অভিশপ্ত

এক পলকে অভিশপ্ত

Spread the love

এক পলকে অভিশপ্ত

ফ্লোরা পারভীন তামান্না
——————————–
বদ্ধ ঘরে জানালার পাশে এলোমেলো চুল খুলে দাঁড়িয়ে আছি। আকাশটা অন্ধকার মেঘে ঢেকে আছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে, কিন্তু বৃষ্টির কোনো চিহ্ন নাই। যদি বৃষ্টির ছোঁয়ায় সব অভিশাপ ধুয়ে মুছে নিয়ে যেত। এইসব ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।

কিছুদিন আগেও আমার জীবনটা ছিলো স্বাভাবিক, হাসি-খুশি আর আনন্দমুখর। আজ তা সবই কল্পনা। এই কিছুদিন আগেও আমি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়তাম। আজ সবই তা অবাস্তব অধ্যায়। পড়াশোনায় ভালোই ছিলাম। ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা করে মা-বাবার পাশে দাঁড়াবো। হঠাৎ পৃথিবীতে মহামারি করোনার কারণে সবকিছু লকডাউন করে দেওয়া হলো। সেই কারণে কলেজও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হলো। প্রথম একমাস পরিবারে সাথে ভালোই কেটেছে।

লকডাউনে কারণে বাবার দোকানের বেচাকেনা প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। স্বল্প পুঁজি দিয়ে বাবা দোকান শুরু করেছিল। সেই দোকানের আয় দিয়ে বাবা, মা আর ছোট ভাইকে নিয়ে ভালোই কাটছিলো। কিন্তু একমাত্র উপার্জনের পথ যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন হতাশা ছাড়া কিছুই থাকে না। বাসাভাড়া, খাওয়া খরচ সব মিলিয়ে বাবার পক্ষে সংসার চালানো খুবই কষ্টে পরিণত হলো। কয়েকমাস যাওয়ার পর দেশের সবকিছু সীমিত পরিমাণে চালু করা হলো। আর্থিক অবস্থা খারাপের কারণে বাবা সবাইকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন।

গ্রামে ফুফুদের বাড়িতে উঠলাম সবাই। ফুফুদের বাড়িতে এক আত্নীয় আমাকে দেখে পছন্দ করে এবং খুব অল্পসময়ের মধ্যে বিয়ে কথাবার্তা ঠিক হয়ে যায়। পরিস্থিতি এতোটা প্রতিকূল ছিল যে, বাবার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও আমাকে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়। বিয়ে করার কোন ইচ্ছা ছিল না আমার কিন্তু পরিস্থিতির চাপে পড়ে সবকিছু মেনে নিতে হলো।


পুরানো সব স্বপ্ন পাথরে চাপা দিয়ে আবার নতুন কিছু গড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করি। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর স্বামীর জ্বর-কাশির উপসর্গ দেখা দেয়। আমি তার সেবা করা শুরু করি। তবে কয়েকদিন পর আমারও একই উপসর্গগুলো দেখা দিল। স্বামীর অবস্থা খুব খারাপ হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করলাম। আমাদের দুইজনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসলো। আমি বাসায় থেকে ঘরোয়াভাবে চিকিৎসা নিলাম আর অল্প কিছুদিনের মধ্যে সুস্থ হতে শুরু করলাম, কিন্তু তখনো পুরাপুরি সুস্থ ছিলাম না।

তবে উপসর্গের পনেরো দিনের মাথায় আমার স্বামী পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। আমি হয়তো বা এই যাত্রায় প্রাণে বেঁচে গেলাম কিন্তু বাস্তবে ঠিক যেন এক প্রাণহীন লাশ। শুধু মনে হলো জীবনটা এক পলকে রঙহীন অভিশপ্ত হয়ে গেল।

হঠাৎ বৃষ্টি পড়া শুরু হলো আর আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকলাম সবকিছু হয়তো বা ঠিক হয়ে যাবে। আমার অস্তিত্ব হয়তো বা বৃষ্টি ফোঁটায় হারিয়ে যাবে। কিন্তু আমার গল্পটা অজানা হয়ে থাকবে। হয়তো নতুন পৃথিবীর মোড়কে নিজেকে গুছিয়ে নিব নাহলে হারিয়ে যাবে এক অজানা দিগন্তে।

এক পলকে অভিশপ্ত

ফ্লোরা পারভীন তামান্না
Biochemistry & Biotechnology,
University of science & technology, Chittagong (USTC)
প্রকাশিত: ‘বর্ণালী’ মাসিক ম্যাগাজিন, অক্টোবর সংখ্যা, ২০২০

অভিশপ্ত
অভিশপ্ত

সফল হওয়ার উপায়: 2 টি বাস্তব গল্প

Author: Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *