Colorgeo

Classroom for Geology and Disaster

ব্লু ইকোনমি বা Blue Economy বা সুনীল অর্থনীতি ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা অগ্রগতি

Spread the love

ব্লু ইকোনমি বা Blue Economy বা সুনীল অর্থনীতি ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা অগ্রগতি

ব্লু ইকোনমি (Blue Economy) বা সুনীল অর্থনীতি বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও অগ্রগতি শীর্ষক বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট এর তত্ত্বাবধানে নিম্নোক্ত আর্টিকেলটি প্রস্তুত করা হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে অবদান ও গুরুত্ব প্রসঙ্গে বলা যায় 2050 সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা হবে প্রায় 900 কোটি। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর খাবার জোগান দিতে তখন সমুদ্রের রিসোর্স এর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে কারণ সমুদ্রে বিপুল পরিমাণ সম্পদ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি এবং বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। সেই লক্ষ্যে জাতিসংঘ 2015 সাল পরবর্তী যে টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তার মূল কথা হলো ব্লু ইকোনমি।

বাংলাদেশ জাতিসংঘের সেই কর্মসূচির সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছে। ব্লু ইকোনমির (Blue Economy) মূল ভিত্তি হচ্ছে টেকসই সমুদ্র নীতিমালা। বিশ্ব অর্থনীতিতে সমুদ্র অর্থনীতি বহুবিধ ভাবে অবদান রেখে চলেছে। কারণ সমুদ্রের গভীরতায় রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা । বছরব্যাপী 3 থেকে 5 ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে। সমুদ্রকে ঘিরে বিশ্বের 430 কোটি মানুষের প্রায় 15 ভাগ প্রোটিনের যোগান দিচ্ছে সামুদ্রিক মাছ উদ্ভিদ ও প্রাণী। পার্শ্ববর্তী দেশ জাপানের সামুদ্রিক প্রোটিনের অধিকাংশই সমুদ্র সীমানা থেকে আহরিত এবং সমুদ্রের সম্পদের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। তেমনি পৃথিবীর 30 ভাগ গ্যাস ও জ্বালানি তেল সরবরাহ হচ্ছে । সমুদ্রতলের বিভিন্ন গ্যাস ও তেল ক্ষেত্র থেকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও যেখানে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। 

সমগ্র বিশ্বে ক্রমশ ব্লু ইকোনমি (Blue Economy) জনপ্রিয় হচ্ছে। বিগত বছরগুলোতে যতগুলো আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়েছে তার সবগুলোতেই ব্লু ইকোনমি ছিল আলোচনার কেন্দ্রে। 2012 তে রিও+ 20, সমুদ্র সম্মেলন, 2013 সালে বালিতে অনুষ্ঠিত খাদ্য নিরাপত্তা সম্মেলনএর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আন্তর্জাতিক সহায়তা ও উন্নয়ন সংস্থা (OeCd), পরিবেশ কর্মসূচি (UNEP), বিশ্ব ব্যাংক, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO), ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (EU) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার উন্নয়ন কৌশলেও থাকছে ব্লু ইকোনমি। 

Blue Economy
Copyright: This figure was uploaded by M. G. Hussain

আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি ছোট বড় দেশ ব্লু-ইকোনমি নির্ভর উন্নয়ন কৌশল প্রণয়ন করছে। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় অর্থনীতির সিংহভাগ সমুদ্র নির্ভর। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটি এমন কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যে তার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা গেলে সমুদ্র থেকে আহরিত সম্পদের মূল্যমান জাতীয় বাজেটের দশগুণ হবে।

জাকার্তা পোস্ট এ প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলা হয়েছে ব্লু ইকোনমি বাস্তবায়ন কর্মসূচিতে 77,703 টি কর্মসংস্থান তৈরি করার পাশাপাশি প্রতিবছর 114.18 মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করবে যুক্তরাষ্ট্র। 1974 সালে তাদের মোট দেশজ উৎপাদনে (GDP) প্রথমেই রয়েছে ব্লু ইকোনমির অবদান। বর্তমান সময়ে কিছু দেশের জাতীয় আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক ক্ষেত্রে সমুদ্র ভিত্তিক অর্থনৈতিক পরিমাপ নিম্নে দেয়া হলঃ

অস্ট্রেলিয়া বর্তমান সময়ের জিডিপিতে ব্লু ইকোনমির অবদান 47.2 বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার যা তাদের মোট জিডিপির 3 শতাংশের বেশি ।অস্ট্রেলিয়া ইতিমধ্যে 2015 থেকে 2019 সাল পর্যন্ত ব্লু ইকোনমি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সেই হিসেব অনুযায়ী 2025 সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে অবদান হবে 100 বিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান ডলার।

গত 5 বছর সময়ে চীনের অর্থনীতিতে 1.2 ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের ইন্ড্রাস্ট্রিতে চীনের জিডিপি 10 শতাংশ এবং বলা হচ্ছে যে 2035 সাল নাগাদ জিডিপিতে অবদান হবে 15%।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাৎসরিক GVA  (Gross Value-added) 500 বিলিয়ন ইউরো এবং 5 মিলিয়ন লোকের কর্মসংস্থান তৈরি করেছে।

আয়ারল্যান্ড 2016 সালে মোট ভিজিএ তে (VGA) ব্লু ইকোনমির অবদান ছিল 3.37 বিলিয়ন ইউরো যা জিডিপির 1 দশমিক 7 শতাংশ।

মরিশাস 2012 থেকে 2014 সাল সময়ে জিডিপিতে ব্লু-ইকোনমির অবদান ছিল গড়ে দশ শতাংশ।

যুক্তরাষ্ট্র 2013 সালে অর্থনীতিতে অবদান ছিল 359 মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা তাদের মোট জিডিপির 2 শতাংশ এবং তিন মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছিল।

বৈশ্বিক সমুদ্র অর্থনীতি থেকে আউটপুট সঠিকভাবে পরিমাপ করার জন্য বর্তমান সময়ে বিভিন্ন ধরনের হিসাব নিকাশ করা হচ্ছে। গ্লোবাল ওশান কমিশন এর প্রাক্কলন অনুযায়ী, উপকূলীয় উৎপাদিত সম্পদের মোট বাজারমূল্য 3.00 ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মোট রাজস্ব এর পরিমাণ প্রাক্কলন করা হয়েছে 2.6 ট্রিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমির (Blue Economy) সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র সমূহঃ

বাংলাদেশের ব্লু ইকোনমি তে (Blue Economy)  অর্থনৈতিক খাত যেমন মৎস্য আহরণ খাতে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ, মৎস্য চাষ ও প্রক্রিয়াকরণ।

জাহাজ চলাচল ও জাহাজ ব্যবস্থাপনা

সামগ্রিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সহায়ক পরিসেবা

জাহাজ নির্মাণ এবং মেরামত

জাহাজের স্বত্বাধিকার এবং পরিচালনা প্রতিনিধিত্ব এবং দালালি ব্যবস্থাপনা

মাছ ধরার নৌকা বন্দর প্রতিনিধিত্ব

বন্দর বাণিজ্য

জাহাজ সরবরাহ

কন্টেইনার শিপিং পরিসেবা

খালাসী রোল অন রোল অফ

মালবাহী জাহাজ ফরোয়ার্ড নিরাপত্তা ও প্রশিক্ষণ

সামুদ্রিক জৈবপ্রযুক্তি তে ঔষধ পত্র ও রাসায়নিক দ্রব্য

শৈবাল খাদ্য প্রস্তুত

খনিজ সম্পদ তেল ও গ্যাস খনি অনুসন্ধান

সামুদ্রিক নবায়নযোগ্য শক্তি যেমন বায়ু শিল্প উৎপাদন

বায়ু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন

সমুদ্রের ঢেউ হতে বিদ্যুৎ উৎপাদন

জোয়ারের ঢেউ হতে শক্তি উৎপাদন ইত্যাদি

সামুদ্রিক পণ্য মেরামত

জাল, নৌকা ও জাহাজ নির্মাণ সহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রের যোগান দান প্রযুক্তি

সমুদ্র শাসন

সামুদ্রিক শিল্পকৌশল

সামুদ্রিক পর্যটন ও অবকাশ কেন্দ্র

সমুদ্রে মৎস্য শিকার

সমুদ্রের নৌকা পরিসেবা

সমুদ্রের নৌকা চালনা, সার্ফিং, স্কুবা ডাইভিং, সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার পাখি ও প্রাকৃতিক অবকাঠামো পরিদর্শন

