Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

বাংলাদেশে গণহত্যা Genocide শুরুর নেপথ্যে

Spread the love

বাংলাদেশে গণহত্যা Genocide শুরুর নেপথ্যে

বাংলাদেশ  সবে মাত্র একটি করুন ও বেদনার ইতিহাস (Genocide)  গড়তে শুরু করেছে। বাংলাদেশ কি একটি আদর্শ গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে নাকি অন্যের দাস হয়ে নির্যাতিত হবে।এটা ছিল একটা জটিল সমীকরণ। বাংলাদেশের উপর দিয়ে যে অন্যায় অত্যাচার নিপীড়ন করা হয়েছে তা সত্যি ভাষায় বর্ণনা করা যায় না ।

শহর হয়েছে কসাইখানা, গ্রাম জ্বলছে আগুনে। পৃথিবীর কোন দেশ ও দেশের মানুষ একথা বিশ্বাস করতে পারবে না যে মানুষ কখনও এমন অমানুষ হতে পারে। মুসলিম এভাবে মুসলিমের প্রতি অত্যাচার করতে পারে। এটা ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে আমাদের এই বাংলাদেশে।

গণহত্যা
ব্যথা কোন বয়স মানে না । ১৯৭১

তৎকালীন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক কন্দলের মধ্যে বলির পাঠা হয়েছিল। ইন্ডিয়া যদিও গরিব একটি দেশ ছিল তবুও বাংলাদেশ কে সাহায্য করেছিল। তখন সব কিছু নির্ভর করছিল একটি মানুষের উপর শেখ মুজিবুর রহমান, যার কিনা একটা ঐশ্বরিক শক্তি ছিল আর নির্বাচনে নিরঙ্কুশ ভাবে জয় লাভ করেছিল। 

একটা ভয়ঙ্কর গল্প যা সৃষ্টি হয়েছিল ৯ মাসে । বর্তমান এই বাংলাদেশে, যার পূর্ব নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। যুদ্ধ গন হত্যা, ধর্ষণ সংগঠিত হয়েছিল মার্চ ২৫ থেকে ১৬ ডিসেম্বর  ১৯৭১ পর্যন্ত। গল্পটি বলা সত্যি অনেক কঠিন। একটি একটি করে মৃত দেহ গননা করা সম্ভব নয় যেখানে মৃত দেহের সংখ্যা কয়েক মিলিয়ন। তা ছাড়া যুদ্ধ কালীন সময়ে আন্তর্জাতিক সাংবাদিক দের দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছিল।  

এখন প্রশ্ন হল প্রকৃত সংখ্যায় কত জন বাঙ্গালিকে হত্যা করা হয়েছিল? ১৯৭২ সালের ১৯ মার্চ টিক্কা খান বলেন, `পাক আর্মি ৩০০০০ ( ত্রিশ হাজার) বাঙ্গালিকে হত্যা করেছে যারা পাক আর্মিদের সাথে বিদ্রোহ করেছিল এবং মাত্র ৪ জন মহিলা কে ধর্ষণ করা হয়েছে`। মি ভুট্টো   (২৬ মার্চ ১৯৭২), বলেন ৫০,০০০ বাঙ্গালিকে হত্যা করা হয়েছে।

অন্য দিকে, শেখ মুজিব বলেন, ৩ মিলিয়ন বাঙ্গালিকে হত্যা করা হয়েছে এবং ২০০০০ মা, বোন কে ধর্ষণ করা হয়েছে। যদিও মৃত্যুর  সঠিক হিসাব করা যাবে শুধুমাত্র আদম শুমারি করে। এ নিয়ে পরে বিস্তারিত জানা যাবে। তবে মৃত্যুর সংখ্যা যে মি  ভুট্টো  ও টিক্কা খানের হিসাবে অধিক বেশি সেটা নিশ্চিত করে বলা যায়।

যদিও সমালোচকরা মৃত্যুর সংখ্যা কমাতে চান কারণ আন্তর্জাতিক আদালতে এতে  বিচারের সময় একটা সুবিধা পাওয়া যাবে। তা ছাড়া এই হত্যা যোগ্য ঘটেছিল পাকিস্তানের নিজের শাসিত অঞ্চলে তাই এটা যে কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোন দেশ হস্তক্ষেপ করতে পারেন না এই বিবেচনায় যুদ্ধের সময় মৃতের সংখ্যা কম হলে ভাল হয়।

