Thunderstrom বা বজ্রপাত কী?
শীতকালে আমরা যখন গোসল করার পরে অথবা আগে চিরুনি দিয়ে চুল আছড়াই তখন সেই চিরুনি কোন শুকনা কাগজের টুকরা গুলোকে টেন নেয়? কেন? হ্যাঁ ঠিক বলেছেন। শুকনা চুল ও চিরুনির সাথে ঘর্ষণের ফলে চিরুনিতে এক প্রকার বিদ্যুৎ তৈরি হয়েছে যাকে বলে স্থির বিদ্যুৎ। এই বিদ্যুৎ কে DC কারেন্ট বলে। আর আমরা বাসা বাড়িতে যে বিদ্যুৎ দিয়ে টেলিভিশন দেখি বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালাই সেটা হল AC কারেন্ট।
এখন DC কারেন্ট এর দুইটা চার্জ থাকে যাকে বলে ধনাত্মক আর ঋণাত্মক আধান। এই ধনাত্মক আর ঋণাত্মক আধান বিপরীত হবার কারণে পরস্পরকে আকর্ষণ করে। তাই চিরুনিতে তৈরি হওয়া বিদ্যুৎ কাগজের টুকরা কে আকর্ষণ করে। ঠিক এমনি ঘটে আমাদের বায়ু মণ্ডলে। যাকে বলে Thunderstrom বা বজ্রপাত।
যখন আকাশে মেঘ তৈরি হয় তখন বাতাসে থাকা কণা গুলো আর মেঘে থাকে কণা গুলো একে অপরের সাথে ঘর্ষণের ফলে এই DC কারেন্ট তৈরি হয়। এটা যখন বৃহৎ আকারে হয় বিশেষ করে কয়েক শত মাইল জুড়ে তখন এতে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ তৈরি হয়। আর এই বিদ্যুতের দুইটা অংশ ধনাত্মক আর ঋণাত্মক অংশ সাধারণত মেঘে ছড়িয়ে থাকে। তবে ঋণাত্মক চার্জ মেঘের নিচে ভু পৃষ্ঠের দিকে বিন্যাস্ত হয় আর মেঘের উপরেদিকে থাকে ধনাত্মক চার্জ।
যখন Thunderstrom বা বজ্রপাত হয় তখন এই চার্জের পারস্পারিক বিনিময় ই মূলত মুহূর্তের মধ্যে ঘটে যায় আর আলো শব্দ আমরা শুনতে পাই। দুইটা মেঘের মধ্যে এই প্রাক্রিয়া সংগঠিত হতে পারে আবার মেঘ ও পৃথিবীর ভু পৃষ্ঠের সাথে ও এই চার্জের বিনিময় হতে পারে। ভারী মেঘ যখন ভু পৃষ্ঠের কাছে চলে আসে তখন এই Thunderstrom বা বজ্রপাত হতে পারে। কারণ তখন ভূপৃষ্ঠের ধনাত্মক চার্জ মেঘের নিচে থাকা ঋণাত্মক চার্জের সাথে একটা বিনিময় হয়। আর Thunderstrom বা বজ্রপাত হয়।
কেন তাল গাছে Thunderstrom বা বজ্রপাত পড়ে?
Thunderstrom বা বজ্রপাত সাধারণত তাল গাছ ই নয় যে কোন উঁচু গাছেই পড়তে পারে এটা হতে পারে আম গাছ, নারকেল গাছ, পাহাড়, উঁচু ইমারত ইত্যাদি। তবে আমাদের বাংলাদেশে যেহেতু বেশি উঁচুর গাছ মানেই তাল গাছ তাই তাল গাছেই এই Thunderstrom বা বজ্রপাত পড়ে। মূলত যখন মেঘের ঋণাত্মক চার্জ গুলো বিনিময় হয় তখন ভু পৃষ্ঠের যে কোন কিছু টার্গেট করতে পারে আর উঁচুতে অবস্থান করার কারণে প্রথমেই তালগাছ থেকে ধনাত্মক চার্জের আধার পেয়ে যায় তাই তাল গাছেই আগে পড়ে। এর পর তা মাটিতে মিছে যায়। এসময় বিপুল পরিমাণ তাপ শক্তি উৎপন্ন হয়। এবং কয়েক হাজার ভোল্টেজ থাকে সেই বৈদ্যুতিক প্রক্রিয়ায়।
কেন Thunderstrom বা বজ্রপাত ইদানীং খুব বেশি হচ্ছে?
বর্তমানে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে এখন আকাশে Thunderstrom বা মেঘ বেশি হচ্ছে যেহেতু ভু পৃষ্ঠের তাপ বেড়ে গিয়ে বেশি বেশি বাষ্প তৈরি হয়। যা বেশি মেঘ তৈরি করে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ঘুলি কণা থাকার কারণে এই স্থির বিদ্যুৎ ও বেশি তৈরি হয়। তাই বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি হবার কারণে Thunderstrom বা বজ্রপাত এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন ভূমিকম্প থেকেও Thunderstrom বা বজ্রপাত এ মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। বর্তমানে Thunderstrom বা বজ্রপাত হল একটি নতুন বিপদ যা অতীতেও ছিল।
প্রতিবছর ই শত শত কৃষক মারা যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা যায় যে ৫৪ % কৃষক মারা যাচ্ছে। বর্তমান যে Thunderstrom বা বজ্রপাত হয় তার তীব্রতা আগের বছর গুলো থেকে অনেক বেশি ভয়ংকর। তাই এই Thunderstrom বা বজ্রপাত কে আর আমরা অবহেলা করতে পারি না। এর থেকে বাঁচতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। ঘরে থাকতে হবে। বৃষ্টির সময় আমাদের বাইরে থাকা যাবে না।
আমাদের কি করনীয় এর থাকে বাঁচতে হলে?
সচেতন হলেই আমরা এর থাকে বাঁচতে পারব। যে কাজ গুলো কখনই করা যাবে না সেগুলো হলঃ
১। বৃষ্টির সময় বাইরে যাওয়া যাবে না।
২। উঁচু কোন গাছের নিচে আশ্রয় নেয়া যাবে না।
৩। খোলা মাঠে থাকলে মাথা নিচু করে হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে হবে শোয়া যাবে না।
৪। ধাতব বাট বিশিষ্ট কোন ছাতা ব্যবহার করা যাবে না।
৫। খোলা কোন পিক আপ গাড়িতে থাকা যাবেনা গাড়ির ভিতরে অবস্থান করা যাবে।
৬। উঁচু কোন স্থানে অবস্থান করা যাবে না যেমন পাহাড়ে
৭। বাড়িতে ধাতব আরথিন লাগাতে হবে
৮। জানালা বা দরজা খোলা রেখে দাঁড়ান যাবে না।
সর্বোপরি সচেতন হলে এই নতুন দুর্যোগ থেকে আমরা নিজদেরকে বাঁচাতে পারব ও অন্যকে বাঁচাতে পারব
More Stories
Russell Viper নিধন কেন সমাধান নয়?
চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ালে কি করা উচিত
সাপ্তাহিক চাকরির খবর ২০২৪