সমুদ্র সৈকত ভ্রমন এবং দ্বীপ ভ্রমণ

সামরিক স্থাপনা নির্মাণ এবং প্রকৌশল

সামুদ্রিক বাণিজ্য ,সামুদ্রিক আর্থিক সেবা

সামুদ্রিক জাহাজ বিনিয়োগ ও এ সম্পর্কিত সেবা

মিডিয়া ও প্রকাশনা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি

প্রকৌশল পরামর্শদাতা

আবহাওয়া সংক্রান্ত পরামর্শদাতা

পরিবেশ সংক্রান্ত পরামর্শদাতা

প্রকল্প ব্যবস্থাপনা পরামর্শদাতা

আইসিটি সমাধান ভৌগোলিক তথ্য সেবা

প্রমোদ তরী নকশা

সাবমেরিন টেলিকম

শিক্ষা ও গবেষণা প্রশিক্ষণ

বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয় এবং ব্লু ইকোনমিঃ

 আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে 2012 সালে মিয়ানমারের সাথে এবং 2014 সালে ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় মোট এক লাখ 18 হাজার 813 বর্গ কিলোমিটারের বেশি সমুদ্র বাংলাদেশের দখলে। বাংলাদেশের সাথে আছে 200 নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে 354 নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের সম্পদের উপর সার্বভৌম অধিকার।  মিয়ানমারের সাথে সমুদ্র বিরোধপূর্ণ ব্লকের বারটি পেয়েছে বাংলাদেশ। ভারতের কাছ থেকে দাবীকৃত ব্লকের সবগুলো পেয়েছে বাংলাদেশ। দুই বছরের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রত্যেকটিতে বাংলাদেশের বিজয় কে সমুদ্র বিজয় বলে অভিহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্থলভাগের বাইরে আরেক বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে। প্রকৃত অর্থেই সমুদ্র বিজয়কে অর্থনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ করতে হবে এবং এর সদ্ব্যবহার করে আমাদের ব্লু ইকোনমি ভিত্তিক (Blue Economy) উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে হবে।

ব্লু ইকোনমি (Blue Economy) বা সুনীল অর্থনীতি উন্নয়নে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপন এর প্রেক্ষাপটঃ

স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকার দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ হিসেবে মাত্র তিন বছরের মধ্যে 1974 সালের টেরিটোরিয়াল অ্যান্ড মেনি টাইম অ্যাক্ট পাস করে। এছাড়া ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে আলোচনা 1974 সালে শুরু করা হয়। 1975 সালে বঙ্গবন্ধুর মর্মান্তিক হত্যা ও পটপরিবর্তনের পর এই উদ্যোগ থেমে যায়। পরবর্তীতে নব্বইয়ের দশকে 1996 সালে তৎকালীন সরকার কর্তৃক জাতীয় সমুদ্র বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য একটি রিভিউ কমিটি গঠন করা হয়। উক্ত রিভিউ কমিটির সুপারিশ প্রাপ্তির পর 2000 সালের জাতীয় সমুদ্র বিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ।

2007 সালের অক্টোবর মাসের 10 তারিখ তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ৩ থেকে 4 একর এর মধ্যে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার নির্দেশ প্রদান করে। মূলত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০০৯ সাল হতে জাতীয় সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জিত হয়।  2009 সালের জুলাই মাসের 2 তারিখ একনেক সভায় 4 একর জমির উপর ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জমির পরিমাণ 4 এর পরিবর্তে 40 একর বৃদ্ধি করে প্রকল্প এলাকায় গবেষণাগার আবাসিক ভবন, মেরিন একুরিয়াম এবং বায়ু বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সহ প্রকল্পটি পুনর্গঠন করে পুনরায় উপস্থাপনের জন্য নির্দেশ প্রদান করে ।

5 মার্চ 2015 ইংরেজি তারিখ মহান জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট আইন 2015 পাস হয়। ফলে 2017 সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পের কাজ সমাপ্তির মাধ্যমে ইনস্টিটিউট এর কার্যক্রম চালু হয় যা দেশের সমুদ্র সম্পদ ব্যবহার ও দেশের (Blue Economy) অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি মাইলফলক অর্জন। 

