Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

Spread the love

বনায়ন  Aforestation

সাধারণত পতিত জমি পাহাড়ি এলাকা নদী ও রাস্তার পাড় প্রভৃতি এলাকায় বিভিন্ন ফলমূল ও অর্থকরী ফসল গাছ রোপন করে বন সৃষ্টি করাকে বনায়ন বলে। অন্যভাবে বলা যায় বিশ্বের প্রতিটি দেশের পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে বৃক্ষ গাছপালার বহুমুখী গুরুত্ব উপলব্ধি করে পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণ করা কে বনায়ন বলা হয় । প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে দেশের মোট ভূমির 25 শতাংশ বনভূমি থাকা আবশ্যক বর্তমানে আমাদের দেশে প্রায় ১৮ শতাংশ বনভূমি রয়েছে তবে 2015 সালের মধ্যে বনভূমির পরিমাণ 20% করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। 

কৃষি বনায়ন 

কৃষি বনায়ন হল কৃষি ও বনের  সমন্বয় সাধনের লক্ষ্যে জমির ব্যবহার। এর প্রধান উদ্দেশ্য ফসলের সঙ্গে বৃক্ষ বা অনুরূপ কোনো দ্রুতবর্ধনশীল উদ্ভিদ জন্মানো।  কৃষি বনায়ন হল  উদ্যান ও  বিভিন্ন ধরনের কৃষি কাজের জন্য একই জমির যুগপৎ ব্যবহারের একটি গুরুত্বপূর্ণ টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা কৌশল। এটা সামাজিক বনায়ন ও কখনও কখনও বসতবাড়ির বনায়নের  সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কৃষি বনায়নের ধারণা বাংলাদেশের জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ছাড়াও কৃষি বনায়ন কোন স্থানের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। খাদ্য সমস্যার সমাধান ও শহরতলীর প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সম্পর্কিত জাতীয় সমস্যা নিরসনে একটি আর্থসামাজিক উদ্যোগ হিসেবে এবং বিভিন্ন স্তরের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহারের জন্যই কৃষি বনায়ন আবশ্যক। কৃষি বনায়ন পদ্ধতিতে  বনজ বৃক্ষ ও উদ্ভিদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির সুযোগ ঘটে। প্রাকৃতিক স্থিতি বজায় রাখতে সাহায্য করে । সম্প্রতি কৃষিজমির আশেপাশের বিভিন্ন জাতের গাছ আরো অধিক পরিমাণে লাগানোর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এজন্য নিবিড় গবেষণা শেষে কয়েকটি প্রজাতিকে নির্বাচন করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বাবলা কাঁঠাল খয়ের নিম খেজুর তাল ও আম প্রধান এবং শিমুল নারিকেল সুপারি লিচু ও কয়েক ধরনের বাশ রয়েছে।

সামাজিক বনায়ন 

বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বিশেষ করে দারিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের আর্থসামাজিক সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করে পরিচালিত বনায়ন কার্যক্রমকে সামাজিক বনায়ন বলা হয়। সামাজিক বনায়নের লক্ষ্য 

`কেবল  গাছ নয় গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন। গাছ লাগানো এবং সেসব গাছের যত্ন নেওয়ার জন্য নয় বরং গাছ রোপন করা যাতে গাছের সুফল পাওয়ার আগ পর্যন্ত সসম্মানে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে তার নিশ্চয়তা বিধান করা এই কার্যক্রমের একটি মহৎ উদ্দেশ্য। শিল্পভিত্তিক বনায়নের  লক্ষ্য শুধুমাত্র কর্মসংস্থান ও মজুরিভিত্তিক উন্নয়নের সহায়ক বনায়ন নয় বরং গোষ্ঠীভিত্তিক উৎসাহ এবং সহায়তা প্রদান। শিল্প ও সরকারি প্রচেষ্টায় পরিচালিত কর্মকাণ্ড ও সামাজিক বনায়নের অন্তর্ভুক্ত দারিদ্র্য দূরীকরণে সামাজিক বনায়ন নানামুখী ভূমিকা রাখে, যেমন খাদ্যের যোগান, পশু খাদ্য যোগান , জ্বালানি উপকরণ সরবরাহ, কর্মসংস্থানের সুযোগ , যৌতুক ও বিবাহের সহায়তা ওষুধ শিল্পের সহায়তা কৃষি ক্ষেত্রে সহায়তা মজুরি সংকট মোকাবেলা ঋণ পরিশোধ, শিক্ষার ব্যয় মেটানো গৃহ নির্মাণ সামগ্রীর যোগাড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনের সহায়তায় ইত্যাদি ।

