Colorgeo.com

Disaster and Earth Science

Spread the love

প্রফেসর ড.মদন মোহন দে রাজশাহী বিশ্ব বিদ্যালয় এর প্রজ্ঞাবান শিক্ষক

একবার জনৈক্য ছাত্র তার শিক্ষককে প্রশ্ন করলেন যে, স্যার, সব থেকে ভালো শিক্ষক কে? ছাত্রটি আরো বলতে লাগলেন, যিনি ক্লাসে সব থেকে সুন্দরভাবে পড়ান এবং কঠিন বিষয় গুলো সহজ করে উপস্থাপন করেন, ছাত্রবন্ধু,  তিনি কি শ্রেষ্ঠ শিক্ষক? উত্তরের শিক্ষক বললেন, না।

যিনি একজন ছাত্রের ভবিষ্যৎ পথপ্রদর্শক হন অর্থাৎ যিনি একজন ছাত্রের ভিতরের প্রতিভা খুঁজে বের করতে সহায়তা করেন এবং তাকে অনুপ্রেরণা এবং উৎসাহ দিয়ে সেই পথে সফল হতে সহায়তা করেন, তিনি সব থেকে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রফেসর মদনমোহন দে ছিলেন একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক।

আমার দেখা এমন প্রতিভাবান এবং পথপ্রদর্শক শিক্ষক প্রতিটি ছাত্র জীবনে একজন আদর্শ মানুষ। তিনি যখন বক্তব্য দিতেন ছাত্ররা তার কথায় মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে থাকতো, যেন এক অন্য জগতে স্বপ্নের জগতে বিচরণ করছে । ছাত্ররা তাদের ভেতরের শক্তিকে খুঁজে পেত এবং তা প্রকাশ করার জন্য মরিয়া হত এমনই ধারালো ছিল তার বক্তব্য।

আমি যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র তখন মতিহার হলের আমাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সাপ্তাহিক প্রোগ্রাম গুলোতে তাকে নিমন্ত্রণ করতাম এবং তিনি এসে আমাদের কে ধন্য করতেন।

আমরা প্রতি সপ্তাহেই স্যারের আসার অপেক্ষায় থাকতাম যে তিনি কখন আসবেন এবং তার প্রজ্ঞা এবং জ্ঞান মেধা দিয়ে আমাদেরকে ধন্য করবেন। তিনি আমাদের জীবন পথের অনেক উপদেশ পরামর্শ করণীয় সম্বন্ধে জ্ঞান প্রদান করতেন এবং ধর্মীয় সমস্ত তত্ত্ব কথা সুন্দরভাবে বোঝাতেন। দার্শনিক তত্ত্বকথা এবং ধর্মীয় উপদেশ, জীবন পথে চলার জন্য উপদেশ প্রদান করতেন।

আমারই মতো আরো অনেক ছাত্র-ছাত্রী স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞ এবং স্যার পৃথিবীকে তার প্রজ্ঞা মেধা দিয়ে অনেক ছাত্রছাত্রীর জীবন করেছেন সফল। স্যার আজ পৃথিবীতে নাই তার আত্মার সদগতি কামনা করি তিনি যেন সব মহিমায় পরপারে ভালো থাকেন। এই বিশ্বাস আমাদের।

স্যার যখন কোন বক্তব্য দিতেন তার কথা বলার আলাদা ভঙ্গিমা এবং সুর যেন প্রতিটি শ্রোতার কর্ণ কুহরে গিয়ে প্রবেশ করত। এত মার্জিত এত পরিশীলিত ভাষার সুন্দর প্রয়োগ যেন প্রতিটি কথাকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিত। তার প্রতিটি কথাই যেন এক একটা অনুপ্রেরণা ছিল।

প্রফেসর ড. মদন মোহন দে ছিলেন একজন নেতাঃ

একজন নেতা যে কাজ করে থাকেন, তার একটি ইশারায় সমস্ত জনতা উজ্জীবিত হয় এবং তাকে অনুসরণ করে ঠিক। একইভাবে প্রফেসর মদন মোহন দে স্যার ছিলেন একজন নেতা তার কথায় সমস্ত ছাত্র-ছাত্রী এক হতো এবং তার আজ্ঞা পালন করতো।