পূর্ব বাংলায় ১৯৭০ সালে নভেম্বর মাসে একটা প্রলংকারি সাইক্লোন আঘাত হেনেছিল যেটা ভোলা সাইক্লোন নামে পরিচিত এতে প্রায়  এক মিলিয়ন মানুষ মারা গিয়েছিল। এবং আদম শুমারি তে যুদ্ধের সময় বা গণহত্যা য় Genocide মৃতের  প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করা কঠিন হয়। বিভিন্ন প্রেস মিডিয়া সাংবাদিক ও বিদেশি প্রদর্শক অনেক তথ্য উদ্ঘাতন করেছেন কি ঘটেছিল ২৫ মার্চের পর।

প্রায় ১০০ লক্ষ শরণার্থী যুদ্ধের সময় আশ্রয় নিয়েছিল ভারতে। শরণার্থীদের মধ্যে ৫৭ লক্ষ ছিল সাধারণ কৃষক, ২৫ লক্ষ শ্রমিক, ১৯ লক্ষ শহরের বাসিন্দা। শরণার্থীদের এই সংখ্যাটা UN রিলিফ কমিটি দ্বারা যাচাই বাছাই করা হয়েছিল। এটা নিশ্চিত যে ২৫ মার্চের পর শরণার্থীদের বাড়ি ঘর আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং  দেখা মাত্রই হত্যা করা হয়েছিল সন্তানের সামনে মাকে, মায়ের সামনে সন্তানকে এমনকি  শিশুরাও রেহাই পাইনি। এ কারণেই তারা স্বদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল।

শরণার্থীদের মধ্যে ৬০% ছিল হিন্দু। যদিও এটা নিয়ে একটা মতভেদ থাকতে পারে যে হিন্দুরা যেহেতু মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ব পাকিস্তানে আদর্শিক দিক থেকে অনুগত থাকবে না তাই হিন্দু রা তাদের স্বদেশ ছেড়েছিল ভারত ভূমিকে তাদের নিজের ভূমি মনে করে। কিন্তু এটা একে বারে এত সহজ সমীকরণ ছিল না। কারণ যুদ্ধের পরে অনেক হিন্দু আবার পূর্ব বাংলায় ফিরে এসেছিল কারণ যুদ্ধ পরবর্তী ভারতে তারা কোন ভবিষ্যৎ দেখতে পায়নি।

পূর্ব বাংলায় এসে তারা দেখেছে বাড়ি ঘর লুট করা হয়েছে কোথায় কোথায় আগুনে সব নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। শরণার্থীরা মনে করতো তাদের প্রথম পরিচয় তারা পূর্ব বাংলার মাটি ও মানুষ তার পর তাদের পরিচয় তারা হিন্দু নাকি মুসলিম!  যদিও  মিডিল ক্লাস হিন্দুদের ক্ষেত্রে একটা যুক্তি থাকতে পারে তবে তা কখনই সাধারণ হিন্দু কৃষক বা শ্রমিক দের জন্য নয়। 

জেনারেল ইয়াহিয়া খান সমস্ত বাংলাদেশ কে একটা কশাইখানা অথবা গণহত্যা এ রূপ দিতে চেয়েছিলেন

কয়েকটি কারণ ছিল উল্লেখ যোগ্য

১। ইয়াহিয়া মনে করেছিলেন ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তিনি জিতে যাবেন কিন্তু আওয়ামীলীগের কাছে ভরা ডুবি  হয়েছিল এবং শেখ মুজিব বাংলার জন্যগণের পক্ষে সরকার গঠনের জন্য  জাতীয় এসেম্বলি দাবি করেছিল।

২। যখন সেনা বাহিনী দ্বারা বাংলার জন্যগন কে   দাবিয়ে রাখার জন্য কঠোর অবস্থানে গিয়েছিল তখন ভারত সরকার কর্তৃক কোন হস্তক্ষেপ এর সম্মুখীন হতে হয়নি এবং ইয়াহিয়া খান তার পূর্ব গন হত্যার পরিকল্পনা জিয়িয়ে রাখতে পেরেছিলেন। 

 যখন ইয়াহিয়া গনহত্যা Genocide চালিয়েছিল সারা বিশ্ব নীরবে তাকিয়ে দেখেছিল কারণ জেনেরাল ইয়াহিয়ার একটি যুক্তি ছিল যে কোন বহির্দেশ পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না । ঠিক একই ভাবে যেখানে ইন্দোনেশিয়া ও (সিলন), শ্রীলংকার সরকার বিদ্রোহীদের উপর গন হত্যা চালিয়েছিল।

