পৃথিবীর ভূ-গাঠনিক পেঁয়াজতত্ত্ব, ফলতত্ত্ব এবং ডিমতত্ত্ব
আমরা সবাই সেই ছোট বেলা থেকে জেনে আসছি পৃথিবী কমলালেবু বা ডিম্বাকার গোলাকৃতি। পৃথিবী গোলাকার এটা বিজ্ঞানীরা অনেক পূর্বেই প্রমাণ করেছিলেন কিন্তু ডিম কিংবা কমলালেবুর সাথে তুলনা করার অর্থ কি? খুবই সহজ ব্যাপার এটা আমাদের বোঝার স্বার্থে অর্থাৎ পৃথিবী কেমন গোলাকার সেই সম্পর্কে ধারণা দিতেই এমন তুলনা করা হয়েছে।
ঠিক একই রকম পৃথিবীর ভিতরের গঠনকে Crust খুব সহজে বোঝার জন্য বিজ্ঞানীগণ পেয়াজ, ডিম অথবা বিভিন্ন ফলের সাথে তুলনা করেছেন।
পৃথিবীকে ফল ও ডিমের সাথে তুলনা করে
তাহলে আসুন প্রথমে পৃথিবীর অভ্যন্তর সম্পর্কে সংক্ষেপে জেনে নেই।পৃথিবীর অভ্যন্তর মূলত কতকগুলো স্তরে স্তরে সজ্জিত। এই স্তরগুলোকে প্রধানত তিনটিভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ
- Crust: যা পৃথিবীর একদম উপরের ভাগ। এটি দুইধরনের Upper Crust এবং Lower Crust. এই অংশটি কঠিন পদার্থ বা শিলা দ্বারা গঠিত।
- Mantle: এই স্তর পৃথিবীর ৮৩% অংশ জুড়ে অবস্থান করছে এবং এটি Crust বা ভূত্বকের নিচেই অবস্থান করছে। এটিরও দুইধরনের Upper Mantle এবং Lower Mantle. এই অংশটি গলিত পদার্থ দিয়ে গঠিত।
- Core: এটি একদম ভিতরের অংশ। Core বা কেন্দ্রকে আবার দুইভাগে ভাগ করেছে। যথাঃ Inner Core (যা কঠিন) এবং Outer Core (যা গলিত)।
চলুন এখন তুলনা গুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যাক,
পৃথিবীর ভূ-গাঠনিক পেঁয়াজতত্ত্ব
পেয়াজের একদম বাহিরের পাতলা খোসাকে Crust সাথে তুলনা করুন। এবার খুব ভালো করে খেয়াল করুন যে, খোসার নিচে পেয়াজ বিভিন্ন স্তরে স্তরে সজ্জিত রয়েছে। মূলত এই অংশকে পেয়াজের Life events বলা হয়। যা পেয়াজের বয়সের সাথে স্তরগুলো বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই অংশকেই Mantle এর সাথে তুলনা করুন। এবং সর্বশেষে দেখবেন ছোট Bulb বা মূল অংশ বিদ্যামান। যাকে পৃথিবীর Core এর সাথে তুলনা করুন।
পৃথিবীর ভূ-গাঠনিক ফলতত্ত্বঃ
এই তত্ত্ব মূলত বিভিন্ন ধরণের ফলের সাথে তুলনা করা হয়েছে। যেমন, আপেল, অ্যাভোগ্রাডো, পীচফল জাতীয় ফলসমূহ। এর ব্যাখাও মূলত পেয়াজের মতোই। উপরের খোসাকে Crust, ভিতরের যে অংশ আমরা ভক্ষণ করি সেই অংশকে Mantle এবং বীজ কে Core এর সাথে তুলনা করুন।
- ডিমতত্ত্বঃ ডিমের মাধ্যমেই আসলে পৃথিবীর প্রতিটি স্তরের খুব ভালো ধারণা পাওয়া যায়। এর জন্য প্রথমেই আপনি একটি ডিমকে সিদ্ধ করে নিন। এখন সম্পূর্ণ ডিমটিকে একটি পৃথিবীর সাথে তুলনা করুন। পেয়াজতত্ত্বের ন্যায় উপর খোসাকে Crust হিসাবে বিবেচনা করুন। এখন খুব ভালো করে খেয়াল করুন ডিমের শক্ত খোসাতে দুইটি লেয়ার আছে।
- যা দ্বারা উপরের স্তরকে Upper Crust এবং নিচের স্তরকে Lower Crust বিবেচনা করুন। খোসার নিচেই ডিমের সাদা অংশ বিদ্যামান আছে যা Mantle হিসাবে ধরুন। ডিমের এই সাদা অংশটি খুব নরম যা Mantle স্তরটি গলিত পদার্থ দিয়ে গঠিত তা নির্দেশ করে।
- এবার আরও মনোযোগ দিয়ে দেখতে বুঝতে পারবেন যে, ডিমের এই সাদা অংশটিকে আরও দুইভাগে ভাগ করা যায়। উপরের স্তর Upper Mantle এবং নিচের স্তর Lower Mantle. এবার আসুন ডিমের হলুদ অংশ অর্থাৎ কুসুম অংশের দিকে দেখতে পারবেন ডিমের সাদা অংশের চেয়ে কুসুমটি একটু শক্ত।
- এই শক্ত অংশটিকে Core বলা হলো। একটু খেয়াল করলে বুঝতে পারবেন যে কুসুমের বাহিরের অংশে গলিত ভাব বিদ্যামান। বাহিরের এই গলিত কুসুমের অংশকে Outer Core এবং ভিতর শক্ত কুসুমের অংশকে Inner Core বলা হলা।
এই তিন আলোচনায় হয়তো আপনি পৃথিবীর অভ্যন্তরের অংশ সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা পেতে সক্ষম হয়েছেন। লেখাটি অধ্যায়নের সাথে সাথে ডিম, ফল এবং পেঁয়াজের সাথে মিলিয়ে দেখবেন এবং লেখাটির সাথে সংযুক্ত ছবিসমূহও মিলিয়ে দেখবেন। পৃথিবী তে ঘটে যাওয়া রহস্যময় ঘটনা জানতে আরও পড়ুন
More Stories
শরিফার গল্প বাদঃ কি শিক্ষা পেলাম
চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ালে কি করা উচিত
সাপ্তাহিক চাকরির খবর ২০২৪