প্রফেসর ড. মদন মোহন দে ছিলেন একজন অনুপ্রেরণাঃ

তিনি প্রতিটি ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ছিলেন এক অনুপ্ররনা। একজন শিক্ষক তখনই সফল হন যদি তিনি কোন ছাত্রের মনে অনুপ্রেরণার বীজ অঙ্কুরিত করতে পারেন। তাঁর কথায় ছাত্র ছাত্রী তাদের জীবন পরে করনীয় ভাল মানুষ হওয়া , দেশপ্রেমিক হওয়া শেখাতেন। তাঁর সাথে যারাই মিশতে পেরেছেন তাঁর জ্ঞানের পরিধি অনুমান করতে পেরেছেন। এবং নবীনের মনে উদয় হওয়া সমস্ত প্রশ্নের উত্তর তিনি দিয়েছেন। তাঁর অনুপ্রনায় আজ তাঁর ই  ছাত্র ছাত্রী রা দেশ পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করছে।

প্রফেসর ড. মদন মোহন দে ছিলেন একজন ধর্ম গুরুঃ 

তিনি ছিলেন একজন ধর্ম গুরু। তাঁর নিজে আচরি পরকে শেখান বৈশিষ্ট্য ছাত্র ছাত্রীদের ধর্মীয় আচরণে অভ্যাস গড়ে তূলতে সহায়তা করতো। তিনি সুন্দর সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করতেন। তাঁর নিয়মিত একাদশী ব্রত পালন। আর ধর্মীয় তত্ত্ব কথা সুন্দর সাবলীল ভাবে উপস্থাপনা প্রফেসর মদন মোহন দে স্যার ধর্মীয় জ্ঞানে অনুকরণীয় করেছিল।

প্রফেসর ড. মদন মোহন দে ছিলেন একজন ভাল শিক্ষকঃ

তিনি একজন ভাল শিক্ষক ছিলেন। যারা তাঁর শ্রেণী শিক্ষক ছিলেন তাদের থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায়। হিসাব বিজ্ঞানের কঠিন সব বিষয়কে সহজ ভাবে উপস্থাপন করতেন। তিনি প্রতিটি ছাত্রের জন্য অনুকরণীয় ছিলেন।সবাই তাকে শ্রদ্ধা করতো।

প্রফেসর ড. মদন মোহন দে স্যার এর প্রয়াণঃ

প্রফেসর মদন মোহন দে একালে প্রয়াত হয়েছেন। তিনি তাঁর প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে সবাইকে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরেছেন। তিনি ছিলেন দেশপ্রেমিক। তিনি তাঁর আদর্শ পূর্ণ জীবন দিয়ে সারাটি জীবন দেশের সেবা করে গিয়েছেন। তিনি সবার জন্য শ্রদ্ধার ব্যক্তি ছিলেন।

তাঁর মত এমন প্রতিভাবান শিক্ষক আর একটি পাবে না রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। সত্যি দেশ ও দশে এক জ্ঞানী ও প্রজ্ঞাবান ছাত্র বান্ধব অনুপ্রেরণা ও উৎসাহ দিয়ে প্রতিটি ছাত্রের জীবন করে দিতেন সফলতায় পূর্ণ। এমন আদর্শবান শিক্ষকে হারানো খুবই বেদনার।

মদন মোহন দে

This section is Copied from:


প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন
সভাপতি
হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের অবসর প্রাপ্ত প্রফেসর ড. মদন মোহন দে স্যার ১৯.০৪.২০২৩ তারিখ বুধবার বিকাল ৫.১৫ মিনিটে মৃত্যুবরন করেন। গত এক বছর স্যার দুরারোগ্য ব্যাধি লিভার ক্যান্সারে ভুগছিলেন।

