Colorgeo.com

Disaster and Earth Science

একজন আদর্শ শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য

Spread the love

একজন আদর্শ শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য

একজন আদর্শ শিক্ষকের কাজ হল শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মানুষ করে গড়ে তূলতে সহযোগিতা করা। সে জন্য ছাত্র ছাত্রীদের কে মনুষ্যত্ব বিষয়ে জ্ঞান প্রদান করা। 

একজন আদর্শ শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য
প্রাথমিক বিদ্যালয় শ্রেণী কক্ষএকজন আদর্শ শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য

একজন আদর্শ শিক্ষক শুধুমাত্র জ্ঞান প্রদানকারী নয়, বরং একজন মূল্যবোধের প্রেরক, একজন মার্গদর্শক এবং একজন প্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্ব। তিনি শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা শেখান না, বরং তাদেরকে একজন সুস্থ ও সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন।

 

আদর্শ শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য:

 

জ্ঞান প্রদান:

 

নিজের বিষয়ের উপর দক্ষতা অর্জন করা এবং তা সহজ ও বোধগম্য ভাষায় শিক্ষার্থীদের শেখানো।

নতুন পদ্ধতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষাদান।

শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসু প্রকৃতি বিকাশ করা এবং তাদের প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দেওয়া।

মূল্যবোধ গঠন:

 

সততা, নৈতিকতা, দেশপ্রেম, মানবতাবাদ ইত্যাদি মূল্যবোধ শিক্ষার্থীদের মধ্যে গড়ে তোলা।

সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা।

শিক্ষার্থীদের ভালো নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।

শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক উন্নয়ন:

 

শুধুমাত্র একাডেমিক দক্ষতা নয়, বরং শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক দক্ষতা বিকাশ করা।

শিক্ষার্থীদের প্রতিভা ও দক্ষতার সঠিক ব্যবহার শিখানো।

শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করা।

শিক্ষার্থীদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়া:

 

শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।

তাদের সমস্যা শুনে তাদের সমাধানে সহায়তা করা।

শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি ইতিবাচক শিক্ষণ পরিবেশ সৃষ্টি করা।

অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা:

 

শিক্ষার্থীর শিক্ষাগত অগ্রগতি সম্পর্কে অভিভাবকদের নিয়মিত অবহিত করা।

শিক্ষার্থীর কোন সমস্যা হলে অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করা।

পেশাগত উন্নয়ন:

 

নিজেকে নতুন নতুন জ্ঞান ও দক্ষতায় সমৃদ্ধ করা।

নতুন শিক্ষণ পদ্ধতি ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা।

অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় করা।

একজন আদর্শ শিক্ষকের আরও গুণাবলী: 

 

ধৈর্যশীল

সহানুভূতিশীল

প্রেরণাদায়ী

সৃজনশীল

নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা সম্পন্ন

সৎ ও নিষ্ঠাবান

একজন আদর্শ শিক্ষক সমাজের জন্য একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তিনি শুধুমাত্র জ্ঞান প্রদান করেন না, বরং একজন সুস্থ ও সফল সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

 

একজন আদর্শ শিক্ষকের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা

একজন শিক্ষক শুধুমাত্র জ্ঞান প্রদানকারী নয়, বরং একজন মূল্যবোধের প্রেরক, একজন মার্গদর্শক এবং একজন প্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্ব। তিনি শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা শেখান না, বরং তাদেরকে একজন সুস্থ ও সফল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন।

 

একজন আদর্শ শিক্ষকের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা:

 

বিষয় জ্ঞান: নিজের বিষয়ের উপর দক্ষতা অর্জন করা এবং তা সহজ ও বোধগম্য ভাষায় শিক্ষার্থীদের শেখানো।

শিক্ষণ পদ্ধতি: বিভিন্ন শিক্ষণ পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান ও তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করার দক্ষতা।

সৃজনশীলতা: নতুন নতুন শিক্ষণ পদ্ধতি ও উপকরণ তৈরি করার ক্ষমতা।

ধৈর্য: শিক্ষার্থীদের ধীরে ধীরে শেখানোর জন্য ধৈর্য ধারণ করা।

সহানুভূতি: শিক্ষার্থীদের সমস্যা বুঝে তাদের সাহায্য করার জন্য সহানুভূতিশীল হওয়া।

প্রেরণা: শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি উৎসাহিত করা।

 বোঝানোর ক্ষমতা: জটিল বিষয়কে সহজ করে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে পারা।