ব্লু ইকোনমি (Blue economy) বা সুনীল অর্থনীতি উন্নয়নে বাংলাদেশের সম্ভাবনাঃ

ব্লু ইকোনমি (Blue Economy) বা সুনীল অর্থনীতি উন্নয়নে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র সম্পদের ব্যবহার বাংলাদেশকে যেমন দিতে পারে আগামী দিনের জ্বালানি নিরাপত্তা তেমনি বদলে দিতে পারে সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি । এমনকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে সামুদ্রিক খাদ্য পণ্য রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। 2017 সালের জুন মাসের 1 তারিখে কালের কন্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বঙ্গপসাগর হতে প্রতি বছর প্রায় 8 মিলিয়ন মেট্রিক টন মাছ ধরা হলেও মাত্র 0.60 মিলিয়ন মেট্রিক টন মাছ ধরতে পারছে বাংলাদেশ। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারলে মাছ আহরণ বাড়বে অর্থনৈতিক অঞ্চলের 200 মিটারের অধিক গভীরতায় বিভিন্ন মৎস্য প্রজাতি প্রাচুর্যতা রয়েছে।

সামুদ্রিক বিভিন্ন জীব থেকে কসমেটিক, পুষ্টি খাদ্য ও ঔষধ পাওয়া যায়। মেরিন সেলফিশ, ফিন ফিশ, ফার্মিং করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যায় । সামুদ্রিক বিভিন্ন শৈবাল থেকে ইতিমধ্যেই ফ্যাটি অ্যাসিড ওমেগা-3, ওমেগা-6 নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করা হচ্ছে।

মেরিন জৈব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যমান মৎস্য সম্পদের উন্নয়ন ঘটানো যায় । এছাড়া তৈল ও নিঃসরণ রোধেও জৈব প্রযুক্তির ভূমিকা রাখতে পারে।

 প্রতিবছর প্রায় 15 লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মেটানো হচ্ছে। লবণ চাষে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে লবণ বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে ।

বঙ্গোপসাগরে খনিজের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে ইলমেনাইট, টাইটেনিয়াম অক্সাইড, রুটাইল, জিরকন, ম্যাগনেটাইট, মোনাজাইট সহ অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ। এসব মূল্যবান সম্পদ উত্তোলন করতে পারলে হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।

বিশ্ব বাণিজ্যের 90 ভাগ সম্পন্ন হয় সামুদ্রিক পরিবহনের মাধ্যমে। বিশাল অর্থনৈতিক এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য দ্রুত স্থানীয় জাহাজ তৈরির কোম্পানিগুলোকে সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে আরও উন্নত মানের বাণিজ্য জাহাজ বিদ্যমান ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত করা প্রয়োজন।

গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরি বাংলাদেশের বন্দরে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য জাহাজ সমূহের ফিডার পরিসেবা কার্যক্রম বাড়ানোর মাধ্যমে আমাদের বন্দরসমূহ কলম্বো, সিঙ্গাপুর বন্দরের মতো আরো গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হয়ে উঠতে পারে। এ বিষয়ে খুব দ্রুতই প্রয়োজনীয় গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন।

দেশে তিনশটি শিপইয়ার্ড ওয়াকসপ এর মাধ্যমে বর্তমানে ছোট ও মধ্যম আকারের জাহাজ রপ্তানি করা হচ্ছে। রপ্তানি আয় বাড়ানোর জন্য বড় জাহাজ তৈরির সক্ষমতা অর্জনের জন্য সুযোগ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সামুদ্রিক ও উপকূলীয় পরিবেশ দূষণ রোধে পর্যাপ্ত গবেষণা ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করা প্রয়োজন ।

সমুদ্রে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস একটি বিশাল ভান্ডার। সমুদ্রের অঞ্চলে বাতাসের গতিবেগ বেশি থাকায় সেখানে উইন্ডমিল বা বায়ু কল স্থাপন করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি পাওয়া যেতে পারে। সমুদ্রের ওয়েব এবং জোয়ার-ভাটা কে ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা এবং সমুদ্রের উপরে ও নিচের স্তরের তাপমাত্রার পার্থক্য থেকে ওশান থার্মাল এনারজি কনভার্শন প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়। এজন্য গবেষণার পাশাপাশি প্রচুর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রয়োজন।

সমুদ্র উপকূলীয় খনিজ বালু উত্তোলন করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়। 2030 সালের মধ্যে বিশ্বের কোবাল্ট, কপার, জিংক এবং বিরল ধাতু উৎপাদনের 10 ভাগ আসবে সমুদ্র থেকে। বাংলাদেশ এই খাতে কোন ধরনের গবেষণা ও অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালিত হয় নি বিধায় বঙ্গোপসাগরে এসব মূল্যবান খনিজ এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি ।

উপকূলীয় পর্যটন থেকে বিশ্বের জিডিপি 5% আসে এবং বিশ্বের 6 থেকে 7 শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থান এই খাত থেকে হয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় 120 কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সমুদ্র সৈকত আছে। বিনোদন ও মনোরম পরিবেশের ব্যবস্থা করতে পারলে এই খাত থেকে দেশের প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে।

