Largest Hindu Temple in the world: পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন পাঁচটি মন্দির
মন্দির শব্দটির আভিধানিক অর্থ দেবতার গৃহ। মানুষ ও দেবতাকে একত্রে নিয়ে আসার জন্য হিন্দুত্ববাদের আদর্শ এবং ধর্মসংক্রান্ত প্রতীকগুলির দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত স্থাপনাকে মন্দির বলে । হিন্দুধর্ম পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্ম গুলোর মধ্যে একটি।
আজ আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন পাঁচটি মন্দিরের (Hindu temple) ইতিহাস জানব:
আসামাই মন্দির (Hindu Temple):
একসময় আফগানিস্থানে অনেক হিন্দু বসতি থাকলেও মুজাহিদীন এবং তালেবান গোত্রের অত্যাচারে তা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, গত ৯ বছরে আফগানিস্থানে প্রায় ২০ হাজার হিন্দু পরিবারের বসবাস ছিল এখন সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০
আফগানিস্তানে প্রাচীন মন্দির গুলোর মধ্যে আসামাই মন্দির অন্যতম । ইচ্ছা ও সংকল্পের দেবী আশা এবং তার নামের উপর ভিত্তি করে আফগানিস্থানে একটি পাহাড়ের নাম রাখা হয়েছে আসামাই। জনশ্রুতি আছে যে,এই পাহাড়ে বসবাস করতেন সংকল্পের দেবী আশা ।
প্রায় চার হাজার বছর ধরে আসামাই মন্দিরে একটি দীপশিখা জ্বলছে যাকে আখন্ড জ্যোতি নামে ডাকা হয় । আসামাই মন্দির পৃথিবীর প্রাচীনতম মন্দির গুলোর মধ্যে একটি । যা এখনো দর্শনার্থীদের কাছে একটি আকর্ষণীয় নাম।
বরাহ গুহামন্দির (Hindu Temple):
সপ্ত শতাব্দীতে এই মন্দির তৈরি করা হয়েছিল ভারতের মহাবলীপুরামে। এই মন্দির প্রভু বিষ্ণুর শরণার্থে তৈরি করা হয়েছিল । বরাহ গুহামন্দিরে আছে, একটি লক্ষী, দুর্গা এবং অপরটি বিষ্ণুর বহুরূপী অবতারের । এই Hindu temple
মন্দির সনাতন যুগে পাথর কিভাবে খুঁদে খুঁদে তৈরি করা হয়েছিল তার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। এই মন্দিরের কারুকার্য সবাইকে আকর্ষিত করেন । তাছাড়া মন্দিরের স্থাপত্য শিল্পে ও আছে ভিন্নতা। যা অন্যান্য মন্দির থেকে বরাহ গুহামন্দির কে আলাদা করেছে। হিন্দু ধর্মালম্বীদের কাছে এটি একটি বিশেষ পবিত্র জায়গা হিসেবে বিবেচিত হয় ।
দেন্দুরের মন্দির (Hindu Temple):
প্রাচীন এই মন্দিরটি খ্রিস্টপূর্ব পনেরো সালে রোমান সম্রাট সিজারের আমলে মিশরে তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৬৫ সালে এই মন্দির সম্পূর্ণভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে দেয়া হয় এবং বর্তমানে এটি মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্টে দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। দেবী আইসিস এবং আসিরিসকে উৎসর্গ করে এই মন্দির তৈরি করা হয়েছিল। এই মন্দির Hindu temple
দর্শনার্থীদের কাছে অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে ।প্রতিবছর প্রায় কয়েক লক্ষ দর্শনার্থী যুক্তরাষ্ট্রে দেখতে যান প্রাচীন এই প্রাচীন মন্দিরটি। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই মন্দিরকে একটি বিশেষ সম্মানের চোখে দেখা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে আসার পূর্বে এই মন্দিরের অবস্থান ছিল মিশরের নীল নদের তীরে।
ওয়াট ফ্রা সি সানফেত মন্দির (Hindu Temple):
এই মন্দির তৈরি করা হয়েছিল ১৫ শতকে থাইল্যান্ডে । সাধারণত থাইল্যান্ডের মন্দিরগুলোতে ভিক্ষুকদের বসবাসের জন্য আলাদা জায়গা থাকত কিন্তু এই মন্দিরে এমন কোনো উপায় ছিল না । এই মন্দির মূলত তৈরি করা হয়েছিল রাজকীয় কার্য সম্পাদনের জন্য। যেমন রাজ্যের মূল্যবান সম্পদ সঞ্চিত রাখতে কিংবা রাজকীয় গোপন বিষয় সম্পাদনের জন্য । ১৪৯১ সালে রাজা দ্বিতীয় রামাথিবোড়ি তার পরিবারের সদস্যদের স্মৃতি রক্ষার্থে সেখানে আরো দুটি ছেদি তৈরি করেন ।
