মৃত্যুর পরও সচল থাকে মস্তিষ্ক
একজন মানুষের হৃদস্পন্দন দেখে বা হার্টবিট বন্ধ হয়ে গেলেই তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। আর এই সময়েই মানুষ তার মৃত্যুর ক্ষণটিকে বুঝতে পারে। হার্টবিট বন্ধ হয়ে গেলে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন ও বন্ধ হয়ে যায় এবং এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কখনো কখনো কয়েক ঘন্টা সময়ও লাগতে পারে।
ঠিক এই সময়টিতেই মানুষের মস্তিষ্কের জানালা খোলা থাকে। আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কেও সে মনোযোগী থাকে। একজন মৃত ব্যক্তির অনুভূতি কেমন থাকতে পারে তখন? নিচের লেখাগুলি থেকে জেনে নিন।
যেকথাটা নিয়ে আলোকপাত করা সেটি হচ্ছে মৃত্যুর পরও কিছুক্ষণ সক্রিয় থাকে মস্তিষ্ক। শ্বাসযন্ত্র এবং রক্ত পরিবহন বা সংবহনতন্ত্র বন্ধ হয়ে গেলে তৎক্ষণাৎ আমাদের দেহ অচল হয়ে পড়ে। কিন্তু হৃৎপিণ্ড অচল হয়ে পড়লেও কিছু সময় ধরে মানুষের মস্তিষ্কে তড়িৎ প্রবাহ চলতে থাকে অর্থাৎ মৃত্যুর কিছু মুহূর্ত আগে মস্তিষ্কে বৈদ্যুতিক তরঙ্গ প্রেরিত হয়,কেউ জানে না এটি কেন ঘটে থাকে! ফলে আস্তে আস্তে অক্সিজেন এর ঘাটতি দেখা দেয় মস্তিষ্কে।
বরং মস্তিষ্কই দেহের একমাত্র অঙ্গ যা সবার পরে নিষ্ক্রিয় হয়। মস্তিষ্কের সব থেকে বড় অংশটির নাম সেরেব্রাল কর্টেক্স। এই অংশটিই মানুষের চিন্তাভাবনা এবং যে কোনো বিষয়ে সিধান্ত গ্রহণের কাজটি করে থাকে। সেরেব্রাল কর্টেক্স অক্সিজেন ছাড়াও ২-২০ সেকেণ্ড সচল থাকে। অক্সিজেন ছাড়াই এটি কিছু সময় কাজ করতে সক্ষম আর এ সময় মানুষের জ্ঞান থাকে,কিন্তু হৃদস্পন্দন থাকে না। এটি আমাদের স্নায়ু থেকে তথ্য নিয়ে কাজ করার নির্দেশ পাঠায়।
সেরেব্রাল কর্টেক্স কাজ করা সত্ত্বেও মৃত্যুর পূর্বে শরীর আত্মবাচক এবং পেশীসংক্রান্ত কার্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আস্তে আস্তে অক্সিজেন এর ঘাটতির ফলে মস্তিষ্ক তার শেষ মুহূর্ত গুলো অনুভব করতে পারে এবং কাজ করার ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। এ সময় মস্তিষ্কের কোষগুলো শেষ বারের মত রাসায়নিক পদার্থ ক্ষরণ করে যা তাদের অন্তিম মুহূর্তের দিকে নিয়ে যায়।
অক্সিজেন মানুষের বেঁচে থাকা এবং মৃত্যুর মধ্যে সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। এ অবস্থায় লাইফ সাপোর্ট এর জন্য কেউ যদি সিপিআরের মাধ্যমে হার্ট চালু করতে সক্ষম হয় তাহলে মস্তিষ্ক আবার কাজ করার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন গ্রহণ করবে। আর অক্সিজেন না পেলে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে বিকল হয়ে পড়ে আত্মসমর্পন করতে শুরু থাকে।
অল্প সময়ের মধ্যেই মস্তিষ্কের বেশির ভাগ অংশই মারা যেতে শুরু করে। কিন্তু চূড়ান্ত মুহূর্তেও একটা অংশ কিছুতেই হার মানতে চায় না,সেটি হলো মস্তিষ্কের “স্মৃতিকেন্দ্র” বা “মেমরি সেল”। এ সময় জীবনের হাসি-কান্নার সব চেয়ে সংবেদনশীল স্মৃতি গুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে। এটিই হবে মস্তিষ্কের সর্বশেষ প্রতিক্রিয়া। এরই সঙ্গে দেহের সর্বশেষ অঙ্গটিও নিশ্চুপ হয়ে যায়।
মৃত্যুর পরও সচল আমাদের ব্রেন?
যখন ডাক্তার লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নেয় তখন মৃত ব্যক্তিকে ক্লিনিক্যালি ডেড ঘোষণা করা হয়। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, কিছু ক্লিনিক্যালি ডেড রোগীর লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নেওয়ার পর।তাদের মস্তিষ্কের তথ্য সংগ্রহ করে জানতে পারেন মৃত্যুর পর মস্তিষ্ক প্রায় ১০ মিনিটের বেশি সময় সচল ছিল অর্থাৎ প্রায় ১০ মিনিট ধরে অনুভূতি সচল ছিল তাদের। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সম্পর্কে হয়ত আমরা এখনও অবগত নই।
তা হচ্ছে প্রত্যেক মৃত ব্যক্তির ইইজি বা ইলেক্ট্রো এনসেফালোগ্রাফিক রেকর্ড চেক করলে দেখা যায় প্রত্যেকের মস্তিষ্কের রেকর্ড কৃত ডাটা একে অপরের থেকে ভিন্ন ছিল এবং সকলের অনুভূতি আলাদা ছিল। এর অর্থ প্রত্যেকেই মৃত্যুর সময় ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল। কি ছিল সেই অভিজ্ঞতা তা এখনও বিজ্ঞানীদের কাছে রহস্যময়।
এ বিষয়ে ডক্টর পারনিয়া বলেন, ‘ মৃত্যুর সময় মানুষের মন আর সচেতনতা নিয়ে গবেষণা করে আমরা যা জেনেছি তা হলো মস্তিষ্ক সচল থাকে মৃত্যুর শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত যা মৃত্যুর সময়কেও ছাড়িয়ে যায়।
মানুষ যখন মরে যায়, তখন সে এটিকে ঠিক কীভাবে উপলব্ধি করে তা এখনও ডাক্তার,বিজ্ঞানী তথা পৃথিবীর কাছে সবচেয়ে বড় বিস্ময়। যদিও মৃত্যুর পর কিছুটা সঞ্জীবন দেখতে সক্ষম হয়েছেন গবেষকরা।সূত্রঃ দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট।
কিন্তু গবেষকরা আগে ভাবতেন মৃত্যুর ১ মিনিটের মধ্যেই মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়।কিন্তু গবেষকরা বা চিকিৎসকরা এখনো জানেন না এই সঞ্জীবন বা অদ্ভূত আচরণ এর কি রহস্য থাকতে পারে ! এটি নিয়ে এখনই কিছু বলতে চান নি তারা। তবে তারা এটিও কয়েকবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়েছেন যে, কারিগরি কোনো ধরণের ত্রুটির কারণেও এমনটা ঘটে নি কখনই।
More Stories
চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ালে কি করা উচিত
সাপ্তাহিক চাকরির খবর ২০২৪
রাসেল ভাইপার কেন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে