বর্তমানে ছাত্র ছাত্রী ও শিক্ষক এর দায়িত্ব ও কর্তব্য
জাপানের কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক শিক্ষক একদিন ক্লাসে একজন ছাত্রের লেখাপড়ার সরঞ্জামাদি পেন্সিল গ্রাফ পেপার অনুপস্থিত তখন জনৈক শিক্ষক নিজেকে দুঃখের সাথে ভর্ৎসনা করিয়া বলিলেন বাছা আমি অত্যন্ত দুঃখিত পূর্ব ক্লাসে তোমাকে আমি এরূপ কোন তাগাদা দিতে পারিনি যাতে তুমি এই ক্লাসে প্রয়োজনীয় লেখাপড়ার সামগ্রী সরঞ্জামাদি নিয়ে উপস্থিত হও। এই ঘটনা একটি লোক মুখে প্রবাহমান জাপানের কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা।
উক্ত ঘটনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় জনৈক শিক্ষক অত্যন্ত অনুতপ্ত যে তার স্নেহাস্পদ ছাত্র-ছাত্রীর মধ্য থেকে একজন ক্লাসে অমনোযোগী। এর দায়ভার যেমনি উক্ত ছাত্রের উপর বর্তায় তেমনি অতি দায়িত্ববান হয়ে ভাবলে শিক্ষকের উপর ও বর্তায়। জাপানের শিক্ষকগণ এরূপ ভাবেই চিন্তা করেন। তাহলে উক্ত ছাত্রের বার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল অকৃতকার্য হলে কতইনা দুঃখভারাক্রান্ত মনে নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করবেন। শিক্ষক মহোদয়ের এটা মহানুভবতা ও দায়িত্ববোধ।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আমাদের দেশে তুলনামূলক পর্যালোচনা করা যায়। আমরা কি আমাদের ছাত্রদের জন্য এতটা এতটা দায়িত্ববোধ নিয়ে চিন্তা করি?
বাংলাদেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যখন কোন শিক্ষক কোন স্নেহাস্পদ ছাত্র-ছাত্রীর অকৃতকার্য ফলাফল দেখে তখন নিজ দায়িত্ববোধ থেকে তারা কতটুকু ভাবে যে অকৃতকার্য ফলাফলের দায়ভার শুধু উক্ত ছাত্রছাত্রীদেরই নয়। নিজের যোগ্যতা, দায়িত্ববোধ ও দক্ষতার মান প্রকাশ করে।কোন ছাত্রছাত্রীকে অকৃতকার্য করা বা হওয়া কোন শিক্ষকের উদ্দেশ্য বা কাম্য নয়। কোন ছাত্র-ছাত্রী ভালো ফলাফল পেয়ে উত্তীর্ণ হলে শিক্ষকের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় অকৃতকার্য অদক্ষতা দায়িত্বহীনতা প্রকাশ পায়।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যখন কোন ছাত্র-ছাত্রী কোন শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে গবেষণার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে তখন তার সমস্ত দায়ভার শিক্ষককে নিতে হয়, গুরুদায়িত্ব। যখন কোন ছাত্র-ছাত্রী নিজেকে সমর্পণ করে কোন শিক্ষকের নিকট তখন উক্ত শিক্ষকের দায়িত্ববোধ অনেকগুণ বেড়ে যায় তাকে অকৃতকার্য করা উক্ত শিক্ষকের কখনোই লক্ষ্য থাকে না তাকে উত্তর উত্তর সফলতার দিকে ধাবিত করে প্রকৃত তত্ত্বাবধায়কের কাজ।
যখন কোন শিক্ষকের দায়িত্বহীনতা অবহেলা এবং সঠিক পরামর্শ কোন ছাত্র-ছাত্রী না পায় তখন তারা দিশেহারা হয়ে পড়ে নিজেদেরকে অনেক অবহেলিত মনে করে। এর থেকে উদ্ধার করা একজন প্রকৃত শিক্ষকের একান্ত দায়িত্ব।
অতীত ইতিহাসের ঘটনা গুলো থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি শিক্ষকের এবং অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের কি কর্তব্য থাকে।
শিক্ষক এর দায়িত্ব ও কর্তব্য:
শিক্ষকের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো আত্ম উৎসর্গকৃত অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের কে শিক্ষকের সমস্ত জ্ঞান প্রদান করা এই জ্ঞান শিক্ষক তাঁর প্রিয় ছাত্রছাত্রীকে দিবে এক্ষণে প্রকৃত ছাত্র-ছাত্রী খুঁজে বের করা এবং ছাত্র-ছাত্রীর মনবাসনা জ্ঞান এবং যোগ্যতা ও অনুসারে শিক্ষককে সেই জ্ঞান আরো পরিমার্জিত ভাবে উপস্থাপন করতে শেখানো। জ্ঞানচর্চার প্রতি উৎসাহিত করাও শিক্ষকের কর্তব্য ও দায়িত্ব। প্রকৃত শিক্ষক তার সমস্ত অর্জিত জ্ঞান তার কোন প্রিয় ছাত্রছাত্রীকে প্রদান করবে এটা অবশ্য কর্তব্য।
