মহামারী সংকলন-২ খৃষ্টপূর্ব ৪৩০ এর এথেন্সের প্লেগ মহামারী
প্রাচীন গ্রীকে পেলোপনেশিয়ান যুদ্ধের ২ বছর পর একটি মহামারী এথেন্স শহরকে বিধ্বস্ত করেছিল। এই যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল এথেন্স ও স্পার্টার মধ্যে । যুদ্ধে তখন জয়ের কাছে পৌছে গিয়ে ছিল এথেন্সিয়ানরা। প্লেগ নামের এই মহামারী ৭৫,০০০ থেকে ১,০০,০০০ মানুষের জীবন নিয়ে নিয়েছিল। ধারনা করা হয়, পাইরেয়াসের মাধ্যমে এথেন্সে প্রবেশ করেছে এই মহামারী।কারণ, এটিই নগরীর একমাত্র খাদ্য সরবরাহের বন্দর । পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখেছিল। কিন্তু মহামারীর প্রভাব সেখানে কম ছিল। তবে এথেন্সে এই মহামারী ৫ বছর যাবৎ স্থায়ী ছিল।
ঐতিহাসিক থুসিডিডিস এর বর্ণনা অনুযায়ী, “সুস্থ লোকেরা হঠাৎ করেই মাথায় হিংস্র উত্তাপে আক্রান্ত হন এবং তাদের চোখের মধ্যে লালভাব , প্রদাহ, গলা ও জিহ্বার মত অভ্যন্তরীণ অংশ রক্তাক্ত ও একপ্রকার অপ্রাকৃত এবং নিঃশ্বাসে দূর্গন্ধ জাতীয় লক্ষণ দেখা দেয়”
খৃষ্টপূর্ব ৪৩০ এর এথেন্সের প্লেগ মহামারী বিতর্ক
এই মহামারীটি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে অনেক বিতর্ক রয়েছে। অনেকে এটিকে টাইফয়েড জ্বর বলেন আবার কেউ ইবোলা সহ আরও অনেকগুলো সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে আসেন।বিজ্ঞ জনেরা মনে করেন যু্দ্ধের ফলে অতিরিক্ত জনসমাগমের সৃষ্টি হয় এবং তা মহামারীকে আরও বাড়িতে তোলে।
স্পার্টার সেনাবাহিনী শক্তিশালী ছিল এবং এথেন্সিয়ানদের তাদের শহরের বাসিন্দাদের সুরক্ষিত রাখা দরকার ছিল। তাই তারা বাধ্য হয়ে‘ Long Walls’ নামে ধারাবাহিক দুর্গের পিছনে আশ্রয় নিয়েছিল। মহামারী থাকার সত্ত্বেও যুদ্ধ থামেনি, এটি চলেছিল খৃষ্টপূর্ব ৪০৪ পর্যন্ত, এবং স্পার্টা বাধ্য হয়েছিল এথেন্সকে বন্দি করতে।
আক্রান্ত ব্যক্তিরা অধিকাংশই চিকিৎসার অভাবে মারা যেত। আর মৃতদের একের উপর এক কবর করে মাটি চাপা দাওয়া হতো এরপর মৃতের সংখ্যা বাড়লে গণকবর দিয়ে তাদের পুড়িয়ে দেওয়া হতো। খৃষ্টপূর্ব ৪৩০-৪২৬ এর মধ্যে একটি গণকবর পাওয়া গেছে যেখানে ১,০০০ সমাধিসৌধ ছিল।গণকবর একটি নিচু প্রাচীর দ্বারা সীমাবদ্ধ ছিল, ধারনা করা হয় জলাভূমি থেকে রক্ষা করার জন্যই প্রাচীর দেওয়া হয়েছিল। আর যারা অসুস্থতা থেকে সুস্থ হয়ে ফিরতেন তারাই করতেন আক্রান্ত রোগীদের সেবা।
প্লেগের কারণে ধর্মীয় অনিশ্চয়তা শুরু হয় সবার মাঝে। তারা মনে করতে থাকে দেবতা তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন , তাই তাদের প্রার্থনা কোনো কাজে দিবে না। এথেন্সে আসা শরণার্থীরা মন্দিরে আবাসন খুঁজতে বাধ্য হয় এবং মন্দির গুলো অনেক দুর্দশা ছিল। এতে ধীরে ধীরে মৃতের পরিমাণ বাড়তে থাকে এবং তারা ভাবতে শুরু করেন দেবতারাও স্পার্টার পক্ষে তাই এথেন্সে এমন মহামারী দিয়েছেন তারা।
তখনকার ডাক্তারদের এই মহামারী নিরাময়ের উপায়ও জানা ছিল না।
তাই রোগীদের চিকিৎসা করতে করতে সবচেয়ে দ্রুত মারা গিয়েছিলেন তারা। আর এভাবেই নিশ্চিত বিজয় হাত ছাড়া হয়ে যায় এথেন্সের এক মহামারীর আক্রমণের কারণে।
More Stories
পুন্ড্রবর্ধন: ঐতিহাসিক রহস্যের এক অধ্যায়
চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ালে কি করা উচিত
সাপ্তাহিক চাকরির খবর ২০২৪