আমরা আসবাব নই, বলো কন্যে। আমরা জড়োয়া অলংকাররূপে লোহার সিন্দুকে আবদ্ধ থাকিবার বস্তু নই , সকলে সমস্বরে বল ,আমরা মানুষ। না জাগিলে ভারত ললনা । ভারত জাগিবেনা । আমরা পুরুষের ন্যায় সম্যক সুবিধা না পাইয়া পশ্চাতে পরিয়া আছি।
-বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন।
আজ আমরা বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান পায়রাবন্দের অদূরে অবস্থিত বেগম রোকেয়ার স্মৃতিবিজড়িত ভাংনী জমিদার বাড়ি ।যা স্থানীয়দের কাছে হাওয়ালী নামেই পরিচিত । চলুন তাহলে শুরু করা যাক বেগম রোকেয়ার স্মৃতিবিজড়িত ভাংনী জমিদার গল্প ।
১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর নারীদের মুক্তির অগ্রদূত হিসেবে ধরাতে আবির্ভাব হয়েছিল মহিষী বেগম রোকেয়ার । বেগম রোকেয়ার জন্ম সময় ছিল নারীদের জন্য এক বিভীষিকাময় কালো অধ্যায়। নারীরা ছিল বঞ্চিত, অবহেলিত,নিষ্পেষিত, নির্যাতিত ছিলনা তাদের কোনো অধিকার ।
সমাজের পুরুষরা তখন তাদের মানুষ নয় বরং পশু হিসেবে বিবেচিত করত । নারীরা যেন ছিল দাসি ,পুরুষদের বাধ্য হয়ে ঘরের মধ্যে নারীদের কাজ। ভাংনী জমিদারবাড়ি বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান পায়রাবন্দ থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত ।বেগম রোকেয়ার পিতা জহির উদ্দিন মোহাম্মদ আবু আলী হায়দার সাবের ভাংনী জমিদারবাড়ি তার বিশ্রামাগার হিসাবে ব্যবহার করতেন । আবু আলী হায়দার সাবের তার অবসর সময়টুকু বিশ্রাম নিতে তিনি ভাংনী জমিদারবাড়িতে অবস্থান করতেন । সাধারণ ভাষায় বলতে গেলে ভাংনী জমিদার বাড়ি ছিল তার বিশ্রামাগার অবসর পেলেই তিনি তার রাজকর্মচারীদের নিয়ে এখানে চলে আসতেন অবসর সময় কাটাতে ।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, বেগম রোকেয়া র পিতা আবু আলী হায়দার সাবের একজন উচ্চশিক্ষিত জমিদার ছিলেন । তিনি আরবি, উর্দু, ফারসি, বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন । তিনি একজন উচ্চশিক্ষিত পন্ডিত ব্যক্তি হলেও মেয়েদের পড়াশোনার ব্যাপারে তিনি ছিলেন বরাবরই রক্ষনশীল । মেয়েদের ঘর থেকে বের হওয়া নিষেধ ছিল সেই সময় । বেগম রোকেয়ার দুই বড় ভাই আবুল আসাদ সাহেবের ও খলিলুর রহমান আবু সাবের কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে অধ্যয়নকালে আধুনিকমনস্ক হয়ে ওঠেন এবং নারী শিক্ষার গুরুত্ব বুঝতে পারেন । তারা বুঝতে পারেন নারীর শিক্ষায়ন ব্যতীত কোন সমাজ বা কোনো দেশ বা কোন রাষ্ট্র কখনোই উন্নতির শিখরে পৌছাতে পারেনা । কোন সমাজকে এগিয়ে নিতে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে বা উন্নতির চরম শিখরে পৌছাতে চাইলে পুরুষদের পাশাপাশি নারীদেরও শিক্ষার কোন বিকল্প নেই’ ।
বেগম রোকেয়া র সাহিত্যসাধনা বা সাহিত্য অনুরাগে সবচেয়ে বড় অবদান তার বড় ভাই সৈয়দ খলিলুর রহমান সাবেরের । খলিলুর রহমান সাবের বেগম রোকেয়াকে শিক্ষাদানের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেন । খলিলুর রহমান সাবের বেগম রকেয়াকে শিক্ষাদানের ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করেন । তিনি বেগম রোকেয়াকে নারী শিক্ষার গুরুত্ব বোঝানোর পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীর অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেন। তিনি বেগম রোকিয়াকে বোঝানো যে, নারীরা শুধু ঘরে বন্দি থাকার জন্য নয়। তারাও সমাজের একটা অংশ তারাও সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে অংশগ্রহণ করতে পারে ।এবং তারাও পুরুষদের সাথে সমান তালে সমাজ বিনির্মাণে এবং সমাজের বিভিন্ন কাজে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
কথিত আছে, বেগম রোকেয়ার বড় ভাই সৈয়দ খলিলুর রহমান সাবের যখন সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে বাড়িতে আসতেন তখন তিনি রোকেয়াকে সাথে নিয়ে ভাংনী জমিদার বাড়িতে চলে আসতেন এবং এখানেই তিনি সবার অগোচরে তাকে পড়াশোনা করাতেন । জায়গাটি নিরিবিলি এবং ফাঁকা হওয়ায় বেগম রোকেয়া সুযোগ পেলেই এখানে এসে তার পড়াশুনা আর কাজ চালিয়ে যেতেন । ভাই সৈয়দ খলিল যতদিন পায়রাবন্দে থাকতেন মাঝেমাঝেই রোকেয়াকে সঙ্গে নিয়ে পায়রাবন্দে জমিদার বাড়িতে এসে পড়াশোনা করেন ।
বেগম রোকেয়া তার অধ্যায়নের অধিকাংশ সময় তিনি ভাংনী জমিদারবাড়িতে কাটাতেন । সবার চোখের অগোচরে ভাংনী জমিদারবাড়ি যেন ছিল বেগম রোকেয়ার পড়াশোনার সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা । তাই তিনি সুযোগ পেলেই এখানে চলে আসতেন পড়াশোনার জন্য ।
কথিত আছে যে,ভাংনী জমিদারবাড়িতেই বেগম রোকেয়া তার প্রথম সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। যা পরবর্তীতে তাকে সমাজ সংস্কার হিসেবে সবার সামনে আবির্ভূত করেছে। বেগম রোকেয়ার পদচারণায় ধন্য ভাংনী জমিদার তার বাড়িসগর্বে দাঁড়িয়ে আছে ।
More Stories
স্মার্টফোন ও কম্পিউটার আসক্তি আপনার ক্ষতি করছে না তো?
How to convert mg/l to meq/l simply
My Own Life Story: The Real Kindness of Japanese People