পৃথিবীতে ভূমিকম্প প্রতিদিনের ঘটনা। প্রতিদিন ই ভূমিকম্প হয়। কম মাত্রার আর বেশি মাত্রার এই যা। যখন ৪ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প হয় তখন আমরা সাধারণত বুঝতে পারি না। তবে যখন ৫ এর অধিক মাত্রায় ভূমিকম্প হয় তখন জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ হয়ে যায়। শক্ত বিল্ডিং এর বাড়িতে নিরাপদ থাকলেও কাঁচা বাড়িতে অনিরাপদ । তবে বিজ্ঞানীরা ২০১৫ সালে একটি প্রযুক্তি সম্পন্ন বিছানা তৈরি করেছেন যাকে বলে Earthquake Proof Bed বা ভূমিকম্প নিরোধক বিছানা । এটা মানুষকে ভূমিকম্প থেকে প্রাণ বাঁচাবে।
ভূমিকম্প বর্তমান শতাব্দীর একটি ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম । পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশিবার সংঘটিত হওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম ভূমিকম্প । ভূমিকম্পের সংজ্ঞায় উইকিপিডিয়াটৈ এভাবে বলা হয়েছে যে ,ভূ- অভ্যন্তরে শিলায় পীড়নের জন্য যে শক্তির সঞ্চার ঘটে, সেই শক্তির হঠাৎ মুক্তি ঘটলে ভূপৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয় এরূপ হঠাৎ ও ক্ষনস্থায়ী অবস্থাকে ভূমিকম্প বলে । ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণ হলো :
আগ্নেয়গিরি জনিত কারণ : মাঝে মাঝে আগ্নেওগিরির প্রচন্ড বিস্ফোরণ এবং গলিত লাভা উৎপত্তি হওয়ার কারণেও ভূমিকম্প হতে পারে।
ভূ-পাত জনিত কারণ : পাহাড় বা উঁচু কোনো স্থান থেকে শিলাচ্যুতিজনিত কারনেও ভূমিকম্প হতে পারে ।
ভূ-পৃষ্ঠ জনিত কারণ : আমরা জানি যে ,আমাদের ভূপৃষ্ঠ কতগুলো প্লেটের সমন্বয়ে গঠিত। এসব প্লেটের নিচে থাকে গলিত বিভিন্ন ধরনের পদার্থ । যখন এসব গলিত পদার্থের স্থানে বিচ্যুতি ঘটে তখন প্লেটগুলোরও কিছুটা বিচ্যুতি ঘটে । ফলে কিছুটা মৃদু কম্পন সৃষ্টি হয়, যা ভূমিকম্প রূপে আমাদের নিকট আবির্ভূত হয়।
ভূগর্ভস্থ বাষ্প জনিত কারন : ভূগর্ভস্থে বিভিন্ন কারণে নানা ধরনের বাষ্প বা গ্যাসের সৃষ্টি হয় । একসময় এসবের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে ভূত্বকের নিম্নভাগ থেকে উপরের দিকে ধাক্কা দেয়। ফলে প্রচন্ড কম্পনের সৃষ্টি হয় এবং একে আমরা ভূমিকম্প হিসেবে অনুভব করি ।
ভূমিকম্প নিয়ন্ত্রণে বহু দিন ধরে বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। ভূমিকম্পের গঠন প্রকৃতি এবং ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদের নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । দুঃখজনকভাবে ভূমিকম্পের আগাম বার্তা বা ভূমিকম্প প্রতিরোধে এখনও কোন ধরনের প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়নি । তবে ভূমিকম্প গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অর্থ বিনিয়োগকারী দেশ চীন । বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীতে তথ্যপ্রযুক্তিতে সবার শীর্ষে অবস্থান করছে চীন । সম্প্রতি তারা কৃত্রিম চাঁদ এবং কৃত্রিম সূর্য আবিষ্কার করে পুরো পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে । নিত্যনতুন আবিষ্কারের জন্য চীনের ধর্ম । আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে চীনের একজন বিজ্ঞানী দাবি করেছেন যে তিনি Earthquake Proof Bed ভূমিকম্প নিরোধক বিছানা আবিষ্কার করেছেন । আজ আমরা চীনের আবিষ্কৃত ভূমিকম্প নিরোধক বিছানা সম্পর্কে জানব ।
চীনা বিজ্ঞানী দাবি করেছেন যে , এই শক্তিশালী বিছানা ভূমিকম্প রে ঘর বাড়ি ভেঙে গেলেও তার আবিস্কৃত Earthquake Proof Bed ভূমিকম্প নিরোধক বিছানা মানুষকে সুরক্ষিত রাখবে এবং কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হতে বিরত রাখবে । ভূমিকম্প চলাকালীন এই বিষয়ে অবস্থান করে কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হবে না এবং মানুষ নিরাপদ এবং সুস্থ থাকবে । এই বিছানার আকৃতি অনেকটা কফিনের মতো। যেখানে থাকবে পানির বোতল, অক্সিজেন নেয়ার ব্যবস্থা এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের ব্যবস্থা ।
Earthquake Proof Bed ভূমিকম্প নিরোধক বিছানা কি দিয়ে তৈরি?
