা করি তবে সহজেই পৃথিবীর কেন্দ্রের কনভেনশন কারেন্ট সমন্ধে জানতে পারবো।
উপরে বর্ণিত ফুটন্ত পানির উপর ছড়িয়ে রাখা কয়েক টুকরা কাগজের মত আমার পৃথিবীও ৭ টি বৃহৎ টুকরোতে বিভক্ত। পৃথিবী পৃষ্ঠে গড়ে ১৫ কিমি পুরুত্বের এই বৃহৎ ও ধীরে ধীরে সঞ্চালনশীল পাথরের টুকরো কেই প্লেট বলা হয়। আর প্লেটের এই গতিময়তা কে বলে প্লেট টেকটোনিক।
প্লেট টেকটোনিক ধারনা থাকলে পৃথিবীতে সৃষ্ট সকল ধরনের ভূমিকম্পের কারণ ও এর বিষয় ভাল ধারনা পাওয়া যায় যা কিনা বিভিন্ন কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে একজন মানুষ প্রকৃত জ্ঞানের রাজ্যে প্রবেশ্ করতে পারে। সারা জীবন ভুল শিক্ষা নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে প্রকৃত সত্য জানায় আনন্দ বেশি।
পৃথিবীতে ভূমিকম্প নিয়ে প্রচলিত কু সংস্কার এর অভাব নাই। যেমন এক দল উপজাতি মনে করে সমস্ত পৃথিবীটা একটা বৃহৎ কচ্ছপের উপর রয়েছে যখন কচ্ছপটা নড়ে চড়ে উঠে তখন ই ভূমিকম্প হয়।কিন্তু প্রকৃত কারণ সম্পূর্ণ আলাদা যা কিনা প্লেট তেক্তনিকের তত্ত্ব থেকে জানা যায়।
পৃথিবীর প্লেটগুলো প্রতি বছর কয়েক সেমি. পর্যন্ত সরে যেতে পারে যদিও এই গতির স্থান ভেদে কম বেশি আছে। প্লেট সাধারণত দুই ধরনের
১। কন্টিনেন্টাল প্লেট (স্থল ভাগের উপর যেসব ভূখণ্ড)
২। ওশানিক প্লেট ( সমুদ্রের তলদেশে অবস্থিত)
যখন দুটি কন্টিনেন্টাল প্লেট একে ওপরের দিকে সঞ্চালন শীল তখন সু উচ্চ পাহাড়ের সৃষ্টি হয়। যেমন হিমালয় পর্বত বর্তমান রাশিয়ান প্লেট ও ইন্ডিয়ান প্লেট এর সংঘর্ষে সৃষ্টি হয়েছে।
কোথায় ভূমিকম্প বেশি হয়?
পৃথিবীর সমস্ত প্লেট গুলোর যে সব সংযোগ স্থল রয়েছে সেই সব জায়গায় অবস্থিত দেশ বা সমুদ্রও তলদেশে ভূমিকম্প বেশি হয়। পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত কোথায় ও না কোথাও ভূমিকম্প হচ্ছেই। তবে বেশির ভাগ ই রিক্টার স্কেল ৩ এর কম তাই আমরা খুব বেশি বুঝতে পারি না। অথবা সেটা হচ্ছে সমুদ্রও তলদেশে মৃদু মাত্রায়। যখন রিক্টার স্কেল ৫ এর অধিক হয় তখন আমরা সবাই ভূমিকম্পের ভয়াবহতা অনুভব করি।
টেকটনিক প্লেট গুলোর সঞ্চালন বিভিন্ন দিকে হয় । নির্দিষ্ট এক দিকে ধাবমান থাকে না। বর্তমান ইন্ডিয়ান প্লেট টি যার উপর অবস্থিত আমাদের বাংলাদেশ সহ দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ দেশ ইন্ডিয়া ৬৬ মিলিয়ন বছর আগে বর্তমান আস্ট্রেলিয়া মহাদেশের সাথে সংযুক্ত ছিল এখন তা সম্পূর্ণ আলাদা। দুটি মহাদেশ।
বাংলাদেশের উত্তর পূর্ব দিকে একটি ছোট প্লেট বার্মিজ প্লেট এখন গতি শীল তাই অদূর ভবিষ্যতে ভূমিকম্প সৃষ্টি করার মত শক্তি এটা সঞ্চিত করছে যা কিনা যে কোন সময় অবমুক্ত হয়ে ভূমিকম্প হয়ে কাঁপিয়ে দিতে পারে দেশের মধ্য অঞ্চল সহ উত্তর পূর্ব অঞ্চল।
More Stories
গণিতের সকল সূত্র একসাথে
কয়লা ও কালো শেলের মধ্যে 2 টি প্রধান পার্থক্য জানেন কি?
প্রফেসর মদন মোহন দে যে 4 টি কারনে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ছিলেন