Colorgeo.com

Disaster and Earth Science

টাইম ম্যানেজমেন্ট এর জন্য যা যা করা উচিত

Spread the love

টাইম ম্যানেজমেন্ট এর জন্য যা যা করা উচিত

মোঃ রাসেল সরকার
—————————-
“সময় পাই না” কিংবা“ সময় পাচ্ছি না” টাইম নাই কথাটা আমরা এখন খুব বেশী বলে এবং শুনে থাকি।আমরা অনেকেই বলে থাকি কিভাবে সময় চলে যাচ্ছে বুঝতেই পারছি না। অতি মূল্যবান সময়টাকে কাজে লাগানোর কিছু টিপস এন্ড ট্রিকস শেয়ার করছি।

এগুলো কোনই কাজে দিবে না,যদি না প্রবল ইচ্ছাশক্তি নিয়ে নিজের জীবনে প্রয়োগ করার চেষ্টা করি।শুধু শুধু এগুলো পড়ে ঈমান বাড়ালে হবে না,আমল ও করতে হবে।

টাইম ম্যানেজমেন্টের জন্য To do লিস্ট তৈরি করা:

টাইম ম্যানেজমেন্টের জন্য প্রতিদিন ঘুমানোর আগে আগামীকালের জন্য একটা কাজের তালিকা তৈরী করে রাখা।একদম নির্দিষ্ট করে কোন সময়ে কতক্ষন কোন কাজটা করবো।পড়াশুনার ক্ষেত্রে একদম টপিক ধরে ধরে লিখব।ঘুমানোর আগে আগামী দিনের কাজগুলো লিখে ফেললে ব্রেইন কাজের ব্যাপারে আগে থেকেই রেডি হয়ে যায়।

আর প্রত্যেকটি কাজের পর লিখা কাজটি কেটে দিবো। কাজটি করে কেটে দেবার যে পৈশাচিক আনন্দ এটা আমাদের পরবর্তী কাজে অনুপ্রেরনা হিসেবে কাজ করে।আমাদের কাজগুলোকে ডেইলি থেকে উইকলি শিডিউল এ ভাগ করে নিলে আলসেমি আসার সুযোগ পাবে না।আর আজকের কিছু বাকি কাজ আগামীকাল বেশী করে পুষিয়ে নিবো,এরকম চিন্তা আশেপাশে ঘেষতেও দিবো না।

Urgent, Important and Necessary এর মধ্যে পার্থক্য করা শিখতে হবে। যেমন: আগামীকাল আমার ডিপার্টমেন্ট এর পরীক্ষা থাকলে কাম্পাসে যতবড় কনসার্ট ই থাকুক না কেন বা আমার ক্রাশ এর বার্থডে থাকলে ও আমাকে তখন পড়তে হবে।প্রচলিত একটি ফালতু কথা হলো হলো,মন যা চায় তাই করো বরং হওয়া উচিৎ যেটা করা দরকার সেটা ই করো।

টু-ডু লিস্ট এ যা লিখবো তা দাঁতে দাঁত চেপে করবো।আজকে একটু অন্যথা করি,কাল ঠিক করে নিবো এমন ভাববো না।আমরা ফোনে ও টু-ডু লিস্ট লিখতে পারি ফোনের ক্যালেনডার এপ বা প্লে স্টোর থেকে গুগল ক্যালেনডার বা রিলেটেড এপ নামিয়ে নিয়ে।

টাইম ম্যানেজ করো ভোরে ঘুম থেকে উঠা:

রেঁনেসাসের লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি থেকে শুরু করে আজকের ওবামা,ওয়ারেন বাফেট,জেফ বিজোস,স্টিভ জবস,বিল গেটস,রিচার্ড ব্রানসন,ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো – বিশ্বখ্যাত ভোরের পাখিদের সবার নাম লিখতে গেলে এই লেখাতে ধরবে না।

এ্যাপল এর বর্তমান সিইও টিম কুক, পেপসির সিইও ইন্দ্রা নূয়েই, ইউনিলিভারের সিইও পল পোলম্যান–সবাই ভোর ৪টার আগে বা সাড়ে চারটার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে পড়েন।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুযায়ী,এই সময়টা হল দিনের সবচেয়ে ‘প্রোডাক্টিভ’ সময়।কারণ,এই সময়টিতে বাইরের সমস্যা ও কোলাহল পুরোপুরি বন্ধ থাকে।

মিরাকেল মর্নিং বইয়ের লেখক হাল ইরোল্ড এর মতে,ঘুম থেকে উঠে আমাদের পার্থিব চিন্তা শুরু করার আগে অবশ্যই কিছুক্ষণ ধ্যান বা প্রার্থণা করা উচি‌ৎ।এতে করে আমাদের মন অনেক শান্ত থাকে।জীবনের যা অর্জন, তার জন্য যদি আমরা দিনের শুরুতেই সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই–তবে মন অনেক ভালো থাকে,সেই সাথে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস নিয়ে দিন শুরু করা যায়।

আমাদের জন্য সকালের নাস্তা টা অনেক জরুরী।ঘুম থেকে দেরি করে উঠার কারণে আমরা প্রায় ই সকালের নাস্তা না করে ই ক্লাসে বা কাজে যাই এবং রীতিমতো ঝিমাই,কাজ যতোটা ভালো হতে পারতো ততো টা হয় না।

সকালে পেট পুরে নাস্তা আমাদের সারাদিন এনার্জি দেয় এবং মনকে চাঙ্গা রাখে।

সকালে ঘুম থেকে উঠার জন্য অবশ্যই রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়া উচিৎ।সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে এলার্ম হাতের কাছে না রেখে,যেন উঠে যেয়ে বন্ধ করতে হয় এমন জায়গায় রাখা উচিৎ।এছাড়া ও ব্যাবহার করতে পারি ফাইভ সেকেন্ড রুল।

