বাংলা গল্পঃ কুকুর ও সাধু। কুকুর কেন দেয়ালে প্রস্রাব করে?
এক সাধু সেদিন ফেসবুকে বক্তব্য দিচ্ছে। সেই বক্তব্যে একটা গল্পের অবতারণা করেছেন সাধু। গল্পটা হলঃ একজন ভক্ত অন্য একজন সাধুকে জিজ্ঞেস করছে যে
কুকুর কেন দেয়ালে প্রস্রাব করে?
কুকুর কেন ফকির দেখলে ঘেউ ঘেউ করে?
এবং কুকুর কেন রাত্রেবেলা ডাকাডাকি করে গৃহস্তের ঘুম ভাঙ্গায়?
কুকুর কেন দেয়ালে প্রস্রাব করে?
তার গুরুদেব উত্তর দিচ্ছেন; কোন একজন ভক্ত এই ধরিত্রির ভূমিতে বসে ধ্যান করতে পারে এবং তারা যেহেতু ভগবানের পবিত্র সত্তা তাই ভূমিতে প্রস্রাব করে তাদেরকে অপবিত্র করা উচিত নয় এই তত্ত্বকথা কুকুর বুঝতে পেরেছে তাই কুকুর কখনোই ভূমিতে প্রস্রাব করে না। দেয়ালে প্রস্রাব করে।
এ তো গেল প্রথম প্রশ্নের উত্তর। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে আসা যাক।
কুকুর কেন ফকির দেখলে ঘেউ ঘেউ করে?
গুরুদেব উত্তর দিচ্ছেন যে, কুকুর ফকির দেখলেই ঘেউ ঘেউ করে এর কারণ হলো, এই ধরাধামে আমরা সবাই ফকির। অর্থাৎ একজন ধনী ব্যক্তিও তার উচ্চ পদের কোন ব্যক্তির কাছে কিছু না কিছু চেয়ে থাকে।
আবার দেশের সর্বোচ্চ আসনে অভিষিক্ত মন্ত্রী মিনিস্টার নির্বাচনের সময় সাধারণ পাবলিক ফকির মিসকিনদের কাছেও গিয়ে ভোট ভিক্ষা করে। অর্থাৎ পৃথিবীতে কেউ ফকির ছাড়া মনিব নেই।
তাই কুকুর যখন কোন ফকিরকে দেখে কুকুর তখন ঘেউ ঘেউ করে, কারণ একজন ফকির অন্য একজন ফকিরের কাছে ভিক্ষার জন্য আহ্বান করছে এটা দেখে কুকুর রাগে দুঃখে বিরক্ত হয়ে ঘেউ ঘেউ করে ঘেউ ঘেউ করে। কুকুর তাকে উপদেশ দেওয়ার চেষ্টা করে যে তুমি ফকিরের থেকেই কেন নিজে ফকির হয়ে ভিক্ষা করছো।
কুকুর কেন রাত্রেবেলা ডাকাডাকি করে গৃহস্তের ঘুম ভাঙ্গায়?
জনৈক ভক্ত তিনটি প্রশ্নের মধ্যে দুটি প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যার পর নাই খুশি। এখন গুরুদেবকে জিজ্ঞাসা করছে যে গুরুদেব তাহলে কুকুর কেন রাত্রেবেলা গৃহস্থদের ঘুমাতে দেয় না? কেন তারা ঘেউ ঘেউ করে এর কি তাৎপর্য।
গুরুদেব উত্তর দিচ্ছেন যে আমরা স্বল্প সময়ের জন্য এই ধরাধামে এসেছি আমরা এই ধরাধামে এসেছি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নাম গুনোগান কীর্তন করার জন্য ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সময় কাটানোর জন্য নয়। তাই কুকুর প্রতি রাত্রেই ঘেউ ঘেউ করে মনিবকে বলে যে তুমি উঠে পড়ো উঠে পড়ো ঘুম থেকে উঠে পড়ো সময় নেই তোমার এই মানব জীবন দুর্লভ জনম এবং নাম গুনো গান কীর্তন কর। এভাবে কুকুর সম্পর্কিত তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গুরুদেব ও তার ভক্ত তাদের নিজেদের ধামে ফিরে গেলেন।
শিক্ষাঃ এই বাংলা গল্প থেকে আমরা কি শিক্ষা পেলাম?