ছাত্র-ছাত্রী প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হলে শিক্ষকের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং দেশ ও জাতি উপকৃত হয় এভাবেই একটি জাতি ও দেশ উন্নতির স্বর্ণ শিখরে পৌঁছায়। অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীর জীবন পথে যাবতীয় প্রতিবন্ধকতা, দুর্বলতা দূর করা ও আত্মমর্যাদা, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করা একজন আদর্শ শিক্ষকের দায়িত্ব।
ছাত্র-ছাত্রীর কর্তব্য ও দায়িত্বঃ
অতীত ইতিহাস থেকে দেখা যায় মহাভারতের পঞ্চপান্ডব এবং কৌরবদের মধ্যে শিক্ষা গুরু দ্রোণাচার্য কিভাবে শিক্ষা প্রদান করেছিলেন পঞ্চপান্ডব প্রকৃতপক্ষে দ্রোণাচার্যের নিকট আত্ম নিবেদন করেছিলেন কিন্তু কৌরবদের মধ্যে থেকে ধৃতরাষ্ট্র তথা অন্যান্য ভ্রাতা সকল দ্রোণাচার্যের নিকট আত্মনিবেদন করেনি তাই তারা গুরু দ্রোণাচার্যের থেকে প্রকৃষ্ট শিক্ষায় শিক্ষিত হয়নি অবিদ্যা ও কুটিলতা শিখেছে। কিন্তু পঞ্চপান্ডব এরমধ্যে অর্জুন সহ পঞ্চভ্রাতা সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছিল।
গুরু দ্রোণাচার্য শিক্ষাদানে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি প্রথম নির্দেশনা ছিল, গুরুর প্রতি পূর্ণ ভক্তি ও সম্পূর্ণ সমর্পণ করা, পঞ্চপান্ডব তাই করেছিল। এভাবে ইতিহাসের আরো অনেক উদাহরণ রয়েছে যারা শিক্ষকের নিকট আত্মনিবেদন করেছে শিক্ষকগণ তাদের সমস্ত জ্ঞান প্রিয় ছাত্র ছাত্রীদের কে উজাড় করে দিয়েছেন।
ছাত্রনং অধ্যয়নং তপ অর্থাৎ ছাত্র-ছাত্রীদের অধ্যায়ন করাই তপস্যা। ছাত্রজীবন শুধু শিক্ষা লাভের সময়। এ সময়ে প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করাই একজন মানুষের কর্তব্য কর্ম। কারণ মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে মানুষ দ্বিতীয় বার মানুষ হয়ে ওঠে শুধু প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে। তাই মানুষকে দি্জ্ব বলা হয়। বর্তমানে শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষা করা অতি কঠিন কাজ কারণ প্রকৃত ছাত্র-ছাত্রী জ্ঞানলাভে নিজেকে উৎসর্গ করে এমন জ্ঞানপিপাসু ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যায় কমছে দিন দিন একইভাবে কমছে আদর্শ শিক্ষক সংখ্যা।
উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা দেখি আদর্শ শিক্ষক নিষ্ঠাবান এবং দায়িত্ব পরায়ন। অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রী ও নিজেদেরকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করেছে তাই তাদের শিক্ষা উন্নত জাতি গঠন ত্বরান্বিত। এই বাস্তবতায় শিক্ষকের ভূমিকাই মুখ্য একজন আদর্শ শিক্ষক তার সঠিক দায়িত্ব বোধ ও কর্তব্য দিয়ে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীদের যেমন প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারে তেমনি আত্মনিবেদনকৃত ছাত্র-ছাত্রী ও পাওয়া যাবে এটা অনস্বীকার্য। একজন ভালো শিক্ষার্থী দেশকে অনেক উন্নত করতে ভূমিকা রাখে তেমনি মর্যাদা বৃদ্ধি পায় একজন নিষ্ঠাবান আদর্শ শিক্ষকের।
More Stories
ধনী হওয়ার উপায় 2024
গল্পঃ অতৃপ্ত জন্মদিনের শুভেচ্ছা
প্রেজেন্টেশন টিপস আমি যা মেনে চলি