তিনি ছিলেন একজন ভালো শিক্ষক ও গবেষক। তিনি একজন ধার্মিক মানুষ ছিলেন। সনাতন ধর্মের অনেকগুলো সংগঠনের সাথে তিনি কাজ করতেন। কাজেকর্মে, জীবনযাপনে তিনি ন্যায়নীতি অনুসরন করে চলতেন।
এখানে যে ছবিটি দিলাম তা ৩০.১০.২০২২ তারিখের। এটিই স্যারের সর্বশেষ বিভাগে আসা। ইএমবিএ প্রোগ্রামের একটি কমিটিতে স্যারকে সদস্য রেখেছিলাম। প্রফেসর ড. দিল আরা হোসেন এ কমিটির সভাপতি। আমি ও প্রফেসর ফাহিমা খাতুন মেম্বার। চেয়ারম্যান এর অফিস কক্ষে আমরা ভাইভা নিয়েছি। স্যারের অসুস্থতার কথা চিন্তা করে আমরা কয়েকজনে ছাত্রের ভাইভা নিয়ে স্যারকে বিদায় দিতে চাইলাম। স্যার বললেন, এখানে আমার ভাল লাগছে, আমি থাকি। স্যার পুরো ভাইভাতেই ছিলেন। ভাইভা শেষে রবীন্দ্রভবনের গেট পর্যন্ত স্যারকে এগিয়ে দিই। প্রফেসর ড. দিল আরা হোসেন এর গাড়ীতে স্যার বাসায় যান। সেটিই স্যারকে সর্বশেষ শক্ত সামর্থ মানুষ হিসেবে দেখা । এরপর গত সপ্তাহে স্যারকে যখন বাসায় দেখতে গেলাম তখন তিনি জীবনের শেষ প্রান্তে আছেন বুঝতেই পারছিলাম।
প্রফেসর ড. মদন মোহন দে ১৯৫২ সালের ১৭ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলার তা’লা থানায় জন্ম গ্রহন করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে তালা বিডিই ইনস্টিটিউট থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এসএসসি পাস করেন। ১৯৬৯ সালে নোয়াপাড়া কলেজ হতে যশোর বোর্ডে ৭ম স্থান অধিকার করে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৭২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন খুলনার আজমখান কমার্স কলেজ থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে (আপার) বিকম সম্মান পাস করেন। ১৯৭৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করে এমকম পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ।
১৯৭৬ সালের ২৪ মার্চ তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। ১৯৮০ সালের ৮ অক্টোবর তিনি সহকারী অধ্যাপক, ১৯৮৯ সালের ১০ অক্টোবর সহযোগী অধ্যাপক ও ১৯৯৭ সালের ২০ জানুয়ারী প্রফেসর পদে পদোন্নতি লাভ করেন।
১৯৮৮ সালে স্যার আমেরিকার কানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ইন একাউন্টিং ডিগ্রী লাভ করেন। ২০০৪ সালে ভারতের কল্যানী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন। তিনি প্রফেসর পদে পদোন্নতি পাবার পরে পিএইচডি এর কাজ শুরু করেন এবং ডিগ্রী অর্জন করেন।
১৯৯৬ সালের ১২ মে থেকে ১৯৯৯ সালের ১১ মে পর্যন্ত তিনি হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে ১০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের বোর্ড অব ডিরেক্টরস এর সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১৭ সালের জুন মাসে অবসর গ্রহনের পর তিনি রাজশাহীর নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটিতে বিজনেস ফ্যাকাল্টির ডীন ও বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রেজারার হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
দেশে বিদেশের অনেক জার্ণালে স্যারের প্রবন্ধ রয়েছে। তিনি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রী তত্ত্ববধান করেছেন।
২০২২ সালে স্যারের লিভার ক্যান্সার ধরা পড়ে। তিনি ভারতের এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব গ্যাস্ট্রোলোজিতে চিকিৎসা নিয়েছেন। আমরা আশা করেছিলাম স্যার দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবেন কিন্তু তাঁর অবস্থার দিনে দিনে অবনতি হয়ে যায়।
প্রফেসর ড. মদন মোহন দে স্যার ২ ছেলের জনক। বড় ছেলে ডেনমার্কে ও ছোট ছেলে জার্মানীতে অবস্থান করছে। বড়ছেলে পলাশের আসার অপেক্ষায় স্যারের মৃতদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমাগারে রাখা হয়েছে। পলাশ দেশে এলে স্যারের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।