Colorgeo.com

Disaster and Earth Science

Spread the love

রিক্সা আবিষ্কারের মজার কাহিনী History of Rickshaw

 

বাঙালি জীবনে রিক্সা Rickshaw একটি পরিচিত নাম। রিক্সা মানুষের যোগাযোগে  এক নতুন মাত্রা যোগ করেছিলরিক্সা Rickshaw শব্দটি এসেছে জাপানি শব্দ থেকে।পৃথিবীর  মধ্যে সবচেয়ে বেশি রিক্সার দেখা মেলে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে। তাই তো মজা করে ঢাকাকে বলা হয় রিক্সার রাজধানী।  বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে রিক্সার এক অনন্য সম্পর্কিত রয়েছে। রিকশা ছাড়া বাঙালি সংস্কৃতি কখনোই সম্পন্ন হতে পারেনা । আজ আমরা রিক্সা তৈরীর অর্থাৎ রিক্সা আবিষ্কারের এক অজানা মজার ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করব।

Rickshaw  রিক্সা কিভাবে আবিষ্কার হল

পৃথিবীর প্রতিটি আবিষ্কারের পেছনে থাকে মজার বিষয় ইতিহাস।আবিষ্কার কালের গর্ভে হারিয়ে যায় আর কিছু আবিষ্কার যুগ থেকে দূরান্তরে চলতেই থাকে। পৃথিবীর ইতিহাসে তেমনই একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার হলো রিক্সা আবিষ্কার। বলা হয়ে থাকে যে, আধুনিক সাইকেলের আদি পিতা হচ্ছে রিক্সা । যতদূর জানা যায়,  সর্বপ্রথম রিক্সা ব্যাবহার শুরু করেছিলেন জাপানিরা।

জাপানিদের হাত ধরেই অতিপ্রয়োজনীয় রিক্সার উদ্ভব ঘটে। ১৮৬৯ সালে জাপানি প্রথম রিক্সার ব্যবহার শুরু হয়েছিল। রিক্সা আবিষ্কারের আরেকটি অন্যতম মজার কারণ হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। শুনতে অনেকটা অবাক হবার মত হলেও রিক্সা আবিষ্কারের অন্তরালে অনেক বড় ভূমিকা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। কেননা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জ্বালানি সংকটের কারণে রিক্সা আবিষ্কার হয়েছিল । যা, সেই সময় জাপানে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।

মজার বিষয় হচ্ছে রিক্সা শব্দটি এসেছে জাপানি শব্দ “জিনরিকি” থেকে । শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায় যে, চীনা ভাষায় জিন শব্দের আভিধানিক অর্থ মানুষ । অন্যদিকে রিকি শব্দটির অর্থ  শক্তি। সবগুলো একত্রিত করলে, এর  অর্থ দাঁড়ায় মানুষের শক্তিতে চালিত বাহন বা যন্ত্র ।

প্রাচীনকালের রিক্সা Rickshaw

Rickshaw

প্রাচীনকালে রিক্সা বর্তমান সময়ের মতো এতটা উন্নত ছিল না। বর্তমান সময়ে রিক্সা তিন চাকার হলেও আদিতে ছিল দুই চাকা বিশিষ্ট । পিছনে  ছিল দুই চাকা আর সামনের চাকার পরিবর্তে একজন মানুষ টেনে নিয়ে যেতে । এই ধরনের রিক্সার নাম দেয়া হয়েছিল হাতে টানা রিক্সা। বর্তমান যুগে এই ধরনের রিক্সার বিলুপ্তি ঘটেলেও পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কোলকাতাতে এখনো এই ধরনের রিক্সার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় । এ ধরনের রিক্সাকে ২০০৫  সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার অমানবিক হিসেবে আখ্যা দেন। তবুও এখনো কলকাতার বিভিন্ন অলিতে-গলিতে হাতে টানা রিকশার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় ।  যা আধুনিক যুগে সত্যিই বিরল । প্রতিবেশী দেশ ভারতে হাতে টানা রিকশা ব্যবহার করা হলেও, আমাদের দেশের রিক্সা বেশ উন্নত।

