উচ্চরক্তচাপ (high blood pressure) এক নীরব ঘাতক ব্যাধি। পৃথিবীতে প্রায় এক মিলিয়ন লোক উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে। প্রতি বছর প্রায় 7 দশমিক এক মিলিয়ন লোক উচ্চ রক্তচাপের কারণে মারা যাচ্ছে। এখনো শতকরা 30 ভাগ লোক জানে না যে তার উচ্চ রক্তচাপ আছে। এমন কি শতকরা 40 ভাগ উচ্চ রক্তচাপের রোগী চিকিৎসা পাচ্ছে না।
উচ্চ রক্তচাপ (high blood pressure) কখন বলি?
একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির রক্তচাপ 140/90 তার বেশি হলে উক্ত ব্যক্তিত্ব রক্তচাপকে উচ্চ রক্তচাপ আছে বলে বিবেচিত হয়।
উচ্চ রক্তচাপে কি ক্ষতি হয়?
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের হৃদরোগের সম্ভাবনা দ্বিগুণ। এই রোগীদের শতকরা 11 জন মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশন ও ডায়াবেটিস রোগে ভোগে, রেটিনোপ্যাথি নামক চোখের রোগে ভোগে। শতকরা 13 জন উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা নেফ্রোপ্যাথি রোগে আক্রান্ত হয় শতকরা 13 ভাগ রোগী।
উচ্চ রক্তচাপ কাদের হয় এবং কেন হয়
উচ্চ রক্তচাপ এর সঠিক কারণ জানা যায়নি তবে বংশগত কারণে শতকরা 95 জনের রোগ হয়। শতকরা ৫ জন কিডনি রোগ; হার্টের জন্মগত সমস্যা ইত্যাদি রোগে উচ্চ রক্তচাপ হয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা কি?
খাদ্যাভ্যাস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পূর্বশর্ত। দৈনিক ন্যূনতম 30 মিনিট হাঁটা উচিত। ফল সবজি ও চর্বিমুক্ত খাবার খুবই উপকারী। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনে ৮ থেকে ১৪ মিলিমিটার রক্তচাপ কমে। এক সপ্তাহ দৈনিক 30 মিনিট হাটলে 5 থেকে 10 মিলিমিটার রক্তচাপ কমে। দৈনিক অতিরিক্ত লবণ বর্জনের ফলে 8 মিলিমিটার রক্তচাপ কমবে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ খাদ্যাভ্যাস ও নিয়ন্ত্রণ না হয় তাদের সঠিক ডাক্তারের নির্দেশের চিকিৎসা করাতে হবে।
যাদের রক্তচাপ (blood pressure) এখনো নিয়ন্ত্রণ করা যায় নাই অথবা জটিলতা দেখা দিয়েছে তাদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। উচ্চরক্তচাপের রোগীদের নিয়মিত চেকআপ করা উচিত। রক্তচাপ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত মাসে একবার রক্তচাপ মাপা উচিত। জটিলতা থাকলে সপ্তাহে একবার রক্তচাপ দেখা উচিত। রক্তের ক্রিয়েটিনিন প্রোটিন পরীক্ষা করা উচিত। এছাড়া বুকের এক্সরে, ইসিজি, পরীক্ষা করে হৃদ রোগ নিরূপণ করা। উচিত রক্তচাপ এবং কাঙ্ক্ষিত রক্তচাপ কত হওয়া উচিত সে সম্পর্কে ধারণা দেওয়া দরকার রোগীকে। ওজন, খাদ্য ও ব্যায়ামের উপকারিতা কি জানানো দরকার। রোগীকে বোঝাতে হবে বিনা খরচে কিভাবে রক্তচাপ কমানো যায়। আর বুঝতে হবে নিয়মিত ওষুধ না খেলে কী কী জটিলতা হতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে কি পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হতে পারে এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
এখন দেখা যাক শাস্ত্র কি বলে
তাকে নিরামিষাশী (vegetarian) বলা হয়েছে যিনি মাছ মাংস ডিম কিছুই আহার করেন না। বৈদিক দৃষ্টিতে নিরামিষ মানুষের জন্য একটি উন্নত স্বাভাবিক খাদ্য যা মানব জীবনকে সার্থক ভাবে গড়ে তোলে। মানবদেহে মাছ মাংসের প্রভাব যে কত মারাত্মক তা চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিসংখান থেকে জানা যায়। রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে নিরামিষ খাবারের ক্ষমতা যে কত বেশি তা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে নিঃসন্দেহে প্রমাণিত করেছে। ১৯৬১ সালের জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ঘোষণা করেছে 90 থেকে 97 শতাংশ নিরামিষ আহারের দ্বারা হৃদরোগ নিরাময় করা যেতে পারে। ১৯৭৭ সালে ইন্টার সোসাইটি কমিশন ফর হার্ট ডিজিজ এর সমীক্ষায় জানা যায় তামাক ও মাদকের পর ই, মাংস হচ্ছে আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া উন্নত দেশে অধিকাংশ মানুষ অকাল মৃত্যুর কারণ।
১৯৭৭ সালে সমীক্ষায় নরওয়ে জার্নাল অফ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনে বলা হয়েছে ২৩ টি দেশের ২১৪ জন বৈজ্ঞানিক স্বীকার করেছেন যে, মাছ, মাংস থেকে প্রাপ্ত ফ্যাট ও কোলেস্টেরল হচ্ছে মানবদেহের হৃদরোগের (high blood pressure) অন্যতম কারণ। নিয়মিত আমিষ আহার বর্জন করলে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। স্বাস্থ্য সম্মত আহার করা ও জীবনযাপন করা এ ঘাতক ব্যাধি থেকে বাঁচার অন্যতম উপায়।
লেখকঃ ডাঃ উৎপল কুমার রায়
More Stories
সুন্দরবন কেন এতো উপকারী
ভূমিকম্প প্রতিরোধে করণীয়
প্লেগ রোগের উৎপত্তি কোথায়: ইতিহাসের ভয়াবহ ব্লাক ডেথ প্লেগ মহামারী