Earthquake Proof Bed ভূমিকম্প নিরোধক বিছানা তে থাকবে সক্রিয় সেন্সর ফার্স্ট এইড কিড । যেটা নিজে থেকেই কাজ করবে কোন ধরনের কমান্ড ছাড়াই । ওই চীনা বিজ্ঞানী আরো দাবি করেছেন যে, ভূমিকম্প শুরু হলে বিছানার ফ্রম ভাঁজ হয়ে শুয়ে থাকা মানুষকে ভেতরে নিয়ে যাবে এবং ওপর থেকে একটি স্টিলের ঢাকনা চলে আসবে । যা ঐ ব্যক্তিকে সব ধরনের আঘাত থেকে সুরক্ষিত রাখবে । উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত ওই ব্যক্তি বিছানায় কোন ধরনের আশঙ্কা ছাড়াই নিশ্চিন্তে সময় কাঁটাতে পারবেন ।
চীনের ওই বিজ্ঞানীর মতে তারেই তৈরি এই শক্তিশালী Earthquake Proof Bed ভূমিকম্প নিরোধক বিছানা হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি থেকে রক্ষা করতে পারে । Earthquake Proof Bed ভূমিকম্প নিরোধক বিছানা এই বিছানার আবিষ্কারকের নাম হলেনন উ উয়েনশন তবে কেউ বলেন রাশিয়া থেকে এই প্রযুক্তি উদ্ভাবিত। তিনি জানান যে ২০১০ সালে তিনি এই বিছানার মডেল তৈরি করেছিলেন তবে কিছু সমস্যার কারণে তিনি এর প্রস্তুত কাজ শুরু করতে বেশ দেরি করেন । তার তৈরি এই ভূমিকম্প নিরোধক বিছানা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে পুরা পৃথিবীতে এ বিছানা নিয়ে মানুষের আগ্রহের সৃষ্টি হয় । বিজ্ঞানী উ উয়েনশন জানিয়েছেন যে তিনি খুব তাড়াতাড়ি বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদন শুরু করবেন। এখন দেখার পালা তার আবিষ্কৃত এই বিছানা মানুষ কতটা গ্রহণ করে এবং কতটা গ্রহণযোগ্য হয় ।
Earthquake Proof Bed বা ভূমিকম্প নিরোধক বিছানা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ট্রল ও হয়েছে অনেক কারণ হিসাবে অনেকে বলেন যে, যখন কোন ব্যক্তি Earthquake Proof Bed বা ভূমিকম্প নিরোধক বিছানার বাইরে থাকে তখন কি ভাবে নিজেকে রক্ষা করবে ঐ Earthquake Proof Bed বা ভূমিকম্প নিরোধক বিছানা ? অন্যদিকে রাতে যদি ভূমিকম্প হয় তবে কিভাবে সে ঐ বেড খুঁজে পাবে? এমন সব প্রশ্ন নিয়ে রয়েছে সমালোচনা। তাছাড়া Earthquake Proof Bed বা ভূমিকম্প নিরোধক বিছানা এর দাম ও হাতের নাগালের বাইরে।