সাধুরা কুকুর বিড়াল সাপ পোকা এসব নিয়ে গল্প তৈরি করে ধর্মীয় অনুভূতি মিশিয়ে মানুষকে ধোকা দেওয়ার চেষ্টা করছে অথবা নতুন নতুন তত্ত্ব কথা আবিষ্কার করছে এভাবেই ধর্ম সৃষ্টি করে সাধুর যারা দুর্বল চিত্রের মানুষ তারা এটাকে বিশ্বাস করে।
উক্ত গল্প থেকে আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি এটা কোন ধর্মীয় ঐতিহাসিক সত্য নয় । এটা একটি উদ্ভট বানোয়াট গল্প এভাবেই সাধুরা গল্প তৈরি করে এবং কোন গল্প যদি ধর্মের আশ্রয় আশ্রিত হয়ে সর্বসাধারণের কাছে প্রশংসিত হয়ে যায় তখন সেই গল্পটা দিকবিদিক ছড়িয়ে পড়ে এবং সেটা হয়ে যায় ইতিহাস ধর্মের অংশ এভাবেই ধর্ম সৃষ্টি হয়।
আমরা আমাদের দুর্বল চিত্ত নিয়েই ধর্মের কাছে আশ্রিত হয়ে পড়ি। সাধুদের এমন বানানো উদ্ভট গল্পে বিশ্বাস করি।
উক্ত গল্প থেকে আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি এটা কোন ধর্মীয় ঐতিহাসিক সত্য নয় । এটা একটি উদ্ভট বানোয়াট গল্প। এভাবেই সাধুরা গল্প তৈরি করে এবং কোন গল্প যদি ধর্মের আশ্রয় আশ্রিত হয়ে সর্বসাধারণের কাছে প্রশংসিত হয়ে যায় তখন সেই গল্পটা দিকবিদিক ছড়িয়ে পড়ে এবং সেটা হয়ে যায় ইতিহাস ধর্মের অংশ এভাবেই ধর্ম সৃষ্টি হয়। আমরা আমাদের দুর্বল চিত্ত নিয়েই ধর্মের কাছে আশ্রিত হয়ে পড়ি। সাধুদের এমন বানানো উদ্ভট গল্পে বিশ্বাস করি।
তাই আমাদের উচিত দুর্বল চিত্রের মানুষদের এসব উদ্ভট তত্ত্ব কথাগুলো একবার ভেবে দেখা। কেন কুকুর দেয়ালে প্রস্রাব করে? এর নিশ্চয়ই কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে? আমার এই লেখার উপরে একটি লিংক দেওয়া রয়েছে বৈজ্ঞানিক তথ্য অনুসারে যদি জানতে চান কেন কুকুর দেয়ালে বা পা উঁচু করে প্রস্রাব করে তার একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেওয়া রয়েছে।
তাছাড়া রাতে ঘেউ ঘেউ করে ডাকার স্বভাব কুকুরের একটি প্রভু ভক্ত হওয়ার জন্য। কুকুর যদি শুয়ে থাকে আপনি হেঁটে গেলেও আপনার পায়ের শব্দ শুনতে পাবে এবং মানুষের ঘ্রাণ নিয়ে সে বুঝতে পারে তার আচার-আচরণ অথবা সে একটি ধারণা করতে পারে মানুষটি সম্বন্ধে। এটা মূলত কুকুর করে তার স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্যের কারণে। কোন ধরনের অস্বাভাবিক শব্দ শুনলেই কুকুর তার নিরাপত্তার জন্য মনিবকে ডাকতে সে নিজেই ডাকাডাকি করে।
জাপানে একটি গল্প রয়েছে। একটি কুকুরের মনিব মারা যাওয়ার পরে আর বাসায় ফেরেনি কিন্তু সেই কুকুরটি দশটি বছর সেই বাড়ির সামনে মনিবের জন্য অপেক্ষা করত। একেই বলে কুকুর প্রভু ভক্ত।
কুকুর আমাদের দৈনন্দিন কথা ঠিকই বুঝতে পারে এবং প্রভু ভক্ত হয়ে যায়। আপনি ফোনের লাউডস্পিকে কথা বললেও কুকুর আপনার কথার প্রতি উত্তর দেবে। আমার এক জাপানি বন্ধু স্মার্টফোনের লাউড স্পিক এ কথা বলে সুদূর টোকিও থেকে তার ইয়ামাগুচির শহরের বাসার নিজের পোষা কুকুরকে বিভিন্ন ধরনের নির্দেশ আদেশ দিতে পারতো, কুকুর কি করবে, কি করবে না ইত্যাদি । সত্যি অভাবনীয় বিষয়। এর প্রত্যক্ষ সাক্ষী আমি।
আর ফকির মিসকিনদের দেখে কুকুর ঘেউ ঘেউ করার কারণ হতে পারে ফকিরদের পোশাক আশাক দেখে অস্বাভাবিক মানুষ বলে মনে হয়, তাই কুকুর ঘেউ ঘেউ করে।
ধর্মীয় অনুভূতি মিশিয়ে মানুষকে ধোকা দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। বর্তমান আধুনিক যুগেও মানুষ যদি এইরকম বিশ্বাস করে তাহলে বুঝতে হবে তাদের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা রয়েছে। তাই উদ্ভট ভাবে দিকভ্রান্ত ধর্মগুরুদের বিশ্বাস করবেন না। ভালো থাকবেন ।।
More Stories
ধনী হওয়ার উপায় 2024
গল্পঃ অতৃপ্ত জন্মদিনের শুভেচ্ছা
প্রেজেন্টেশন টিপস আমি যা মেনে চলি