আধুনিককালের রিক্সা Rickshaw

বাংলাদেশের সাধারণত প্যাডেল চালিত রিক্সা দেখা যায় । বাংলাদেশের রিক্সার ইতিহাস ও বেশ প্রাচীন। ইতিহাসবিদদের মতে, বাংলাদেশের প্রথম রিক্সার ব্যবহার শুরু হয় ১৯১৯ কিংবা  ১৯২০ সালে চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামে রিক্সার জনপ্রিয়তার কারণে পরবর্তীতে সারা বাংলাদেশেই রিক্সার প্রচলন ব্যাপকভাবে শুরু হয়। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে রিক্সা ব্যবহারের লাইসেন্স দেয়া শুরু হয় ১৯৪৪  সাল থেকে,  যা বাংলাদেশের রিক্সা  উৎপাদনে এক অনন্য মাত্রা যোগ করেছিল। বাংলাদেশের ঢাকা শহরকে বলা হয় রিক্সার রাজধানী। ঢাকাকে কেন রিক্সার  রাজধানী বলা হয় তা একটি পরিসংখ্যান দেখলেই  ভালভাবে উপলব্ধি করা যায়। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড এর পরিসংখ্যান মতে, ঢাকা শহরে প্রায়  ৫ লক্ষাধিক রিক্সা হয়েছে । এবং ঢাকার মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ মানুষ যানবাহন হিসেবে রিক্সা ব্যবহার করে থাকে । গিনিস বুক অফ ওয়ার্ল্ড ২০১৫ সালে এটিকে  তাদের বিশ্ব রেকর্ড বইয়ে স্থান দেন  ।

রিক্সার Rickshaw বাহারি রং

রিক্সার আরেকটি আকর্ষণীয় অংশ হচ্ছে তার কার্পেট। তার প্রতি ব্যবহৃত বিভিন্ন পশু পাখির ছবি বা সিনেমার পোস্টার যা বরাবরই মানুষকে আকর্ষণ  করে থাকে ।  বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণ রিকশা অনেকটা বিলুপ্তির পথে । খেটে খাওয়া মানুষের হাতিয়ার হিসেবে রিকশাকে বিবেচনা করা হতো। বর্তমান সময়ে দ্রুত যোগাযোগের ক্ষেত্রে যানবাহন হিসেবে চীনের তৈরি অটোরিক্স, প্যাডেল চালিত রিক্সার জায়গা দখল করেছে । বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে রিক্সা ওতপ্রোতভাবে জড়িত আছে। বিশ্ব সেরা বাঙালি সংস্কৃতি কোনভাবেই পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারেনা।  বাঙালি সংস্কৃতির ইতিহাস লিখতে গেলে রিক্সাকে উপেক্ষা করার কোন পথ নেই । তাই আমাদের সবার উচিত এই আদি যানকে আমাদের অতীত ঐতিহ্য হিসাবে আরও যত্নবান হওয়া। বর্তমানে যারা রিক্সা চালান তাদের আর্থিক উন্নতির দিকে খেয়াল করা।

পরিবেশ বান্ধব রিক্সা Rickshaw ও এর ভবিষ্যৎ 

রিক্সা হল পরিবেশ বান্ধব তাই রিক্সার জন্য শহরে আলাদা রাস্তা তরী করে অবাধে চলাচলের সুযোগ করে দেয়া উচিত। রিক্সা কোন শব্দ দূষণ করে না। দেশের পরিবেশের জন্য ভাল। তাছাড়া অল্প দূরত্বে রিক্সা হতে পারে সেরা নাগরিক যানবাহন। রিক্সা কে আরও আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ করা দরকার।

rickshaw mordernরিক্সা পেইন্টিং দেশ পেরিয়ে বিদেশে ভিডিও] একটি আর্ট

রিক্সার পিছনে পেইন্টিং করা একটি আর্ট। রং তুলি দিয়ে শিল্পী তার নিজের মাধুরী মিশিয়ে সুন্দর করে রঙে ঢঙে সাজিয়ে তোলেন রিকশাকে বাহারি রঙে।

রিকশা একটি ভদ্র এবং মার্জিত ও সৌখিন যানবাহন। সমাজের উচ্চ শ্রেণীর নাগরিক রা সাধারণত রিকশাতে চড়ে। তাই রিকশাকে বাহারি রঙে সাজালে তা হয়ে ওঠে আরো নান্দনিক ও শৈল্পিক।

রিক্সার পিছনের পেইন্টিং করা একটি শিল্প যা একটি পেশা হিসেবে বাংলাদেশে প্রসিদ্ধ।

রিকশা পেইন্টিং করা শিল্প আজ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও সুনাম কুড়িয়েছে।

এটা বাংলাদেশের জন্য একটি ঐতিহ্য পৃথিবীর আর কোন দেশে এমন বাহারি রঙে যানবাহনের পিছনে শৈল্পিক ভাবে শিল্পীর তুলির আঁচড় পড়ে না। বাংলাদেশে অনেক মানুষ রয়েছে এই পেশায়। তাছাড়া রিকশা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ যানবাহন।

বাহারি রঙে রিক্সা ভরে উঠুক রাস্তায় তবে যানবাহনের চলাচলের জন্য সতর্ক থাকতে হবে এবং সড়ক ও পরিবহনের নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে তাহলেই হবে রিক্সা পরিবেশ বান্ধব ও আকর্ষণীয়।