ছোটদের কবিতা 75 টি বাংলা কবিতা
গুপ্ত
আপনাকে বড় বলে
বড় সেই নয়,
লোকে যারে বড় বলে
বড় সেই হয়য়।
বড় হওয়া সংসারেতে
সংসারে সে বড় হয়,
বড় গুণ যার।
হিতাহিত না জানিয়া
মরে অহংকারে,
নিজে বড় হতে চায়
ছোট বলি তারে।
গুণেতে হইলে বড়,
বড় বলে সবে,
বড় যদি হতে চাও
ছোট হও তবে।
নির্বাচিত ছোটদের কবিতাঃ লিচু চোর
লিচু চোর
বাবুদের তালপুকুরে হাবুদের ডালকুকুরে সে কি বাস্! করল তাড়া, বলি, থাম, একটু দাড়া
পুকুরের ঐ কাছে না, লিচুর এক গাছ আছে না?
হোথা না আস্তে গিয়ে য়া। হুড় কাস্তে নিয়ে গাছে গো যেই চড়েছি, ছোট এক ডাল ধরেছি, ও বাবা! মড়াৎ করো পড়েছি সড়াৎ জোরে!
পড়বি পড় মালীর ঘাড়েই সে ছিল গাছের আড়েই।
সংকল্প
কাজী নজরুল ইসলাম
থাকব নাকো বন্ধ ঘরে
দেখব এবার জগৎটাকে,
কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে।
দেশ হতে দেশ দেশা
ছুটছে তারা কেমন করে, কিসের নেশায় কেমন করে
মরছে যে বীর লাখে লাখে,
কিসের আশায় করছে তারা বরণ মরণ-যন্ত্রণাকে
হাউই চড়ে চায় যেতে কে
চন্দ্রলোকের অচিনপুরে।
শুনব আমি, ইঙ্গিত কোন্
মান হতে আসছে উ ।
পাতাল ফেড়ে নামব নি উঠব আবার আকাশ ফুঁড়ে বিশ্ব-জগৎ দেখব আমি আপন হাতের মুঠোয় পুরে ।।
মেঘনায় ঢল
হুমায়ুন কবির
শোন্ মা আমিনা, রেখে দে রে কাজ ত্বরা করে মাঠে চল, এল মেঘনায় জোয়ারের বেলা এখনি নামিবে চল। নদীর কিনার ঘন ঘাসে ভরা
মাঠ থেকে গরু নিয়ে আয় ত্বরা
করিস না দেরি আসিয়া পড়িবে সহসা অথই জল মাঠ থেকে গরু নিয়ে আয় ত্বরা মেঘনায় নামে ঢল। এখনো যে মেয়ে আসে নাই ফিরে-দুপুর যে বয়ে যায়। ভরা জোয়ারের মেঘনার জল কূলে কূলে উছলায়। নদীর কিনার জলে একাকার,
যেদিকে তাকাই অথই পাথার,
দেখতো গোহালে গরুগুলি রেখে গিয়েছে কি ও পাড়ায় ? এখনো ফিরিয়া আসে নাই সে কি ? দুপুর যে বয়ে যায়। ভরবেলা গেলো, ভাটা পড়ে আসে, আঁধার জমিছে আসি, এখনো তবুও এলো না ফিরিয়া আমিনা সর্বনাশী। দেখু দেখ দূরে মাঝ-দরিয়ায়
কাল চুল যেন ঐ দেখা যায়-
কাহার শাড়ির আঁচল-আভাস সহসা উঠিছে ভাসি? আমিনারে মোর নিল কি টানিয়া মেঘনা সর্বনাশী
নির্বাচিত ৫ বছর বয়সী ছোটদের কবিতা
বীরপুরুষ
মনে করো, যেন বিদেশ ঘুরে মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে। তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চড়ে দরজা দুটো একটুকু ফাঁক করে, আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার ‘পরে টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে। রাস্তা থেকে ঘোড়ার খুরে খুরে রাস্তা ধুলোয় মেঘ উড়িয়ে আসে।
সন্ধে হলো, সূর্য নামে পাটে, এলেম যেন জোড়াদিঘির
ধু ধু করে যে দিক-পানে চাই কোনোখানে জনমানব নাই, তুমি যেন আপন মনে তাই
ভয় পেয়েছ ভাবছ, ‘এলেম কোথা।’ আমি বলছি, ভয় করো না মাগো, ওই দেখা যায় মরা নদীর সোঁতা।’
আযান
কে ওই শোনাল মোরে আযানের ধ্বনি। মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কি সুমধুর আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী। কি মধুর আযানের ধ্বনি!