সমাজভিত্তিক বন

সামাজিক বনায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং বহুল আলোচিত কর্মসূচিগুলোর মধ্যে সমাজভিত্তিক বন একটি গুরুত্বপূর্ণ। এই কর্মসূচি প্রথম গ্রহণ করা হয়েছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের নিবিড় বনের একচেটিয়া নিধন প্রক্রিয়া থেকে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য। সহকারী বন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীর যোগসাজশে কিছু অসৎ ঠিকাদার এবং স্থানীয় প্রভাবশালী নির্বিচারে গাছ কাটা শুরু করে। সত্তরের দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরান হয়ে যায় । বৃক্ষনিধন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে বিকল্প রোপন কর্মসূচী প্রবর্তন করার লক্ষ্যেই স্থানীয় কৃষক সমিতির মাধ্যমে সমাজ ভিত্তিক বনায়ন কার্যক্রম এর সূত্রপাত হয়। শুরুতে বেতাগীর 101 টি পরিবারকে পৃথক পৃথকভাবে 32 শতাংশ জমি বিনামূল্যে দেয়া হয়। এ জমিতে বৃক্ষরোপণ এর জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও বৃক্ষ রোপনের ক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণের জন্য কৃষি ব্যাংক এবং গ্রামীণ ব্যাংক ঋণ প্রদান করে পরবর্তীতে ধরনের কাজে সম্পৃক্ত হয় ।

বনায়ন

বাড়ির আঙ্গিনায় বনায়ন

 সামাজিক বনায়নের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণীবিভাগ হলো বাড়ির আঙ্গিনায় বনায়ন বা হোমস্টেড আফোরেস্টেশন যেমন ফুলের বাগান ইত্যাদি । তাই বলা যায় বাড়ির আঙ্গিনায় যেসব গাছপালা রোপণ করে সযত্নে লালন পালন করা হয় তাকে হোমস্টেড আফোরেস্টেশন বলে । দারিদ্র দূরীকরণে সবচেয়ে বেশি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। দরিদ্র বিশেষ করে হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর সার্বিক চাহিদা মেটাতে বাড়ির আঙ্গিনায় বিকল্প নেই।

ডিফরেস্টেশন বন উজাড়করণ Deforestation

গাছপালা কেটে ফেলা এবং বৃক্ষশূন্য হয়ে যাওয়া বনভূমি এলাকাগুলোতে পুনরায় বনভূমি হিসাবে গড়ে ওঠার সম্ভাবনা না থাকাই হচ্ছে  বন উজাড়করন। অধিক বৃক্ষ  কাটার ফলে বনভূমি কমে যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক বনভূমির গাছপালা কাটা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে অবৈধ ভাবে গাছ কাটার ঘটনা বৃক্ষ নিধন ও বোন উজাড় করনের  প্রধান কারণ। বাংলাদেশের আই দুটি  নিয়ামক  প্রকটভাবে বিদ্যমান থাকায় সমস্যাটির দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠেছে। শুষ্ক মৌসুমে বিদেশ থেকে গঙ্গার পানি প্রবাহিত হওয়ার ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যায় ফলে বাংলাদেশের সমস্ত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানি উচ্চহারে উত্তোলন করার হয় এবং পরিণতিতে ওই অঞ্চল মরুভূমি প্রক্রিয়ার দিকে ধাবিত হয়। এই বিপর্যয়ের জন্য দেশের অভ্যন্তরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী হয়ে পড়ে । মরুকরণ প্রক্রিয়ার প্রধান নিয়ামক এবং কারণসমূহ জৈব আর্থসামাজিক এবং প্রাগৈতিহাসিক ভিত্তির উপর নিহিত। ভূমিরূপ মাটি ক্ষয় প্রক্রিয়া পানির পরিবর্তন পানিসম্পদের অধিক ব্যবহার কৃষিকাজের বৃদ্ধি পাওয়া, জনসংখ্যার চাপ, নগরায়ন, শিল্প কারখানা বৃদ্ধিকরণ ইত্যাদি বিষয় ভূমির ক্ষয় সাধন ঘটায়। ধাপে ধাপে ভূমিক্ষয় প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে মরুকরণ প্রক্রিয়া সংঘটিত হয়ে থাকে।  এবং ধাপগুলো সাধারণত নিচের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে থাকে 

১। মৃত্তিকায় গাছপালার আচ্ছাদন ধীরে ধীরে কমে যায়।

২। মৃত্তিকায় জৈব পদার্থের পরিমাণ হ্রাস পায় 

৩।মৃত্তিকা সংযুক্তির ও মৃত্তিকা পৃষ্ঠ বন্ধ হয়ে যাওয়া 

৪।পানি এবং মৃত্তিকা বস্তুর স্থানান্তর এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে মরুকরণ  হয়।

বর্তমানের মরুকরণ প্রক্রিয়া অধিকাংশই সাম্প্রতিক বা দূরবর্তী সময়কালের ঐতিহাসিক ক্রিয়া থেকে সৃষ্ট। এসব নিয়মসমূহ বিভিন্ন স্থানে এবং প্রেক্ষাপটে মরুকরণ প্রক্রিয়া সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াসমূহ প্রভাবিত করে। স্থান ভেদে মরুকরণ প্রক্রিয়া বিভিন্ন হয়। প্রধানত বৃষ্টিপাত ও জলবায়ু পার্থক্য এবং পরিবেশের উপর ক্ষতিকর কর্মকাণ্ডের তীব্র তার পার্থক্যের কারণে মরুকরণ প্রক্রিয়া ও স্থান ভেদে কম বেশি হয়ে থাকে।