মহাসমুদ্র ও সৌরজগৎ যেভাবে সৃষ্টি হয়েছিল
সৌর জগত সৃষ্টির জন্য এখন পর্যন্ত পৃথিবীর বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও মহাকাশ বিজ্ঞানীরা অনেক প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন তার মধ্যে সবথেকে গ্রহণযোগ্য যে মতামত এটা দিয়েছিলেন ইমানুয়েল কান্ট ১৭৫৫ সালে তাঁর Universal natural history and theory of the heavens বইয়ে।
কান্ট প্রস্তাব করেন যে নিজের অক্ষের ডিস্ক এর মত ঘূর্ণায়মান ধূলিকণার মত পদার্থগুলো সতত সংযুক্ত হয়ে আকার বৃদ্ধি করার সাথে সাথে সূর্যের চারিদিকে ঘূর্ণনশীল ছিল।
এরপর ফ্রান্সের গণিতবিদ পিয়েরে সিমন লপ্লেস, কান্টের প্রস্তাবনাকে নিয়ে গবেষণা করেন এবং অধিকতর উন্নত করেন।
কান্ট লপ্লেস সম্মিলিতভাবে প্রস্তাব করেন যে সৌরজগৎ সৃষ্টির শুরুতে ছিল অধিক ঘনত্বের গ্যাস ও ধূলিকণার মেঘ। 460 কোটি বছর আগে একটি বৃহৎ সুপারনোভা বিস্ফোরণের শক ওয়েব এর মাধ্যমে ঘুর্ণয়মান পদার্থের ডিস্কটিতে মহাকর্ষ বল প্রতিষ্ঠিত হয়। ধূলিকণা গুলো নিজেদের মধ্যে ইলেকট্রোস্ট্যাটিক বলেন মাধ্যমে সংযুক্ত হতে থাকে এবং ঘূর্ণন অবস্থায় আকার বৃদ্ধি পেয়ে ছোট পেবল আকারের হয় এভাবে কণাগুলো ঘূর্ণায়মান ডিস্কের মাঝামাঝি অবস্থান করে ঘুরতে থাকে।
সময়ের সাথে সাথে এবং পেবল আকারের পদার্থগুলো কিলোমিটার আকারের পদার্থে পরিণত হয় এবং তা চন্দ্রের মত বৃহৎ আকারের বস্তুতে পরিণত হয় এবং যথারীতি ঘূর্ণন প্রক্রিয়া ক্রিয়াশীল থাকে যদিও এই প্রক্রিয়াটা বিজ্ঞানীদের কাছে এখনো সুপ্রতিষ্ঠিত নয় যে এটা কিভাবে ঘটেছে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা অন্তত একটি সংঘর্ষ হয়েছে যেখানে নতুন পৃথিবী ও মঙ্গল গ্রহের আকারের কোন গ্রহের সাথে সংঘর্ষে আমাদের চাঁদ নামক উপগ্রহটি সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে গ্রহের মতো বড় আকারের পদার্থ, ধূমকেতুর সংঘর্ষ 400 কোটি বছর পর্যন্ত চলমান থাকে।
ধীরে ধীরে পৃথিবী শান্ত হয় ও উত্তপ্ত গলিত পদার্থগুলো ঠান্ডা হতে থাকে এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠে শক্ত পদার্থের একটা আবরণ তৈরি হয় সেই আবরণ কে বলা হয় কন্টিনেন্টাল ক্রাস্ট বা পৃথিবীর উপরিভাগের শক্ত ভুমি। বিজ্ঞানীরাও পৃথিবীর উপরিভাগের শক্ত ভূমির তেজস্ক্রিয় বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে বয়স নির্ণয় করেছেন এবং পৃথিবীর প্রথম শক্ত ভূমি অন্তত 430 কোটি বছর আগে সৃষ্টি হয়েছিল।
কিভাবে পৃথিবীতে সমুদ্র, মহাসমুদ্র বায়ুমণ্ডল সৃষ্টি হয়েছিল
পৃথিবীর সৃষ্টির শুরু থেকে 380 কোটি বছর পর্যন্ত সময়কে বলা হয় এই হেইডেন ইয়ন। এই সময়ে পৃথিবীর উপরিভাগের তাপমাত্রা ছিল 1000 ডিগ্রী সেলসিয়াস এর উপরে এবং উত্তপ্ত গলিত লাভা এই সময়টা বিজ্ঞানীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা গবেষণা করে প্রমাণ করার মত কোন কিছুই পাওয়া যায় না। পৃথিবী ঠান্ডা হয়ে প্রথম পাথর তৈরীর আগ পর্যন্ত এই সময়টাকে হেইডেন ইয়ন বলে।
পৃথিবীপৃষ্ঠ শক্ত আবরণ এ পরিণত হওয়ার পরেও মহাশূন্য থেকে নতুন পৃথিবীর উপর ধূমকেতুর বৃষ্টি চলমান থাকে। বিজ্ঞানী ডেলসেমেন, (1996) ধারণা করেন এই ধুমকেতুর পতন থেকেই পৃথিবীপৃষ্ঠে পানির সঞ্চার ও গ্যাসীয় পদার্থের সংযুক্তি ঘটেছিল বায়ুমন্ডলে। এভাবে পৃথিবী পৃষ্ঠ ঠান্ডা হতে হতে বিশাল সমুদ্রে পরিণত হয় আর বায়ুমণ্ডলের সৃষ্টি হয়।