টাইম ম্যানেজমেন্ট and ফাইভ সেকেন্ড রুল:

“দ্যা ফাইফ সেকেন্ড রুল” বইয়ের লেখিকা মেল রবিন্স এর মতে,যদি কোনও কাজ করার কথা মনে আসে,তবে সেটা ৫ সেকেন্ড এর মধ্যে শুরু করতে না পারলে আপনার মস্তিষ্ক আপনাকে সেই কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবে।মনের মধ্যে নানান রকম অজুহাত তৈরী হয়।

লেখিকা বলেন, “যদি কোনও জরুরী কাজের কথা মনে হয়,যেটা একটু কঠিন, আপনাকে ৫-৪-৩-২-১ গুনে সাথে সাথে কাজটি করার উদ্দেশ্যে জায়গা ছেড়ে নড়তে হবে–না হলে আপনার মস্তিষ্ক বেশিরভাগ সময়েই আপনাকে থামিয়ে দেবে”।

যখনই কোনও প্রয়োজনীয় কাজের কথা মনে পড়বে বা কোনও প্রয়োজনীয় কাজ করার সময় আসবে–তখন ৫ থেকে এক পর্যন্ত গুনবো এবং ১ গোনার সাথে সাথে কাজ শুরু করে দিবো।

যেমন:সকালে এ্যালার্ম শোনার সাথেসাথেই ৫ থেকে ১ গুনবো এবং ১ গোনার সাথেসাথে বিছানা থেকে উঠে পড়বো।এক সেকেন্ডও দেরি করবো না।মেল রবিন্স লিখেছেন,“নিজেকে দিয়ে ছোট ছোট এ্যাকশন নেয়াতে নেয়াতে এর একটা চেইন রিএ্যাকশন সৃষ্টি হবে,আপনার আত্মবিশ্বাস ও প্রোডাক্টিভিটি বাড়তে থাকবে”।

টাইম ম্যানেজমেন্টের জন্য Pomodoro টেকনিক:

পমোডোরো টেকনিক একটি টাইম ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি যা ১৯৮০ এর দশকের শেষদিকে ফ্রান্সেসকো সিরিলো উদ্ভাবন করেন।এই পদ্ধতিতে একটি টাইমার ব্যবহার করে যে কোন কাজকে ছোট ছোট সময়ের ভগ্নাংশে ভাগ করে কাজটি সম্পন্ন করা হয়।সাধারনত প্রতি সময়ের ভগ্নাংশের দৈর্ঘ্য ২৫ মিনিট হয় এবং প্রতি ২৫ মিনিট পর পর ছোট বিরতি থাকে।

সময়ের এই প্রতি ভগ্নাংশকে “পমোডরো” বলে যা ইতালীয় এক শব্দ যার অর্থ টমেটো।[৩]এই পদ্ধতিতে একটা ঘড়িতে ২৫ মিনিট এর জন্য এলার্ম সেট করে পড়তে বা কোন কাজ করতে বসবো।একদম পুলসিরাত

পুলের উপর দাড়ায় আছি মনে করো,পড়ে গেলেই জাহান্নামে।দুনিয়া উল্টায় যাক,দেখবো না।২৫ মিনিট পর ৫ মিনিটের ব্রেক নিবো।(একদম ৫ মিনিটের বেশি নয়!)। এরপর আরেকটা Pomodoro!
প্লে স্টোর থেকে Pomodoro বা রিলেটেড এপ নামিয়েও এটা করতে পারি।

Extras :

১.”না” বলা শিখতে হবে।অসময়ে বন্ধুরা ডাকলে মাথা ব্যাথা,পেট খারাপ এসব বলে নিজের কাজে ফোকাস থাকতে হবে।
২.খুব বেশি কাজ একসাথে না করে কাজকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিতে হবে।
৩.সব ধরনের Time waster থেকে দূরে থাকতে হবে।
৪.সব কাজ নিজে না করে,কিছু কাজ অন্যকে দিয়ে করিয়ে নিতে হবে।
৫.নিজের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে হবে।

প্রতিদিন ৩০ মিনিট/১ ঘন্টা Personal/ Spritual development এর জন্য রাখবো।সেটা হতে পারে ধর্মীয়, মোটিভেশনাল,সেল্ফ ডেভেলপমেন্ট বই পড়া বা মেডিটেশন।

টাইম ম্যানেজমেন্টের জন্য রুটিনের একঘেয়েমিতা কাটাতে কিছু বিনোদনের ব্যবস্থা রাখবো।ঠিকমত রুটিন পালন করতে পারলে পুরস্কার হিসেবে নিজেকে “ট্রিট” দিবো, কিছু গিফট দিবো বা কোথাও ঘুরতে যাবো।এটা অনেক কাজে দেয়,প্রমাণীত।

আবার রুটিন ভঙ্গ করলে শাস্তি হিসেবে ওইবেলা না খেয়ে থাকা এবং কিছু টাকা সদকা করতে পারি। এতে শারীরিক এবং মানসিক উভয় দিকেই কস্ট হবে।নিজের উপর একটু কষ্টও চাপিয়ে নেওয়া হলেও-রুটিন ভঙ্গ করার শাস্তি হিসেবে এটা মেনে নিন!

সময় কি?

টাইম ম্যানেজমেন্ট
টাইম ম্যানেজমেন্ট

মোঃ রাসেল সরকার
২য় বর্ষ,ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগ,
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ।
প্রকাশিত: বর্ণালী মাসিক ম্যাগাজিন (১ম সংখ্যা)