উল্লেখ্য এখানে ছেদি তৈরীর বিষয়টা হলো মৃত কারো শরীরের সৎকার করা হলে এই মন্দিরে নতুন করে একটি ছেদি তৈরি করা হতো।কারণ শরীর পুড়িয়ে দেবার পর শরীরের ছাই এই ছেদির মধ্যে সংরক্ষণ করা হতো। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১৭৬৭ সালে বর্মিজরা মন্দিরে আক্রমণ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায় এবং মন্দিরের পুরোহিত সহ অনেককে হত্যা করে । এই মন্দির থাইল্যন্ডে বসবাসকারী হিন্দুদের জন্য সবচেয়ে সম্মানিত মন্দিরগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত করা হয়ে থাকে। প্রতিদিন হাজারো হিন্দু এই মন্দিরে পূজা করে থাকেন ।
দ্বারকাধীশ মন্দির:
প্রাচীন এই মন্দিরের অবস্থান ভারতের আর্নত নামক শহরের রাজধানীতে। কথিত আছে যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কিছুকাল আর্নত শহরকে তার রাজধানী হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন । হিন্দু ধর্মালম্বীদের কাছে এই স্থানটি তীর্থস্থান হিসেবে বিশেষভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। এই মন্দিরে আছে বিষ্ণু রুপি একটি অবতারের মূর্তি।
যার হাতের সংখ্যা চারটি। হিন্দু ধর্ম মতে মনে করা হয় যে, বিষ্ণুর একটি অবতর হচ্ছে কৃষ্ণ । আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন এই মন্দিরটিতে প্রবেশদ্বার আছে দুইটি । প্রথম প্রবেশদ্বারের নাম মোক্ষদার এবং অপরটির নাম স্বর্গদ্বার।
বিশ্বের সম্মানের সহিত এখনো অনেক হিন্দু এই মন্দিরটিতে পূজা-পার্বণ করে থাকেন।
হিন্দু ধর্ম কত বছর পুরনো
হিন্দু ধর্ম কত বছর পুরনো তা নিয়ে মতান্তর থাকলেও হিন্দু ধর্মকে
পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয় । এর উৎপত্তি ও বিকাশ প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে আধুনিক যুগ পর্যন্ত বিস্তৃত। অন্যান্য প্রাচীন ধর্ম যেমন জরাস্তুত্র ধর্ম, ইহুদি ধর্ম এবং প্রাচীন মিশরীয় ধর্মগুলোও প্রাচীনতম ধর্মগুলোর মধ্যে রয়েছে, কিন্তু হিন্দু ধর্মের বিকাশ এবং প্রবহমানতার নিরিখে এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্ম বলে স্বীকৃত । হিন্দু ধর্মের উৎপত্তি সময়কাল নিয়ে মতভেদ বর্তমানেও প্রচলিত। মুলত যিশুর জন্মের ৩০০০ বছরের আশেপাশের সময়কালকে হিন্দু ধর্মের উৎপত্তি কাল হিসাবে ধরে নেয়া হয়ে থাকে।
কিন্তু কিছু আধুনিক দার্শনিক অবশ্য যিশুর জন্মের ৩০০০ বছর সময়কালকেই হিন্দু ধর্মের উৎপত্তি কাল হিসাবে দাবী করাকে জোরাল ভাবে আপত্তি করে থাকেন। তাদের মতে হিন্দু ধর্মের উৎপত্তি কাল যিশুর জন্মের ৩৫০০ থেকে ৫০০০ আগের সময়কালের ভেতরে। যিশুর জন্মের ৫০০০ বছর আগের সময়কালেই ইন্ধুস উপত্যকায় মানব সভ্যতার অস্তিত্ব পাওয়া যায় । হিন্দু নামটি পরবর্তীতে আসে । এর আদি নাম ছিলো সনাতন আর আমি মানব ,মনু ও শতরূপা । এত প্রাচীণ হওয়া সত্বেও সবচেয়ে বেশি অনুসারীর জায়গা দখল করতে পারেনি হিন্দু ধর্মে । সবচেয়ে বেশি অনুসারী রয়েছে খ্রিস্টধর্মের । যা প্রায় ২.৪ বিলিয়ন । এর পরেই আছে ইসলাম । যা প্রায় ১.৯ বিলিয়ন । তারপরেই রয়েছে হিন্দুধর্ম ।
১.২ বিলিয়ন অনুসারী নিয়ে পৃথিবীর তৃতীয় স্থান দখল করে নিয়েছে । ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দুদের প্রধান স্থান থাকলেও সারাদেশ ব্যাপি এর অনুসারীরা ছড়িয়ে রয়েছে । হিন্দু ধর্মের ইতিহাসকে বিভিন্ন পর্বে ভাগ করা যায়, যার মধ্যে প্রধান পর্বগুলো হলো প্রাচীন বৈদিক যুগ, মহাকাব্য যুগ, এবং পরবর্তী পুরাণ যুগ ।
প্রাচীন বৈদিক যুগ :