আত্মবিশ্বাস: নিজের উপর বিশ্বাস রাখা এবং শিক্ষার্থীদেরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলা।

নৈতিকতা: সততা, নিয়মিতা, দায়িত্ববোধ ইত্যাদি গুণাবলী থাকা।

 

শিক্ষকের জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তাঃ

 

শিক্ষকের জন্য প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার কারণ:

 

শিক্ষার পরিবর্তন: শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পরিবর্তন আসছে। প্রযুক্তির উন্নয়ন, শিক্ষাক্রমের পরিবর্তন, শিক্ষার্থীদের চাহিদার পরিবর্তন ইত্যাদি। এই পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।

নতুন শিক্ষণ পদ্ধতি: প্রচলিত শিক্ষণ পদ্ধতির পাশাপাশি নতুন নতুন শিক্ষণ পদ্ধতি আবিষ্কার হচ্ছে। এই নতুন পদ্ধতিগুলো শিখতে হলে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।

শিক্ষার্থীদের চাহিদা: আজকের শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি সচেতন এবং তাদের চাহিদাও অনেক বেশি। তাদের চাহিদা মেটাতে শিক্ষকদের নতুন নতুন দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

পেশাগত উন্নয়ন: শিক্ষকতা একটি পেশা। এই পেশায় সফল হতে হলে নিজেকে ক্রমাগত উন্নত করতে হবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকরা নিজেদের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে পারেন।

আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষকরা নিজেদের উপর আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারেন।

শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন:

একজন আদর্শ শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্যঃ ব্যক্তিগত উদাহরণ (মোঃ নাইম আহমেদ)

সেদিন ম্যাচ থেকে বাড়ি ফিরছিলাম, পরিক্ষা শেষ বলে। অনেক দিন হলো বাড়ি যাই না। তাই মনে অনেক আনন্দ হচ্ছিল। শেরপুর হতে সোনামুখী আসলাম CNG তে। আর সোনামুখী থেকে বড়ির উদ্দেশ্যে উঠলাম বাসে। আর সেই বাসের মধ্যেই আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও শ্রেষ্ঠ শিক্ষা পেলাম।

আমি যখন ক্লাস নাইন-টেনে তারাকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়তাম, তখন বাসে করে আসা যাওয়ার সময় তাকে কলেজে যেতে দেখতাম। তিনি আর কেউ নন, RIM ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক। আমাদের স্কুলের পাসেই ছিল সেই কলেজ।

যাই হোক, বাসে করে বাড়ি তে আসার পথে প্রথমে কলেজ, তারপর স্কুল। কলেজের কাছে বাস থামতেই তিনি বাসে উঠলেন। বাসে যথেষ্ট পরিমান ভির ছিলোনা। আমি বাসের পেছনের আগের ছিটে বসা ছিলাম। তিনি এসে ঠিক আমার সিটের বাম পার্শ্বের সিটে বসলেন। আমি বসে বসে ভাবছিলাম কখন যে বাড়িতে গিয়ে পৌঁছাব। বাস যখন সিমান্ত বাজার এসে পৌঁছাল তখন কয়েকটা মহিলা উঠলো, কিন্তু তাদের বসার সিট হলো না। ঠিক সেই মহূর্তে বাসের কনট্রাকটর একজন হিন্দু মহিলা ও তার কিশোরী মেয়ে কে বাসের পেছনের অংশে আসতে বললো।

হটাৎ সামনে তকিয়ে দেখি অনেক লোক উঠে গেছে, যেন দাঁড়ানোর জায়গা নেই! তাদের মধ্যে একজন প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। তিনি শুরু থেকেই হাকা হাকি করছিলেন যে, বসার সিট না হলে তিনি নেমে যাবেন। কনট্রাকটর সাহেব তাকে কোন রকমের পেছনে পাঠিয়ে, সেই প্রভাষক স্যারের কাছে বসিয়ে দিল।

