Colorgeo.com

Disaster and Earth Science

বেদ কি আসমানী কিতাব

Spread the love

বেদ কি আসমানী কিতাব?

বেদ কি আসমানী কিতাব

পুরাকালে বেদ শাস্ত্রের কোন লিখিত রূপ না থাকায় বেদ গ্রন্থের অখণ্ডতা বা আদি রূপ ধরে রাখতে এই একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। তখন ঋষিরা তাদের বিচক্ষণতা দিয়ে সেই সমস্যা কে মোকাবেলা করেছে । আদিতে বেদ মুখে মুখে গুরু থেকে ছাত্রে প্রবাহমান থাকলেও এতে বেদের মৌলিক শ্লোকের কোন রূপ পরিবর্তন হয়নি বলে আমরা ধরে নিতে পারি।

অখণ্ডতা ধরে রাখতে ঋষিরা খুব বিচক্ষণতার সাথে সঠিক ছাত্র নির্বাচন করতো। এই যে বেদ শাস্ত্রের মন্ত্র বা শ্লোকগুলো সাধারণটা গুরুগণ তাদের ছাত্রদের মাধ্যমেই পরবর্তী প্রজন্মে প্রচারিত করার ব্যবস্থা করতো। সঠিক ছাত্র নির্বাচন এজন্য খুব গুরুত্ব পূর্ণ। পুরাকালে বর্তমান আধুনিক সমাজের মত শিক্ষা গ্রহণ কোন সার্বজনীন বিষয় ছিল না। শাস্ত্রের জ্ঞান বা বেদ শিক্ষা বা বিদ্যা অর্জন কারা করতে পারবে তা নির্ধারিত হত তৎকালীন সমাজে বিদ্যামান বর্ণ প্রথার ভিত্তিতে।

বর্ণ প্রথায় যেমন ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ওঁ শূদ্র এই চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যদিও গীতাতে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন এই বিভাজন গুণ ও কর্ম অনুসারে করা হয়েছে অর্থাৎ কেউ যদি ব্রাহ্মণের গুণ প্রাপ্ত হয় অর্থাৎ শিক্ষা দীক্ষায় পাণ্ডিত্য থাকে তবে সে শূদ্রের ঘরে জন্ম নিয়েও ব্রাহ্মণ বলে পরিচিতি পাবে। আবার কোন ব্রাহ্মণ নারী পুরুষ যদি পরপুরুষে বা পরনারীতে আসক্ত হয়ে পড়ে অথবা শূদ্রের মত আচরণ করে তবে সে ব্রাহ্মণ হয়েও শূদ্র। যদিও শ্রীকৃষ্ণ অনেক পরে মহাভারতে এই কথা ঘোষণা করেছেন তবে আদিতে বৈদিক যুগে এই বর্ণ প্রথা বংশ ও কুলগত ছিল।

পুরাকালে বেদ শাস্ত্র অধ্যয়নের জন্য শুধুমাত্র ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় এবং বৈশ্যরা যোগ্য ছিল। শূদ্ররা বেদ অধ্যয়ন করতে পারত না। নিষেধ ছিল। নারীরা বেদ শাস্ত্র অধ্যয়নে নিষেধ ছিল এমনটি নয় কারণ দশ থেকে বার জন নারী ঋষির কথা শাস্ত্র অধ্যয়নে জানা যায়। নারীদের বেদ শাস্ত্র অধ্যয়নে উৎসাহিত করা হত না। নারীদের জন্য ঘর ও গৃহস্থালির কাজ কর্ম করা এবং নাচ, গান, ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে উৎসাহ দেয়া হত।  বেদ গ্রন্থের অখণ্ডতা রক্ষায় তৎকালীন শিক্ষাব্যবস্থা গুরুকুল এর বিশেষ ভূমিকা ছিল। কেমন ছিল সেই গুরুকুল শিক্ষা ব্যবস্থা? 