আমি তো পাগল হয়ে সে মধুর তানে, কি যে এক আকর্ষণে, ছুটে যাই মুগ্ধমনে কি নিশীথে, কি দিবসে মসজিদের পানে। হৃদয়ের তারে তারে, প্রাণের শোণিত-ধারে, কি যে এক ঢেউ উঠে ভক্তির তুফানে- কত সুধা আছে সেই মধুর আযানে। নদী ও পাখির গানে তারই প্রতিধ্বনি। ভ্রমরের গুণ-গানে সেই সুর আসে কানে কি এক আবেশে মুগ্ধ নিখিল ধরণী। ভূধরে, সাগরে জলে নির্ঝরণী কলকলে, আমি যেন শুনি সেই আযানের ধ্বনি। আহা যবে সেই সুর সুমধুর স্বরে, ভাসে দূরে সায়াহ্নের নিথর অম্বরে, প্রাণ করে আনচান, কি মধুর সে আযান, তারি প্রতিধ্বনি শুনি আত্মার ভিতরে। নীরব নিঝুম ধরা, বিশ্বে যেন সবই মরা, এতটুকু শব্দ যবে নাহি কোন স্থানে, মুয়াযযিন উচ্চৈঃস্বরে দাঁড়ায়ে মিনার ‘পরে কি সুধা ছড়িয়ে দেয় উষার আযানে! জাগাইতে মোহমুদ্ধ মানব সন্তানে। আহা কি মধুর ওই আযানের ধ্বনি। মর্মে মর্মে সেই সুর বাজিল কি সমধুর আকুল হইল প্রাণ, নাচিল ধমনী।
শিক্ষকের মর্যাদা
বাদশাহ আলমগীর-
কুমারে তাঁহার পড়াইত এক মৌলভী দিল্লীর। একদা প্রভাতে গিয়া
দেখেন বাদশাহ- শাহজাদা এক পাত্র হস্তে নিয়া ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে পুলকিত হৃদে আনত-নয়নে,
শিক্ষক শুধু নিজ হাত দিয়া নিজেরি পায়ের ধুলি ধুয়ে মুছে সব করিছেন সাহ সঞ্চারি অগুলি। শিক্ষক মৌলভী
ভাবিলেন আজি নিস্তার নাহি যায় বুঝি তার সবি। দিল্লীপতির পুত্রের কনে
লইয়াছে পানি চরণের পরে,
কাজী কাদের নেওয়াজ হঠাৎ কি ভাবি উঠি
স্পর্ধার কাজ হেন অপরাধ কে করেছে কোন কালে! ভাবিতে ভাবিতে চিন্তার রেখা দেখা দিল তার ভালে।
কহিলেন, আমি ভয় করি না’ক, যায় যাবে শির টুটি, শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার
দিল্লীর পতি সে তো কোন ছার,
ভয় করি না’ক, ধারি না’ক ধার, মনে আছে মোর বল,
বাদশাহ শুধালে শাস্ত্রের কথা শুনাব অনর্গল।
যায় যাবে প্রাণ তাহে,
প্রাণের চেয়েও মান বড়, আমি বোঝার শাহানশাহে। তার পরদিন প্রাতে
বাদশাহর পুত্র শিক্ষককে ডেকে নিয়ে গেল কেল্লাতে। খাস কামরাতে যথে
শিক্ষককে ডাকি বাদশা কহেন, “শুনুন জনাব তবে, পুত্র আমার আপনার কাছে সৌজন্য কি কিছু শিখিয়াছে? বরং শিখেছে বেয়াদবি আর গুরুজনে অবহেলা, নহিলে সেদিন দেখিলাম যাহা স্বয়ং সকাল বেলা” শিক্ষক কন- “জাহপানা, আমি বুঝিতে পারিনি হা কি কথা বলিতে আজিকে আমায় ডেকেছেন নিরালায়?” বাদশাহ্ কহেন, “সেদিন প্রভাতে দেখিলাম আমি দাঁড়ায়ে তফাতে নিজ হাতে যবে চরণ আপনি করেন প্রক্ষালন,
পুত্র আমার জল ঢালি শুধু ডিজাইছে ও চরণ। নিজ হাতখানি আপনার পায়ে বুলাইয়া সযতনে ধুয়ে দিল না’ক কেন সে চরণ, মারি বাথা পাই মনে।” উন্মান স্তরে শিক্ষকে আজি দাঁড়ানো সগৌরবে কুর্ণিশ করি বাদশাহে তবে কহেন ডাচরণে- “আজ হতে চির-উন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির, সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ আলমগীর।”