কিন্তু হিন্দু মহিলা ও তার মেয়েকে দড়িয়ে থাকতে দেখে প্রভাষক স্যার সহ্য করতে পারলো না। তিনি সিট ছেড়ে দিলেন এবং তিনি দাড়িয়ে হিন্দু মহিলাকে বসতে দিলেন। কিন্তু কন্ট্রাক্টর বলতেও পারছেনা, সইতেও পাড়ছে না যে প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক কে উঠে কিশোরী মেয়ে টাকে বসতে দিতে। এদিকে বাস ভর্তি লোকের চাপাচাপিতে কিশোরী মেয়েটি পড়েছে বিপাকে। এমতাবস্থায় আমার বাড়ি যাবার আনন্দ মূর্ছা গেল। আমি সিটে বসে লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম। সিটে বসে আরামে বাড়ি যাবার বাসনা ত্যাগ করলাম। আমি প্রভাষক স্যারকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে হতবাক হয়ে গেলাম। আমি আর এক মূহুর্ত বসে থেকতে পারলাম না।

কোন এক কারণে হয়তো পরিচিত কার সাথে কতা বলার জন্য প্রাইমারী স্কুলের স্যারটি উঠে পেছনে গেলে অমনি কিশোরী মেয়েটি পুরুষ মানুষের চাপাচাপি থেকে বাঁচতে মায়ের কাছে দ্রুত বসে পরলো। তখন সেই প্রাইমারী স্কুলের স্যারটি এসেই সিট না পেয়ে আবার হাকা হাকি শুরু করে দিল। আমি সেই মহূর্তে প্রভাষক স্যারকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আমি আর নির্বোধের মত বসে থাকতে পারলাম ন।

মনে হলো আর এক মূহুর্ত বসে থাকলে আমার জীবনের অনেক বড় একটি জিনিস হারিয়ে যাবে।তখন আমি আমার সিটটা ছেড়ে দিয়ে প্রভাষক স্যারকে বসতে দিলাম। কিন্তু স্যার আমাকে না উঠার জন্য চাপাচাপি করতে লাগলো। আর বলল, না না, উঠার দড়কার নাই, আমি দাড়িয়ে যেতে পারবো। কিন্তু আমার বিবেক আমাকে ধমক দিয়ে বলল, হে বোকা ছেলে! যে মানুষ একজন প্রভাষক হয়ে একটা হিন্দু জেলে বউকে বসতে দিলো, আর নিজে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে, তাকে তুই সম্মান করতে শিখলি নাহ? তখন আমি তালগোল হারিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে উঠে আমার ব্যাগ হাতে নিয়ে প্রভাষক স্যারকে আমার সিটে বসার অনুরোধ করলাম।

তখন স্যার নিজে না বসে প্রাইমারী স্কুলের সেই স্যারকে জোর করে বসালেন। আমি তখন স্যারের ডান পাসে স্টান্ড ধরে দাড়িয়ে রইলাম। তখন স্যার আমার মাথায় হাত রেখে দোয়া করলেন, বেঁচে থাক বাবা। তার পর স্যারের সাথে অপূর্ব সব কথা বার্তা বলতে বলতে কখন যে ভেওয়ামারা এসে পৌঁছে গেলাম, বুঝতেই পারলাম না। তখন স্যার কে আমার বাড়ি যাবার জন্য অনুরোধ জানালাম। স্যার খুশি হয়ে বলল, নাহ! ঠিক আছে তুমি যাও। সেদিন বাসের মধ্যে দাড়িয়ে স্যারের সাথে আমার যে অপূর্ব কথোপকথন হয়ে ছিলো তার সারমর্ম হলো এই যে,”শুধু একজন ভালো ছাত্র হওয়ার চেয়ে ভালো মানুষ হওয়াটা বেশী জরুরী।

আর কিছু মানুষ তোমাকে ঠিক ততক্ষণই মূল্যায়ন করবে, যতক্ষণ তার স্বার্থ থাকবে। স্বার্থ ও শেষ, তার কাছে তোমার ভ্যালু ও শেষ”।

সেদিন স্যারের কাছে থেকে যে শিক্ষা পেলাম তা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ শিক্ষা এবং তিনিই হলেন আদর্শ শিক্ষক।

মোঃ নাইম আহমেদ
২য় বর্ষ, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

আরও

What Qualities Should An ideal Teacher Have?

The Poem Of A Ideal Teacher

The Horror Story About Ideal Teacher

A Story Of Ideal Teacher ( Ekattor TV,Youtube)