শিষদের নির্বাচন করা হত অধিক কঠোরতার সাথে। বর্তমান সমাজের মত শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল না। সম্পূর্ণ আবাসিক শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল। ছাত্ররা গুরুর বাড়িতেই থাকতো। বিদ্যা শিক্ষার সম্পূর্ণ অবৈতনিক অর্থাৎ বিনা খরচে। সমস্ত খরচ বহন করতো তৎকালীন গুরুগণ।

একজন গুরু ১২ জন ছাত্র নিতে পারত ১২ বছরে। বিদ্যা শিক্ষায় ছাত্ররা সম্পূর্ণ রূপে গুরুর প্রতি সমর্পিত থাকতো। বার বছর তাদের শিক্ষা জীবন। বেদের মন্ত্র গুলো ছাত্ররা মুখস্ত করতো এমন ভাবে যাতে কোন ভাবেই ভুলে না যায়। এজন্য মুখস্ত বিদ্যার কৌশল অবলম্বন করা হত। বেদের মন্ত্র গুলো সুর করে গাওয়া হত। 

বেদের মন্ত্রগুলো মুখস্ত করার জন্য বিশেষ কৌশলের অবলম্বন করা হত। আসুন সেগুলো ধাপে ধাপে জানার চেষ্টা করি। প্রথমে যে পদ্ধতি ছিল যা খুব সাধারণ এবং সহজে আয়ত্তে আনা যায়। একে বলা হয় প্রকৃতি। এই ধারায় প্রথম পদ্ধতিতে শ্লোকের শব্দগুলো কে পর্যায়ক্রমে একের পর অন্য শব্দ সাজিয়ে উচ্চারণ করা হয়। দ্বিতীয় পদ্ধতিতে শ্লোকের শব্দগুলোকে ১২-২৩-৩৪ অনুসারে সাজানো হয়।

বিকৃতি ধারা তুলনামূলক আরও কঠিন এই পদ্ধতিতে আরোহ ও অবরোহ এই দুই দিকেই শব্দগুলোর গতি থাকে। এই ধারাতে আবার দুইটা পদ্ধতি রয়েছে। পদ্ধতিতে ১২-২১-১২/ ২৩-৩২-২৩/৩৪-৪৩-৩৪/ এভাবে এগিয়ে যাওয়া হয় যতক্ষণ না মন্ত্রের শব্দগুলো শেষ হচ্ছে। দ্বিতীয় পদ্ধতি হল ১২-২১-১২৩-৩২১-১২৩/ ২৩-৩২-২৩৪-৪৩২-২৩৪ এভাবে এগিয়ে যাওয়া হয় যতক্ষণ না শ্লোকের মন্ত্র গুলো শেষ হচ্ছে।

এখন প্রশ্ন হতে পারে কেন এমন কঠিন কঠিন নিয়ম? যেহেতু তখন কোন ধরনের লিখিত ব্যবস্থা ছিল না তাই মানুষের মস্তিষ্ক স্মৃতিকেই বিশ্বাস ওঁ নির্ভর করতে হত। মানুষের স্মৃতি কে বিশ্বাস করা দুরূহ হয়ে পড়ত কারণ মানুষের ব্রেন সহজেই ভুল করতে পারে। মন্ত্র গুলোকে উচ্চারণ করার সময় যাতে সম্পূর্ণ মনোযোগ থাকে সেজন্য মন্ত্রের শব্দগুলোকে এভাবে জটিল করে সাজানো হয়েছে। এতে মন্ত্রের শব্দ খুব বেশি করে মস্তিষ্কে খেলা করে এবং যত বেশি শব্দগুলো নিয়ে খেলা করা হয় ততই বেশি মনে থাকবে।

মন্ত্র উচ্চারণের এই সব পদ্ধতিগুলো ব্যবহারে বাক্যের অর্থ  ঠিক না থাকলেও শ্লোকে ব্যবহৃত শব্দগুলো কখনই ভুলে যাবার সুযোগ নাই অথবা বাক্যে অন্য শব্দের অপ্রত্যাশিত বা ইচ্ছাকৃত অনুপ্রবেশ হেতু মুল শ্লোকের অর্থ যাতে পরিবর্তন না হয়ে যায় সে জন্যই মন্ত্রের ধারা ও পদ্ধতিগুলো কে কঠিন করার একটা যুক্তি রয়েছে।