ক্রুজ শিপ এর মাধ্যমে ভ্রমণের ব্যবস্থা এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে পারলে পর্যটন খাত দেশের আয়ের প্রধানখাত হয়ে উঠবে। কৃত্রিম দ্বীপ সৃষ্টির মাধ্যমে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ভূমি বাড়ানো যায়। পরিপূর্ণ চর্চার মাধ্যমে পর্যটন খাত হিসেবে দ্বীপের উন্নয়ন ঘটানো যায় এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় গবেষণা কার্যক্রম হাতে নেয়া দরকার।

Blue Economy
Copyright: This figure was uploaded by M. G. Hussain

বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম ও ব্লু ইকোনমি (Blue economy) পরিকল্পনাঃ

বাংলাদেশ ব্লু ইকোনমি পরিকল্পনা হিসেবে নিম্নোক্ত স্বল্প মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই গ্রহণ করেছেঃ

ফিজিক্যাল এন্ড স্পেস ওশানোগ্রাফিক সম্পর্কিত বেজলাইন ডাটা নির্ধারণ পটেনশিয়াল ফিশিং চিহ্নিতকরণ সমুদ্র পর্যবেক্ষণ এবং রিয়েল টাইম ডাটা সিস্টেম চালু করুন

ভূতাত্ত্বিক ওশানোগ্রাফি সম্পর্কিত বেজলাইন নির্ধারণ

বায়োলজিক্যাল ওশানোগ্রাফি সম্পর্কিত বেজলাইন ডাটা নির্ধারণ

একুয়াকালচার

কেমিক্যাল ওশানোগ্রাফি সম্পর্কিত সমৃদ্ধকরণ

সমুদ্রতীরবর্তী দূষণ রোধ

ওশানোগ্রাফিক ডাটা সেন্টার স্থাপন, উন্নয়ন এবং ডাটা সমৃদ্ধকরণ সমুদ্র বিষয়ক তথ্য ও প্রযুক্তির উন্নয়ন

সমুদ্র বিষয়ে দক্ষ জনবল তৈরি সহ সমুদ্র বিষয়ে জনসচেতনতা মূলক কার্যক্রম 

ব্লু ইকোনমি  (Blue economy) উন্নয়নে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ সমূহঃ

পর্যাপ্ত নীতিমালার ও সঠিক কর্ম পরিকল্পনার অভাব

দক্ষ জনশক্তির অভাব

প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব

সম্পদের পরিমাণ ও মূল্য সম্পর্কে সঠিক তথ্যের অভাব

মেরিটাইম রিসার্চ ভিত্তিক পর্যাপ্ত গবেষণা না হওয়া

ব্লু ইকোনমি সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক যোগাযোগের অভাব

সমুদ্র গবেষণা কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য গবেষণা জাহাজ না থাকা

পরিশেষেঃ

বঙ্গোপসাগরে বিস্তৃত একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চলের সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে বাংলাদেশের রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। সাগরের অপার সম্ভাবনা ও সম্পদ চিহ্নিতকরণ, পরিমাণ নির্ধারণ ও জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্লু ইকোনমি সম্পর্কিত (Blue Economy) পরিকল্পনা যথাযথভাবে ব্যবহার সহ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, আবহাওয়ার পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণার জন্য সরকার ইতি মধ্যেই বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। যার স্লোগান হলো “সমুদ্রে অনুসন্ধান, দেশের কল্যাণ”।

এটা কক্সবাজারের রামুতে অবস্থিত। দেশি ও বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে পর্যায়ক্রমে সহযোগিতা ও গবেষণা পরিচালনার মাধ্যমে যেমন একটি নিজস্ব দক্ষ জনবল তৈরি করা যাবে তেমনি দক্ষিণ এশীয় সমুদ্র অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভাবে আমাদের নিজস্ব অর্থনীতির অংশ হিসেবে সফলতা অর্জন করা যাবে।।ব্লু ইকোনমি বা Blue Economy বা সুনীল অর্থনীতি ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা অগ্রগতি। ধারাভাষ্যেঃ রমন কুমার বিশ্বাস


এই আর্টিকেলটি প্রস্তুত করা হয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে কপিরাইট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ব্লু ইকোনমি সুনীল অর্থনীতি বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও অগ্রগতি রিপোর্ট।