হিন্দু ধর্মের ইতিহাসের প্রাচীনতম পর্ব হল বৈদিক যুগ। এই সময়কালেই রচিত হয়েছিল বৈদিক সাহিত্য, যা হিন্দু ধর্মের পবিত্র গ্রন্থসমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ, এবং অথর্ববেদ—এই চারটি বেদ এই সময়ের মূল ধর্মগ্রন্থ। বৈদিক যুগের সমাজ ছিল মূলত কৃষি এবং পশুপালনকেন্দ্রিক, যেখানে আর্যরা প্রাধান্য বিস্তার করেছিল। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানগুলি ছিল যজ্ঞকেন্দ্রিক, এবং বিভিন্ন দেবতার উপাসনা করা হত, যেমন ইন্দ্র, অগ্নি, বরুণ ইত্যাদি।
বৈদিক যুগে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এবং দর্শনের পাশাপাশি সমাজের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক ভিত্তি গড়ে ওঠে। ঋষিরা এই সময়কালে বিভিন্ন মন্ত্র এবং স্তোত্র রচনা করেছিলেন, যা পরবর্তী কালে হিন্দু ধর্মের মূল ভিত্তি হয়ে ওঠে। বৈদিক ধর্মের মূল লক্ষ্য ছিল সৃষ্টিকর্তা এবং প্রকৃতির শক্তির প্রতি শ্রদ্ধা এবং উপাসনা করা। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মানুষের মনোবল এবং দৈবশক্তির মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করা হত।
মহাকাব্য যুগ (প্রায় ৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ – ২০০ খ্রিস্টাব্দ)
মহাকাব্য যুগে রচিত হয়েছিল মহাভারত এবং রামায়ণ, যা হিন্দু ধর্মের দুটি মহান মহাকাব্য। এই দুটি মহাকাব্য শুধু ধর্মীয় গ্রন্থই নয়, বরং সমাজের নৈতিক এবং সাংস্কৃতিক আদর্শের প্রতীক। মহাভারত এবং রামায়ণ উভয়েই ধর্ম, ন্যায়, এবং কর্তব্যের শিক্ষা প্রদান করে, যা আজও হিন্দু ধর্মের অনুসারীদের জন্য প্রাসঙ্গিক।
মহাকাব্য যুগে ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং বৈষ্ণব ধর্মের বিকাশ ঘটে। ব্রাহ্মণ্যবাদে ব্রাহ্মণদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং বৈষ্ণব ধর্মে বিষ্ণুর উপাসনা বিশেষ গুরুত্ব পায়। এই সময়কালেই ভক্তি আন্দোলনের সূচনা হয়, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে ধর্মীয় চেতনা জাগ্রত করে। মহাকাব্য যুগের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ধর্মীয় এবং সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় সাধন, যা হিন্দু সমাজের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
পরবর্তী পুরাণ যুগ (প্রায় ২০০ খ্রিস্টাব্দ – ১৬০০ খ্রিস্টাব্দ)
পুরাণ যুগে হিন্দু ধর্মের আরও বিকাশ ঘটে, এবং বিভিন্ন পুরাণ রচিত হয়। এই পুরাণগুলো হিন্দু ধর্মের দেব-দেবীদের কাহিনী, সৃষ্টি, এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করে। মহাপুরাণ এবং উপপুরাণগুলোতে হিন্দু ধর্মের দেব-দেবীদের জীবনী, ধর্মীয় আচার, এবং তীর্থস্থানগুলোর বর্ণনা পাওয়া যায়।
এই সময়কালে শৈব, শক্তি গাণপত্য , বৈষ্ণব , সৌর মতের বিকাশ ঘটে। এছাড়াও, তান্ত্রিক প্রথার উদ্ভব ঘটে, যা মূলত তন্ত্র এবং মন্ত্রের মাধ্যমে দেব-দেবীর উপাসনা কেন্দ্রিক। প্রতিটি শাখাতেই তন্ত্রের ছোয়া রয়েছে । এটি একটি গুরুমুখি বিদ্যা । তাই খুব বেশি প্রকাশ্যে আসেনি এটি । অন্য কোনদিন এ নি য় কথা বলব ।
পুরাণ যুগে হিন্দু সমাজে মূর্তি পূজা প্রাধান্য পায় বেশি । আর সেই সাথে তৈরি হয় আরও নানা মতাদর্শ । এই সময়কালে হিন্দু ধর্মের নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়, যা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের জীবনে প্রভাব বিস্তার করে। সবশেষে বলতে হয়, সনাতন তথা হিন্দু ধর্মের ইতিহাস আতি প্রাচীন ও বিচিত্র ।
More Stories
পুন্ড্রবর্ধন: ঐতিহাসিক রহস্যের এক অধ্যায়
শেখ মুজিবুর রহমান ধ্বংসযজ্ঞ পরিদর্শন করে কি বলেছিলেন
Bangladesh Genocide became the most heinous crime by Pakistani Army in 1971 documented by World Record