জেনেরাল ইয়াহিয়া তার পাপ ও অপরাধ কে লুকিয়ে রাখতে পারেনি যে গণহত্যা Genocide কিনা তার নির্দেশে সৈন্য বাহিনী ও সে নিজে করেছে। মিলিটারি অপারেশান এর ধরন দেখে যা মনে হয়েছে তা হল জেনারেল ইয়াহিয়া চেয়েছিলেন বাঙ্গালি জনসংখ্যাকে কমিয়ে রাখতে যাতে তারা পশ্চিম পাকিস্তানে সংখ্যালঘু  হিসাবে থাকে আর এর জন্য একমাত্র  পথ হল হত্যা। আর সে জন্য তিনি উর্দু-ভাষাভাষী অবাঙ্গালি, ও কিলার স্কুয়াড আল- বদর, আল- সামস গঠন করেছিলেন শিক্ষাবিদ, সুশীল শ্রেণী ও হিন্দুদের হত্যার জন্য।

এ জন্য পাক বাহিনী সু পরিকল্পিত ভাবে কাজ করে যাচ্ছিল। এ জন্য পাক সেনাবাহিনী নিরস্ত্রকরন সহ পূর্ব পাকিস্তান রাইফেল, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট  ও পুলিশদের নিয়ে শহর ও মহল্লায় আক্রমণ করে। ইয়াহিয়া হিন্দুদের উপর এই ছল করে আক্রমণ করেছিল যে, যাতে হিন্দু নিধন করলে পাকিস্তানের জনগন মেনে নেবে যেহেতু হিন্দুরা বিধর্মী আর এই সুযোগে জাতীয় আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে দেয়া যাবে ।

এরা আক্রমণ করেছিল ছাত্র ও শিক্ষক দের উপর। সীমান্ত এলাকায় আক্রমণ করা হয়েছিল যাতে বিদ্রোহীরা আশ্রয় না পায় এবং  গ্রাম আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল। তারা বিদ্রোহীদের বেছে বেছে পৃথক করছিল হত্যার জন্য। তারা বাঙ্গালিদেরকে  পৃথক ভাবে ভাবতে শুরু করেছিল হত্যার জন্য। জেনারেল টিক্কা খান, ভেবে ছিলেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তারা বিদ্রোহীদের নিশ্চিহ্ন করতে পারবে। জেনারেল ইয়াহিয়া খান ও তাই ভেবেছিলেন। 

 সমস্ত কিছু চলছিল পরিকল্পনা মাফিক। তবে জেনারেল ইয়াহিয়া কে বোঝা উচিত ছিল যে পাক বাহিনীর অত্যাচারে ১ কোটি মানুষ বাংলা ছেড়ে গেলেও ৬ কোটি ছিল স্বদেশে। পাক মিলিটারি বাহিনী তাদের ইচ্চা মত ধ্বংস লীলায় ব্যস্ত ছিল পূর্ব বাংলায়। কিন্তু, এই অত্যাচার এর নদীকে থামিয়ে দেয় প্রতিবেশী ভারত।

জেনারেল ইয়াহিয়া সেটা স্বপ্নেও  অনুধাবন করতে পারেননি। আর তখনি তার সম্মত অপকর্ম, অপরাধ সম্মুখে চলে আসে।  বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। জেনারেল ইয়াহিয়া দানব হিসাবে পরিচিত হতে শুরু করেন। যুদ্ধ পরবর্তী  সময়ে জেনারেল ইয়াহিয়ার ভাগ্য মন্দ হলেও কিছু অমানুষের ভাগ্য মন্দ হয়নি।

তারা হলেন জেনারেল ইয়াহিয়া কর্তৃক গঠিত গ্রাম্য বা প্রত্যন্ত এলাকায় রাজনৈতিক ভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সৃষ্ট পারা মিলিটারি  রাজাকার ও আলবদর বাহিনী। জেনারেল ইয়াহিয়া তাদের কে কিছু বলেনি বা থামায়নি যখন তারা বৃহৎ আকারে লুট, ধর্ষণ, এবং খুন করা শুরু করে আর তখন ই মূলত জেনারেল ইয়াহিয়ার পরিকল্পনা (Genocide) গণহত্যা য় রূপ নেয়।

আরও পড়ুন

গণহত্যা ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ- ধারাবাহিক পর্ব-২